স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা ( একটা শিক্ষনীয় ঘটনা)

শিক্ষনীয় গল্প........
.
.
১০বছর আগে!! তখন আমি ময়মনসিংহ মেডিকেল
কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার। এক মহিলাকে সিজার
করার পর খুব সুন্দর একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম
হলো।
অতঃপর লক্ষ্য করে দেখলাম আত্মীয়স্বজন সবার
মুখে বিষন্নতার কালো ছাপ। বুঝতে বাকি রইলোনা
মেয়ে সন্তানের জন্ম হওয়াতে তারা যে
অসন্তুষ্ট। কিন্তু আমার বুঝা না বুঝাতে তাদের কিছু যায়
আসেনা। তবে কিছুক্ষণ পর যা দেখলাম তা সত্যিই
ভিতরটাকে নাড়া দিয়ে উঠলো!!!
ডেলিভারির পর থেকে রোগীর ব্লিডিং বন্ধ
হচ্ছে না। এখন অপারেশন করে ইউটেরাস
ফেলে দিতে হবে, না হলে বাচাঁর সম্ভাবনা খুবই
কম।
.
এমন অবস্থা দেখে ওনার শাশুড়ির সাথে কথা বললাম,
--দেখুন আপনার পুত্রবধুর অবস্থা খুবই সিরিয়াস! ব্লিডিং
কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না, আমরা যথেষ্ট
চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলাম। এখন অপারেশন করে
ইউটেরাস ফেলে দিতে হবে। নাহলে ওনাকে
বাচাঁনো যাবেনা।
--তাহলে তাই করুন।
--কিন্তু এমনটা করলে আপনার পুত্রবধু আর
কোনোদিন মা হতে পারবে না।
--কি বলেন ডাক্তার সাহেব?!! তাহলে এমন বউ
রেখে লাভ কি!! তিন-তিনটা মেয়ে হয়েছে এখন
ছেলে না হলে বংশের মুখে চুনকালি লাগবেনা!!!
আপনি যেভাবেই পারুন চেষ্টা করুন, নাহলে যা হবার
হোক তবুও অপারেশন করবেন না।
.
এই মহিলার কথা শুনে পুরাই থ হয়ে গেলাম। নাহ্, ওনার
সাথে কথা বলে কোনো লাভ নেই। দেখি
রোগীর স্বামী কি বলে.....
ওনাকে বিস্তারিত খুলে বলার পর, ওনিও মায়ের সাথে
সুর মিলিয়ে বলতেছেন, "ডাক্তার সাহেব বংশের
প্রদীপ জ্বালানোর একটা ব্যাপার আছে না? আপনি
একটু রিক্স নিয়ে দেখেন!!!
.
-কিন্তু অপারেশন না করলে ওনি ত মারা যেতে
পারে।
.
প্রতিউত্তরে তারা কিছুই বললেন না। ভাবতেই অবাক
লাগছে আজকালের মানুষগুলো এতো মেয়ে
বিদ্বেষী হয় কেন!!! যেখানে হুজুর পাক (সাঃ)
বলেছেন, "যার ৩টি মেয়ে হবে তারজন্য জান্নাত
ওয়াজিব, যদি তাদেরকে সুশিক্ষা দিয়ে ভালো
পাত্রের কাছে বিয়ে দেওয়া হয়"।
.
এসব তাদেরকে বলে কোনো লাভ নেই।
এখানে আমি অসহায় তারা যা বলবে তাই করতে হবে।
কিন্তু মেয়েটা যে ধুকিয়ে ধুকিয়ে আমার সামনেই
মারা যাচ্ছে এটা সহ্য করতে পারলাম না। তাই ভাবলাম
আল্লাহর নামে অপারেশন থিয়েটারে নিয়েই দেখি,
কি হয়।
.
বিষন্ন মনে হেটে যাচ্ছি কেবিনের দিকে,
পথিমধ্যে রোগীর স্বামীর সাথে দেখা। ওনি
কিছু একটা বলতে চাইছেন! তখন আমি ওনাকে
থামিয়ে দিয়ে বললাম, "আপনি কি চান আপনার স্ত্রী
মরে যাক? প্রতিউত্তরে ওনি একটি কথাই বললেন,
"বংশে প্রদীপ জ্বালানোর কেউ না থাকলে,
স্ত্রী দিয়ে কি হবে"।
.
লোকটার কথা শুনে আমার মুখে হাসি চলে
আসলো, মৃদু হাসি.....
-স্যার হাসলেন কেন? আমি কি কোনো হাস্যকর
কথা বলেছি?
-না, তবে আপনার কথা শুনে আমার একটা ঘটনা মনে
পড়লো। শুনবেন?
-জ্বি স্যার বলুন.......
.
"একবার আমার কাছে ঠিক আপনার স্ত্রীর মতোই
একজন রোগী আসলো যাকে অপারেশন করে
ইউটেরাস ফেলে দিতে হবে! না হলে বাচানো
যাবে না।
যখন এই কথা ওনার স্বামীকে বললাম তখন
প্রতিউত্তরে ওনি বললেন, "ভাই আমার স্ত্রী
হলো আমার ঘরের লক্ষী, সেই যদি বেচেঁ না
থাকে তাহলে সন্তান দিয়ে কি হবে?!! আপনি
অপারেশন করুন"।
.
এজন্য হাসলাম যে, একজন নিজের স্ত্রীকে
ভাবে ঘরের লক্ষী আরেকজন ভাবে প্রদীপ
জ্বালানোর মেশিন। এখানেই হলো ভালবাসার
পার্থক্য। যাইহোক আপনি বললেও আমি আপনার
স্ত্রীকে মেরে ফেলতে পারিনা। কারন আমি
একজন ডাক্তার। মানুষের সেবক, ঘাতক না। ওনিও
আমার কথায় সাই দিলেন.........
.
.
______স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা______
লেখাঃ Akram Hussain Tahosin
Comments
Post a Comment