বিয়ের আগে প্রেম নয়, বিয়ের পরে পরকীয়া নয়। (তিনটি ঘটনা)
। এক।
‘মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভালো
লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন, কিংবা চারটি পর্যন্ত। আর যদি এরূপ আশঙ্কা কর যে, তাদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে, একটিই।’ (সূরা নিসা-৩)
‘মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভালো
লাগে’ আয়াতের এই অংশটুকু খুব গুরুত্বপূর্ণ। মুসলমান ছেলে-মেয়েরা বিয়ের জন্য পছন্দ করতে, ভালোবাসতে পারবে কিনা- তা এই আয়াত থেকে চিন্তা করার বিষয়। কিছুদিন আগে একটা লেখা পড়েছিলাম, ‘আমি কি ভালোবেসে বিয়ে করতে পারবো?’
ওই লেখায় বলা হয়েছে, পারিবারিক পছন্দে বিয়ে হওয়াই একমাত্র ইসলামসম্মত পন্থা নয়। মুসলিম ছেলে-মেয়েদের নিজেদের পছন্দের
ব্যক্তিকে বিয়ে করার পূর্ণ অধিকার আছে। সূরা নিসার ওই আয়াতের অনুবাদে মারীফুল কুরআনে বলা হয়েছে, ‘যাদের তোমরা পছন্দ করো’ আর আল কুরআন একাডেমির হাফেজ মুনির আহমেদ অনুবাদ করেছেন, ‘যাদেরকে তোমরা ভালোবাসো’। তবে ভালো লাগা, পছন্দ করা, আর প্রেম এক কথা নয়। প্রেম হচ্ছে সম্পর্ক (রিলেশনশিপ)।
ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী প্রেম হতে পারে
একমাত্র বিয়ের মাধ্যমে। আমরা নিশ্চয়ই কাউকে হুট করে ‘ভালোবাসি’ বলে প্রেমে জড়াই না। তার সম্পর্কে জেনে বুঝে যখন মনে হয় এই মেয়েটা বা এই ছেলেটার সাথে একটা জীবন পার করে দেওয়া যায়, তখন তাকে বলি, ‘আই লাভ ইউ।’ ‘আই লাভ ইউ’ বলার পূর্ব পর্যন্ত চিন্তা-ভাবনা বৈধ (তবে এই জানা-বোঝার জন্য তার সাথে ব্যক্তিগতভাবে
মিশে অভিজ্ঞতা অর্জনের অনুমতি নেই)।
প্রেম করতে হলে আগে তাকে চিরদিনের জন্য আপন করে নিতে হবে।
‘তোমরা যখন বিয়ের জন্য এমন ছেলে বা
মেয়ে পেয়ে যাবে যার চরিত্র ও জ্ঞান-বুদ্ধিকে
তোমরা পছন্দ করবে, তো তখনই তার সাথে
বিয়ের সম্বন্ধ স্থাপন করো।’ (তিরমিযী)
এ অধিকার মেয়েদের জন্যও সমান। সাহল ইবন সাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একবার এক মহিলা সম্ভবত তার নাম লায়লা বিনতে কায়স ইবনুল খাতিম রাসূলুল্লাহর (সা.) কাছে হাজির হয়ে তার সাথে নিজেকে বিয়ের জন্য সরাসরি প্রস্তাব পেশ করেন। (বুখারি)
অতএব পছন্দের ব্যক্তিকে ভালোবাসি বলতে হবে বিয়ের দ্বারা। আর সেটা অবশ্যই অভিভাবকদের মাধ্যমে। অভিভাকদের কর্তব্য এতে সাড়া দেওয়া। ‘যদি এমন কেউ তোমার কাছে আসে (বিয়ের পয়গাম নিয়ে)– যার চরিত্র এবং তাকওয়া সন্তোষজনক,
তাহলে তার কাছে (তোমার মেয়েকে) বিয়ে
দাও। যদি এমনটি না করো, তাহলে পৃথিবীতে
মারাত্মকরকম ফেতনা ও বিপর্যয় দেখা দিবে’।
(তিরমিযি) দুঃখজনক হচ্ছে, আমাদের সমাজব্যবস্থায় বিয়েকে অনেক কঠিন করে রাখা হয়েছে। নিজের পায়ে দাঁড়ানো, চাকরি পাওয়া, প্রতিষ্ঠিত হওয়া কত কিছু। অথচ বিয়ের আগে প্রেমের সম্পর্ক কত সহজ! এর জন্য কিছুই লাগে না। অথচ এর চেয়ে সহজ হওয়া দরকার বিয়ে। আমার মতে, ছাত্রাবস্থায় বিয়ে হওয়া দরকার। তবে তখনই কেউ
কারো দায়িত্ব (আর্থিক) নিবে না। প্রেম করার সময় তো নেয় না। ঠিক সংসার করারও দরকার নেই। অনেকটা প্রেমের মতোই, তবে মানুষটিকে চিরদিনের জন্য নিজের করে নিয়ে, ভবিষ্যতের আশায় বসে থেকে নয়। সেটা অবশ্যই অবিভাবকদের সহযোগিতায়। এ ধরনের সংস্কৃতি চালু হওয়া কি খুব কঠিন?
যাকে আমি ভালোবাসছি, একসাথে ঘুরছি, বাসা থেকে খাবার রান্না করে এনে পরম মমতায় খাওয়াচ্ছি, কষ্টের টাকা বাঁচিয়ে উপহার কিনে দিচ্ছি, মন খারাপের
বিকেলে যার ভালোবাসায় আমার জীবন সুখের হয়ে উঠছে, হৃদয়ের মতো পবিত্রতম জায়গা যার জন্য বরাদ্দ করেছি, তখনও আমি নিশ্চিত নই- এই মানুষটার সাথে আজীবন থাকা হবে কিনা। প্রতিষ্ঠিত হওয়া-না হওয়া, নির্ধারিত সময়ের অপেক্ষা আর
পারিবারিক পছন্দের ফাঁদে আটকে যায় আমাদের ভালোবাসার অনুভূতি। এর চেয়ে অমানবিক আর কী হতে পারে! চোখের সামনে কত হৃদয় ভেঙে যেতে দেখলাম! তরুণ বয়সে আমরা একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হবো এটাই স্বাভাবিক। ভালোলাগবে, ভালো বাসবো এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম। ‘আর তাঁর অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে, তিনি তোমাদের মধ্যে থেকে তোমাদের জন্য যুগল সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা তাদের মধ্যে স্বস্তি পেতে পারো। আর তিনি তোমাদের মধ্যে প্রেম ও মায়া সৃষ্টি করেছেন।’
(সূরা রুম-২১)
কিন্তু ইসলামের নির্দেশনা না মেনে পারিবারিক-
সামাজিক মূর্খতার আনুগত্য করে স্বতঃস্ফুর্ত আবেগ অনুভূতির প্রকাশে চোরাপথে প্রেমের দ্বারস্থ হই। তারপর হয়তো একদিন প্রিয় মানুষটিকে হারিয়ে গতানুগতিক বিয়ে করতে হয়। অথচ অনুভবে মিশে থাকে অন্য কেউ। বিষণ্ণ সন্ধ্যায় পুরনো প্রেমের স্মৃতি মনে করে জীবনটা ছন্দহীন নীরস লাগে।
বিয়ে সহজ হোক। বিয়ের আগে প্রেম নয়,
বিয়ের পরে পরকীয়া নয়।
- তানিম ইশতিয়াক

। দুই ।
তিনটি সত্য ঘটনা, পাত্র-পাত্রীর নাম গুলো
পরিবর্তিত।
। ১।
রাসেদ এবং তানিয়ার বিয়ে হয়ে গেলো, মহা ধুম ধামের বিয়ে। তানিয়া রক্ষণশীল পরিবারের ভদ্র মেয়ে, অন্যদিকে রাসেদ মহা আধুনিক পরিবারের ডিজুস ছেলে, সংসার জীবন ভালোই চলছিলো, বাচ্চাও হয়েছে। বিয়ের পর থেকেই তা নিয়ে লক্ষ করলো রাসেদের মধ্যে কিছু প্রব্লেম আছে, ভাবলো ইয়াং বয়স বাচ্চা কাচ্চা হয়ে গেলে সংসারী হবে, সংসারের প্রতি দায়ীত্ববোধ বাড়বে। কিন্তু কল্পনা এক বাস্তবতা আরেক। রাসেদ এক সময় সম্পূর্ণ কন্ট্রোলের বাইরে চলে গেলো, রাত করে বাড়ি ফেরা, মাঝে মাঝে লাল পানি খেয়ে গায়ে হাত তোলা, একাধিক মেয়ে বন্ধু মেইনটেন করা, সবই চললো সমান তালে, স্ত্রী’র প্রয়োজনীয়তা রাসেদের নেই। তানিয়া মাঝে মাঝে গুমড়ে গুমড়ে কাদে, অভিমান করে। কিন্তু তার অভিমান ভাঙাবে কে? শ্বশুর
শ্বাশুরীর কাছে এগুলো কোনো ব্যাপারই না,
এই বয়সে ছেলেরা একটু আধটু এমন হবেই এটা নিয়ে কান্নাকাটি হুলস্থুল করার কিছুনেই।
শিক্ষাঃ দুনিয়াতেই জাহান্নামের আজাবের ঘ্রাণ গ্রহণ করতে হলে কু-চরিত্রের ছেলে/মেয়ে বিয়ে
করার বিকল্প নেই।

। ২।
হাসান এবং জেরিন একই ক্লাসে পড়ে। অসাধারণ সুন্দরী মেয়ে জেরিন, অসাধারণ বলতে প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে যায় এমন সুন্দরী। কিন্তু প্রব্লেম হলো কাপড় পাল্টানোর মতো করেই প্রেমিক পাল্টায় জেরিন, আজকে এর সাথে তো কালকে ওর সাথে, এভাবেই
চলছিলো। হাসানও মনে মনে জেরিনকে পছন্দ
করে, কিন্তু সিরায়াল পাচ্ছিলোনা, একদিন হয়ে
গেলো, সবাইকে টেক্কা দিয়ে হাসানের সাথে
জেরিনের প্রেম হয়ে গেলো।
হাসান আবার ভীষণ চালাক ছেলে, প্রেম গরম
থাকতে থাকতেই একা একা বিয়ে করে ফেললো জেরিনকে, বিয়ে মানে পাকা পাকি সম্পর্ক। বিয়ে এমনই সম্পর্ক চাইলেই কেউ কাউকে সহজে ছেড়ে যেতে পারবেনা। উভয় পক্ষের গার্জিয়ানরা প্রথম দিকে ক্যা-কু করলেও পরবর্তীতে মেনে নিতে বাধ্য হলো। নিশ্চিন্ত হাসান, কিন্তু সেটা বেশিদিনের জন্যনা। সংসারের ভিত্তি মজবুত করার লক্ষে বছর খানেকের মধ্যেই ঘর আলো করে সন্তান এলো। হাফ ছেড়ে বাচলো হাসান, যাক আর দূর্ঘটনার সম্ভাবনা নেই।
অভ্যাস হচ্ছে কুত্তার লেজ, বারো বছর
চোঙের ভেতরে রাখলেও সোজা হয়না। অথবা
বলা যায় কয়লা ধুইলে ময়লা যায়না। একদিন হুট করে হাসানের বন্ধুর সাথে পালিয়ে গেলো জেরিন, বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে বউকে ফিরিয়ে আনা হলো। বছর খানেক পরে অন্য এক ছেলের সাথে আবার পালিয়ে গেলো, বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে নাকি নিজের কাপুরুষতার কারণে জানিনা,
আবারো ফিরিয়ে আনা হলো জেরিনকে।
এখনো তারা সংসার করছে, এটাকে কি সংসার বলা হয়, নাকি একসাথে থাকা বলা হয়, বিজ্ঞজনেরাই সেটা ভালো বলতে পারবেন।
শিক্ষাঃ প্রেম কইরা রোমান্টি/পোলা মাইয়া বিয়ে করার পরেও যদি তাদের রোমান্টিকটা আগের মতো চলতে থাকে তবে মাইন্ড করার কিছু নাই।

। ৩।
নাম তার শিমু, চমৎকার সেই মেয়ে, অসাধারণ তার চুল। ডাগর ডাগর চোখের কোণে যেনো জাহাজ ডুবে যায়, প্রথম দেখাতেই মনে হয় কোথায় যেনো দেখেছি। প্রেম মানেনা নিয়ম কানুন, নবম শ্রেণীতে থাকা অবস্থাতেই একটা ছেলের সাথে পালিয়ে গেলো। সুখের সংসার, ভালোবাসার সংসার, সুখ উপচে পড়ছে দু’জনার জীবনে। জীবিকার তাগিদে একদিন ছেলেটি বিদেশ পাড়ি দিলো, চোখের জলে গাল ভাসিয়ে, বুক ভাসিয়ে বিদায় দিলো প্রেয়সি। বিরহেই কাটতে থাকলো শিমুর দিনগুলো, কিন্তু সেটা বেশি দিনের জন্য নয়। মনের বন্দরে নোঙর করলো নতুন জাহাজ। একদিন সেই জাহাজে করেই স্বামীর সংসার ত্যাগ করলো শিমু। বেচারা স্বামী! বিদেশে বসে বুক ফাটা আর্তনাদ করা ছাড়া কিছুই করার ছিলোনা। শিমু নতুন সংসার, নতুন জীবন। সুখে দুঃখে ভালোই কাটছিলো দিনগুলো, কিন্তু ভালোবাসা দিয়ে মন ভরলেও পেট ভরেনা। পেটের জন্য চাই টাকা, অনেক টাকা। নতুন স্বামীও একদিন উড়াল দিলো বিদেশের উদ্দেশ্যে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শিমু এখন তিন নম্বর স্বামীর সংসার করছে। এটাও নাকি ভালোবাসার সংসার, এখানেও সুখ আছে, ভালোবাসা আছে, তবে ভালোবাসা বাড়াবাড়ি রকমের উপচে পড়ছে কিনা জানিনা।
শিক্ষাঃ অপরের সুন্দরী বউ কিংবা পয়সা ওয়ালা স্বামীকে কেড়ে নিয়ে তার ঘর ভাঙার প্রস্তুতি নিচ্ছেন? অপেক্ষা করেন আরেক জন আসছে সে আপনার ঘর ভাঙবে।
-শামীম রেজা।
সংকলনে - বিবাহ একটি উত্তম বন্ধুত্ত্ব ডেস্ক।
এসো আলোর পথে
‘মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভালো
লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন, কিংবা চারটি পর্যন্ত। আর যদি এরূপ আশঙ্কা কর যে, তাদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে, একটিই।’ (সূরা নিসা-৩)
‘মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভালো
লাগে’ আয়াতের এই অংশটুকু খুব গুরুত্বপূর্ণ। মুসলমান ছেলে-মেয়েরা বিয়ের জন্য পছন্দ করতে, ভালোবাসতে পারবে কিনা- তা এই আয়াত থেকে চিন্তা করার বিষয়। কিছুদিন আগে একটা লেখা পড়েছিলাম, ‘আমি কি ভালোবেসে বিয়ে করতে পারবো?’
ওই লেখায় বলা হয়েছে, পারিবারিক পছন্দে বিয়ে হওয়াই একমাত্র ইসলামসম্মত পন্থা নয়। মুসলিম ছেলে-মেয়েদের নিজেদের পছন্দের
ব্যক্তিকে বিয়ে করার পূর্ণ অধিকার আছে। সূরা নিসার ওই আয়াতের অনুবাদে মারীফুল কুরআনে বলা হয়েছে, ‘যাদের তোমরা পছন্দ করো’ আর আল কুরআন একাডেমির হাফেজ মুনির আহমেদ অনুবাদ করেছেন, ‘যাদেরকে তোমরা ভালোবাসো’। তবে ভালো লাগা, পছন্দ করা, আর প্রেম এক কথা নয়। প্রেম হচ্ছে সম্পর্ক (রিলেশনশিপ)।
ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী প্রেম হতে পারে
একমাত্র বিয়ের মাধ্যমে। আমরা নিশ্চয়ই কাউকে হুট করে ‘ভালোবাসি’ বলে প্রেমে জড়াই না। তার সম্পর্কে জেনে বুঝে যখন মনে হয় এই মেয়েটা বা এই ছেলেটার সাথে একটা জীবন পার করে দেওয়া যায়, তখন তাকে বলি, ‘আই লাভ ইউ।’ ‘আই লাভ ইউ’ বলার পূর্ব পর্যন্ত চিন্তা-ভাবনা বৈধ (তবে এই জানা-বোঝার জন্য তার সাথে ব্যক্তিগতভাবে
মিশে অভিজ্ঞতা অর্জনের অনুমতি নেই)।
প্রেম করতে হলে আগে তাকে চিরদিনের জন্য আপন করে নিতে হবে।
‘তোমরা যখন বিয়ের জন্য এমন ছেলে বা
মেয়ে পেয়ে যাবে যার চরিত্র ও জ্ঞান-বুদ্ধিকে
তোমরা পছন্দ করবে, তো তখনই তার সাথে
বিয়ের সম্বন্ধ স্থাপন করো।’ (তিরমিযী)
এ অধিকার মেয়েদের জন্যও সমান। সাহল ইবন সাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একবার এক মহিলা সম্ভবত তার নাম লায়লা বিনতে কায়স ইবনুল খাতিম রাসূলুল্লাহর (সা.) কাছে হাজির হয়ে তার সাথে নিজেকে বিয়ের জন্য সরাসরি প্রস্তাব পেশ করেন। (বুখারি)
অতএব পছন্দের ব্যক্তিকে ভালোবাসি বলতে হবে বিয়ের দ্বারা। আর সেটা অবশ্যই অভিভাবকদের মাধ্যমে। অভিভাকদের কর্তব্য এতে সাড়া দেওয়া। ‘যদি এমন কেউ তোমার কাছে আসে (বিয়ের পয়গাম নিয়ে)– যার চরিত্র এবং তাকওয়া সন্তোষজনক,
তাহলে তার কাছে (তোমার মেয়েকে) বিয়ে
দাও। যদি এমনটি না করো, তাহলে পৃথিবীতে
মারাত্মকরকম ফেতনা ও বিপর্যয় দেখা দিবে’।
(তিরমিযি) দুঃখজনক হচ্ছে, আমাদের সমাজব্যবস্থায় বিয়েকে অনেক কঠিন করে রাখা হয়েছে। নিজের পায়ে দাঁড়ানো, চাকরি পাওয়া, প্রতিষ্ঠিত হওয়া কত কিছু। অথচ বিয়ের আগে প্রেমের সম্পর্ক কত সহজ! এর জন্য কিছুই লাগে না। অথচ এর চেয়ে সহজ হওয়া দরকার বিয়ে। আমার মতে, ছাত্রাবস্থায় বিয়ে হওয়া দরকার। তবে তখনই কেউ
কারো দায়িত্ব (আর্থিক) নিবে না। প্রেম করার সময় তো নেয় না। ঠিক সংসার করারও দরকার নেই। অনেকটা প্রেমের মতোই, তবে মানুষটিকে চিরদিনের জন্য নিজের করে নিয়ে, ভবিষ্যতের আশায় বসে থেকে নয়। সেটা অবশ্যই অবিভাবকদের সহযোগিতায়। এ ধরনের সংস্কৃতি চালু হওয়া কি খুব কঠিন?
যাকে আমি ভালোবাসছি, একসাথে ঘুরছি, বাসা থেকে খাবার রান্না করে এনে পরম মমতায় খাওয়াচ্ছি, কষ্টের টাকা বাঁচিয়ে উপহার কিনে দিচ্ছি, মন খারাপের
বিকেলে যার ভালোবাসায় আমার জীবন সুখের হয়ে উঠছে, হৃদয়ের মতো পবিত্রতম জায়গা যার জন্য বরাদ্দ করেছি, তখনও আমি নিশ্চিত নই- এই মানুষটার সাথে আজীবন থাকা হবে কিনা। প্রতিষ্ঠিত হওয়া-না হওয়া, নির্ধারিত সময়ের অপেক্ষা আর
পারিবারিক পছন্দের ফাঁদে আটকে যায় আমাদের ভালোবাসার অনুভূতি। এর চেয়ে অমানবিক আর কী হতে পারে! চোখের সামনে কত হৃদয় ভেঙে যেতে দেখলাম! তরুণ বয়সে আমরা একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হবো এটাই স্বাভাবিক। ভালোলাগবে, ভালো বাসবো এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম। ‘আর তাঁর অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে, তিনি তোমাদের মধ্যে থেকে তোমাদের জন্য যুগল সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা তাদের মধ্যে স্বস্তি পেতে পারো। আর তিনি তোমাদের মধ্যে প্রেম ও মায়া সৃষ্টি করেছেন।’
(সূরা রুম-২১)
কিন্তু ইসলামের নির্দেশনা না মেনে পারিবারিক-
সামাজিক মূর্খতার আনুগত্য করে স্বতঃস্ফুর্ত আবেগ অনুভূতির প্রকাশে চোরাপথে প্রেমের দ্বারস্থ হই। তারপর হয়তো একদিন প্রিয় মানুষটিকে হারিয়ে গতানুগতিক বিয়ে করতে হয়। অথচ অনুভবে মিশে থাকে অন্য কেউ। বিষণ্ণ সন্ধ্যায় পুরনো প্রেমের স্মৃতি মনে করে জীবনটা ছন্দহীন নীরস লাগে।
বিয়ে সহজ হোক। বিয়ের আগে প্রেম নয়,
বিয়ের পরে পরকীয়া নয়।
- তানিম ইশতিয়াক

। দুই ।
তিনটি সত্য ঘটনা, পাত্র-পাত্রীর নাম গুলো
পরিবর্তিত।
। ১।
রাসেদ এবং তানিয়ার বিয়ে হয়ে গেলো, মহা ধুম ধামের বিয়ে। তানিয়া রক্ষণশীল পরিবারের ভদ্র মেয়ে, অন্যদিকে রাসেদ মহা আধুনিক পরিবারের ডিজুস ছেলে, সংসার জীবন ভালোই চলছিলো, বাচ্চাও হয়েছে। বিয়ের পর থেকেই তা নিয়ে লক্ষ করলো রাসেদের মধ্যে কিছু প্রব্লেম আছে, ভাবলো ইয়াং বয়স বাচ্চা কাচ্চা হয়ে গেলে সংসারী হবে, সংসারের প্রতি দায়ীত্ববোধ বাড়বে। কিন্তু কল্পনা এক বাস্তবতা আরেক। রাসেদ এক সময় সম্পূর্ণ কন্ট্রোলের বাইরে চলে গেলো, রাত করে বাড়ি ফেরা, মাঝে মাঝে লাল পানি খেয়ে গায়ে হাত তোলা, একাধিক মেয়ে বন্ধু মেইনটেন করা, সবই চললো সমান তালে, স্ত্রী’র প্রয়োজনীয়তা রাসেদের নেই। তানিয়া মাঝে মাঝে গুমড়ে গুমড়ে কাদে, অভিমান করে। কিন্তু তার অভিমান ভাঙাবে কে? শ্বশুর
শ্বাশুরীর কাছে এগুলো কোনো ব্যাপারই না,
এই বয়সে ছেলেরা একটু আধটু এমন হবেই এটা নিয়ে কান্নাকাটি হুলস্থুল করার কিছুনেই।
শিক্ষাঃ দুনিয়াতেই জাহান্নামের আজাবের ঘ্রাণ গ্রহণ করতে হলে কু-চরিত্রের ছেলে/মেয়ে বিয়ে
করার বিকল্প নেই।

। ২।
হাসান এবং জেরিন একই ক্লাসে পড়ে। অসাধারণ সুন্দরী মেয়ে জেরিন, অসাধারণ বলতে প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে যায় এমন সুন্দরী। কিন্তু প্রব্লেম হলো কাপড় পাল্টানোর মতো করেই প্রেমিক পাল্টায় জেরিন, আজকে এর সাথে তো কালকে ওর সাথে, এভাবেই
চলছিলো। হাসানও মনে মনে জেরিনকে পছন্দ
করে, কিন্তু সিরায়াল পাচ্ছিলোনা, একদিন হয়ে
গেলো, সবাইকে টেক্কা দিয়ে হাসানের সাথে
জেরিনের প্রেম হয়ে গেলো।
হাসান আবার ভীষণ চালাক ছেলে, প্রেম গরম
থাকতে থাকতেই একা একা বিয়ে করে ফেললো জেরিনকে, বিয়ে মানে পাকা পাকি সম্পর্ক। বিয়ে এমনই সম্পর্ক চাইলেই কেউ কাউকে সহজে ছেড়ে যেতে পারবেনা। উভয় পক্ষের গার্জিয়ানরা প্রথম দিকে ক্যা-কু করলেও পরবর্তীতে মেনে নিতে বাধ্য হলো। নিশ্চিন্ত হাসান, কিন্তু সেটা বেশিদিনের জন্যনা। সংসারের ভিত্তি মজবুত করার লক্ষে বছর খানেকের মধ্যেই ঘর আলো করে সন্তান এলো। হাফ ছেড়ে বাচলো হাসান, যাক আর দূর্ঘটনার সম্ভাবনা নেই।
অভ্যাস হচ্ছে কুত্তার লেজ, বারো বছর
চোঙের ভেতরে রাখলেও সোজা হয়না। অথবা
বলা যায় কয়লা ধুইলে ময়লা যায়না। একদিন হুট করে হাসানের বন্ধুর সাথে পালিয়ে গেলো জেরিন, বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে বউকে ফিরিয়ে আনা হলো। বছর খানেক পরে অন্য এক ছেলের সাথে আবার পালিয়ে গেলো, বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে নাকি নিজের কাপুরুষতার কারণে জানিনা,
আবারো ফিরিয়ে আনা হলো জেরিনকে।
এখনো তারা সংসার করছে, এটাকে কি সংসার বলা হয়, নাকি একসাথে থাকা বলা হয়, বিজ্ঞজনেরাই সেটা ভালো বলতে পারবেন।
শিক্ষাঃ প্রেম কইরা রোমান্টি/পোলা মাইয়া বিয়ে করার পরেও যদি তাদের রোমান্টিকটা আগের মতো চলতে থাকে তবে মাইন্ড করার কিছু নাই।

। ৩।
নাম তার শিমু, চমৎকার সেই মেয়ে, অসাধারণ তার চুল। ডাগর ডাগর চোখের কোণে যেনো জাহাজ ডুবে যায়, প্রথম দেখাতেই মনে হয় কোথায় যেনো দেখেছি। প্রেম মানেনা নিয়ম কানুন, নবম শ্রেণীতে থাকা অবস্থাতেই একটা ছেলের সাথে পালিয়ে গেলো। সুখের সংসার, ভালোবাসার সংসার, সুখ উপচে পড়ছে দু’জনার জীবনে। জীবিকার তাগিদে একদিন ছেলেটি বিদেশ পাড়ি দিলো, চোখের জলে গাল ভাসিয়ে, বুক ভাসিয়ে বিদায় দিলো প্রেয়সি। বিরহেই কাটতে থাকলো শিমুর দিনগুলো, কিন্তু সেটা বেশি দিনের জন্য নয়। মনের বন্দরে নোঙর করলো নতুন জাহাজ। একদিন সেই জাহাজে করেই স্বামীর সংসার ত্যাগ করলো শিমু। বেচারা স্বামী! বিদেশে বসে বুক ফাটা আর্তনাদ করা ছাড়া কিছুই করার ছিলোনা। শিমু নতুন সংসার, নতুন জীবন। সুখে দুঃখে ভালোই কাটছিলো দিনগুলো, কিন্তু ভালোবাসা দিয়ে মন ভরলেও পেট ভরেনা। পেটের জন্য চাই টাকা, অনেক টাকা। নতুন স্বামীও একদিন উড়াল দিলো বিদেশের উদ্দেশ্যে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শিমু এখন তিন নম্বর স্বামীর সংসার করছে। এটাও নাকি ভালোবাসার সংসার, এখানেও সুখ আছে, ভালোবাসা আছে, তবে ভালোবাসা বাড়াবাড়ি রকমের উপচে পড়ছে কিনা জানিনা।
শিক্ষাঃ অপরের সুন্দরী বউ কিংবা পয়সা ওয়ালা স্বামীকে কেড়ে নিয়ে তার ঘর ভাঙার প্রস্তুতি নিচ্ছেন? অপেক্ষা করেন আরেক জন আসছে সে আপনার ঘর ভাঙবে।
-শামীম রেজা।
সংকলনে - বিবাহ একটি উত্তম বন্ধুত্ত্ব ডেস্ক।
এসো আলোর পথে
Comments
Post a Comment