শাহাদাতের মর্যাদা২
"শাহাদাতের মর্যাদা"
মুহাম্মাদ রবিউল বাশার (৪)
*** শাহীদে হাকীকীর সঙ্গা :
ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻌﻢ ﻣﻦ ﻗﺘﻞ ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻬﻮ ﺷﻬﻴﺪ
ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻮﺩﺍﻭﺩ
অর্থ :প্রিয় নাবী (সাঃ) বলেছেন, যে মুমিন আল্লাহর
পথে নিহত হয়, সে শাহীদ। (আবু দাউদ)
* আল্লাহর পথ * এর ব্যাখ্যা সহীহ বুখারীর
একটি হাদীসে উল্লেখ আছে।
ﻋﻦ ﺍﺑﻲ ﻣﻮﺳﻲ ﺭﺽ ﻗﺎﻝ ﺟﺎﺀ ﺭﺟﻞ ﺍﻟﻲ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻌﻢ
ﻓﻘﺎﻝ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻳﻘﺎﺗﻞ ﻟﻠﻤﻐﻨﻢ ﻭﺍﻟﺮﺟﻞ ﻳﻘﺎﺗﻞ ﻟﻠﺬﻛﺮ ﻭﺍﻟﺮﺟﻞ
ﻳﻘﺎﺗﻞ ﻟﻴﺮﻱ ﻣﻜﺎﻧﻪ ﻓﻤﻦ ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻗﺎﻝ ﻣﻦ ﻗﺎﺗﻞ
ﻟﺘﻜﻮﻥ ﻛﻠﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻫﻲ ﺍﻟﻌﻠﻴﺎ ﻓﻬﻮ ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﺭﻭﺍﻩ
ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ
অর্থ : হযরত আবু মুসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্নিত।
তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি প্রিয় নাবী (সাঃ) এর
নিকট আগমন করে জিঙ্গাসা করে,
একব্যক্তি গানীমাতের জন্য যুদ্ধ করে, আর এক
ব্যক্তি স্মৃতি রক্ষার জন্য লড়াই করে, আর এক
ব্যক্তি নিজের অবস্থান দেখানোর জন্য যুদ্ধ করে।
অতএব কে আল্লাহর পথে আছে? তখন তিনি বলেন,
যে ব্যক্তি আল্লাহর কালিমা বিজয়ী হওয়ার জন্য
যুদ্ধ করে, সে আল্লাহর পথে আছে। (সহীহ বুখারী)
এই হাদীস থেকে জানা যায় যে, আল্লাহর
বানী বিজয়ী হওয়ার জন্য যুদ্ধ করলে আল্লাহর
পথে হয়। অতএব আল্লাহর বানী বিজয় হওয়ার জন্য
যুদ্ধ করতে যেয়ে নিহত হলে আল্লাহর পথে নিহত।
এবং শাহীদ বলে গন্য। আল্লাহর বানী, আল্লাহর
কালিমা, আল্লাহর দ্বীন বিজয়ী করতে যেয়ে নিহত
হলে হাকীকী শাহীদ বলে গন্য। এই শাহীদের
মর্যাদা আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশী।
নিম্মে আল্লাহর পথে নিহত শাহীদের
কয়েকটি মর্যাদা উল্লেখ করা হলো।
(১)বিশ্ব নাবী, শ্রেষ্ঠ নাবী ও শেষ নাবী আল্লাহর
পথে নিহত শাহীদ হওয়ার কামনা করেছেন।
(২)আল্লাহর পথে নিহত শাহীদের সমস্ত গুনাহ মাফ
হয়ে যায় ঋন ছাড়া। (৩)সমস্ত দুনিয়ার সবকিছুর
মালিকানা দিলেও জান্নাতে প্রবেশ করার পর কোন
ব্যক্তি পৃথিবীতে ফিরে আসতে কামনা করবে না কিন্তু
শাহীদ ব্যতিক্রম। শাহীদ শাহাদাতের সম্মান ও
মর্যাদা দেখে পৃথিবীতে এসে দশবার শাহীদ হওয়ার
কামনা করবে।
(৪)শাহীদকে কবরের
শাস্তি থেকে মুক্তি দেয়া হবে।
(৫)শাহীদকে জান্নাতের অবস্থান দেখানো হবে।
(৬)কিয়ামাতের ভয়াবহভয় থেকে নিরাপদ থাকবে।
(৭)কিয়ামাতের দিন শাহীদের মাথায় এমন মুল্যবান
তাজ পরানো হবে, যার ইয়াকুত পাথর দুনিয়া ও তার
মধ্যস্থিত সবকিছু থেকে উত্তম।
(৮)বাহাত্তর জন বড়বড় চক্ষুবিশিষ্ট
সুন্দরী সাথী করে দেয়া হবে।
(৯)শাহীদের নিকটাত্মীয় সত্তরজনের সুপারিশ কবুল
করা হবে।
(১০) শাহীদকে মৃত বলা ও মৃত ধারনা করা নিশেধ।
(১১) শাহীদরা আল্লাহর কাছে রিজিক পায়।
(১২)শাহীদ আল্লাহর নিয়ামাত পেয়ে আনন্দিত ।
*** আর যারা শাহীদের সাওয়াব পাবে। কিন্তু
আল্লাহর পথে নিহত হয়নি, তারা হলো
(১)ডুবে মরা ব্যক্তি,
(২)পুড়ে মরা ব্যক্তি,
(৩)দেওয়াল চাপা পড়ে মরা ব্যক্তি,
(৪)পেটের অসুখে মরা ব্যক্তি,
(৫)মহামারীতে মরা ব্যক্তি,
(৬)দ্বিনী জ্ঞান অন্বেষন করতে যেয়ে মরা ব্যক্তি।
(৭)জুমুয়ার দিন মরা ব্যক্তি।
(৮)উম্মাতের বিপর্যয়ের সময় রাসুলুল্লাহ (সাঃ)
নীতি ও আদর্শ আকড়ে থাকা ব্যক্তি,
ইত্যাদি শাহীদগন আখিরাতে একপ্রকার শাহীদের
স্তর পাবে। এরা দুনিয়ায় শাহীদ বলে গন্য হবেনা!
(১)নিহত শাহীদদের গোসল হয় না কিন্তু এদের গোসল
দেয়া হবে।
(২) নিহত শাহীদদের রক্তাক্ত অবস্থায় দাফন
করা হয়। এদের তা করা হবে না।
(৩) কাফনের উপযুক্ত কাপড় ছাড়া আর সব
খুলে নেয়া যাবে। এদের স্বাভাবিক কাফন
দিতে হবে।
*** যে মুমিন দুনিয়ার কোন স্বার্থ পাওয়ার জন্য,
সুনাম অর্জন করার জন্য, লোকদের কৃতিত্ব দেখানোর
জন্য লড়াই করতে করতে নিহত হয়, সে দুনিয়ায়
শাহীদ বলে গন্য হলেও আল্লাহর কাছে প্রকৃত শাহীদ
বলে গন্য নয়। সে জাহান্নামী হবে আল্লাহর
সন্তুষ্টির জন্য না হওয়ায়।
*** যে মুমিন জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য,
ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য, পাশ্চাত্য
গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার
জন্য, ইসলামের সাথে সাংঘার্ষিক মত ও পথ
প্রতিষ্ঠের জন্য লড়াই করতে যেয়ে নিহত হবে,
সে শাহীদ পদবাচ্য পাওয়ার অযোগ্য,
সে জাহান্নামের অগ্নিকাষ্ঠ হবে, আল্লাহর রাসুল
(সাঃ) বলেছেন,
ﻭﻣﻦ ﺩﻋﺎ ﺑﺪﻋﻮﻱ ﺍﻟﺠﺎﻫﻠﻴﺔ ﻓﻬﻮ ﻣﻦ ﺟﺜﻲ ﺟﻬﻨﻢ ﻭﺍﻥ
ﺻﺎﻡ ﻭﺻﻠﻲ ﻭﺯﻋﻢ ﺍﻧﻪ ﻣﺴﻠﻢ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ
অর্থ :আর যে ব্যক্তি জাহিলিয়াতের দিকে আহবান
করবে, সে জাহান্নামের ইন্ধন হবে। যদিও
রোজা রাখে, নামায পড়ে এবং মুসলিম ধারনা করে।
(জামি তিরমিজী)
ইসলাম বিরুধী সকল মত পথ হলো জাহিলিয়াত।
ইসলাম বিরুধী মতবাদের দিকে আহবান করলে,
জাহান্নামে যেতে হবে, ইসলাম বিরুধী মতবাদ
জাহিলিয়াতের জন্য নিহত হলেও
জাহান্নামে যেতে হবে।নামাজ, রোজা করে মুসলিম
দাবী বা ধারনা করলেও,মাফ হবে না।
*** কাফির, মুশরিক, ইয়াহুদী, খৃষ্টানরা নিজ নিজ
ধর্মের জন্য নিহত হলে বা তাদের দেশ ও জাতির
জন্য চরম ও পরম ত্যাগ করতে যেয়ে নিহত হলে,
তাদের ধর্মীয় ও জাতীয় পরিভাষা ব্যবহার
করতে পারে, কিন্তু এই ইসলামী পরিভাষাকর তাদের
ব্যবহার করা চরম জুলুম, অবিচার, এই পরিভাষার
অবমননা ও ইসলামী পরিভাষার বিকৃতি করার
অন্তর্ভুক্ত।
*** হুকমী শাহীদের সঙ্গা হলো :
ﻫﻮ ﻣﻜﻠﻒ ﻣﺴﻠﻢ ﻃﺎﻫﺮ ﻗﺘﻞ ﻇﻠﻤﺎ ﻭﻟﻢ ﻳﺠﺐ ﺑﻪ ﻣﺎﻝ
ﻭﻟﻢ ﻳﺮﺗﺚ (
অর্থ :আকিল (জ্ঞানী) বালিগ (বয়স প্রাপ্ত) মুসলিম
(দ্বীন -ইসলাম গ্রহনকারী)যাকে মাজলুম অবস্থায়
হত্যা করা হয়েছে,যে হত্যার কারনে মাল(দিয়াত)
ওয়াজিব হয়নি এবং( আহত হওয়ার পর থেকে মৃত্যু
পর্যন্ত) দুনিয়ার জীবনের উপকার লাভ করেনি।
যেমন
(১)আহার করেনি,
(২)পানি পান করেনি,
(৩)ঘুমায়নি
(৪)কোন তাবুতে আশ্রয় নেয়নি
(৫)জ্ঞান থাকা অবস্থায় এক ওয়াক্ত পরিমান নামাজ
সময় অতিবাহিত না হলে।
(৬)চিকিৎসা না হলে
(৭)দুনিয়ার বিষয়ে অসিয়াত না করলে। (৮)অনেক
কথা না বললে।
(৯)ক্রয় -বিক্রয় না করলে,
ইত্যাদি নাকরে মারা গেলে হুকমী শাহীদ।)
*** ব্যাখ্যা :
* (আকিল -জ্ঞানী)
যার বিবেক নেই, পাগল, সে (দুনিয়ার হুকুমে/
বিধানে) শাহীদ নয়। তাকে গোসল দিতে হবে।
* (বালিগ-বয়সপ্রাপ্ত)
নাবালিগ শাহীদ নয়। দুনিয়ার হুকুমে/
বিধানে শাহীদ না হওয়ায় গোসল দিতে হবে।
* (মুসলিম-দ্বীন -ইসলাম গ্রহনকারী)
কোন কাফির, মুশরিক, ইয়াহুদী ও খৃষ্টান শাহীদ নয়।
তারা নিহত হলে মুসলিম নিকটাত্মীয় গোসল দেবে।
* (তাহির-পবিত্র)নাপাক ব্যক্তি দুনিয়াবী শাহীদ
নয়। তাকে গোসল দিতে হবে।
* (জুলমান-মাজলুম অবস্থায়)
কেসাসের মাধ্যমে বা হাদ্দের মাধ্যমে নিহত
হয়,তাহলে মাজলুম অবস্থায় নিহত না হওয়ায় শাহীদ
নয়। তাকে গোসল দিতে হবে।
* (কুতিলা -হত্যা করা হয়) হত্যা না করা হলে,
নিহত না হলে শাহীদ নয়। গোসল দিতে হবে। যেমন
ডুবে মরা, পুড়ে মরা, দেওয়াল চাপা পড়ে মরা,পেটের
রোগে মরা,
মহামারীতে মরা ইত্যাদিতে হত্যা না হওয়ায় গোসল
দিতে হবেনা! এরা দুনিয়ের হুকুমে /বিধানে শাহীদ
না। অবশ্য হাদীস অনুযায়ী আখিরাতে শাহীদ।
* (যে হত্যার কারনে মাল (দিয়াত) ওয়াজিব নয়)
কেসাস ওয়াজিব হলে, সে শাহীদ। দিয়াত ওয়াজিব
হলে সে শাহীদ নয়, তার গোসল দিতে হবে।
* (অলাম ইউরতাস্সা -আহত হওয়ার পর থেকে দুনিয়ার
জীবনের উপকার লাভ না করা) উপকার লাভ
না করলে শাহীদ। পান করা, আহার করা, ঘুমানো,
চিকিৎসা হওয়া, তাবুতে আশ্রয়
নেয়া ইত্যাদি দুনিয়ার জীবনের উপকার লাভ করলে,
সে হুকমী শাহীদ নয়।তাকে গোসল দিতে হবে।
* হযরত ওমার (রাঃ) ও হযরত আলী (রাঃ) আহত হওয়ার
পর দুনিয়ার জীবনের উপকার লাভ করায়,
হুকমী শাহীদ গন্য না হওয়ায় তাঁদের গোসল
দেয়া হয়।
* কিন্তু হযরত ওসমান (রাঃ) আহত হওয়ার পর কোন
দুনিয়াবী উপকার লাভ করেননি। তাই শাহীদ
হিসাবে গোসল দেয়া হয়নি। হযরত ওমার (রাঃ) ও
হযরত আলী (রাঃ) আখিরাতে শাহীদের সাওয়াব
পাবেন, ইনশা আল্লাহ ।
ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺍﻋﻠﻢ ﺑﺎﻟﺼﻮﺍﺏ
মুহাম্মাদ রবিউল বাশার (৪)
*** শাহীদে হাকীকীর সঙ্গা :
ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻌﻢ ﻣﻦ ﻗﺘﻞ ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻬﻮ ﺷﻬﻴﺪ
ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻮﺩﺍﻭﺩ
অর্থ :প্রিয় নাবী (সাঃ) বলেছেন, যে মুমিন আল্লাহর
পথে নিহত হয়, সে শাহীদ। (আবু দাউদ)
* আল্লাহর পথ * এর ব্যাখ্যা সহীহ বুখারীর
একটি হাদীসে উল্লেখ আছে।
ﻋﻦ ﺍﺑﻲ ﻣﻮﺳﻲ ﺭﺽ ﻗﺎﻝ ﺟﺎﺀ ﺭﺟﻞ ﺍﻟﻲ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻌﻢ
ﻓﻘﺎﻝ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻳﻘﺎﺗﻞ ﻟﻠﻤﻐﻨﻢ ﻭﺍﻟﺮﺟﻞ ﻳﻘﺎﺗﻞ ﻟﻠﺬﻛﺮ ﻭﺍﻟﺮﺟﻞ
ﻳﻘﺎﺗﻞ ﻟﻴﺮﻱ ﻣﻜﺎﻧﻪ ﻓﻤﻦ ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻗﺎﻝ ﻣﻦ ﻗﺎﺗﻞ
ﻟﺘﻜﻮﻥ ﻛﻠﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻫﻲ ﺍﻟﻌﻠﻴﺎ ﻓﻬﻮ ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﺭﻭﺍﻩ
ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ
অর্থ : হযরত আবু মুসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্নিত।
তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি প্রিয় নাবী (সাঃ) এর
নিকট আগমন করে জিঙ্গাসা করে,
একব্যক্তি গানীমাতের জন্য যুদ্ধ করে, আর এক
ব্যক্তি স্মৃতি রক্ষার জন্য লড়াই করে, আর এক
ব্যক্তি নিজের অবস্থান দেখানোর জন্য যুদ্ধ করে।
অতএব কে আল্লাহর পথে আছে? তখন তিনি বলেন,
যে ব্যক্তি আল্লাহর কালিমা বিজয়ী হওয়ার জন্য
যুদ্ধ করে, সে আল্লাহর পথে আছে। (সহীহ বুখারী)
এই হাদীস থেকে জানা যায় যে, আল্লাহর
বানী বিজয়ী হওয়ার জন্য যুদ্ধ করলে আল্লাহর
পথে হয়। অতএব আল্লাহর বানী বিজয় হওয়ার জন্য
যুদ্ধ করতে যেয়ে নিহত হলে আল্লাহর পথে নিহত।
এবং শাহীদ বলে গন্য। আল্লাহর বানী, আল্লাহর
কালিমা, আল্লাহর দ্বীন বিজয়ী করতে যেয়ে নিহত
হলে হাকীকী শাহীদ বলে গন্য। এই শাহীদের
মর্যাদা আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশী।
নিম্মে আল্লাহর পথে নিহত শাহীদের
কয়েকটি মর্যাদা উল্লেখ করা হলো।
(১)বিশ্ব নাবী, শ্রেষ্ঠ নাবী ও শেষ নাবী আল্লাহর
পথে নিহত শাহীদ হওয়ার কামনা করেছেন।
(২)আল্লাহর পথে নিহত শাহীদের সমস্ত গুনাহ মাফ
হয়ে যায় ঋন ছাড়া। (৩)সমস্ত দুনিয়ার সবকিছুর
মালিকানা দিলেও জান্নাতে প্রবেশ করার পর কোন
ব্যক্তি পৃথিবীতে ফিরে আসতে কামনা করবে না কিন্তু
শাহীদ ব্যতিক্রম। শাহীদ শাহাদাতের সম্মান ও
মর্যাদা দেখে পৃথিবীতে এসে দশবার শাহীদ হওয়ার
কামনা করবে।
(৪)শাহীদকে কবরের
শাস্তি থেকে মুক্তি দেয়া হবে।
(৫)শাহীদকে জান্নাতের অবস্থান দেখানো হবে।
(৬)কিয়ামাতের ভয়াবহভয় থেকে নিরাপদ থাকবে।
(৭)কিয়ামাতের দিন শাহীদের মাথায় এমন মুল্যবান
তাজ পরানো হবে, যার ইয়াকুত পাথর দুনিয়া ও তার
মধ্যস্থিত সবকিছু থেকে উত্তম।
(৮)বাহাত্তর জন বড়বড় চক্ষুবিশিষ্ট
সুন্দরী সাথী করে দেয়া হবে।
(৯)শাহীদের নিকটাত্মীয় সত্তরজনের সুপারিশ কবুল
করা হবে।
(১০) শাহীদকে মৃত বলা ও মৃত ধারনা করা নিশেধ।
(১১) শাহীদরা আল্লাহর কাছে রিজিক পায়।
(১২)শাহীদ আল্লাহর নিয়ামাত পেয়ে আনন্দিত ।
*** আর যারা শাহীদের সাওয়াব পাবে। কিন্তু
আল্লাহর পথে নিহত হয়নি, তারা হলো
(১)ডুবে মরা ব্যক্তি,
(২)পুড়ে মরা ব্যক্তি,
(৩)দেওয়াল চাপা পড়ে মরা ব্যক্তি,
(৪)পেটের অসুখে মরা ব্যক্তি,
(৫)মহামারীতে মরা ব্যক্তি,
(৬)দ্বিনী জ্ঞান অন্বেষন করতে যেয়ে মরা ব্যক্তি।
(৭)জুমুয়ার দিন মরা ব্যক্তি।
(৮)উম্মাতের বিপর্যয়ের সময় রাসুলুল্লাহ (সাঃ)
নীতি ও আদর্শ আকড়ে থাকা ব্যক্তি,
ইত্যাদি শাহীদগন আখিরাতে একপ্রকার শাহীদের
স্তর পাবে। এরা দুনিয়ায় শাহীদ বলে গন্য হবেনা!
(১)নিহত শাহীদদের গোসল হয় না কিন্তু এদের গোসল
দেয়া হবে।
(২) নিহত শাহীদদের রক্তাক্ত অবস্থায় দাফন
করা হয়। এদের তা করা হবে না।
(৩) কাফনের উপযুক্ত কাপড় ছাড়া আর সব
খুলে নেয়া যাবে। এদের স্বাভাবিক কাফন
দিতে হবে।
*** যে মুমিন দুনিয়ার কোন স্বার্থ পাওয়ার জন্য,
সুনাম অর্জন করার জন্য, লোকদের কৃতিত্ব দেখানোর
জন্য লড়াই করতে করতে নিহত হয়, সে দুনিয়ায়
শাহীদ বলে গন্য হলেও আল্লাহর কাছে প্রকৃত শাহীদ
বলে গন্য নয়। সে জাহান্নামী হবে আল্লাহর
সন্তুষ্টির জন্য না হওয়ায়।
*** যে মুমিন জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য,
ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য, পাশ্চাত্য
গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার
জন্য, ইসলামের সাথে সাংঘার্ষিক মত ও পথ
প্রতিষ্ঠের জন্য লড়াই করতে যেয়ে নিহত হবে,
সে শাহীদ পদবাচ্য পাওয়ার অযোগ্য,
সে জাহান্নামের অগ্নিকাষ্ঠ হবে, আল্লাহর রাসুল
(সাঃ) বলেছেন,
ﻭﻣﻦ ﺩﻋﺎ ﺑﺪﻋﻮﻱ ﺍﻟﺠﺎﻫﻠﻴﺔ ﻓﻬﻮ ﻣﻦ ﺟﺜﻲ ﺟﻬﻨﻢ ﻭﺍﻥ
ﺻﺎﻡ ﻭﺻﻠﻲ ﻭﺯﻋﻢ ﺍﻧﻪ ﻣﺴﻠﻢ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ
অর্থ :আর যে ব্যক্তি জাহিলিয়াতের দিকে আহবান
করবে, সে জাহান্নামের ইন্ধন হবে। যদিও
রোজা রাখে, নামায পড়ে এবং মুসলিম ধারনা করে।
(জামি তিরমিজী)
ইসলাম বিরুধী সকল মত পথ হলো জাহিলিয়াত।
ইসলাম বিরুধী মতবাদের দিকে আহবান করলে,
জাহান্নামে যেতে হবে, ইসলাম বিরুধী মতবাদ
জাহিলিয়াতের জন্য নিহত হলেও
জাহান্নামে যেতে হবে।নামাজ, রোজা করে মুসলিম
দাবী বা ধারনা করলেও,মাফ হবে না।
*** কাফির, মুশরিক, ইয়াহুদী, খৃষ্টানরা নিজ নিজ
ধর্মের জন্য নিহত হলে বা তাদের দেশ ও জাতির
জন্য চরম ও পরম ত্যাগ করতে যেয়ে নিহত হলে,
তাদের ধর্মীয় ও জাতীয় পরিভাষা ব্যবহার
করতে পারে, কিন্তু এই ইসলামী পরিভাষাকর তাদের
ব্যবহার করা চরম জুলুম, অবিচার, এই পরিভাষার
অবমননা ও ইসলামী পরিভাষার বিকৃতি করার
অন্তর্ভুক্ত।
*** হুকমী শাহীদের সঙ্গা হলো :
ﻫﻮ ﻣﻜﻠﻒ ﻣﺴﻠﻢ ﻃﺎﻫﺮ ﻗﺘﻞ ﻇﻠﻤﺎ ﻭﻟﻢ ﻳﺠﺐ ﺑﻪ ﻣﺎﻝ
ﻭﻟﻢ ﻳﺮﺗﺚ (
অর্থ :আকিল (জ্ঞানী) বালিগ (বয়স প্রাপ্ত) মুসলিম
(দ্বীন -ইসলাম গ্রহনকারী)যাকে মাজলুম অবস্থায়
হত্যা করা হয়েছে,যে হত্যার কারনে মাল(দিয়াত)
ওয়াজিব হয়নি এবং( আহত হওয়ার পর থেকে মৃত্যু
পর্যন্ত) দুনিয়ার জীবনের উপকার লাভ করেনি।
যেমন
(১)আহার করেনি,
(২)পানি পান করেনি,
(৩)ঘুমায়নি
(৪)কোন তাবুতে আশ্রয় নেয়নি
(৫)জ্ঞান থাকা অবস্থায় এক ওয়াক্ত পরিমান নামাজ
সময় অতিবাহিত না হলে।
(৬)চিকিৎসা না হলে
(৭)দুনিয়ার বিষয়ে অসিয়াত না করলে। (৮)অনেক
কথা না বললে।
(৯)ক্রয় -বিক্রয় না করলে,
ইত্যাদি নাকরে মারা গেলে হুকমী শাহীদ।)
*** ব্যাখ্যা :
* (আকিল -জ্ঞানী)
যার বিবেক নেই, পাগল, সে (দুনিয়ার হুকুমে/
বিধানে) শাহীদ নয়। তাকে গোসল দিতে হবে।
* (বালিগ-বয়সপ্রাপ্ত)
নাবালিগ শাহীদ নয়। দুনিয়ার হুকুমে/
বিধানে শাহীদ না হওয়ায় গোসল দিতে হবে।
* (মুসলিম-দ্বীন -ইসলাম গ্রহনকারী)
কোন কাফির, মুশরিক, ইয়াহুদী ও খৃষ্টান শাহীদ নয়।
তারা নিহত হলে মুসলিম নিকটাত্মীয় গোসল দেবে।
* (তাহির-পবিত্র)নাপাক ব্যক্তি দুনিয়াবী শাহীদ
নয়। তাকে গোসল দিতে হবে।
* (জুলমান-মাজলুম অবস্থায়)
কেসাসের মাধ্যমে বা হাদ্দের মাধ্যমে নিহত
হয়,তাহলে মাজলুম অবস্থায় নিহত না হওয়ায় শাহীদ
নয়। তাকে গোসল দিতে হবে।
* (কুতিলা -হত্যা করা হয়) হত্যা না করা হলে,
নিহত না হলে শাহীদ নয়। গোসল দিতে হবে। যেমন
ডুবে মরা, পুড়ে মরা, দেওয়াল চাপা পড়ে মরা,পেটের
রোগে মরা,
মহামারীতে মরা ইত্যাদিতে হত্যা না হওয়ায় গোসল
দিতে হবেনা! এরা দুনিয়ের হুকুমে /বিধানে শাহীদ
না। অবশ্য হাদীস অনুযায়ী আখিরাতে শাহীদ।
* (যে হত্যার কারনে মাল (দিয়াত) ওয়াজিব নয়)
কেসাস ওয়াজিব হলে, সে শাহীদ। দিয়াত ওয়াজিব
হলে সে শাহীদ নয়, তার গোসল দিতে হবে।
* (অলাম ইউরতাস্সা -আহত হওয়ার পর থেকে দুনিয়ার
জীবনের উপকার লাভ না করা) উপকার লাভ
না করলে শাহীদ। পান করা, আহার করা, ঘুমানো,
চিকিৎসা হওয়া, তাবুতে আশ্রয়
নেয়া ইত্যাদি দুনিয়ার জীবনের উপকার লাভ করলে,
সে হুকমী শাহীদ নয়।তাকে গোসল দিতে হবে।
* হযরত ওমার (রাঃ) ও হযরত আলী (রাঃ) আহত হওয়ার
পর দুনিয়ার জীবনের উপকার লাভ করায়,
হুকমী শাহীদ গন্য না হওয়ায় তাঁদের গোসল
দেয়া হয়।
* কিন্তু হযরত ওসমান (রাঃ) আহত হওয়ার পর কোন
দুনিয়াবী উপকার লাভ করেননি। তাই শাহীদ
হিসাবে গোসল দেয়া হয়নি। হযরত ওমার (রাঃ) ও
হযরত আলী (রাঃ) আখিরাতে শাহীদের সাওয়াব
পাবেন, ইনশা আল্লাহ ।
ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺍﻋﻠﻢ ﺑﺎﻟﺼﻮﺍﺏ
Comments
Post a Comment