প্রেম ভালবাসা বিয়ে

wpid-screenshot_1.png

প্রেম-ভালবাসা এবং বিয়ে 

কিছুদিন আগে পেপারে একটা খবর এসেছে,

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে একটা মেয়ে লাঞ্চিত করেছে। কেন এমন ঘটেছে

এটা বোঝার জন্য খুব চালাক হওয়ার প্রয়োজন নেই, প্রেমঘটিত এই ধরনের ইস্যু এখন মোটামুটি “কমন” আকার ধারণ করেছে। ব্যাপারটি একই সাথে

কিছুটা (দুর্ভাগ্যজনকভাবে) হাস্যরসের

উদ্রেককারী,কিছুটা দুঃখবোধের উদেরককারী এবং অনেকখানি দুশ্চিন্তার উদ্রেককারীও বটে।

একটা মানুষের হাতে আরেকজন লাঞ্চিত হবে এটা নিশ্চয়ই কোন কাম্য হতে পারে না !

আমাদের সমাজে এই ধরণের বিয়ে-পূর্ববর্তী

সম্পর্কের ব্যাপারে সমাজ এখন বেশ বিভ্রান্ত।

কেউ বলছে করা যায়, কেউ বলছে থাকতেই

পারে, কেউ বলছে না থাকাটাই অস্বাভাবিক।নকশা

আমাদের শিখিয়ে দিচ্ছে কিভাবে প্রোপোজ

করতে হবে ! তবে অনেকে খুব শক্ত কন্ঠে

এটাও বলছে এটা একটা অস্বাভাবিক সম্পর্ক, সমাজে

এটার কারণে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।

যারা প্রেম করে তারা এই ধরণের সম্পর্কের

পিছনে একটা কমন যুক্তি দেয়, “বিয়ের আগে

জানাশোনা না থাকলে বিয়ের পরে সমস্যা হয়, তাই

বিয়ের আগে ভাল ছেলে/মেয়ে খুজে তার

গলায় ঝুলে পড়তে হবে না হলে ভাল পার্টনার পাওয়া

যাবে না”। ব্যাপারটা কি আসলে এটাই ? আমি মনে করি

এটা একটা self-justification, এর বেশি কিছু নয়। মানুষ

হিসেব করে প্রেমে পড়ে না, প্রেমে পড়ে

তারপর হিসেব করে। কয়জন প্রেমের আগে

পয়েন্ট টু পয়েন্ট হিসেব করে “এটা ভাল, ঐটা

ভাল” ?? বাস্তবে, আগে ভালবাসা হয়, তারপর

সেটাকে justify করার জন্য খুজে খুজে ভাল ভাল

দিকগুলো বেশি বেশি চোখে পড়ে, তাহলে

নিজের মন একটা প্রবোধ পায়, বাসায় যুক্তি দাড়া
করানো যায়। উরা-ধুরা ছেলের সাথে খুব “লক্ষী”

মেয়ে প্রেম করে লাইনে এনেছে- এরকম

ঘটনা তো আছেই ! আর মানুষ যদি “ভাল” আর “খারাপ”

হিসেব করেই প্রেম করত তাহলে গুটিকয়েক

মানুষ প্রেম করত বাকিরা করত না এই অজুহাতে যে

“ভাল পার্টনার পাওয়া যাচ্ছে না” !

প্রশ্নটা হচ্ছে, সমস্যা কোথায় ? প্রেমিক-

প্রেমিকারা যতই আবেগীকন্ঠে এটার পক্ষে

বিভিন্ন রকম যুক্তি দিতে পারে, বাস্তবতা এটার

বিপক্ষে যায়। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে কেউ

আত্মহত্যা করে, কেউ মনমরা হয়ে পড়ে থাকে

আরেকজনকে না পাওয়ার জন্য, কেউ কেউ আবার

“প্রথম প্রেমে” ছ্যাক খেয়ে কড়া লুইচ্চা হয়ে

যায়। নকশাতে “সুবন্ধ সমীপেষু” যারা পড়েন

তাদের ধারণা আছে এই ধরণের সম্পর্কের

জটিলতার লেভেলটা আটলান্টিক মহাসাগর থেকেও

গভীরে। গার্লফ্রেন্ড নিয়ে মারামারির ঘটনা একটা

নিয়মিত ঘটনা হয়ে যাচ্ছে।wpid-892566_582064811804208_1523013443_o.jpg

এই ধরণের সম্পর্কের সমস্যাটা সম্পর্কের

সীমারেখায়, “ঠিক কতটুকু সম্পর্ক আসলে

বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ডদের মধ্যে হওয়া উচিত”

সেটা নিয়ে পরিষ্কার, বস্তুনিষ্ঠ এবং স্বাভাবিক কোন

চিন্তাভাবনা নেই। আমাকে একবার এক বড়ভাই

উপদেশ দিয়েছিল, “দেখ তুমি প্রেম করতে পার,

তবে শুধু কথা বলবা এর বেশি কিছু না” ! আবার কিছুদিন

আগে এক ফ্রেন্ড থেকে শুনলাম কে যেন

তাকে বলেছে, “বিয়ের আগে physical relation”

না থাকা নাকি ব্যাকডেটেড ব্যাপার” ! এই ধরণের

সম্পর্কের আসলেই কোন সীমারেখা নাই, এটা

কখনও প্রবৃত্তি কখনও বা পুজিবাদী সমাজের ভ্রান্ত

ধারণা দিয়ে সংজ্ঞায়িত হয়, নৈতিকতার ভিত্তিতে হয় না।

তবে এর থেকেও বড় যে সমস্যা তা হল এই

ধরণের সম্পর্কে দায়িত্ববোধের অভাব, এটা

পুরোপুরি দায়িত্বজ্ঞানহীন সম্পর্ক।যত দায়িত্ব পালন

করে করে তার পুরোটাই ইমোশন থেকে

করে, কবি সাহিত্যিকদের কবিতায় তাই “তোমার জন্য

চাঁদ এনে দেব” কথার ছড়াছড়ি যতটা বেশি, বাস্তুবতার

সাথে সম্পর্ক ততটাই কম !

একটা সম্পর্ককে শুধু “ভালবাসা” দিয়ে বছরের পর

বছর টিকিয়ে রাখা সম্ভব ? ভালবাসা ব্যাপারটা প্রবৃত্তিজাত,

এর সাথে নৈতিকতার সম্পর্ক খুব দুর্বল, প্রবৃত্তি এটা

বলেও দেয় না এর দায়িত্ববোধের মাত্রা। তাই

আমরা দেখি ৫ বছরে গড়ে ওঠা প্রবল ভালবাসার

সম্পর্ক ৫ দিনের মাথায় ভেঙ্গে চুরমার, কেউ

কাউকে চিনতেই পারছে না ! দীর্ঘদিন মন দিয়ে

প্রেম করে বিয়ের আগে অন্য কোন সুন্দরী

মেয়ে বা ধনী ছেলের দেখার পর অনেকের

আবেগ কর্পূরের মত উবে যায় ! কেন ? কারণ এর

আগে যা ছিল, তা আবেগ ছিল, বিবেক ছিল না।

আবেগকে তাই “দায়িত্ববোধে” reinforce না

করলে সেটার ভবিষ্যৎ খুবই অন্ধকার, আর তাই

আমাদের চারপাশের প্রেম-ভালবাসার সম্পর্কগুলো

টেকে না, টিকলেও হাজারটা কাহিনী করে টিকে

আছে। বাস্তবতা বলে একটা ব্যাপার আছে, আজ

হোক, কাল হোক, এক সময় মানুষ সেটা উপলব্ধি

করেই, করতে না চাইলেও তাকে করতে হবে।

তখন বোঝা যায়, শুধু আবেগ দিয়ে বিশ্ব চলে না।

“দায়িত্ব”, “কর্তব্য” বলে কিছু ব্যাপার আছে,

এগুলো এমনি এমনি আসে নি।একটা বয়ফ্রেন্ড

আসলে কখনই গার্লফ্রন্ডের দায়িত্ব নেয় না,

নিতে পারে না, সম্পর্কের নেচারটাই এমন। “বিয়ে-

পূর্ববর্তী সম্পর্কে কার দায়িত্ব কি এটা নিয়ে

পৃথিবীর কোথাও কোনদিন কোন consensus

হয়নি । সেকুলার আদর্শ কখনই এই ব্যাপারটির সমাধান

করার চেষ্টা করেনি, বরং বলে দিয়েছে, “যে যা

খুশি করবে এটা তাদের ব্যাপার”, হোক টিনেজ

প্রেগ্নেনেন্সি, হোক গর্ভপাত, কিংবা

পিতৃপরিচয়হীন কোন শিশুর জন্ম।

যে সম্পর্ক যখন খুশি তখন করা যায় এবং যখন খুশি

বিনা নোটিশে ভেঙ্গে ফেলা যায়, যে

সম্পর্কে যা কিছু তা করা যায়,যে সম্পর্কে

কোন সামাজিক দায়বদ্ধতা নেই এবং যে

সম্পর্কের কোন নিশ্চিত উদ্দেশ্য নেই-

সেই সম্পর্কে আর যাই কিছু থাকুক, দায়িত্ব বলে

কিছু নেই। ইসলামে তাই এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন

সম্পর্কের অনুমোদনও দেয় না।

এমন কোন সম্পর্কের অনুমোদন ইসলামে

দেয় না যে সম্পর্কের ভিত্তি কেবল শরীরি চাওয়া

পাওয়া। ইসলাম সম্পর্ক নির্ধারণ করে একই সাথে

আবেগ এবং দায়িত্ববোধের মাধ্যমে। দুটি

ছেলে-মেয়ে যা খুশি তা করবে, এরপর একদিন

সে সম্পর্ক ভেঙ্গে যাবে এবং কেউ

পূর্ববর্তী কোন ঘটনার জন্য জবাবদিহি থাকবে না-

এই ধরণের অস্বাভাবিক সম্পর্কের মানে কি ? একটা

ছেলে একটা মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্ক

করবে কিন্তু বিয়ের জন্য বাধ্য থাকবে না বরং

পৃষ্ঠদেশ দেখিয়ে চলে যাবে, কিংবা একটা মেয়ে

প্রেম করে একটা ছেলেকে নাচাবে বছরের

পর বছর আর বিয়ে করতে চলে যাবে অন্য

কাউকে-এমন হলে পশুপাখির সাথে মানুষের

পার্থক্যটা থাকল কই ?

ইসলাম এসব ব্যাপারে মোটেই উদারতা প্রদর্শন

করে না। একটা ছেলের সাথে তাই একটা মেয়ের

সম্পর্ক বিয়ের মাধ্যমে হবে আর আর বিয়ে এমন

একটা সম্পর্ক যেটা শুধু আবেগ নয় বরং

দায়িত্ববোধের বন্ধনে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ।

"আর পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের উপর অধিকার

রয়েছে, তেমনি ভাবে স্ত্রীদেরও অধিকার

রয়েছে পুরুষদের উপর নিয়ম অনুযায়ী।" [TMQ

২:২২৮]

মুসলিমদের মধ্যে বিয়ের এই চমৎকার প্র্যাকটিসটা

আছে বলেই এই সমাজে এখনও মানুষজন পশু হয়ে

যায়নি, যদিও পশ্চিমারা প্রতিনিয়ত তাদের নোংরা

অভ্যাসগুলো আমাদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে

বদ্ধপরিকর। বিয়ে একটা চমৎকার বন্ধুত্ব, এটা প্রেম-

ভালবাসার মত কোন খেলা না। এটা একটা স্থায়ী

বন্ধন, যা খুশি তা করবে-এমনটা হওয়ার সুযোগ নেই।

গার্লফ্রেন্ডকে ভাল না লাগলে বয়ফ্রেন্ড তাকে

ত্যাগ করার জন্য কোন সময় নাও নিতে পারে, বিয়ে

ব্যাপারটা এমন নয়।

"নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর।

অতঃপর যদি তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে হয়ত

তোমরা এমন এক জিনিসকে অপছন্দ করছ, যাতে

আল্লাহ, অনেক কল্যাণ রেখেছেন। "[TMQ

৪:১৯]

শুধু তাই নয়, বিয়ে হল সভ্যতার পরিচায়ক। আল্লাহ

বলছেন বিয়ে সেক্সুয়াল ইন্সটিংট থেকেও বেশি

কিছু।

আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে

তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের

সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা

তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের

মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি

করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের

জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে TMQ [৩০:২১]

  1. courtesy : Zim Tanviri

Comments

Popular posts from this blog

বাংলাদেশী মেয়েদের হট ছবি

হে যুবক কোন দিকে যাও!! জান্নাতি হুর তোমাকে ডাকছে

ইসলামের দৃষ্টিতে যৌন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও শক্তি বৃদ্ধিকারী খাদ্য-পানীয়