আল্লাহর নির্দেশ মানা এবং নিষিদ্ধ বিষয়গুলো থেকে বিরত থাকা

লিখেছেনঃ মুহাদ্দিস রবিউল বাশার।

 

beautiful-islamic-quotes.jpg

 

আল্লাহ তাআলার আদেশ মেনে চলা ও তাঁর নিষিদ্ধ
বিষয়গুলো থেকে বেঁচে থাকতে চাইলে একজন মুসলিমকে
যে বিষয়ে বিশেষভাবে মনোযোগী হওয়া উচিৎ, তা হল
তার প্রাত্যহিক রুটিন৷ একজন মুসলিম কখন ঘুম থেকে
উঠবে, রাতে কখন বিছানায় যাবে – এ সকল বিষয়ে
ইসলামের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে৷
হাদীসে বর্ণিত:
ﻋَﻦْ ﺻَﺨْﺮٍ ﺍﻟْﻐَﺎﻣِﺪِﻯِّ ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ -ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ- ﻗَﺎﻝَ
‏« ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺑَﺎﺭِﻙْ ﻷُﻣَّﺘِﻰ ﻓِﻰ ﺑُﻜُﻮﺭِﻫَﺎ ‏» . ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺇِﺫَﺍ ﺑَﻌَﺚَ ﺳَﺮِﻳَّﺔً
ﺃَﻭْ ﺟَﻴْﺸًﺎ ﺑَﻌَﺜَﻬُﻢْ ﻓِﻰ ﺃَﻭَّﻝِ ﺍﻟﻨَّﻬَﺎﺭِ . ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺻَﺨْﺮٌ ﺭَﺟُﻼً ﺗَﺎﺟِﺮًﺍ
ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻳَﺒْﻌَﺚُ ﺗِﺠَﺎﺭَﺗَﻪُ ﻣِﻦْ ﺃَﻭَّﻝِ ﺍﻟﻨَّﻬَﺎﺭِ ﻓَﺄَﺛْﺮَﻯ ﻭَﻛَﺜُﺮَ ﻣَﺎﻟُﻪُ .
ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺑُﻮ ﺩَﺍﻭُﺩَ ﻭَﻫُﻮَ ﺻَﺨْﺮُ ﺑْﻦُ ﻭَﺩَﺍﻋَﺔَ
সাখর আল গামিদী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে তিনি বলেছেন: হে
আল্লাহ আপনি দিনের অগ্রভাগে আমার উম্মাতের
জন্য বরকত দিন৷ এবং তিনি যখন কোন ছোট বাহিনী
কিংবা বড় দলকে অভিযানে পাঠাতেন, তাদের দিনের
অগ্রভাগে পাঠাতেন৷ আর সাখর একজন ব্যবসায়ী
ব্যক্তি ছিলেন৷ তিনি দিনের প্রথমভাগ থেকেই ব্যবসা
পরিচালনা করতেন, ফলে তিনি ধনাঢ্য হয়ে ওঠেন এবং
তার সম্পদ বৃদ্ধি পায়৷ – আহমদ ও সুনান
গ্রন্থসমূহের প্রণেতাগণ কর্তৃক বর্ণিত৷
এই হাদীস থেকে জানা যায় যে এই উম্মাতের মধ্যে
কল্যাণ রয়েছে দিনের অগ্রভাগে৷ অতএব ফজরের
সালাতের পর না ঘুমিয়ে যিকরে মশগুল থাকা এবং
সূর্যোদয়ের কিছুক্ষণ পর দুই রাকাত নফল সালাত
আদায় করে এরপর কাজে নেমে পড়া মুসলিমদের জন্য
বরকত তথা কল্যাণ বৃদ্ধি ও স্থায়ীত্বের কারণ হবে৷
আর যে ফজরের সালাতের সাথে সাথেই দিনের শুরু
করতে চায়, তাকে রাতে আগেভাগেই বিছানায় যেতে
হবে৷ এজন্য আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম এশার সালাতের পর কথাবার্তা বলা
পছন্দ করতেন না৷ তিনি ও তাঁর সাহাবীগণ এশার পরপর
রাত্রির অগ্রভাগেই বিছানায় যেতেন, যেন শেষরাত্রিতে
জেগে উঠে তাহাজ্জুদ আদায় করতে পারেন; অথবা
অন্ততপক্ষে যেন ফজরের সালাতের সময় সতেজ
দেহমন নিয়ে জেগে উঠতে পারেন৷ হাদীসে বর্ণিত:
ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻳَﺴْﺘَﺤِﺐُّ ﺃَﻥْ ﻳُﺆَﺧِّﺮَ ﺍﻟْﻌِﺸَﺎﺀَ … ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻳَﻜْﺮَﻩُ ﺍﻟﻨَّﻮْﻡَ ﻗَﺒْﻠَﻬَﺎ
ﻭَﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺚَ ﺑَﻌْﺪَﻫَﺎ
আর তিনি [রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম] এশা বিলম্বিত করাকে পছন্দ করতেন,…আর
তিনি এর পূর্বে ঘুমকে এবং এর পরে কথাবার্তাকে
অপছন্দ করতেন৷ – বুখারী ও মুসলিম ।
আজ বহু মুসলিম পরিবারেই এর বিপরীত অভ্যাস
দেখতে পাওয়া যায়৷ অনেকেই গভীর রাত পর্যন্ত
রাত্রি জাগরণে অভ্যস্ত। তাদের অনেকেই ফজরের
সালাত ঘুমিয়ে পার করে দেন৷ অনেকে রাত জেগে
টেলিভিশন দেখে, ইন্টারনেটে ব্রাউজ করে কিংবা
গল্পগুজব করে সময় কাটান, আর এগুলোর মাধ্যমে
তারা বিভিন্ন ধরনের গুনাহে লিপ্ত হন৷
অনেক ছাত্রদের ধারণা যে রাত জেগে লেখাপড়া করলে
ভাল ফল পাওয়া যায়৷ কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ
বিপরীত৷ কেউ রাত্রিতে যথেষ্ট ঘুমিয়ে ভোরে উঠে
সতেজ দেহ-মন নিয়ে দু-ঘন্টায় যতটুকু পড়া করতে
পারবে, তা হয়ত রাত জেগে চার ঘন্টা লেখাপড়ার
সমান৷
অনেকে অভিযোগ করেন যে রাত্রি জাগরণ অভ্যাসে
পরিণত হয়েছে, আর এ অভ্যাস পরিবর্তন করা সম্ভব
হচ্ছে না৷ এই অভ্যাস পরিবর্তনের সহজ উপায় আছে৷
কষ্ট করে কয়েকদিন ফজরের সময় ঘুম থেকে জেগে
ওঠা এবং ফজরের সালাতের পর আর বিছানায় না
যাওয়ার অনুশীলন করলে প্রথমে কষ্ট হলেও শীঘ্রই
এটা অভ্যাসে পরিণত হবে৷ ফজরের পর ঘুম তাড়িয়ে
রাখার জন্য প্রথমদিকে কিছু খেলাধূলা বা শারীরিক
পরিশ্রম করা যেতে পারে৷ প্রয়োজনে অভ্যাস
পরিবর্তনের জন্য ছুটির সময়কে বেছে নেয়া যেতে
পারে, যেন তা করতে গিয়ে কাজের ক্ষতি না হয়৷
মোটকথা ঘুমের অভ্যাস পরিবর্তন করা সম্ভব – এটি
পরীক্ষিত৷
দৈনন্দিন রুটিনের মধ্যে আরও থাকতে পারে দিনের
শেষভাগে খেলাধূলা ও শরীরচর্চা৷ সাহাবীগণ দিনের
শেষভাগে, এমনকি মাগরিবের সালাত আদায় করেও তীর-
নিক্ষেপ চর্চা করতেন৷ দিনের শেষভাগে কিছুটা
শরীরচর্চা, হাঁটা বা খেলাধূলা করা রাত্রিতে ঘুমকে
গভীর করতে সহায়ক হবে৷ এছাড়া দৈনন্দিন রুটিনের
মধ্যে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত তো আছেই – যার প্রতি
বিশেষ যত্নবান হওয়া প্রত্যেক মুসলিমের অবশ্য-
কর্তব্য৷
দৈনন্দিন রুটিনের মধ্যে আরও থাকা দরকার নিয়মিত
দ্বীন-শিক্ষা ও কুরআন চর্চা৷ হঠাৎ বেশি পরিমাণে
কোন আমল করার চেয়ে অল্প হলেও নিয়মিত আমল
করাটা অধিক উপকারী এবং আল্লাহর কাছে বেশি
পছন্দনীয়৷ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেন:
« ﺃَﺣَﺐُّ ﺍﻷَﻋْﻤَﺎﻝِ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﺃَﺩْﻭَﻣُﻬَﺎ ﻭَﺇِﻥْ ﻗَﻞَّ »
আল্লাহর কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয় সে সমস্ত আমল,
যা অল্প হলেও নিয়মিত করা হয়৷ – বুখারী ও মুসলিম

তেমনি দৈনন্দিন রুটিনের মধ্যে থাকা উচিৎ নিকটাত্মীয়,
বিশেষভাবে মা-বাবার খোঁজখবর নেয়া, তাঁদের
প্রয়োজন পূরণ করা৷ এছাড়া স্ত্রী এবং সন্তানদের
জন্য যথেষ্ট পরিমাণে সময় বরাদ্দ থাকা দরকার৷
এই সমস্ত দিকনির্দেশনা মেনে প্রাত্যহিক রুটিন ঠিক
করে নিয়ে তা অনুসরণ করলে একজন মুসলিম সহজেই
যাবতীয় পাপাচার থেকে বেঁচে থাকতে পারবে এবং
আল্লাহ তাআলার আনুগত্য করা তার জন্য সহজতর
হবে ইনশা আল্লাহ ।

Comments

Popular posts from this blog

বাংলাদেশী মেয়েদের হট ছবি

হে যুবক কোন দিকে যাও!! জান্নাতি হুর তোমাকে ডাকছে

ইসলামের দৃষ্টিতে যৌন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও শক্তি বৃদ্ধিকারী খাদ্য-পানীয়