শাশুড়ি বদ মেজাজী ( একটি শিক্ষনীয় গল্প)

image

অনেক দিন আগের কথা।

লিলি নামে এক চায়নীজ মেয়ে বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি গেল। কিছুদিনের মধ্যে সে বুঝতে পারল তার শাশুড়ি একজন বদ মেজাজী মহিলা।
তিনি তাকে একদমই পছন্দ করেন না।
লিলির আচার ব্যবহারে তিনি যেমন বিরক্তহন, শাশুড়ির ব্যবহারে লিলিও অতিষ্ঠ হয়।

দিন যায়। লিলি আর তার শাশুড়ির ঝগড়াচলতে থাকে। সারাক্ষন ঝগড়া লেগে থাকে।
স্বামী বেচারার অবস্থা খারাপ, বাড়ি এলেই মা অভিযোগ করেন বউ এর বিরুদ্ধে আর রাতে বউ এর অভিযোগ শাশুড়ির বিরুদ্ধে।
লিলি চিন্তা করল সে কোন ভাবেই শাশুড়ির সংগে থাকবে না। অন্যদিকে স্বামী বৃদ্ধা
মা কে ছেড়ে আলাদা ভাবে থাকবেনা।
নিজের সংসারের সুখের কথা ভেবে
অবশেষে লিলি একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিল।
সে শরণাপন্ন হলো তার এক চাচা মিস্টার ফু- ওয়াং এর যে কিনা হার্বাল চিকিৎসা
বিদ্যায় অভিজ্ঞ।
লিলি চাচাকে সব খুলে বলল। সে বলল চাচা আমাকে এমন হারবাল ঔষধ দিন যা দিয়ে আমি আমার শাশুড়িকে মেরে ফেলতে পারি।
কারণ এই মহিলার সাথে আমার থাকা সম্ভব নয়।
মিস্টার ফু-ওয়াং ভাতিজির কথা মন দিয়ে শুনলেন। অবশেষে বললেন মা আমি তোমাকে
অবশ্যই সাহায্য করব। তবে কাজটা খুব চতুরতার
সাথে করতে হবে, খুব দ্রুত মারা যায় এমন বিষ
দেয়া যাবে না তাতে তুমি খুনী হিসাবে ধরা
পড়ে যেতে পার। তুমি খুনি হিসাবে ধরা
পড়লে সুখের সংসার তো আর হবে না, জেলে
থাকতে হবে। তাই কাজটা করতে হবে ধীরে
ধীরে, আমি যেভাবে বলব সেভাবে কাজটা
করবে। লিলি বলল চাচা আপনি যেভাবে
বলবেন আমি সেভাবেই করব। আপনি বলুন
আমাকে কী করতে হবে?
মিস্টার ফু-ওয়াং লিলি কে বললেন আমি
তোমাকে কিছু ধীর গতির হারবাল বিষ দিব,
যা তুমি প্রতিদিন খাবারের সাথে মিশিয়ে
তোমার শাশুড়িকে খাওয়াবে। এক বছর
লাগবে তোমার কাজ হতে। তবে কোন সন্দেহ
যেন না হয় সেজন্য উনার সাথে ভাল ব্যাবহার
করবে। ভাল ভাল খাবার তৈরী করে এই
হারবাল মিশিয়ে খাওয়াবে। একেকদিন
একেক খাবার দিবে যেমন কোন দিন স্যুপ,
কোন দিন কেক, কোন দিন নুডুলস এই রকম।
প্রতিদিন খাওয়াবে। মাত্র এক বছর, তারপর
তোমার মুক্তি। সুখের সংসার!!
একথা বলে মিস্টার ফু-ওয়াং তাকে ১৫
দিনের বিষ দিলেন। ভাতিজি কে বলে
দিলেন প্রতি ১৫ দিন পর পর যেন সে এসে
তার কাছ থেকে রিফিল বিষ নিয়ে যায়। ভদ্র
মহিলা তার জীবন বিষময় করে দিয়েছে। আর
মাত্র ৩৬৫দিন তার পর মুক্তি!! লিলি খুশি মনে
ঔষধ নিয়ে চলে গেল।
দিন যেতে থাকে। প্রতিদিন লিলি নতুন-নতুন
খাবার বানিয়ে শাশুড়িকে খাওয়ায়। তার
ষড়যন্ত্র যেন ধরা না পড়ে সে জন্য অত্যন্ত
ভাল ব্যবহার করে। শাশুড়ি একটু-আধটু খারাপ
ব্যবহার করলেও সে শান্ত থাকে। শাশুড়িও
ভাল ব্যবহার পেয়ে কেমন যেন বদলে যেতে
থাকে। তিনিও এই মেয়েটির প্রতি ভাল
ব্যবহার করতে থাকেন। অন্যের কাছে গল্প
করেন তার ছেলের বউয়ের মত ভাল বউ কারো
হয় না। ঠিক যেন নিজের মেয়ের মত।
ছয়মাস পর পুরো বাসার পরিবেশ বদলে যায়।
স্বামী আনন্দময় চিত্তে বাসায় ফিরে। মা
যখন বউ এর গুণগান করে তার মনটি ভরে যায়।
স্ত্রীর প্রতি তার ভালবাসা বেড়ে যায়।
স্ত্রীর কাছ থেকে মায়ের প্রশংসা শুনে তার
হৃদয় প্রশান্তিতে ভরে ওঠে।
বছর পুরো হতে চলল। এবার লিলি বিষন্ন মনে
চাচার সাথে দেখা করে। চাচাকে সে বলে
তার শাশুড়ি এখন অনেক ভাল হয়ে গেছে।
তাকে নিজের মেয়ের মতই দেখে। এখন আর
তাদের ঝগড়া হয় না। অন্যদের কাছে তার
প্রশংসা করে। স্বামী তাকে আগের চেয়ে
অনেক বেশী ভালবাসে। সুতরাং সে চাচাকে
অনুরোধ করে এমন কোন ঔষধ দিতে যাতে
এক
বছরের বিষক্রিয়া নষ্ট হয়ে যায়। সে চায় না
তার শাশুড়ি মারা যাক!! বরং শাশুড়িকে
নিয়েই তার সংসার এখন অনেক সুখের, সে
সেটা থেকে বঞ্চিত হতে চায় না।
মিস্টার ফু-ওয়াং এবার লিলি কে জিজ্ঞেস
করেন সে এখন আসলেই কী চায়? কারন এখন
তিনি ফাইনাল ডোজ দিতে চান যাতে এক
সপ্তাহের মধ্যে কার্যসিদ্ধি হবে অর্থাৎ
লিলির শাশুড়ি মারা যাবেন। লিলি এবার
চাচার পা জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেংগে
পড়ে। চাচা এমন ঔষধ দিন যাতে আমার
শাশুড়ি মারা না যান, তিনি আমার মায়ের
মত, আমি আগে বুঝতে পারিনি।
চাচা এবার হাসেন। লিলি কে বললেন শান্ত
হও মা, আমি তোমার শাশুড়িকে কোন বিষ
দেইনি বরং যা দিয়েছি তা উনার জন্য
প্রয়োজনীয় ভিটামিন। উনি এর প্রভাবে
মারা যাবেন না। আর বিষ যেটা ছিল সেটা
তোমার মনে। সেটা তুমি তোমার ব্যবহার
দিয়ে ক্ষয় করে দিয়েছ। লিলি প্রথমবার
শাশুড়িকে খুন করার পরিকল্পনা করে যে রকম
খুশী হয়ে বাসায় ফিরেছিল এবার তারচেয়ে
অনেক বেশী খুশী হয়ে বাসায় ফিরে যায় যখন
জানল শাশুড়িকে খুন করার এক বছরের চেষ্টা
ব্যর্থ হয়েছে!
এই গল্পের চাচা মিঃ ফুয়াং এর থেকে
আমরা শিখতে পারি হিকমা এবং তার সঠিক
প্রয়োগ। আর ঘটনাটা থেকে বুঝতে পারি যে,
অন্তরের বিষই মানুষের পারস্পারিক দা-
কুমড়ার জন্য দায়ী। মানুষের অন্তরের এই
বিষবৃক্ষ বেঁচে থাকে হিংসা, অহংকার,
অসহিষ্ণুতা, আর গীবতের বীজতলাতে। অতএব
এসব থেকে মুক্ত হতে হলে এমন পাওয়ারফুল
একটা জিনিস লাগবে যার সামনে এর
কোনটাই দাঁড়াতে পারে না।
সেটি হলো ভালোবাসা
-মাহমূদুর রহমান

Comments

Popular posts from this blog

বাংলাদেশী মেয়েদের হট ছবি

হে যুবক কোন দিকে যাও!! জান্নাতি হুর তোমাকে ডাকছে

ইসলামের দৃষ্টিতে যৌন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও শক্তি বৃদ্ধিকারী খাদ্য-পানীয়