আসলে ভালবাসা কী? ভালবাসার আসল রুপ। জানতে হলে পড়তে হবে।

বিসমিল্লাহহীর রাহমানের রাহিম

image



“ভালোবাসা” পৃথিবীর সবচেয়ে আরাধ্য এবং শিহরন জাগানো এক শব্দ। চার অক্ষরের এই ছোট্ট শব্দটিকে কেন্দ্র করে কত কিছু যে আবর্তিত হচ্ছে তার ইয়েত্তা নেই। ভালোবাসা কারো কাছে আরাধনা, কারো কাছে স্বপ্ন, কারো কাছে ধ্যান-ধারণা, কারো কাছে হয়ত জীবন। এই ভালোবাসা নিয়ে কত উপন্যাস,কত চলচিত্র, কত নাটক, কত কবিতা, কত গান, কত সুর রচিত হয়েছে এবং হচ্ছে তার কোন হিসেব নেই। কত জন যে এই ভালোবাসার জন্যে নিজের জীবন দিয়ে.ইতিহাসের (?) পাতায় নাম লিখিয়েছে তাও লিখে শেষ
করা যাবে না। পত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যায় আধুনিক লাইলি-মজনু, শিরি-ফরহাদরা ভালোবাসার জন্যে নিজের মহা মুল্যবান জীবনটাকেই বিসর্জন দিচ্ছেন। আসলে এই ভালোবাসা জিনিসটা কি? এটা খায় নাকি মাথায় দেয়? আর ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন
ব্যবস্থা হিসেবে এত আরাধনার বিষয়টা নিয়েই বা কি বলে? ভালোবাসা নিয়ে আমার ধ্যান ধারনা সেই কৈশোর থেকেই শুরু। বলতে পারেন অনেকটা পি এইচ ডি করার মত অবস্থা। আর ভালোবাসার সঠিক সংজ্ঞাটি
আবিষ্কার করার জন্যে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল,
শরৎচন্দ্র, জীবননান্দ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
পড়ে যে কত বিনিদ্র রজনী কাটিয়েছি তার হিসেব নেই। জীবননান্দের মত হয়তবা হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথে হাটা হয়নি কিন্তু যেটুকু হেঁটেছি তাতেই বা কম কিসে। তবুও যৌবনের আগ পর্যন্ত ভালোবাসার সঠিক রূপটি আবিষ্কার করতে পারিনি।
কৈশোর পেরিয়ে যৌবনের প্রারম্ভেই আমার
শারীরিক পরিবর্তনের সাথে সাথে ভালোবাসা নিয়ে আমার ধ্যান ধারনার পরিবর্তন শুরু। যৌবনের প্রারম্ভেই বুঝতে পারলাম ভালোবাসা নিয়ে এতদিন যা জেনেছি শুনেছি বা বুঝেছি তার সবটাই ভুল বা মিছে। আমার শরীরে এখন ভরা যৌবন!। এখন আমার কিছুই ভাল
লাগে না। সবকিছু কেমন জানি এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। কোথায় যেন এক অজানা শিহরণ কাজ করতে শুরু করেছে। কেন এমন হচ্ছে? মানুষ বলে কারো প্রেমে পড়লে বা কাউকে
ভালোবাসলে এমনটা হয়। কিন্তু কই আমিতো
নির্দিষ্ট কারো প্রেমে পড়িনি বা কাউকে
ভালোবাসিনি তাহলে কেন এমন হচ্ছে। আসলে আমি প্রেমেই পড়েছি আর সেটা প্রাকৃতিক নিয়মেই। আমার শারীরিক পরিবর্তনের সাথে সাথেই নিজের অজান্তেই আমি প্রেমে পড়েছি। আর সেটা নির্দিষ্ট কারো প্রতি নয়। সেটা আমার বিপরীত লিঙ্গের প্রতি। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই আমাকে এই প্রেমে পড়তে হয়েছে। এই প্রেমে পড়াকে কেউ অস্বীকার করতে পারেনি এবং কেউ কোনদিন পারবেও না যদি না সে অসুস্থ হয়ে থাকে। তখন থেকেই আমি বুঝতে পারলাম যে,
“ভালবাসা হল বিপরীত লিঙ্গের প্রতি এক অজানা আকর্ষণ যেটা কখনোও দেখা যায়না শুধু অনুভব করা যায় মাত্র।”
আসলে প্রেম-ভালোবাসা ব্যাপারটা পুরোটাই জৈবিক। অনেকেই বলে প্রেম-ভালোবাসার উৎপত্তি হয় হৃদয় থেকে। মিথ্যে কথা, ডাহা মিথ্যে কথা। আসলে প্রেম-ভালবাসার উৎপত্তি হয় মানুষের sex organ থেকে। একটা ছেলে বা মেয়ে যখন বিপরীত লিঙ্গের কারো প্রতি তীক্ষ দৃষ্টিতে তাকায় তখন তার শরীরের সংবেদনশীল অঙ্গগুলোতে এক ধরনের সংবেদনশীলতা কাজ করে। আর সেই সংবেদনশীলতা যখন স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিস্কে প্রেরিত হয় তখন তা আরো প্রকট আকার ধারন করে। আর তখন থেকেই এই স্বাভাবিক আকর্ষণ, প্রেম বা ভালোবাসার সৃষ্টি হয়।
তখন শরীর বলে ওকে আমার চাই চাই। ওকে
আমার পেতেই হবে। কিন্তু কিভাবে? যেভাবে
পাওয়া যাবে সেই পদ্ধতি বা পন্থার নামই হচ্ছে
তথাকথিত প্রেম বা ভালোবাসা। প্রেম ভালোবাসা যে একটা জৈবিক ব্যাপার সেটা অনেক সাহিত্যিকও অস্বীকার করেন নাই যদিও অনেকে মানসিক ব্যাপার বলেও চালিয়ে দিয়েছেন। “মেয়েদের ভালো করেই জানা আছে যে বড় বড় বিষয়ে আলাপ শুধু কথার কচকচানি। আসলে পুরুষ যা চায় সেটা হলো শরীর।”-(কেন আমি আমার স্ত্রীকে খুন করি, লিও তলস্তয়)। “আমি তাকে ভালোবাসি এই জন্যে সে দায়ী নয়,দায়ী তার দর্জি যে এই পুরুষ তাতানো জামাটা তৈরি করেছে এবং তার মা যিনি এই জামাটা তার মেয়েকে পড়ার অনুমতি দিয়েছে।”-(কেন আমি আমার স্ত্রীকে খুন করি, লিও তলস্তয়)।
“ভালোবাসায় শরীরটাই আসল- আরম্ভ, শেষ,
সবই শরীর। আধা-বয়সী স্বামী- স্ত্রীর
মধ্যে অত ঝগড়াঝাঁটি খিটিমিটি কেন? যেহেতু
তাদের শরীর পড়ে আসছে। বুড়ো স্বামী-
স্ত্রীরা নানাভাবে উৎপীড়ন করে কেন
পরস্পরকে? যেহেতু তাদের শরীর মরে
গেচে। প্রতিহিংসা- প্রকৃতির উপর প্রতিহিংসা।
ভালোবাসা জৈব। ভালোবাসা যৌন। শরীর না থাকলে কিছুই থাকেনা ভালোবাসার। বিদ্যুতের মতো। বৈদ্যতিক সংস্পর্শের মতো শরীরের সঙ্গে শরীরের প্রেম। ঘরে সবসময় আলো
জ্বালতে হয়না। কিন্তু সুইচ টিপলেই জ্বলে
ওঠে, যেহেতু তারের মধ্যে দিয়ে বিদ্যুৎ
চলছে সব সময়। এও তেমনি। আছে শরীরে
শরীরে বৈদ্যুতিক যোগ, তাই যখন প্রেম
করোনা তখনও থাকে প্রেম। শিরায় শিরায় বয়ে
চলে সারাক্ষন- তাই কথা মধুর, হাসি মধুর, কাছে আসা মধুর, দূরে যাওয়া মধুর। কলহ মধুর, কলহের পড়ে মিলন আরো বেশী মধুর, সবই শরীর।”(-রাত ভরে বৃষ্টি, বুদ্ধদেব বসু)।
“প্রেম বলতে আসলে কিছু নেই সবই কাম”-
(হুমায়ূন আজাদ)।
একটা ছেলে বা মেয়ে যখন যৌবন প্রাপ্ত হয়
তখনই তার ভিতর এই প্রেম বা ভালোবাসার জন্ম হয়। তখন থেকেই সে তার এই প্রেম বা ভালোবাসা শেয়ার করার জন্যে হন্য হয়ে খুজে বেড়ায় বিপরীত লিঙ্গের কাউকে। অনেকেই বলে এই প্রেম বা ভালোবাসা স্বর্গ থেকে আসে।
সত্যিকার অর্থে এই ধরনের প্রেম বা ভালোবাসা
আসে জৈবিক চাহিদা থেকে। যদি কারো জৈবিক চাহিদা না থাকে তাহলে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি তার প্রেমে পড়াটা এক অসম্ভব ব্যাপার!। আজকাল দেখা যায় শতকরা নব্বই ভাগ ছেলে মেয়েই কোন না কোনভাবে প্রেমের সাথে জড়িত। দেখা যায় যে ছেলেটা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ছে বা যে মেয়েটা নিয়মিত হিজাব পড়ছে তারও একটা গার্লফ্রেন্ড বা বয়ফ্রেন্ড আছে। সে জানে কাজটা হারাম বা অবৈধ তারপরেও সে নির্দ্বিধায় করছে। কেন করছে? ১৫ বা ১৬ বছর বয়স থেকে তার যে চাহিদার শুরু হয়েছে এখন ২৪ বা
২৫শে এসেও সে বৈধভাবে তার চাহিদা মেটাতে
পারছেনা। তাহলে সে কি করবে? বলবেন রোজা রাখবে বা ধৈর্য ধরবে। কিন্তু সেটা কতদিন? ধৈর্যেরতো একটা সীমা থাকে। এক বছর, দুই বছর এবং তিন বছর। যখন একটা ছেলেকে বলা হয় ১৫ বছর ধৈর্য ধরার জন্যে তখন সেটা জুলুম হয়ে যায়।
তখনতো তাকে একটা পথ খুজে বের করতে
হবেই। মানুষের যখন একটা কাজ করার জন্যে যখন সকল বৈধ পথ বন্ধ হয়ে যায় তখনই সে অবৈধ পথে পা বাড়ায়। আমারা কেউই ঘুষ দিয়ে কাজ করাতে চাইনা।  কিন্তু যখন কোন উপায় থাকেনা তখন তখন ঘুষ দিতে
বাধ্য হই। আর সমাজ ছেলে-মেয়েদের কাছে
আসার এই অবৈধ পথটার নাম দিয়েছে প্রেম-
ভালোবাসা। আর নাটক, সিনেমা ও উপনাস্যের মধ্য দিয়ে চলছে এই অবৈধ প্রেম ভালোবাসাকে বৈধতা দেয়ার প্রাণপণ প্রয়াস।
বিয়ের আগে প্রেম-ভালোবাসা এবং কিছু অপ্রিয় সত্য কথাঃ

image



গবেষনায় উঠে এসেছে যে, একজন পুরুষ ও
একজন মহিলার মধ্যকার বিবাহপূর্ব প্রেমের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা বৈবাহিক সম্পর্ক ব্যর্থ হয়, অন্য দিকে যে সকল বিয়ে এ ধরনের হারাম সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে নি
যেগুলোকে লোকেরা “ প্রথাগত বিয়ে” বলে
থাকেন সেগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সফল
হয়। একজন ফ্রেঞ্চ সমাজবিজ্ঞানী কর্তৃক
মাঠপর্যায়ে চালানো এক গবেষনায় উঠে
এসেছে, “যখন দুই পক্ষ বিবাহ পূর্ব প্রেমের সম্পর্কে লিপ্ত হয় না তখন সে বিয়ের সফলতার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়”
প্রফেসর ইসমাঈল আবদ আল বারি কর্তৃক প্রায় ১৫০০ পরিবারের ওপর চালানো অন্য এক জরিপের ফলাফল ছিল এরকম যে শতকরা ৭৫ ভাগ “ভালোবেসে বিয়ে” এর পরিণতি ছিল ডিভোর্স যেখানে “প্রথাগত বিয়ে” এর ক্ষেত্রে শতকরা ৫ ভাগেরও কম।
এধরনের পরিণতির পেছনে কারন হিসেবে
উল্লেখ করা যেতে পারে,
১) আবেগ একজন মানুষকে অপরের ভুলগুলো সম্পর্কে অন্ধ করে তুলতে পারে; যেমনটি বলা হয়ে থাকে “ভালোবাসা অন্ধ”। একপক্ষ বা উভয়পক্ষেরই এমন কিছু সমস্যা থাকতে পারে যেগুলো তাদেরকে বিপরীত পক্ষের জন্য তাকে অযোগ্য করে তুলতে পারে, কিন্তু এই ত্রুটিগুলো ঠিক বিয়ের পরেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
২) প্রেমিক-প্রেমিকারা ভেবে থাকতে পারেন
যে, এই জীবন শুধুই ভালবাসার পথে অন্তহীন
একযাত্রা, তাই দেখা যায় তাদের মাঝে কেবল
ভালবাসার গল্প আর স্বপ্নের জাল বোনা আর
একজন আরেকজনকে খুশি করার জন্যে আবেগ প্রবণ কথাবার্তা । তারা বাস্তব জীবনের সমস্যা এবং সেগুলোর সমাধান নিয়ে সে সময়ে খুব একটা মাথা ঘামায় না। এই প্রবণতাটি বিয়ের পর কেটে যায়, যখন তারা নানা দ্বায়িত্ববোধ ও সমস্যার মুখোমুখি হয়।
৩) প্রেমিক-প্রেমিকা যুগল তিক্ত আলোচনা কিংবা পারস্পরিক তর্কে কম অভ্যস্ত হয় কেননা বেশিরভাগ সময়ই একে অপরকে খুশি করবার জন্য ত্যাগ ও মেনে নেয়ার প্রবণতা থাকে। তাদের মধ্যে যখনই কোন কথা কাটাকাটি হয় তখন একপক্ষ
ত্যাগ স্বীকার করে অপর পক্ষকে খুশি করতে
চায়। বিয়ের পর ঠিক উল্টোটি ঘটে। কেউ কাউকে ছাড় দিতে চায়না এবং তাদের বিবাদগুলো সমস্যায় রূপ নিতে থাকে এবং শুরু হয় পারিবারিক অশান্তি, দাম্পত্য কলহ ।
৪) বিয়ের আগে অর্থাৎ প্রেম করার সময় কোন
পক্ষই অপর পক্ষের সত্যিকার রূপটা বুঝে উঠতে পারে না। কারন উভয় পক্ষই অন্যের কাছে নিজেকে শান্ত, ভদ্র হিসেবে তুলে ধরতে ও তাকে সন্তুষ্ট করতে প্রাণপণ চেষ্টা করে কারণ না হলে ছেড়ে চলে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
নিজেকে এভাবে উপস্থাপনের ঘটনাটা ঘটে থাকে তথাকথিত “ভালোবাসার” পর্যায়ে, কিন্তু কেউই সারা জীবন এই প্রবণতাকে ধরে রাখতে পারে না। ফলে সত্যিকার চিত্র ফুটে ওঠে বিয়ের পরে এবং জন্ম দেয় নানা সমস্যার।
৫) ভালবাসার সময়টা থাকে স্বপ্ন আর বিলাসিতার যা বিবাহ.পরবর্তী বাস্তবতার সাথে সাংঘর্ষিক বলে প্রতীয়মান হয়। প্রেমিক মনে করে যে সে তার প্রেমিকাকে একখন্ড চাঁদ এনে হাতে দেবে এবং সে তার প্রেমিকাকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ হিসেবে না দেখতে পেলে নিজেও সুখী হতে পারবে না।এবং বিনিময়ে প্রেমিকা তার সাথে একই ছাদের নিচে থাকবে এবং তার অন্য কোন আবদার থাকবে না, কোন অনুরোধ থাকবে না। অপরদিকে প্রেমিকা বলে “আমাদের জন্য একটা ছোট্ট কুটিরই যথেষ্ট” এবং “দু-একমুঠো ভাতই আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে” কিংবা “তুমি আমাকে এক টুকরো অমুক অমুক খাবার এনে দিলেই আমি খুশি থাকবো”। এগুলো নিতান্তই বাস্তবতা বিবর্জিত
কল্পনাপ্রসূত কথাবার্তা এবং বিয়ের পর উভয়পক্ষই এগুলো ভুলে যায়। স্ত্রী তার স্বামীর আর্থিক দুরাবস্থার অভিযোগ করে এবং স্বামী স্ত্রীর চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়। তখন স্বামীও পালটা অভিযোগ আনে স্ত্রীর বেশি বেশি চাওয়া-পাওয়া নিয়ে। এগুলো এবং আরো বেশ কিছু কারনে যখন উভয় পক্ষ বলে যে আমরা প্রতারিত হয়েছি এবং বেশি তাড়াহুড়ো করে ফেলেছি সেটা শুনে আমরা অবাক
হই না। স্বামী আক্ষেপ করে কেন বাবা-মায়ের
পছন্দের অমুক অমুককে বিয়ে করলো না কিংবা স্ত্রী আক্ষেপ করে কেন সে অমুককে
বিয়ে করলো না অথচ প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেরাই সেটা করেনি নিজেদের আকাঙ্ক্ষার কারনে। ফলে মানুষ যেটাকে ভাবে পৃথিবীর জন্য একটা উদাহরণ হয়ে থাকবে অর্থাৎ তাদের “ভালোবেসে বিয়ে” টি সেটি কিন্তু কিছুদিন পরেই ভেঙ্গে যায় এবং রেখে যায় সারা জীবনের আক্ষেপ ও যন্ত্রণা। যে যন্ত্রণা কাউকে বলা যায় না, শেয়ার করা যায় না। শুধু চোখের জলে বালিশ ভেজাতে হয়।


image



              ইসালাম কি বলে?
ইসলাম কি এই ধরনের জৈবিক আকর্ষণ বা
ভালোবাসাকে অস্বীকার করে? ইসলাম কখনই এই ধরনের প্রাকৃতিক, জৈবিক ভালোবাসা বা আকর্ষণকে অস্বীকার করেনা কারণ ইসলাম একটি প্রাকৃতিক জীবন ব্যবস্থা। এটি মানুষের জীবনের সকল সমস্যার সমাধান দেয়ার জন্যেই এসেছে। তবে ইসলাম ভালোবাসার সাথে আরও একটা জিনিস যোগ করে দেয় সেটা হল দায়িত্ব । ইসলাম বলে যাকে
তুমি এত ভালবাস, যার জন্যে তোমার এত আকর্ষণ, যার জন্যে তুমি বিশ্ব সংসার তন্য তন্য করে খুজে আনতে পারো একশ আঁটটা নীলপদ্ম, তাহলে নিশ্চয়ই তার দায়িত্ব নিতে সমস্যা হওয়ার কথা না। ইসলাম জানে দায়িত্ব না নিয়ে বিশ্ব সংসার তন্য তন্য করে একশ আঁটটা নীল পদ্ম এনেও লাভ নেই, বরুনা প্রতারনা করবেই। ইসলামে ভালোবাসা আর
দায়িত্বের যোগফল হচ্ছে বিবাহ। লিও তলস্তয়ের মতে ভালোবাসা হচ্ছেঃ
“মন যখন সবাইকে ছাড়িয়ে একমুখী হয় তাই
ভালোবাসা ”।(কেন আমি আমার স্ত্রীকে খুন
করি) আর এই ধরনের ভালোবাসা একমাত্র বিয়ের মাধ্যমেই সম্ভব। ইসলাম সব সময়ই বিয়ের ব্যাপারে যুবকদেরকে উৎসাহিত করে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিয়ে করার জন্যে আদেশ করে যখন কারো আর্থিক অবস্থা ভালো থাকে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন,“হে যুব সমাজ, তোমাদের মধ্যে
যাদের বিয়ে করার সামর্থ্য আছে তারা যেন
বিয়ে করে কারণ তা চোখকে সর্বাপেক্ষা
বেশি আনতকারী এবং লজ্জাস্থানের অধিক
হেফাজতকারী। আর যাদের বিয়ে করার সামর্থ্য নেই তাদের কর্তব্য রোজা রাখা। কারণ এটিই তার যৌন প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণে রাখার হাতিয়ার।” -সহীহ বূখারী ও মুসলিম

আবু হুরাইরা(রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুল (সাঃ) বলেছেন, তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করা আল্লাহ তায়ালা নিজ দায়িত্ব মনে করেনঃ ১। ঐ ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যে তা পরিশোধের চেষ্টা করে। ২। সেই বিবাহিত যুবক, যে চরিত্র হেফাযতের উদ্দেশ্যে বিবাহ করে। ৩। সেই মুজাহিদ, যে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদরত।– তিরমিজি, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ।

আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
“আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে, তিনি
তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্যে থেকেই তোমাদের স্ত্রীগণকে সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি লাভ করতে পারো এবং তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। অবশ্যই এর মধ্যে বহু নিদর্শন রয়েছে তাদের জন্য যারা চিন্তা ভাবনা করে ৷”-সুরা রুমঃ ২১

“আল্লাহই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন একটি
মাত্র প্রাণ থেকে এবং তারই প্রজাতি থেকে তার
জুড়ি বানিয়েছেন, যাতে করে তার কাছে প্রশান্তি লাভ করতে পারো ।
”-সুরা আরাফঃ ১৮৯

আল্লাহ তায়ালা আরও বলেনঃ
“তারা (স্ত্রীরা) তোমাদের, তোমরা তাদের
পোশাক স্বরূপ।”-সুরা বাকারাঃ ১৮৭

একবার চিন্তা করে দেখুন ইসলাম বিয়েকে অর্থাৎ নারী পুরুষের সম্পর্ককে কথটুকু গুরুত্ব দেয়। একজনের জীবনে পোশাক যেমন
প্রয়োজনীয় তেমনি ইসলামে একজন পুরুষের
জীবনে নারী এবং একজন নারীর জীবনে
পুরুষ টিক ততখানি প্রয়োজনীয়। আর এই
প্রয়োজনটা মিটাবার পদ্ধতিটার নাম হচ্ছে বিবাহ।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে তথাকথিত প্রেম-
ভালোবাসা নামের এই সব অবৈধ সম্পর্কের
ফাঁদকে পায়ে মাড়িয়ে বিয়ের পিড়িতে বসার তৌফিক দান করুন। আমীন।
লিখেছেন - Tanvir Ahmad Arjel (arjeldu)



এসো আলোর পথে

Comments

Popular posts from this blog

বাংলাদেশী মেয়েদের হট ছবি

হে যুবক কোন দিকে যাও!! জান্নাতি হুর তোমাকে ডাকছে

ইসলামের দৃষ্টিতে যৌন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও শক্তি বৃদ্ধিকারী খাদ্য-পানীয়