ধুমপান করুণ! !!!!!!
আমরা সকলে জানি ধূমপান
স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর।
কথাটা অনেকে সেচ্ছায় বলেন
অনেকে বলেন বাধ্য হয়ে। যাই
হোক ধুমপানের ক্ষতির তুলনায়
শ্লোগানটা খুবই হাল্কা। কারণ
ধূমপান শুধু স্বাস্থ্যের জন্য
ক্ষতিকর নয়। মস্তিষ্কের জন্য
ক্ষতিকর, আত্নার জন্য
ক্ষতিকর, স্বভাব-চরিত্রের
জন্য ক্ষতিকর, পরিবার-পরিজন
প্রতিবেশী সমাজ ও পরিবেশের
জন্য ক্ষতিকর। আমার কাছে এর
চেয়ে বড় ক্ষতির দিক হলো
ধুমপানের মাধ্যমে ইসলামের
নীতি আদর্শ লংঘন। আমি অনেক
ধর্মপ্রান লোকজনকে দেখেছি
তারা ধূমপান করেন। এ সকল
ধর্মপ্রান মানুষ ও ধর্মীয়
নেতাদের যখন আপনি বলবেন
ধূমপান জায়েজ নয় তখন তারা তা
মানতে চান না। অনেক যুক্তির
সাথে তারা এ টাও বলেন মক্কা
শরীফের মত পবিত্র স্থানেও
ধূমপান করতে দেখেছি, যদি
জায়েযই না হতো তা হলে কি
অনেকেই বলেন, আল-কোরানে তো
বলা হয়নি 'তোমরা ধূমপান করো
না।' হাদিসে রাসূলে কোথাও নেই
যে, 'ধূমপান করা যাবে না', তা
হলে ধূমপান ইসলামি শরীয়তে
নিষিদ্ধ হলো কিভাবে?এ
প্রশ্নটির সন্তোষজনক উত্তরই
রয়েছে এ প্রবেন্ধ।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ
করেন, "তিনি তোমাদের জন্য
হালাল করে দেন ভাল ও উত্তম
বস্তু আর হারাম করে দেন খারাপ
ও ক্ষতিকর বস্তু।" (সুরা আল-
আরাফ : ১৫৭) এ আয়াতের
ভিত্তিতে এমন বহু জিনিস আছে
যা হারাম হয়েছে অথচ তা কোরান-
হাদিসে নাম ধরে বলা হয়নি।
আমরা সাপ খাই না। কেন খাই না?
কোরান- হাদিসে কোথাও কি
আছে তোমরা সাপ খেয়ো না ? নেই
ঠিকই, কিন্তু উক্ত আয়াতের
ভিত্তিতে তা হারাম হয়ে গেছে।
কেননা তা ক্ষতিকর ও খারাপ।
ধূমপান ক্ষতিকর ও খারাপ। এ
ব্যাপারে দুনিয়ার সুস্থ বিবেক
সম্পন্ন সকল মানুষ একমত। কোন
স্বাস্থ্য বিজ্ঞানী দ্বি-মত
পোষণ করেননি। তারপরও যদি কেউ
বলেন, ধূমপান শরিয়তের নিষিদ্ধ
বস্তুর মধ্যে পড়ে না, তা হলে
তাকে ঐ ডায়াবেটিস রোগীর
সাথে তুলনা করা যায় যিনি
ডাক্তারের নির্দেশ মত চিনি
ত্যাগ করলেন ঠিকই কিন্তু
রসগোল্লা, চমচম, সন্দেশ সবই
খেলেন আর বললেন কই ডাক্তার
তো এ গুলো নিষেধ করেননি!
আল-কোরানের আলোকে ধুমপান
অপরাধ : আল্লাহ রাব্বুল
আলামিন ইরশাদ করেন, "তিনি
তোমাদের জন্য পবিত্র ও ভাল
(তাইয়েবাত) বস্তু হালাল করেন
আর ক্ষতিকর- নোংড়া (খাবায়িস)
জিনিষ হারাম করেন। (সূরা আল-
আরাফ :১৫৭) আর ধূমপান নিশ্চয়ই
খাবায়িস (ক্ষতিকর- নোংড়া)-এর
অন্তর্ভুক্ত, তাই তা পান করা
বৈধ (হালাল) নয়। আল্লাহ
রাব্বুল আলামিন আরো বলেন,
"তোমরা নিজেদের জীবন ধংসের
সম্মুখীন করো না।" (সূরা আল-
বাকারা : ১৯৫) এ আয়াতের
দাবীতেও ধূমপান নিষেধ।কেননা
ধুমপানের কারনে অনেক জীবন
বিধংসী রোগ ব্যধি হয়ে থাকে।
আল্লাহ তাআলা মদ ও জুয়া
হারাম করতে গিয়ে পবিত্র
কোরানে ইরশাদ করেছেন, "তারা
আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে
জিজ্ঞেস করে। বলে দিন, উভয়ের
মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর তার
মধ্যে মানুষের জন্য
উপকারিতাও আছে। তবে এগুলোর
পাপ উপকারের চেয়ে বড়।" (সূরা
আল-বাকারা:২১৯) আল্লাহ
তাআলার এ বানী দ্বারা বুঝে
আসে মদ জুয়ার মধ্যে উপকারিতা
থাকা সত্বেও তা হারাম
করেছেন। তাহলে ধূমপান তো মদ
জুয়ার চেয়েও জঘন্য। কারন
তাতে কোন ধরনের উপকার নেই।
বরং একশ ভাগই ক্ষতি। তো
ধুমপান নিষিদ্ধ হবেনা কেন?
আবার অনেকে বলেন মদ-জুয়া
হারাম করা হয়েছে নেশার কারণে
কিন্তু ধুমপান করলে তো কোনো
নেশা হয়না। আমার ঐ ভাইদেরকে
বলছি, এই ধুমপানকে ছাড়তে
পারছেন না আপনি এটাই বড় নেশা।
কারণ নেশা মানেই আসক্তি।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন
জাহান্নামিদের খাদ্যের
বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, "এটা
তাদের পুষ্টিও যোগাবে না
ক্ষুধা ও নিবারণ করবে
না।" (সূরা আল-গাশিয়াহ : ৭)
ধুমপানের মধ্যে এ বৈশিষ্ট্যই
রয়েছে যে তা পানকারীর
পুষ্টির যোগান দেয় না, ক্ষুধাও
নেভায় না। ধুমপানের তুলনা
জাহান্নামি খাবারের সাথেই
করা যায়। এখন আমি প্রশ্ন করতে
চাই আমার কোন ভাই রাজি আছেন
জাহান্নামি কোনো খাবার
জেনে বুঝে গ্রহণ করার জন্য?
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,
"তোমরা অপচয় করো না।
অপচয়কারীরা শয়তানের
ভাই।" (সুরা আল-ইসরা :২৭) ধূমপান
একটি অপচয়। অনেক এমন অপচয়
আছে যাতে মানুষের লাভ-ক্ষতি
কিছু নেই। এগুলো সকলের কাছে
অন্যায় ও সর্বসম্মতভাবে তা
অপচয় বলে গণ্য। কিন্তু ধূমপান
এমন একটি অপচয় যাতে শুধুই
মানুষের ক্ষতি। কোন লাভই নেই।
হাদিসের আলোকে ধুমপান
অপরাধ: রাসূলে কারিম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেন, "আল্লাহ
রাব্বুল আলামিন তোমাদের
তিনটি বিষয় ঘৃণা করেন। ১-
ভিত্তিহীন ও সনদ-সুত্র বিহীন
কথা-বার্তা। ২- অধিকহারে
প্রশ্ন করা। ৩- সম্পদ নষ্ট
করা।" (বুখারি ও মুসলিম)
ধূমপানকারী ধূমপান করে সম্পদ
নষ্ট করে এ ব্যাপারে কারো
দ্বি-মত নেই। সুতরাং ধুমপান
নিষিদ্ধই নিষিদ্ধ।
রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো
ইরশাদ করেন, "যে ব্যক্তি
আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাস
রাখে সে যেন তার প্রতিবেশীকে
কষ্ট না দেয়।" (বুখারি)
ধূমপানকারী তার ধুমপানের
দ্বারা স্ত্রী-পরিজন,
সহযাত্রী, বন্ধু-বান্ধব ও আশে-
পার্শের লোকজনকে কষ্ট দিয়ে
থাকে। অনেকে নীরবে কষ্ট সহ্য
করে মনে মনে ধূমপান কারীকে
অভিশাপ দেন। আবার দু একজন
প্রতিবাদ করে বিব্রতকর
অবস্থার মধ্যে পড়ে যান। আমি
বাসে ও ট্রেনে বসে অনেক
ধূমপানকারীকে আদবের সাথে
বলেছি ভাই সিগারেটটা শেষ
করুন। আমাদের কষ্ট হচ্ছে। এতে
তিনি আমার উপর প্রচন্ড
ক্ষেপে গিয়ে বকাবকি করেছেন,
আমাকে একটা গাড়ী বা ট্রেন
কিনে তাতে আলাদা ভাবে
চলাফেরা করার হুকুম দিয়েছেন।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণায়
ও প্রমানিত ধূমপানকারীর
প্রতিবেশী শারিরিকভাবে
অনুরূপ ক্ষতিগ্রস্থ হন যে রূপ
ধূমপানকারী হয়ে থাকেন।
রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ
করেন, "হালাল স্পষ্ট, এবং
হারাম স্পষ্ট। এ দুয়ের মাঝে
আছে সন্দেহ জনক বিষয়াবলী।
(তা হালাল না হারাম ) অনেক
মানুষই জানে না। যে ব্যক্তি এ
সন্দেহ জনক বিষয়গুলো পরিহার
করল, সে তার ধর্ম ও স্বাস্থ্য
রক্ষা করল। আর যে এ সন্দেহ
জনক বিষয়গুলোতে লিপ্ত হল সে
প্রকারান্তরে হারাম কাজে
লিপ্ত হয়ে পড়ল .. .. (বুখারি ও
মুসলিম)
তাই যারা ইসলামের দৃষ্টিতে
ধূমপান নিষিদ্ধ হওয়ার কোন
প্রমাণাদি পাচ্ছেন না তাদের
কমপক্ষে এ হাদিসটির প্রতি
দৃষ্টি দেয়ার আহবান জানাচ্ছি।
কারণ ধুমপান হালাল না হারাম এই
বিষয়টি স্পষ্ট নয়। সুতরাং এই
হাদিসের আলোকেও ধুমপান
পরিত্যাক্ত।
রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
"যে সকল কথা ও কাজ মানূষের
কোন উপকারে আসে না, তা
পরিহার করা তার ইসলামের
সৌন্দর্য।" (মুসলিম) আমরা
সকলেই স্বীকার করি যে ধূমপান
কোন উপকারে আসে না। বরং
ক্ষতিই করে।
বাস্তবতার আলোকে ধুমপান
অপরাধ : কোন পাক ঘরে যদি
জানালায় কাচ থাকে অথবা
বাল্ব থাকে তাহলে দেখা যায়
ধোঁয়ার কারনে তাতে ধীরে
ধীরে কালো আবরন পড়ে। এমনি
ভাবে ধূমপানকারীর দাতে, মুখে
ও ফুসফুসে কালো আবরন তৈরী
হয়। কাচের আবরন পরিস্কার করা
গেলেও ফুসফুসের কালিমা
পরিস্কার করা সম্ভব হয় না। ফলে
তাকে অনেক রোগ ব্যধির শিকার
হতে হয়। একজন অধুমপায়ী
ব্যক্তির চেয়ে একজন ধুমপায়ী
অধিকতর উগ্র মেজাজের হয়ে
থাকেন। সমাজে যারা বিভিন্ন
অপরাধ করে বেড়ায় তাদের ৯৮%
ভাগ ধূমপান করে থাকে। যারা
মাদক দ্রব্য সেবন করে তাদের
৯৫% ভাগ প্রথমে ধুমপানে
অভ্যস্ত হয়েছে তারপর মাদক
সেবন শুরু করেছে। এমনকি
ধুমপায়ী মায়ের সন্তান উগ্র
স্বভাবের হয়ে থাকে ( সুত্র:
দৈনিক ইনকিলাব তারিখ
১৫-১২-২০০০ ইং)
সম্প্রতি উইনকনসিন
বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৭৫০ জন
লোকের উপর এক সমীক্ষায় দেখা
যায় যে অধুমপায়ীদের চেয়ে
ধুমপায়ীদের শ্রবন শক্তি কমার
সম্ভাবনা শতকরা ৭০ ভাগ বেশী
থাকে। গবেষকরা আরো দেখেছেন
যে, একজন ধুমপায়ীর
ধূমপানকালীন সময়ে কোন
অধুমপায়ী উপস্থিত থাকলে
তারও একই সমস্যা দেখা দেবে।
(সুত্র : সাপ্তাহিক আরাফাত
বর্ষ ৪৫ সংখ্যা ১, ১৮ই আগস্ট
২০০৩)
গ্রন্থনা : মাওলানা মিরাজ
রহমান
স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর।
কথাটা অনেকে সেচ্ছায় বলেন
অনেকে বলেন বাধ্য হয়ে। যাই
হোক ধুমপানের ক্ষতির তুলনায়
শ্লোগানটা খুবই হাল্কা। কারণ
ধূমপান শুধু স্বাস্থ্যের জন্য
ক্ষতিকর নয়। মস্তিষ্কের জন্য
ক্ষতিকর, আত্নার জন্য
ক্ষতিকর, স্বভাব-চরিত্রের
জন্য ক্ষতিকর, পরিবার-পরিজন
প্রতিবেশী সমাজ ও পরিবেশের
জন্য ক্ষতিকর। আমার কাছে এর
চেয়ে বড় ক্ষতির দিক হলো
ধুমপানের মাধ্যমে ইসলামের
নীতি আদর্শ লংঘন। আমি অনেক
ধর্মপ্রান লোকজনকে দেখেছি
তারা ধূমপান করেন। এ সকল
ধর্মপ্রান মানুষ ও ধর্মীয়
নেতাদের যখন আপনি বলবেন
ধূমপান জায়েজ নয় তখন তারা তা
মানতে চান না। অনেক যুক্তির
সাথে তারা এ টাও বলেন মক্কা
শরীফের মত পবিত্র স্থানেও
ধূমপান করতে দেখেছি, যদি
জায়েযই না হতো তা হলে কি
অনেকেই বলেন, আল-কোরানে তো
বলা হয়নি 'তোমরা ধূমপান করো
না।' হাদিসে রাসূলে কোথাও নেই
যে, 'ধূমপান করা যাবে না', তা
হলে ধূমপান ইসলামি শরীয়তে
নিষিদ্ধ হলো কিভাবে?এ
প্রশ্নটির সন্তোষজনক উত্তরই
রয়েছে এ প্রবেন্ধ।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ
করেন, "তিনি তোমাদের জন্য
হালাল করে দেন ভাল ও উত্তম
বস্তু আর হারাম করে দেন খারাপ
ও ক্ষতিকর বস্তু।" (সুরা আল-
আরাফ : ১৫৭) এ আয়াতের
ভিত্তিতে এমন বহু জিনিস আছে
যা হারাম হয়েছে অথচ তা কোরান-
হাদিসে নাম ধরে বলা হয়নি।
আমরা সাপ খাই না। কেন খাই না?
কোরান- হাদিসে কোথাও কি
আছে তোমরা সাপ খেয়ো না ? নেই
ঠিকই, কিন্তু উক্ত আয়াতের
ভিত্তিতে তা হারাম হয়ে গেছে।
কেননা তা ক্ষতিকর ও খারাপ।
ধূমপান ক্ষতিকর ও খারাপ। এ
ব্যাপারে দুনিয়ার সুস্থ বিবেক
সম্পন্ন সকল মানুষ একমত। কোন
স্বাস্থ্য বিজ্ঞানী দ্বি-মত
পোষণ করেননি। তারপরও যদি কেউ
বলেন, ধূমপান শরিয়তের নিষিদ্ধ
বস্তুর মধ্যে পড়ে না, তা হলে
তাকে ঐ ডায়াবেটিস রোগীর
সাথে তুলনা করা যায় যিনি
ডাক্তারের নির্দেশ মত চিনি
ত্যাগ করলেন ঠিকই কিন্তু
রসগোল্লা, চমচম, সন্দেশ সবই
খেলেন আর বললেন কই ডাক্তার
তো এ গুলো নিষেধ করেননি!
আল-কোরানের আলোকে ধুমপান
অপরাধ : আল্লাহ রাব্বুল
আলামিন ইরশাদ করেন, "তিনি
তোমাদের জন্য পবিত্র ও ভাল
(তাইয়েবাত) বস্তু হালাল করেন
আর ক্ষতিকর- নোংড়া (খাবায়িস)
জিনিষ হারাম করেন। (সূরা আল-
আরাফ :১৫৭) আর ধূমপান নিশ্চয়ই
খাবায়িস (ক্ষতিকর- নোংড়া)-এর
অন্তর্ভুক্ত, তাই তা পান করা
বৈধ (হালাল) নয়। আল্লাহ
রাব্বুল আলামিন আরো বলেন,
"তোমরা নিজেদের জীবন ধংসের
সম্মুখীন করো না।" (সূরা আল-
বাকারা : ১৯৫) এ আয়াতের
দাবীতেও ধূমপান নিষেধ।কেননা
ধুমপানের কারনে অনেক জীবন
বিধংসী রোগ ব্যধি হয়ে থাকে।
আল্লাহ তাআলা মদ ও জুয়া
হারাম করতে গিয়ে পবিত্র
কোরানে ইরশাদ করেছেন, "তারা
আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে
জিজ্ঞেস করে। বলে দিন, উভয়ের
মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর তার
মধ্যে মানুষের জন্য
উপকারিতাও আছে। তবে এগুলোর
পাপ উপকারের চেয়ে বড়।" (সূরা
আল-বাকারা:২১৯) আল্লাহ
তাআলার এ বানী দ্বারা বুঝে
আসে মদ জুয়ার মধ্যে উপকারিতা
থাকা সত্বেও তা হারাম
করেছেন। তাহলে ধূমপান তো মদ
জুয়ার চেয়েও জঘন্য। কারন
তাতে কোন ধরনের উপকার নেই।
বরং একশ ভাগই ক্ষতি। তো
ধুমপান নিষিদ্ধ হবেনা কেন?
আবার অনেকে বলেন মদ-জুয়া
হারাম করা হয়েছে নেশার কারণে
কিন্তু ধুমপান করলে তো কোনো
নেশা হয়না। আমার ঐ ভাইদেরকে
বলছি, এই ধুমপানকে ছাড়তে
পারছেন না আপনি এটাই বড় নেশা।
কারণ নেশা মানেই আসক্তি।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন
জাহান্নামিদের খাদ্যের
বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, "এটা
তাদের পুষ্টিও যোগাবে না
ক্ষুধা ও নিবারণ করবে
না।" (সূরা আল-গাশিয়াহ : ৭)
ধুমপানের মধ্যে এ বৈশিষ্ট্যই
রয়েছে যে তা পানকারীর
পুষ্টির যোগান দেয় না, ক্ষুধাও
নেভায় না। ধুমপানের তুলনা
জাহান্নামি খাবারের সাথেই
করা যায়। এখন আমি প্রশ্ন করতে
চাই আমার কোন ভাই রাজি আছেন
জাহান্নামি কোনো খাবার
জেনে বুঝে গ্রহণ করার জন্য?
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,
"তোমরা অপচয় করো না।
অপচয়কারীরা শয়তানের
ভাই।" (সুরা আল-ইসরা :২৭) ধূমপান
একটি অপচয়। অনেক এমন অপচয়
আছে যাতে মানুষের লাভ-ক্ষতি
কিছু নেই। এগুলো সকলের কাছে
অন্যায় ও সর্বসম্মতভাবে তা
অপচয় বলে গণ্য। কিন্তু ধূমপান
এমন একটি অপচয় যাতে শুধুই
মানুষের ক্ষতি। কোন লাভই নেই।
হাদিসের আলোকে ধুমপান
অপরাধ: রাসূলে কারিম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেন, "আল্লাহ
রাব্বুল আলামিন তোমাদের
তিনটি বিষয় ঘৃণা করেন। ১-
ভিত্তিহীন ও সনদ-সুত্র বিহীন
কথা-বার্তা। ২- অধিকহারে
প্রশ্ন করা। ৩- সম্পদ নষ্ট
করা।" (বুখারি ও মুসলিম)
ধূমপানকারী ধূমপান করে সম্পদ
নষ্ট করে এ ব্যাপারে কারো
দ্বি-মত নেই। সুতরাং ধুমপান
নিষিদ্ধই নিষিদ্ধ।
রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো
ইরশাদ করেন, "যে ব্যক্তি
আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাস
রাখে সে যেন তার প্রতিবেশীকে
কষ্ট না দেয়।" (বুখারি)
ধূমপানকারী তার ধুমপানের
দ্বারা স্ত্রী-পরিজন,
সহযাত্রী, বন্ধু-বান্ধব ও আশে-
পার্শের লোকজনকে কষ্ট দিয়ে
থাকে। অনেকে নীরবে কষ্ট সহ্য
করে মনে মনে ধূমপান কারীকে
অভিশাপ দেন। আবার দু একজন
প্রতিবাদ করে বিব্রতকর
অবস্থার মধ্যে পড়ে যান। আমি
বাসে ও ট্রেনে বসে অনেক
ধূমপানকারীকে আদবের সাথে
বলেছি ভাই সিগারেটটা শেষ
করুন। আমাদের কষ্ট হচ্ছে। এতে
তিনি আমার উপর প্রচন্ড
ক্ষেপে গিয়ে বকাবকি করেছেন,
আমাকে একটা গাড়ী বা ট্রেন
কিনে তাতে আলাদা ভাবে
চলাফেরা করার হুকুম দিয়েছেন।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণায়
ও প্রমানিত ধূমপানকারীর
প্রতিবেশী শারিরিকভাবে
অনুরূপ ক্ষতিগ্রস্থ হন যে রূপ
ধূমপানকারী হয়ে থাকেন।
রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ
করেন, "হালাল স্পষ্ট, এবং
হারাম স্পষ্ট। এ দুয়ের মাঝে
আছে সন্দেহ জনক বিষয়াবলী।
(তা হালাল না হারাম ) অনেক
মানুষই জানে না। যে ব্যক্তি এ
সন্দেহ জনক বিষয়গুলো পরিহার
করল, সে তার ধর্ম ও স্বাস্থ্য
রক্ষা করল। আর যে এ সন্দেহ
জনক বিষয়গুলোতে লিপ্ত হল সে
প্রকারান্তরে হারাম কাজে
লিপ্ত হয়ে পড়ল .. .. (বুখারি ও
মুসলিম)
তাই যারা ইসলামের দৃষ্টিতে
ধূমপান নিষিদ্ধ হওয়ার কোন
প্রমাণাদি পাচ্ছেন না তাদের
কমপক্ষে এ হাদিসটির প্রতি
দৃষ্টি দেয়ার আহবান জানাচ্ছি।
কারণ ধুমপান হালাল না হারাম এই
বিষয়টি স্পষ্ট নয়। সুতরাং এই
হাদিসের আলোকেও ধুমপান
পরিত্যাক্ত।
রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
"যে সকল কথা ও কাজ মানূষের
কোন উপকারে আসে না, তা
পরিহার করা তার ইসলামের
সৌন্দর্য।" (মুসলিম) আমরা
সকলেই স্বীকার করি যে ধূমপান
কোন উপকারে আসে না। বরং
ক্ষতিই করে।
বাস্তবতার আলোকে ধুমপান
অপরাধ : কোন পাক ঘরে যদি
জানালায় কাচ থাকে অথবা
বাল্ব থাকে তাহলে দেখা যায়
ধোঁয়ার কারনে তাতে ধীরে
ধীরে কালো আবরন পড়ে। এমনি
ভাবে ধূমপানকারীর দাতে, মুখে
ও ফুসফুসে কালো আবরন তৈরী
হয়। কাচের আবরন পরিস্কার করা
গেলেও ফুসফুসের কালিমা
পরিস্কার করা সম্ভব হয় না। ফলে
তাকে অনেক রোগ ব্যধির শিকার
হতে হয়। একজন অধুমপায়ী
ব্যক্তির চেয়ে একজন ধুমপায়ী
অধিকতর উগ্র মেজাজের হয়ে
থাকেন। সমাজে যারা বিভিন্ন
অপরাধ করে বেড়ায় তাদের ৯৮%
ভাগ ধূমপান করে থাকে। যারা
মাদক দ্রব্য সেবন করে তাদের
৯৫% ভাগ প্রথমে ধুমপানে
অভ্যস্ত হয়েছে তারপর মাদক
সেবন শুরু করেছে। এমনকি
ধুমপায়ী মায়ের সন্তান উগ্র
স্বভাবের হয়ে থাকে ( সুত্র:
দৈনিক ইনকিলাব তারিখ
১৫-১২-২০০০ ইং)
সম্প্রতি উইনকনসিন
বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৭৫০ জন
লোকের উপর এক সমীক্ষায় দেখা
যায় যে অধুমপায়ীদের চেয়ে
ধুমপায়ীদের শ্রবন শক্তি কমার
সম্ভাবনা শতকরা ৭০ ভাগ বেশী
থাকে। গবেষকরা আরো দেখেছেন
যে, একজন ধুমপায়ীর
ধূমপানকালীন সময়ে কোন
অধুমপায়ী উপস্থিত থাকলে
তারও একই সমস্যা দেখা দেবে।
(সুত্র : সাপ্তাহিক আরাফাত
বর্ষ ৪৫ সংখ্যা ১, ১৮ই আগস্ট
২০০৩)
গ্রন্থনা : মাওলানা মিরাজ
রহমান
Comments
Post a Comment