আদর্শ স্বামী হিসেবে রাসূলুল্লাহ সাঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর মধ্যে বিশ্বমানবতার উত্তম
আদর্শ রয়েছে "

মুহাম্মাদ রবিউল বাশার

১২) আদর্শ স্বামী হিসাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)।
পরিবারের প্রধান সাধারনতঃ স্বামী হয়ে থাকে।মানব
ইতিহাসের প্রথম পরিবার. (আদি পিতা ও
আদি মাতা)হযরত আদম(আঃ)ও হযরত
হাওয়া (আঃ)প্রথম স্বামী -স্ত্রী। স্বামী -
স্ত্রী নিয়ে পরিবার গঠিত হয়। যেভাবে পারিবারিক
জীবন-যাপন করলে দুনিয়ার জীবন সুখী ও শান্তিপুর্ন
জীবন হয়, আখিরাতের জীবনের জন্য সহায়ক হয়,
সে জীবন হলো আদর্শ জীবন। পারিবারিক জীবন
সুদৃঢ় ও শক্তিশালী হলে, সমাজ সুন্দর হয়।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) স্বামী হিসেবে যে আদর্শ রেখেছেন,
সে আদর্শ সকল পুরুষ গ্রহন
করে স্বামী হিসাবে দায়িত্ব পালন করলে দুনিয়ার
পারিবারিক জীবন সুখী হবে, পরকালের জন্য সহায়ক
হবে এবং পরিবার সুদৃঢ় ও শক্তিশালী হবে।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)এর ১১ জন স্ত্রী ছিলেন। হযরত
খাদীজা (রাঃ) প্রথম থাকতে দ্বিতীয় বিবাহ করেননি।
রাসুলের ৫০ বৎসর বয়সে মাক্কী জীবনের ১০ম
নববীতে সনে খাদীজা (রাঃ) ইন্তিকাল করেন। যয়নাব
বিনতে খুযাইমা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর
জীবদ্দশায় ইন্তিকাল করেন। ৯জন
একসাথে থাকা অঅবস্থায় রাসুলুল্লাহ (সাঃ)
ইন্তিকাল করেন।
১১জন স্ত্রীর নাম নিম্মরুপ। যথা ১)হযরত
খাদীজা (রাঃ),২)হযরত
আয়শা সিদ্দীকা (রাঃ),৩)হযরত সাওদা (রাঃ),৪)
হযরত হাফসা (রাঃ), ৫)হযরত যায়নাব বিনতে জাহাশ
(রাঃ), ৬)হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) ৭)হযরত
উম্মে হাবীবা (রাঃ) ৮)হযরত জুয়াইরিয়া (রাঃ),
৯)হযরত মাইমূনা (রাঃ), ১০) হযরত যায়নাবয়
বিনতে খুজাইমা (রাঃ) ১১) হযরত সুফিয়া (রাঃ)।
(ক) পরিবারের আদর্শ দায়িত্বশীল
স্বামী কতৃত্বশীল হিসাবে রাসুলুল্লাহ(সাঃ):
পুরুষকে নারীর উপর প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
স্বামীকে স্ত্রীর দায়িত্বশীল
করা হয়েছে দুটি কারনে। যথা (১)আল্লাহর প্রাকৃতিক
নিয়ম অনুযায়ী পুরুষকে নারীর উপর প্রাধান্য
দেয়া হয়েছে। (২)স্বামী স্ত্রীর জন্য মোহরানা,
বাসস্থান, খাদ্য, বস্ত্র ও চিকিৎসার জন্য খরচ
করবে। স্বামীকে বাদ দিয়ে স্ত্রীকে কতৃত্ব
দেয়া আল্লাহর নিয়ম বিরুধী। খরচ করবে একজন,
আর কতৃত করবে আর একজন। এটা অবিচার।
আল্লাহর প্রাকৃতিক নিয়মে পুরুয়ষকে কতৃত্ব
দেওয়া হয়েছে।
(১)রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আদর্শ স্বামী হিসেবে কতৃ্ত্বের
দাবী পুরন করতেন।
(ক) স্ত্রীদের মাহর দিয়েছেন।
(খ) স্ত্রীদের পৃথক পৃথক বাসস্থান কামরা দিয়েছেন।
(গ) স্ত্রীদের পৃথক পৃথক বস্ত্র দিয়েছেন।
(ঘ) স্ত্রীদের পৃথক পৃথক খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন।
(ঙ) প্রতিদিন আসরের নামাজের পর খোজ খবর
নিতেন।
একবার খাদ্যের মান বৃদ্ধির জন্য স্ত্রীগন সম্মিলিত
ভাবে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে আবেদন জানালে,
বিশ্বনাবী(সাঃ)এর মত দায়িত্বশীল স্বামীর মানষিক
অবস্থার দিকে খেয়াল না করা, তাঁর দায়িত্বের
দিকে নজর না দেয়া এবং সে সময়কার পরিবেশের
পরি ভ্রুক্ষেপ না করা, তাঁর মত ব্যক্তির জীবন
সঙ্গিনীদের জন্য সমিচীন ছিলনা, তাই আল্লাহ
তাঁদের প্রশিক্ষনের জন্য আয়াত অবতীর্ন করলেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
ﻲﺒﻨﻟﺍﺎﻬﻯﺍﺎﻯ ﻚﺟﺍﻭﺯﻻ ﻞﻗ ﻦﺘﻨﻛ ﻥﺍ ﻥﺩﺮﺗ ﺓﺎﻴﺤﻟﺍ
ﺎﻬﺘﻨﻳﺯﻭﺎﻴﻧﺪﻟﺍ ﻦﻜﻌﺘﻣﺍ ﻦﻴﻟﺎﻌﺘﻓ ﻦﻜﺣﺮﺳﺍﻭ ﺎﺣﺍﺮﺳ
ﻼﻴﻤﺟ ﻥﺍﻭ ﻦﺘﻨﻛ ﻥﺩﺮﺗ ﻪﻠﻟﺍ ﺭﺍﺪﻟﺍﻭ ﻪﻟﻮﺳﺭﻭ ﺓﺮﺧﻻﺍ
ﻥﺎﻓ ﻪﻠﻟﺍ ﺪﻋﺍ ﺕﺎﻨﺴﺤﻤﻠﻟ ﻦﻜﻨﻣ ﺎﻤﻴﻈﻋ ﺍﺮﺟﺍ
অর্থ হে নাবী, তোমাদের স্ত্রীদের বলে দাও,
তোমরা যদি দুনিয়ার জীবন ও তার চাকচিক্য -
সৌন্দয্য চাও, তাহলে এস, তোমাদের উপভোগের
দ্রব্য দেবো এবং সুন্দরভাবে তোমাদের পৃথক
করে দেব।
আর যদি তোমরা আল্লাহ, তাঁর রাসূল
এবং আখিরাতের বাড়ী চাও, তাহলে আল্লাহ
তোমাদের মধ্যে সৎকর্মশালিনীদের জন্য
মহা পারিশ্রমিক তৈরী করে রেখেছেন। (সূরা আল -
আহযাব, আয়াত নং ২৮ও২৯)
বিশ্বনাবীর (সাঃ) জীবন সঙ্গিনী হিসাবে থাকার
জন্য আখিরাত মুখী জীবনযাপন তাঁরা জীবন -যাপন
করতেন,তারপর থেকে বিশ্বনাবীর দ্বীন কায়েমের গুরু
দ্বায়িত্ব পালনের প্রতি জীবন সঙ্গিনীদের গভীর
খেয়াল রেখে তাঁরা নিজেদের চাহিদা পেশ করতেন।
(২)স্ত্রীদের সাথে সুন্দর ব্যবহারের আদর্শ :
স্ত্রী দুনিয়ায় সবচেয়ে নিকটতম। তার সাথে আচার
ব্যবহার, কথা -বার্তা, অধিকার দেওয়ার
ক্ষেত্রে উত্তম ব্যবহার করতে হবে। আল্লাহ
তায়ালা বলেন,
ﻦﻫﻭﺮﺷﺎﻋﻭ ﻥﺎﻓ ﻑﻭﺮﻌﻤﻟﺎﺑ ﻦﻫﻮﻤﺘﻫﺮﻛ ﻲﺴﻌﻓ
ﻥﺍ ﺍﻮﻫﺮﻜﺗ ﻞﻌﺠﻳﻭ ﺎﺌﻴﺷ ﻪﻠﻟﺍ ﺍﺮﻴﺧ ﻪﻴﻓ ﺍﺮﻴﺜﻛ
অর্থ আর তোমরা স্ত্রীদের সাথে পরিচিত পন্থায়
ব্যবহার কর। তারপর তোমাদের
যদি তাদেরকে অপছন্দ হয়, তাহলে আশা করা যায়,
তোমরা একটা বিষয় অপছন্দ করছ অথচ আল্লাহ
উহাতে প্রচুর কল্যান দেবেন। (সুরা আন -নিসা,
আয়াত নং ১৯)
স্ত্রীদের সাথে সদাচরন করা আবশ্যক। কোন নারীর
এক দিক অপছন্দ হলে, ঐ নারীর মধ্যে আল্লাহ
অনেক কল্যান রাখতে পারেন চিন্তায়
তাকে স্ত্রী হিসাবে রেখে ভাল ব্যবহার করা উচিৎ।
স্ত্রীর সাথে ভাল ওসদাচরন করা বিশ্বনাবী(সাঃ) এর
আদর্শ। আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেছেন,
ﻢﻛﺮﻴﺧ ﻢﻛﺮﻴﺧ ﻪﻠﻫﻻ ﺎﻧﺍﻭ ﻢﻛﺮﻴﺧ ﻲﻠﻫﻻ
অর্থ তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই
যে নিজের পরিবারের সাথে উত্তম ব্যবহার করে। আর
আমি আমার স্ত্রীর সাথে উত্তম ব্যবহার কারী।
(মিশকাত)
আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ﺲﻴﻟ ﻢﻜﺌﻟﻭﺍ
ﻢﻛﺭﺎﻴﺨﺑ ﻩﺍﻭﺭ ﺩﻭﺍﺩﻮﺑﺍ অর্থ
স্ত্রীদেরকে প্রহারকারীরা তোমাদের মধ্যে উত্তম
ব্যক্তি নয়। (আবু দাউদ)
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বিশ্বমানবতার জন্য পরিবারের
স্বামী হিসাবে আদর্শ।
(৩) স্ত্রীদের সমান মর্যাদা প্রদানে রাসুলুল্লাহ
(সাঃ) বিশ্বমানবতার জন্য আদর্শ।
মুসলমানদের জন্য দুটি শর্তে চারটি বিবাহের
অনুমতি আছে। যথা (১)দৈহিক ও আর্থিক
সচ্ছলতা থাকা। (২) স্ত্রীদের মধ্যে খাদ্য, বস্ত্র,
বাসস্থান ও রাত যাপনে সমান ও ইনসাফ করা।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর জন্য শর্তহীন একাধিক
বিবাহের অনুমতি থাকলেও তিনি(সাঃ) ইনসাফের
আদর্শ রেখেছেন। মৃত্যুর এক সপ্তাহের মত
পুর্বে বলতে থাকেন আগামী কাল আমি কোথায়
থাকবো? তখন স্ত্রীগন
বুঝতে পেরে আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ)এর
ঘরে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)এর থাকার অনুমতি দেন। মৃত্যুর
প্রায় পুর্ব পর্যন্ত স্ত্রীদের মধ্যে ইনসাফের আদর্শ
রেখে যান!
(৪) স্ত্রীদের বয়স অনুপাতে মনতুষ্টির ব্যবস্থা করা।
প্রথমে একবার হযরত আয়শা সিদ্দীকা (রাঃ) এর সাথ
দৌড় প্রতিযোগিতা করেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ)
কে পিছনে রেখে হযরত আইশা সিদ্দীকা (রাঃ)
এগিয়ে বিজয়ী হন। পরবর্তীতে মুমিন মাতা হযরত
আয়শা সিদ্দীকা (রাঃ) এর স্বাস্থ্য একটু ভাল হলে,
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সাথে প্রতিযোগিতায় হেরে যান।
এভাবে স্ত্রীদের মনরন্জনের ব্যবস্থা করতেন।
একবার হাবসা থেকে কিছু সংখ্যক সাহাবী (রাঃ)
মসজিদে নববীর সামনে যুদ্ধের মহড়া দেন,
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) হযরত আয়শা সিদ্দীকা (রাঃ)
কে নিয়ে হুজরার ভিতর থেকে এই মহড়া দেখান। এটাও
তাঁর মনতুষ্টির জন্য। (সহীহ আল বুখারী)
(৫) সফরে স্ত্রীদের মনতুষ্টির জন্য বাছাইয়ের
ক্ষেত্রে লটারী করতেন।
স্ত্রীদের মতামতের গুরুত্ব দিতেন। সফরে কোন
স্ত্রী সাথে নেয়ার ইচ্ছা হলে নিজের ইচ্ছামত
কাউকে বাছাই করতেন না। কেননা এতে অন্যান্য
স্ত্রীদের মনভাঙ্গার সম্ভাবনা ছিল। তাই
তিনি লটারী করতেন, লটারীতে যার নাম উঠতো,
তাকে নিয়ে সফরে যেতেন। এভাবেও স্ত্রীদের
মধ্যে সমতা রক্ষার আদর্শ স্থাপন করেন। (সহীহ
আল বুখারী)
(৬)স্ত্রীদের সাথে অনেক সময় ভালোভাল গল্পের
আসর করতেন।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মাঝে মাঝে স্ত্রীদের
সাথে ভালোভাল শিক্ষনীয় গল্পের আসর করতেন।
একবার রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বারোজন
মহিলা মিলে নিজেদের স্বামীদের ব্যপারে আলোচনার
গল্প করেছিলেন। (সহীহ আল -বুখারী)
(৭)রাসুলুল্লাহ (সাঃ)এর স্ত্রীরা (রাঃ)মানুষ ছিলেন।
সতীনদের মধ্যে মানবিক কারনে আত্মমর্যাদা বোধ
হেতু মাঝে মাঝে একটু রাগ হতো। তাতে বিজ্ঞতার
সাথে ফায়সালা করতেন। একবার হযরত
আয়শা সিদ্দীকা (রাঃ) নিকট রাসূলুল্লাহ (সাঃ)
থাকা অবস্থায় হযরত সুফিয়া (রাঃ) পেয়ালার
সাথে কিছু তরকারী খাদ্য তার কাছে প্রেরন করেন ।
হযরত আয়শা সিদ্দীকা (রাঃ)এর ঘরে রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) থাকতে সুস্বাদু খাদ্য পাঠানোর
কারনে আত্মমর্যাদায় আঘাত লাগে। তাই
তিনি পাত্রে আঘাত করেন। পাত্রটি পড়ে ভাঙ্গে যায়।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ)
ভাঙ্গা দুটি একসাথে করে তাতে তরকারী উঠান।
সুফিয়া (রাঃ) এর খাদেমকে বিলম্ব করতে বলেন।
খাওয়া শেষে সুফিয়া (রাঃ) এর পাত্রটি হযরত
আয়শা (রাঃ) এর ঘরে রেখে সুফিয়া (রাঃ)এর নিকট
খাদিমের মাধ্যমে হযরত আয়শা (রাঃ)এর ভাল পাত্র
পাঠান এবং বলেন, পেয়ালার
বিনিময়ে পেয়ালা এবং তরকারীর বিনিময়ে তরকারী।
(আবু দাউদ)
(৮)স্ত্রীকে ভালবাসার কারনে অতিরঞ্জিত
কথা বলতেন না।
হযরত আয়শা সিদ্দীকা (রাঃ)একদা দোজখের
কথা স্মরন করে কাঁদছেন। এমনি সময় রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) তাঁকে কাঁদতে দেখে জিঙ্গাসা করেন,
তুমি কাঁদছো কেন? তিনি বলেন, দোজখের
কথা স্মরন করে কাঁদছি। আপনি কি কিয়ামতের দিন
আপনার স্ত্রীদের কথা স্মরন করবেন? রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) বললেন, তিনটি মুহুর্তে কেউ কাউকে স্মরন
করবে না! (১)আমলনামা উড়িয়ে দেওয়ার সময়।
(২)আমল মাপের সময়। (৩)এবং পুলসিরাত পার হবার
সময়। (আবুদাউদ)
বিশ্বনাবীর (সাঃ)মধ্যে স্বামী হিসাবে উত্তম আদর্শ
বিদ্যমান।( চলবে)

Comments

Popular posts from this blog

বাংলাদেশী মেয়েদের হট ছবি

হে যুবক কোন দিকে যাও!! জান্নাতি হুর তোমাকে ডাকছে

ইসলামের দৃষ্টিতে যৌন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও শক্তি বৃদ্ধিকারী খাদ্য-পানীয়