হে আমার মেয়ে, আমার একটি কথা শোন

zulfiker হে আমার মেয়ে! আমি চল্লিশের জগৎ পার হয়ে
পঞ্চাশের পথে পা রেখেছি। যৌবনকে বিদায় দিতে
যাচ্ছি, সেও আমার কাছ থেকে বিদায় নিতে চায়। নতুন
কোন স্বপ্ন এবং উচ্চ আকাঙ্খা আর নেই।
আমি অনেক দেশ ও শহর ভ্রমণ করেছি, বহু জাতির
সাহচর্য লাভ করেছি এবং জীবন ও জগৎ সম্পর্কে
অনেক ধারণা অর্জন করেছি।
আজ আমার কাছ থেকে কয়েকটি কথা শুন!
কথাগুলো সঠিক ও সুস্পষ্ট। এগুলো আমার বয়স ও
অভিজ্ঞতার আলোকেই তোমাকে বলছি। আমি
ছাড়া আর কেউ তোমাকে এগুলো বলবে না।
আমি অনেক লিখেছি, মিম্বারে ও সমাবেশে
দাঁড়িয়ে অনেক ভাষণ দিয়েছি, অনেক নসীহত
পেশ করেছি। উত্তম চরিত্র অর্জনের আহবান
জানিয়েছি, অশ্লীলতা বর্জন ও সকল প্রকার অন্যায়
কাজ বর্জনের ডাক দিয়েছি। নারীদেরকে ঘরে
ফিরতে ও কুরআনের সুপ্রসিদ্ধ বিধান পর্দার
আবরণে আবৃত হওয়ার আহবান জানিয়েছি, তাদের
সৌন্দর্য্যরে স্থানগুলো ঢেকে রাখতে বলেছি।
লিখতে লিখতে কলম এখন দুর্বল হতে চলছে,
কথা বলার সময় মুখে তা আটকে যাচ্ছে। এত কিছু
করার পরও আমি মনে করি না যে, আমরা কোন
অশ্লীল কাজ সমাজ থেকে দূর করতে
পেরেছি। বেহায়াপনা দিন দিন বেড়েই চলছে,
পাপাচারিতা দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে এবং অশ্লীলতা দেশ
থেকে দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়ছে। আমার মনে
হয় কোন ইসলামী দেশই এর আক্রমণ থেকে
মুক্ত নয়। মিশর, সিরিয়া তথা সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের সীমা
পার হয়ে পাকিস্তান, বাংলাদেশসহ সমগ্র এশিয়ায় এর
আক্রমণ বেড়েই চলছে। মহিলারা বের হচ্ছে
পর্দাহীন হয়ে, সৌন্দর্যের স্থানগুলো প্রকাশ
করে, মুখমন্ডল, বক্ষদেশ এবং কেশ উন্মুক্ত
করে।
আমার ধারণা, নসীহত করে আমরা সফল হই নি। হে
আমার কন্যা! তুমি কি জান কেন আমরা সফল হই নি?
সম্ভবতঃ আমরা এখনও গ্রহণযোগ্য পন্থায় নসীহত
করতে পারি নি এবং সংশোধনের দরজায় পৌঁছতে
পারি নি।
হে আমার মেয়ে! আমরা তোমার দ্বীনী
বোনদেরকে আল্লাহর ভয় দেখিয়েছি, কিন্তু
কাজ হয় নি। অতঃপর অবৈধ সম্পর্ক ও ব্যভিচারে লিপ্ত
হওয়ার কারণে ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হওয়ার
বিষয়ে সতর্ক করেছি, কিন্তু কোন ফল হই নি। এ
বিষয়ে অনেক বই লেখা হয়েছে, বহু বক্তৃতা
দেয়া হয়েছে, তাও ব্যর্থ হয়েছে। এখন আমি
ক্লান্ত শরীরে পরাজিত সৈনিকের ন্যায় ময়দান
ছেড়ে বিদায় নিতে চাচ্ছি। আমরা বিদায় নিয়ে তোমার
দ্বীনি বোনদের ইজ্জত-সম্ভ্রম ও সতীত্ব
রক্ষার দায়িত্ব তোমার হাতেই ছেড়ে দিচ্ছি,
তোমার বিপথগামী বোনদেরকে উদ্ধার ও
সংশোধনের বিষয়টি তোমার উপরই রেখে দিয়ে
তোমার সফলতার দিকে চেয়ে আছি।
হে আমার মেয়ে! যদি তুমি জেনে রেখো,
তোমার হেফাজত তোমার হাতেই। এ কথা সঠিক
যে, পাপের পথে অগ্রসর হওয়াতে পুরুষকেই
প্রথম দায়ী করা যায়। নারীগণ কখনই প্রথমে এ
পথে অগ্রসর হয় না। তবে তাদের সম্মতি ব্যতীত
কখনই তারা অগ্রসর হতে পারে না, নারীগণ নরম না
হলে পুরুষেরা শক্ত হয় না। মহিলাগণ দরজা খুলে
দেয় আর পুরুষেরা তাতে প্রবেশ করে।
হে আমার মেয়ে! তুমি যদি চোরের জন্য
ঘরের দরজা খুলে দাও আর চোর চুরি করে
পালিয়ে যাওয়ার সময় তুমি যদি চিৎকার করে বলঃ হে
লোক সকল! আমাকে সাহায্য কর আমাকে সাহায্য
কর, তাহলে তোমার চেচামেচি করা কি ঠিক হবে?
তোমার কান্নাকাটিতে কি লাভ হবে? তোমার
সাহায্যের জন্য কেউ কি এগিয়ে আসবে?
হে আমার কন্যা! তুমি যদি জানতে পার যে, পুরুষেরা
হচ্ছে নেকড়ে, আর তুমি হচ্ছ ভেড়া, তাহলে
কিন্তু তুমি নেকড়ের আক্রমণ থেকে ভেড়ার
ন্যায় পলায়ন করবে। তুমি যদি জানতে পার যে, সকল
পুরুষই চোর তাহলে কৃপণের ন্যায় তুমি তোমার
সকল মূল্যবান সম্পদ পুরুষদের থেকে হেফজত
করার জন্যে সিন্দুকে লুকিয়ে রাখতে। মনে
রেখো! নেকড়ে কিন্তু ভেড়ার গোশত ছাড়া
অন্য কিছু চায় না। আর পুরুষ তোমার কাছ থেকে যা
ছিনিয়ে নিতে চায় তা কিন্তু ভেড়ার গোশতের
চেয়ে অনেক মূল্যবান। তা যদি তোমার কাছ
থেকে চলে যায়, তাহলে জেনে রাখবে তা
হারিয়ে তোমার বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া
অনেক ভাল। সে তোমার সবচেয়ে মূল্যবান
সম্পদটি নষ্ট করতে চায়, তোমার সম্মানের বিষয়টি
ছিনিয়ে নিতে চায় এবং তোমার অমূল্য রতœটি
অপহরণ করতে চায়। সেটি হচ্ছে তোমার
সতীত্ব ও পবিত্রতা, যাতে রয়েছে তোমার
সম্মান, যা নিয়ে তুমি গর্ব কর এবং যা নিয়ে তুমি
বেঁচে থাকতে চাও। আল্লাহর শপথ! পুরুষ তোমার
এটিই নিয়ে নিতে চায়। এটি ছাড়া অন্য কথা কেউ
বললে তুমি তা বিশ্বাস করো না।
হে আমার মেয়ে! পুরুষ যখন কোন যুবতী
মহিলার দিকে দৃষ্টি দেয় তখন সে মহিলাটিকে
বস্ত্রহীন অবস্থায় কল্পনা করে। আল্লাহর শপথ!
হে আমার মেয়ে! এ ছাড়া সে অন্য কিছু চিন্তা
করে না। তোমাকে যদি কেউ বলে, সে
তোমার উত্তম চরিত্রে মুগ্ধ, তোমার আচার-
ব্যবহারে আকৃষ্ট এবং সে কেবল তোমার সাথে
সাধারণ একজন বন্ধুর মতই আচরণ করে এবং সে
হিসাবেই তোমার সাথে কথা বলতে চায় তাহলে তুমি
তা বিশ্বাস করো না। আল্লাহর শপথ! সে মিথ্যুক।
হে আমার মেয়ে! যুবকেরা তোমাদের
আড়ালে যে সমস্ত কথা বলে তা যদি তোমরা
শুনতে, তাহলে এক ভীষণ ভীতিকর বিষয় জানতে
পারতে। কোন যুবক তোমার সাথে যে কথাই
বলুক, যতই হাসুক, যত নরম কণ্ঠেই বলুক ও যত
কোমল শব্দই ব্যবহার করুক, সেটি তার আসল
চেহারা নয়; বরং সেটি তার অসৎ উদ্দেশ্য
বাস্তবায়নের ভূমিকা ও ফাঁদ ব্যতীত অন্য কিছু নয়।
সুকৌশলে সে যতই তোমার সামনে তা গোপন
রাখুক। আল্লাহর শপথ! এ ছাড়া তার উদ্দেশ্য অন্য কিছু
নয়।
হে আমার মেয়ে! সে যদি তোমাকে তার
ষড়যন্ত্রের জালে আটকাতে পারে তাহলে কি
হবে? কি হবে তোমার অবস্থা? তোমার কি তা জানা
আছে? একটু চিন্তা কর।
কোন নারী যদি এমন কোন দুষ্ট পুরুষের
কবলে পড়ে যায়, তখন সে হয়ত সেই পুরুষের
সাথে মিলে কয়েক মিনিট কল্পিত স্বাদ উপভোগ
করবে। তারপর কি হবে? তুমি কি তা জান? পরক্ষণই
সে তাকে ভুলে যাবে। সে তাকে দ্বিতীয়বার
পাওয়ার আশা পোষণ করবে। হয়ত কয়েকবারের
জন্য তাকে পেলে পেতেও পারে; তবে
স্বামী হিসাবে তার সাথে চির দিন বসবাস করার জন্যে
এবং স্বীয় যৌবন পার করার জন্যে নয়। সে অচিরেই
তাকে ভুলে যাবে। এটিই সত্য। কিন্তু সেই মহিলাটি
চির দিন সেই স্বল্প সময় উপভোগের জ্বালা
ভোগ করতে থাকবে, যা কখনও শেষ হবে না।
এও হতে পারে যে, সে তার পেটে এমন কলঙ্ক
রেখে যাবে, যা থেকে কখনই সে পরিত্রাণ
পাবে না। চির দিন তার কপালে হতাশার ছাপ থাকবে,
চেহারায় দুশ্চিন্তার ছায়া পড়বে। সে তাকে ছেড়ে
দিয়ে আরেকটি শিকার খুঁজতে থাকবে এবং নতুন
নতুন সতীদের সতীত্ব ও সম্ভ্রম হরণ করার
অনুসন্ধানে বের হবে।
হে আমার মেয়ে! এভাবে একটি যুবক অগণিত
নারীকে নষ্ট করলেও আমাদের জালেম সমাজ
তাকে একদিন ক্ষমা করে দিবে। সমাজ বলবেঃ একটি
যুবক পথ হারা ছিল। সে সুপথে ফিরে এসেছে। এই
অজুহাতে সে হয়ত সমাজের কাছে গৃহীত হবে
এবং সকলেই তাকে গ্রহণ করে নিবে। আর তুমি
অপমানিত, লাঞ্জিত হয়ে চিরদিন পড়ে থাকবে।
আজীবন তোমার জীবনে কালিমা লেগে
থাকবে, কোন দিন তা বিচ্ছিন্ন হবে না। আমাদের
জালেম সমাজ কখনই তোমাকে ক্ষমা করবে না।
হে আমার মেয়ে! তোমার সম্মান তোমার
হাতেই রেখে দিলাম এবং তোমার ইজ্জত-আভ্রু ও
মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব তোমার উপরই ছেড়ে দিলাম।
সুতরাং তোমার বোনদেরকে উপদেশ দাও,
বিপথগামীদেরকে সংশোধন কর এবং সুপথে
ফিরিয়ে আন।
হে আমার মেয়ে! তুমি তাদেরকে বলঃ হে আমার
বোন! পথ চলার সময় কোন পুরুষ যদি তোমার
দিকে তাকিয়ে দেখে তবে তুমি তার থেকে বিমুখ
হয়ে যাও এবং তোমার চেহারা অন্য দিকে ঘুরিয়ে
ফেল। এর পরও যদি তার কাছ থেকে সন্দেহ
জনক কোন আচরণ অনুভব কর কিংবা সে তোমার
গায়ে হাত দিতে চায় অথবা কথার মাধ্যমে তোমাকে
বিরক্ত করতে উদ্যত হয় তাহলে তোমার পা
থেকে জুতা খুলে তার মাথায় আঘাত কর। তুমি যদি এ
কাজটি করতে পার তাহলে দেখবে পথের
সকলেই তোমার পক্ষ নিবে, তোমাকেই সাহায্য
করবে। সে আর কখনও তোমার মত অন্য কোন
নারীর উপর অসৎ দৃষ্টি দিবে না। সে যদি সত্যিই
তোমাকে পছন্দ করে থাকে, তাহলে তোমার
এই আচরণে তার হুঁশ ফিরবে, তাওবা করবে এবং
তোমার সাথে হালাল সম্পর্ক গড়ার জন্যে বৈধ পন্থা
অবলম্বনের দিকে অগ্রসর হবে।
হে আমার মেয়ে! শুন! নারীগণ যত উচ্চ মর্যাদাই
অর্জন করুক, শিক্ষা ও জ্ঞানে যতই অগ্রগতি লাভ
করুক এবং ধন-সম্পদ ও সুখ্যাতি যতই আয়ত্ত করুক,
এতে তাদের প্রকৃত প্রত্যাশা পূর্ণ হবে না, তাদের
মান-মর্যাদা, প্রসিদ্ধতা, সুখ্যাতি, ধন-সম্পদ তাদের
মনকে শান্ত করবে না। বিবাহ ও স্বামীর সান্নিধ্যই
কেবল দিতে পারে তাদেরকে অনাবিল শান্তি, এর
মাধ্যমেই পূরণ হতে পারে তাদের প্রত্যাশা।
নারীগণ তখনই প্রকৃত শান্তি খুঁজে পায়, যখন সে
একজন সৎ ও আদর্শ স্ত্রী হতে পারে, সম্মানিত
একজন মা হতে পারে এবং একটি বাড়ি ও পরিবারের
পরিচালক হতে পারে। এ ক্ষেত্রে একজন সাধারণ
নারী থেকে শুরু করে রাণী, রাজকন্যা,
অভিনেত্রী, বিশ্ব সুন্দরীর মাঝে কোন
পার্থক্য নেই। সকলের ক্ষেত্রেই একই কথা। এ
ক্ষেত্রে আমি নাম উল্লেখ না করে দু’জন
নারীর উদাহরণ দিতে চাই। আমি তাদেরকে চিনি ও
জানি। তারা উচ্চ শিক্ষিতা, ধনবতী ও সুসাহিত্যিক। স্বামী
হারা হয়ে তাঁরা প্রায় পাগল অবস্থায় বেঁচে আছেন।
কয়েক দিন আগেও তাদের জীবন ছিল স্বাভাবিক,
মুখে ছিল হাসি আর আনন্দে ছিল ভরপুর তাদের
জীবন। তাদের সবই আছে। হারিয়েছে শুধু
স্বামী।
বিবাহ হচ্ছে প্রতিটি নারীর সর্বোচ্চ কামনা। এটিই
তাদের মনের বাসনা। এটি দিয়েই তাদের মহান প্রভু
তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। সে যদি
পার্লামেন্টের সদস্যও হয়ে যায় কিংবা কোন
রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্টও হয়ে
যায় তথাপিও তাদের মনের প্রকৃত বাসনা পূর্ণ হবে না,
যতক্ষণ না একজন বউ হয়ে স্বামীর ঘরে
প্রবেশ করতে পারবে।
হে আমার মেয়ে! জেনে রেখো! একবার যদি
কোন মেয়ের জীবনে কলঙ্ক নেমে
আসে এবং তার সমাজ যদি তা জেনে ফেলে তবে
কেউ তাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করবে না।
এমন কি যেই পুরুষ তাকে নষ্ট করেছে সেও
তাকে বিয়ে করে নিজের সংসার গড়তে রাজী
হবে না। অথচ সে বিয়ের মিথ্যা ওয়াদা করে তার
সতীত্ব ও সম্ভ্রম নষ্ট করেছে এবং মনের চাহিদা
পূরণ করে কেটে পড়েছে। বরং সে যখন
বিয়ের মাধ্যমে কোন নারীকে ঘরে উঠাতে
চাইবে তখন তাকে বাদ দিয়ে অন্য একটি সম্ভ্রান্ত,
সম্মানিত, ভদ্র, সতী ও পবিত্র নারীকেই খুঁজবে।
কেননা সে কখনই চাইবে না যে, তার স্ত্রী
হোক একজন নষ্ট নারী, ঘরের পরিচালক হোক
একজন নিকৃষ্ট মহিলা এবং তার সন্তানদের মাতা হোক
একজন ব্যভিচারীনী। নিজে ফাসেক ও পাপী
হয়েও সে চাইবে তার স্ত্রীটি হোক ফুলের
মত পবিত্র। এমন কি যখন সে নিজের পাপ ইচ্ছা পূর্ণ
করার জন্য পাপের বাজারে কোন পাপীষ্ট
মহিলাকে খুঁজে পাবে না এবং বিয়ে ছাড়া নিজের যৌন
চাহিদা পূর্ণ করার কোন রাস্তা খুঁজে পাবে না তখন
সে ইসলামের সুন্নাত অনুযায়ী বিয়ের মাধ্যমে
কাউকে নিজের স্ত্রী বানানোর সন্ধানে বের
হবে। সে কোন পতিতাকে বা নষ্ট মহিলাকে
কখনই ঘরের স্ত্রী বানাতে রাজী হবে না।
হে আমার মেয়ে! তুমি তোমার বোনদেরকে
বলঃ হে বোন! তুমি কি জান পুরুষেরা কেন তোমার
কাছে আসতে চায়? কেন তোমাকে নিয়ে ভাবে?
কারণ তুমি খুব সুন্দরী এবং যুবতী। সে তোমার
সৌন্দর্য্যরে পাগল। তাই সে তোমার চারপাশে ঘুরে
এবং তোমাকে নিয়েই ভাবে। এখন আমার প্রশ্ন
হল, তোমার এই যৌবন ও সৌন্দর্য্য কি চিরকাল থাকবে?
দুনিয়াতে কোন জিনিস কি চিরস্থায়ী হয়েছে? শিশুর
শিশুকাল কি শেষ হয় না? সুন্দরীর সৌন্দর্য্য কি
আজীবন থাকে? তোমার বোন যদি বিবাহের
মাধ্যমে পরিবার গঠনে আত্মনিয়োগ না করে এবং
ইসলামের শত্র“দের ষড়যন্ত্রের শিকারে পরিণত
হয়ে ইসলামী পারিবারিক জীবনের গণ্ডির বাইরে
চলে যেতে চায় তাহলে তাকে প্রশ্ন করঃ হে
বোন! তুমি যখন বৃদ্ধ হবে, যখন তোমার পিঠ ও
কোমর বাঁকা হবে এবং দেহের সৌন্দর্য্য বিলীন
হবে তখন কে তোমার দায়িত্ব নিবে? তোমার
পরিচর্যাই বা করবে কে? তা কি তোমার জানা আছে?
যারা তার সেবা করবে, তারা হচ্ছে তার ছেলে-
মেয়ে, নাতি-নাতনি। আর সে রাণীর মত সিংহাসনে
বসে পরিবারের অন্যদেরকে পরিচালনা করবে।
এখন তুমি চিন্ত কর, তুমি কি করবে? বিবাহের মাধ্যমে
তুমি কি এক নির্মল শান্তির সংসার রচনা করবে? না
ব্যভিচারীনী হয়ে স্বল্প সময় উপভোগ করে
তোমার ভবিষ্যৎ জীবনকে অন্ধকারের দিকে
ঠেলে দিবে? স্থায়ী সুখের বিনিময়ে অস্থায়ী
সুখ ক্রয় করা কি কোন বুদ্ধিমানের কাজ হবে? যুবক
বয়সের সামান্য বিলাসিতা কি শেষকালের করুণ পরিণতির
সমান হবে? কখনই হবে না।
ইউরোপ ভ্রমণকারী এক পর্যকট বলেনঃ আমি
বেলজিয়ামের কোন এক শহরের রাস্তার
মোড়ে দাঁড়িয়েছিলাম। এমন সময় পথচারী
পারাপারের জন্য সিগন্যাল খুলে দেয়া হলে দেখলাম
একজন বৃদ্ধা রাস্তা পার হতে চাচ্ছে। সে এতই
দুর্বল ছিল যে, তার হাত-পা কাঁপছিল। গাড়িগুলো প্রায়
তার উপর দিয়ে উঠে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছিল। কেউ
তার হাত ধরছিল না। আমার সাথের একজন যুবককে
মহিলাটির হাত ধরে সাহায্য করতে বললাম। তখন ৪০
বছর যাবৎ বেলজিয়ামে বসবাসকারী আমার এক বন্ধু
বললেনঃ এই মহিলাটি এক সময় এই শহরের অন্যতম
সুন্দরী হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত ছিল।
পুরুষেরা তার উপর দৃষ্টি ফেলার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত
হত, তার সংষ্পর্শ পেতে পকেটের অর্থ খরচ
করত এবং তার সাথে একবার হলেও করমর্দন করার
প্রচেষ্টা করত।
এই মহিলাটির যখন যৌবন ও সৌন্দর্য্য চলে গেল, তখন
তার হাত ধরে একটু সাহায্য করার জন্য একজন
লোকও সে পাচ্ছে না! এ রকম ঘটনা একটি নয়; শত
শত পাওয়া যাবে।
হে আমার মেয়ে! তোমার পথহারা
বোনদেরকে এ সব কথা বলে উপদেশ দাও,
তাদেরকে মর্মান্তিক করুণ পরিণতির কথা শুনাও।
ইউরোপ-আমেরিকার যুবতীদের পথ ধরা থেকে
তোমার ঈমানদার বোনদেরকে সতর্ক কর এবং
রোগে আক্রান্ত হওয়ার পূর্বেই তাদের মধ্যে
প্রতিষেধক রোপন কর।
হে আমার মেয়ে! আমি এ কথা বলছি না যে,
তোমার প্রচেষ্টায় মুসলিম রমনীগণ এক লাফে
প্রথম যামানার মুসলিম নারীদের মত হয়ে যাবে। এটি
অসম্ভব। কারণ বর্তমানে মুসলিম নারীগণ যে
অবস্থায় এসে পৌঁছেছে, তা এক লাফে এসে
পৌঁছে নি। তারা প্রথমে মাথার চুলের একাংশ
খুলেছে, তারপর পুরোটাই। অতঃপর কাপড় ছোট
করতে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে দীর্ঘ
দিনের ব্যবধানে তারা জাতির পুরুষদের গাফিলতির
সুযোগে বর্তমানের দুঃখজনক পরিস্থিতির শিকার
হয়েছে। তারা হয়ত কল্পনাও করতে পারে নি যে,
বিষয়টি এ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছবে।
তুমি যদি ছোট একটি ঘড়ির কাটার দিকে তাকাও তাহলে
দেখবে, সেটি নড়ছে না; বরং আপন স্থানেই
অবস্থান করছে। তুমি যদি দুই ঘন্টা পর পুনরায় ঘড়ির
কাছে ফেরত আস, তাহলে দেখবে ঘড়ির কাটা
এখন আগের স্থানে নেই। দেখবে সেটি
অনেক অগ্রসর হয়েছে। এমনিভাবে শিশু
জন্মগ্রহণ করে একদিনেই যুবক হয়ে যায় না এবং
যুবক হয়ে এক লাফে বৃদ্ধে পরিণত হয় না; বরং
দিনের পর রাত, রাতের পর দিন, মাসের পর মাস,
বছরের পর বছর অতিক্রম করার মাধ্যমে সে বিভিন্ন
অবস্থা অতিক্রম করে। এমনিভাবেই জাতির অবস্থা
পরিবর্তন হয় এবং ভালো থেকে মন্দ ও মন্দ
থেকে ভালোর দিকে ধাবিত হয়।
অশ্লীল পত্রিকা, নিকৃষ্ট ম্যাগাজিন, উলঙ্গ সিনেমা,
বিভিন্ন টিভি চ্যানেল, ইন্টারন্টে, ফাসেক ও
পাপিষ্ঠদের প্ররোচনা সর্বোপরি মুসলিম
রমনীদেরকে নষ্ট করার ষড়যন্ত্রের অংশ
হিসেবে ইসলামের শত্র“দের অবিরাম প্রচেষ্টার
ফলে বর্তমান মুসলিম নারীদের অবস্থা এমন
পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, যা ইসলাম ঘৃণার সাথে
প্রত্যাখ্যান করে। টিভি চ্যানেলে দেখা যায় একজন
পুরুষ একজন যুবতী মেয়েকে হাত ধরে
নাচাচ্ছে, পরস্পর জড়িয়ে ধরছে, গালে গাল ও
বুকে বুক লাগাচ্ছে। টিভির পর্দার সামনে কি সেই
মহিলার পিতা-মাতা ও যুবক-যুবতী ভাই-বোন থাকে না?
এ ধরণের পিতা-মাতা কি তাদের এই নায়িকা
মেয়েটিকে চিনতে পারে না? তারা কি মুসলিম নয়?
কোন মুসলিম কি তার মেয়েকে এই অবস্থায়
দেখতে পছন্দ করতে পারে? এই দৃশ্য কি চোখ
খুলে দেখতে পারে? তার মেয়েকে নিয়ে
অন্য একজন পুরুষ এভাবে খেলা করবে আর সে
তা উপভোগ করবে- এটি কোন মুসলিম কি সমর্থন
করতে পারে? ইসলাম তো দূরের কথা, এমনকি
খ্রষ্টান ও অগ্নিপূজকদের ধর্মও তা সমর্থন করে
না। তাদের ইতিহাস পাঠ করলেই এ কথার প্রমাণ মিলে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে ও বেশ কিছু মুসলিম দেশে
মুসলিম নারী-পুরুষের চারিত্রিক অবস্থা এই পর্যায়ে
গিয়ে ঠেকেছে যে, মানুষ তো দূরের কথা;
পশুরাও তা গ্রহণ করতে পারে না।
দু’টি মোরগ যখন একটি মুরগীর নিকটবর্তী হয়,
তখন মুরগীটিকে নিজের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে
নেওয়ার জন্য মোরগ দু’টি পরস্পর ঝগড়া করে এবং
একটি অন্যটিকে তাড়িয়ে দেয়। কিন্তু তুমি দেখবে
যে, মিশর, লেবানন ও বাংলাদেশের কক্সবাজারের
সমুদ্র সৈকতসমূহে এবং ঢাকার পার্কসমূহে মুসলিম
নারীদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। তাদের মুখ,
মাথা, পেট, পিঠ এমন কি সবই উন্মুক্ত। শুধু তাই নয়;
অবস্থা এ পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, দু’জন পুরুষ
মিলে একজন মহিলাকে ভাগাভাগি করে উপভোগ
করছে। এই অবস্থা কি কোন পশু সমর্থন করে?
একটি মোরগ কি চায় যে, তার আয়ত্তের মুরগীটির
উপর আরেকটি মোরগ এসে আরোহন করুক?
ব্যভিচার শুধু মানব জাতির কাছেই ঘৃণীত নয়, কিছু কিছু
বন্য পশুও এই অপরাধকে ঘৃণা করে।
সহীহ বুখারীতে এই মর্মে আমর বিন মায়মুন
থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেনঃ “ইয়ামানে
থাকাবস্থায় আমি একদা একটি উঁচু স্থানে ছাগল
চরাচ্ছিলাম। দেখলাম একটি পুরুষ বানর একটি নারী
বানরের হাতের উপর মাথা রেখে শুয়ে আছে।
পুরুষ বানরটির চেয়ে কম বয়সের আরেকটি বানর
এসে স্ত্রী বানরটিকে খোঁচা মারল। এতে স্ত্রী
বানরটি পুরুষ বানরের মাথার নীচ থেকে চুপচাপ হাত
বের করে আগত বানরটির পিছে চলতে থাকল। কিছু
দূর গিয়ে বানরটি স্ত্রী বানরের সাথে যৌনকর্মে
লিপ্ত হল। তারপর স্ত্রী বানরটি ফিরে এসে
ধীরে ধীরে তার যুগলের (স্বামীর) গালের
নীচে হাত রাখার চেষ্টা করতেই সে পেরেশান
হয়ে জেগে উঠল। স্ত্রী বানরটির শরীরের
গন্ধ পেয়েই চিৎকার করতে শুরু করল। এতে
একদল বানর একত্রিত হল। পুরুষ বানরটি চিৎকার করে
হাতের মাধ্যমে স্ত্রী বানরটির দিকে ইঙ্গিত করে
ব্যভিচারের কথাটি অপরাপর বানরকে বুঝাতে লাগল।
বানরগুলো ডানে বামে খোঁজা-খুঁজি করে অপরাধী
বানরটি ধরে নিয়ে আসল। আমর বিন মায়মুন বলেনঃ
আমি সেই বানরটিকে চিনে রেখেছিলাম। তারা
উভয়ের জন্য গর্ত খনন করলো এবং তারা
উভয়কেই রজম করলো। আমর বিন মায়মুন বলেনঃ
আমি বনী আদম ছাড়াও অন্যান্য সৃষ্টির মধ্যেও রজম
দেখেছি।
অন্য বর্ণনায় আমর বিন মায়মুন বলেনঃ বানরগুলোর
পাথর মারার দৃশ্য দেখে আমি ধৈর্যধারণ করতে না
পেরে আমিও তাদের সাথে পাথর মারলাম।
মুসলিম দেশের স্কুল, কলেজ ও
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মুসলিম যুবকরা মুসলিম মুসলিম
যুবতী মেয়েদের পাশেই মাথা, মুখ ও বুক খুলে
বসছে। মুসলিম পিতা-মাতাগণ স্বেচ্ছায় তাদের
কন্যাদের জন্য এটিকেই বেছে নিচ্ছে।
হে আমার মেয়ে! মুসলিম মেয়েদের এই
অবস্থা একদিনে পরিবর্তন হবে না। এক লাফে তারা
পূর্বেই সেই আসল অবস্থায় ফিরে যাবে না; বরং
আমরা সেভাবেই তাদেরকে ধীরে ধীরে
পূর্বের অবস্থায় ফেরত নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব,
যেভাবে পর্যায়ক্রমে তারা বর্তমানের করুণ ও
দুঃখজনক অবস্থায় এসে পৌঁছেছে।
আমাদের সামনে পথ অনেক দীর্ঘ। পথ যদি
অনেক দীর্ঘ হয়, আর তার বিকল্প সংক্ষিপ্ত অন্য
কোন পথ না থাকলে যে ব্যক্তি পথ দীর্ঘের
অভিযোগ করে যাত্রা শুরু করবে না, সে কখনও
তার গন্তব্য স্থানে পৌঁছতে পারবে না।
হে আমার মেয়ে! তুমি প্রথমে মুসলিম
নারীদেরকে পুরুষদের সাথে খোলামেলা উঠা-
বসা, চলাফেরা এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে বেপর্দা হয়ে
সহ শিক্ষায় প্রবেশ করতে নিষধ কর। সেই সাথে
সহ শিক্ষার খারাপ দিকগুলো তুলে ধর। তুমি
তাদেরকে মুখ ঢেকে রাখতে বল। যদিও ফিতনার
আশঙ্কা না থাকলে আমি মুখ ঢাকাকে ওয়াজিব মনে
করি না। মুখ খুলে রাস্তায় চলার চেয়ে নির্জনে মুখ
ঢেকে পুরুষের সাক্ষাৎ করা অধিক বিপদজনক,
স্বামীর অনুপস্থিতে তার ঘরে স্বামীর বন্ধুর
সামনে বসে গল্প করা, আপ্যায়ন করা আর পাপের
দরজা খুলে দেয়া একই কথা। ভার্সিটিতে সহপাঠীর
সাথে মুসাফাহা করা অন্যায়, তার সাথে অবিরাম কথা ও
টেলিফোন চালিয়ে যাওয়া ক্ষতিকর, এক সাথে
বিদ্যালয়ে যাওয়া অনুচিত, বান্ধবীর সাথে গৃহ
শিক্ষকের রুমে একত্রিত হওয়া অপরাধ।
হে আমার মেয়ে! তুমি এ বিষয়টি ভুলে যেয়ো
না যে, আল্লাহ্ তোমাকে নারী হিসেবে সৃষ্টি
করেছেন। আর তোমার সহপাঠীকে
বানিয়েছেন পুরুষ। তোমাদের প্রত্যেকের
মধ্যেই এমন উপাদান যুক্ত করা হয়েছে, যার কারণে
তোমাদের একে অপরের দিকে ঝুকে পড়ে।
সুতরাং তোমাদের কেউই এমন কি পৃথিবীর সকল
মানুষ মিলে চেষ্টা করলেও আল্লাহর সৃষ্টিতে
কোন পরিবর্তন আনয়ন করতে সক্ষম নয়। তারা
কখনই নারী-পুরুষের ব্যবধান উঠিয়ে দিয়ে
উভয়কে সমান করতে পারবে না এবং নারী-পুরুষের
পরস্পরের দিকে আকর্ষণকে ঠেকাতে পারবে
না।
যারা সভ্যতার নামে নারী-পুরুষের মধ্যকার ব্যবধান
উঠিয়ে দিতে চায় এবং উভয় শ্রেণীর জন্য সমান
অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবী জানিয়ে কর্মক্ষেত্রে
মিশ্রিত হয়ে যাওয়ার আহবান জানায় তারা মিথ্যুক। কারণ
এর মাধ্যমে তারা নিজেদের মনের চাহিদা মেটাতে
চায় এবং অন্যের স্ত্রী-কন্যাকে পাশে বসিয়ে
নারীদের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে চায়। সেই
সাথে আরও কিছু করার সুযোগ পেলে তাও
করতে চায়। কিন্তু এ কথাটি এখনও তারা খোলাসা
করে বলার সাহস পাচ্ছে না। সুতরাং তারা নারীদের সম
অধিকার প্রতিষ্ঠা, সভ্যতা ও উন্নয়নের যে সুর
তুলছে তা নিছক সস্তা বক্তব্য ছাড়া আর কিছু নয়। এ
সমস্ত কথার পিছনে তাহাজীব-তামাদ্দুন, সভ্যতা, উন্নতি
অর্জন আদৌ তাদের উদ্দেশ্য নয়।
তারা যে মিথ্যুক তার আরেকটি কারণ হল, যেই
ইউরোপ-আমেরিকাকে তারা নিজেদের আদর্শ
মনে করে এবং যাদেরকে তারা সভ্যতা, সংস্কৃতি ও
উন্নতির পথ প্রদর্শক মনে করে মূলত তারা প্রকৃত
সত্যকে উপলব্ধি করতে পারে নি। তারা যেটিকে
সভ্যতা ও সংস্কৃতি মনে করছে, তা মূলতঃ সত্য ও
সভ্যতা নয়; বরং সেটি হচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকা
থেকে আমদানীকৃত সত্য ও সভ্যতা। তাদের ধারণায়
নাচ, গান, বেহায়াপনা, উলঙ্গ অর্ধউলঙ্গ হওয়া, স্কুল,
কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সহশিক্ষায় অংশ নেওয়া,
নারীদের খেলার মাঠে নামা এবং সমুদ্র সৈকতে
গিয়ে বস্ত্রহীন হয়ে গোসল করাই সভ্যতা ও
সংস্কৃতির মানদন্ড। আর প্রাচ্যের দেশ তথা
মুসলিমদের মসজিদ, মাদরাসা, মদীনা, দামেস্ক এবং
আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল ইসলামী
প্রতিষ্ঠানে যে উন্নত চরিত্র, সুশিক্ষা, নারী-
পুরুষের বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীন পবিত্রতার প্রশিক্ষণ
দেয়া হয় তাদের ধারণায় তা মুসলিমদের পশ্চাদমুখী
হওয়ার এবং সভ্যতা ও সংস্কৃতির দিক থেকে পিছিয়ে
থাকার অন্যতম কারণ।
ইউরোপ-আমেরিকা থেকে ঘুরে আসা বা
সেখানে বসবাসকারী অসংখ্য পরিবার নারী-পুরুষের
খোলামেলা চলাফেরাতে সন্তুষ্ট নয় এবং এটি
তাদেরকে শান্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই আজ
তারা বিকল্পের সন্ধান করছে।
হে আমার মেয়ে! ইউরোপ-আমেরিকায় এমন
অসংখ্য পিতা-মাতা আছে, যারা তাদের যুবতী
মেয়েদেরকে যুবক পরুষদের সাথে চলাফেরা
করতে ও মিশতে দেয় না। তারা তাদের
সন্তানদেরকে সিনেমায় যেতে দেয় না। শুধু তাই
নয়; তারা তাদের ঘরে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনামুক্ত
চ্যানেল ব্যতীত অন্য কিছু ঢুকায় না। অথচ
পরিতাপের বিষয় হচ্ছে আজ অধিকাংশ মুসলিম
দেশের মসুলিমদের ঘর এগুলো থেকে মুক্ত
নয়।
এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবির কথা হচ্ছে, সহশিক্ষা
প্রবল যৌন আকাঙ্খাকে দমন করে, চরিত্র সংশোধন
করে এবং দেহ থেকে বাড়তি যৌন চাহিদাকে দূর
করে দেয়। আমি তাদের জবাবে বলতে চাই যে,
আপনারা কি রাশিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখেন না? যেই
রাশিয়া কোন ধর্মে বিশ্বাস করে না, কোন
পাদ্রীর উপদেশে কর্ণপাত করে না, তারা কি
সহশিক্ষা ও নারী-পুরুষের সহ অবস্থানের খারাপ
পরিণামের শিকার হয়ে তা থেকে ফেরত আসার
ঘোষণা দেয় নি?
আমেরিকার প্রসঙ্গে আসি। পত্র-পত্রিকার
রিপোর্টে প্রকাশ হচ্ছে যে, অবিবাহিত
ছাত্রীদের মধ্যে গর্ভবতীর সংখ্যা সেখানে
দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি তাদের অন্যতম একটি বিরাট
সমস্যা। আপনারা কি মুসলিম দেশের
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এমন সমস্যা দেখতে চান?
বর্তমান সময়ে আমেরিকা এই সমস্যা থেকে
পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য যৌন সচেতনতা বা সেক্স শিক্ষা
নামে একটি বিষয় সিলেবাসের অন্তর্ভূক্ত করে তা
ছাত্র-ছাত্রীদেরকে পাঠ দান করছে। আমি মনে
করি এর মাধ্যমে তারা আগুনের মধ্যে পেট্রোল
ঢালছে। অল্প বয়স্ক নির্দোষ বালিকার মধ্যে লুকায়িত
যৌন স্পৃহাকেই তারা জাগিয়ে তুলছে। স্কুল পর্যায়ের
ছাত্রীদেরকে তারা কন্ডম ব্যবহারের প্রশিক্ষণ
দিচ্ছে এবং একজন পুরুষ নির্জনে একজন মহিলার
সাথে কি করে তারা উঠতি বয়সের বালিকাদেরকে
তাও শিক্ষা দিচ্ছে। আমাদের মধ্যে বসবাসকারী
এক ধরণের মানুষ নামধারী শয়তান আমাদেরকেও
তাদের কর্মকান্ডের অনুসরণ করার আহবান
জানাচ্ছে।
হে আমার মেয়ে! আমি এ কথা বলছি না যে,
যুবকেরা তোমার কথা অবনত মস্তকে মেনে
নিবে। আমি জানি তারা তোমার কথা প্রত্যাখ্যান করবে
এবং তোমাকে বোকা বলবে। কারণ তারা মনে
করবে যে, তুমি তাদেরকে যৌবনের স্বাদ
উপভোগ করতে বাধা দিচ্ছ এবং তাদেরকে
ভোগের সমুদ্রে সাঁতার কাটতে মানা করছ। সুতরাং
তুমি যুবকদেরকে এটা বলতে যাবে না; বরং তুমি
উপদেশ দিবে তোমার মুমিন-মুসলিম
বোনদেরকে, মেয়েদেরকে। সতর্ক করবে
আমার স্নেহের কন্যাদেরকে। কেননা
ইবলীসের ফাঁদে পড়ে তোমার বোনেরাই
পথভ্রষ্ট হয় এবং তারাই ভিকটিমে পরিণত হয়। সুতরাং
তোমাদের কেউ যেন এমন কাজে অগ্রসর না
হয়, যার পরিণাম শুভ হয় না। যারা নারীর স্বাধীনতার গান
গায়, তাদের উন্নয়নের কথা বলে, তাদেরকে
সহশিক্ষা ও পর্দাহীন মেলামেশার আহবান জানায়
তোমরা তাদের কথায় কর্ণপাত করো না। কারণ এ
সমস্ত শয়তানদের অধিকাংশের স্ত্রী-সন্তান ও
পরিবার নেই। তারা কেবল তোমাদেরকে
উপভোগ করতে চায়।
হে আমার মেয়ে! তুমি তোমার বোনদেরকে
বলঃ আমি তোমাদেরকে যে উপদেশ দিচ্ছি, তার
বিনিময়ে আমি কিছুই চাই না। শুধু তোমাদেরকে
অধঃপতনের হাত থেকে রক্ষা করতে চাই,
তোমাদের কল্যাণ চাই, পবিত্র জীবনের সন্ধান
দিতে এবং আমি নিজের জন্য যা ভালবাসি, তোমাদের
জন্যও তাই কামনা করি।
হে আমার মেয়ে! এদের কবলে পড়ে কোন
নারী যদি তার অমূল্য সম্পদ হারায়, তার মর্যাদা নষ্ট হয়
এবং সম্ভ্রম ও সতীত্ব চলে যায়, তাহলে তার
হারানো সম্মান দুনিয়ার কেউ পুনরায় ফেরত দিতে
পারবে না। কোন নারী যদি স্বীয় ইজ্জত হারা
হয়ে সমাজ থেকে ছিটকে পড়ে কেউ তার হাত
ধরবে না এবং তার দিকে সাহায্যের হাত প্রসারিত
করবে না। অথচ যত দিন সেই নারীর শরীরে
যৌবন অবশিষ্ট ছিল ততদিন পাপিষ্ঠরা তার সৌন্দর্য্যরে
চারপাশে ঘুর ঘুর করেছে এবং তার প্রশংসা
করেছে। যৌবন চলে যাওয়ার সাথে সাথেই কুকুর
যেমন মৃত জন্তুর মাংশ ভক্ষণ করে হাড্ডীগুলো
ফেলে রেখে চলে যায় ঠিক তেমনি তারা তাকে
রেখে দূরে চলে যায়।
হে আমার মেয়ে! এই ছিল তোমার প্রতি আমার
সংক্ষিপ্ত উপদেশ। তোমাকে যা বললাম, তাই সত্য।
এটি ছাড়া কেউ যদি তোমাকে অন্য কথা বলে, তুমি
তা বিশ্বাস করো না। জেনে রেখো! তোমার
হাতেই তোমাদের ও পুরুষদের সংশোধনের
চাবিকাঠি; আমাদের হাতে নয়। তুমি চাইলে নিজেকে,
তোমার বোনদেরকে এবং সমগ্র জাতিকে
সংশোধন করতে পার।
তোমার উপর আল্লাহর পক্ষ হতে শান্তি ও রহমত
বর্ষিত হোক।
তোমার পিতা,
৮ / ৬ / ১৪৩৩ হিজরী

Comments

Popular posts from this blog

বাংলাদেশী মেয়েদের হট ছবি

হে যুবক কোন দিকে যাও!! জান্নাতি হুর তোমাকে ডাকছে

ইসলামের দৃষ্টিতে যৌন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও শক্তি বৃদ্ধিকারী খাদ্য-পানীয়