আধিপত্য বিস্তার- শাশুড়ি vs বউ।
আধিপত্য বিস্তার- শাশুড়ি vs বউ।
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আমাদের
সমাজে ‘শাশুড়ি’ একটি নেতিবাচক শব্দে
পরিণত হয়েছে কিংবা নেতিবাচক করে
দেয়া হয়েছে। তাই ‘নারী অধিকার’ শব্দটি
আমরা ব্যবহার করি বটে, কিন্তু সমাজে
‘শাশুড়ি’ চরিত্রে যিনি বসে থাকেন, তিনি
যেন ‘অধিকারের খাতার out of the boundary.
ব্যক্তিগতভাবে “অধিকার” বলতে আমি
নির্দিষ্ট সেই জাতি বা সেই মানুষটিকে শুধু
তার প্রাপ্যতা বুঝিয়ে দেয়াই মনে করি না,
বরং সেই মানুষের সমাজের প্রতি কি দেয়ার
বা তার নিজের প্রতি তার কি অধিকার
সেটাকেও তাকে বুঝিয়ে দেয়া আমাদের
দায়িত্ব মনে করি। তো সেই হিসাবে
পরিবারে একটা শাশুড়ির কি করণীয় কিংবা
শাশুড়ির প্রতি বউ এর দায়িত্ব-সর্বোপরি
“শাশুড়ি অধিকার” নিয়ে কাউকে কিছু বলতে
দেখা যায় না। ফলে আমাদের অসচেতনতার
কারণে শাশুড়িরা কখনো আক্রমণাত্মক হয়ে
উঠেন, সংসারে একক কর্তৃত্ব স্থাপনের
চেষ্টা করেন আবার কখনো মানসিকভাবে
নির্যাতীত কিংবা অবহেলিত হয়ে পড়েন।
তাই সংসারে শাশুড়ি ও বউ এর অধিকার ও
আচরণ নিয়ে একতরফা নয়- বরং উভয় পাশ
আলোচনার জন্য কিছু ধারাবাহিক উপস্থাপন-
case no-1: আধিপত্য বিস্তারঃ অধিকাংশ
শাশুড়ি মূলত এই ভুলটাই করে থাকেন। তারা
বলেন- “আমি এখনো জীবিত আছি, আমার
সংসারে আমার মতোই চলতে হবে”। এদিকে
শাশুড়ি বউকে বিভিন্ন কাজ সামলানোর
দায়িত্ব দিলেও এমনটিই আশা রাখেন যে
“সেই সব কাজটি আমি যেভাবে করি,
সেভাবেই সে করুক/করতে হবে”। এই
জিনিসটাই হচ্ছে মারাত্মক একটা সমস্যা
সৃষ্টি করে। কারণ একজনের লাইফ-স্ট্যাইলের
সাথে, কাজের ধরণের সাথে আরেকজনের
১০০% মিল খাবে তা কিন্তু না। পরিবার
টিকে থাকে সমঝোতার ওপর। আপনি যদি
মানুষকে স্বাধীনতা দিবেন তখন দেখা যাবে
সন্তুষ্টচিত্তে অপরপক্ষ কাজটি করে যাচ্ছে-
সেই কাজটি কারো প্রতি দায়িত্ব হোক বা
পরিবারের সবার জন্যই হোক না কেনো?
ধরে নেই- কারো কাজের ধরণে আপনার
সমস্যা আছে। ধরে নেই- শাশুড়ি খুব পরিপাটি
টাইপ মানুষ। কিন্তু বউটা একটু অগোছালো।
রান্না ঘরে যখন যায়- সব এলোমেলো করে
দিয়ে আসে। কাপড়-চোপড় যেখানে সেখানে
পড়ে আছে, ঝুটা চায়ের কাপ সেই কবে
থেকে টেবিলে পড়া-ইত্যাদি ইত্যাদি (ধরে
নিই)। আর এসব শাশুড়ির চোখে খারাপ লাগে।
এক্ষেত্রে শাশুড়ি যদি বুদ্ধিমত্তার সাথে
হাসিমুখে বলে- বউ মা... ঘরটা গুছিয়ে রাখলে
তো লোকে তোমাকেই ভালো বলবে বা একটু
মজা করে না হয় বললেন- যাতে অপরপক্ষ
আপনার কথায় গুরুত্ব দেয়। (আনন্দের মাঝে
একটা মেসেজ ছেড়ে দিলে সেটা অন্যের
ব্রেনে সেট হয়)। যদিও আমরা অধিকাংশ
ক্ষেত্রে দেখি- মানুষ বড়ই ঝগড়াটে। তারা
অপরপক্ষকে ট্রেনিং দিতে গিয়েও ভালো
কৌশল খাটাতে ব্যর্থ হয়। হুট করে বলে
ফেলে- “মায়ের বাসা থকে কিছু শিখে আসো
নি? হতে পারে কিছু শিখায় নি, এজন্যই তো
এমন! দেখো বউ! নিজের বাড়িতে যা করসো,
আমাদের এখানে ওসব চলবে না। যেভাবে
বলি সেভাবে করো!” এসব কথাগুলো
স্বাভাবিকভাবেই একটা মানুষের কাছে মনে
হবে কানের মধ্যে পিনের খোঁচার মতো। ফলে
নিউটনের তৃতীয় সূত্র apply শুরু। কথা
কাটাকাটি start, সাংসারিক সুখ The End. বউ
এর মধ্যে এই প্রশ্ন জাগবে- “আমাকে এতো
কথা শুনাবে কেনো? আমি বাড়ির বউ না
কাজের বুয়া? সবসময় ‘তার সংসার’, ‘তার
সংসার’ বলে কেনো? এটা কি আমার সংসার
নয়? আমার কোনো কথাই চলবে না! আজব!”
আর এসব কথাগুলো স্বাভাবিকভাবে স্বামীর
কানে পৌঁছাবে। সেক্ষেত্রে তার কিছু
বলাটা জটিল হয়ে দাঁড়াবে। কারণ- বুঝার
মানসিকতা কোনো পক্ষেরই থাকে না।
কোনো সিদ্ধান্ত বউ এর সমর্থনে চলে গেলে
মা উঠে বলে-“আজকে বউ এর জন্য তুই আমাকে
কথা শুনাচ্ছিস"? আর কোনো কথা মা এর
সমর্থনে গেলে বউ বলবে-“আপনার জীবনে
আমার কোনো গুরুত্বই নাই, তাহলে বিয়ে
করলেন কেনো”? ঠেলা সামলানোর মতো
অবস্থা শুরু!
এদিকে এটা স্বাভাবিক যে- বউ হিসাবে
একটা মেয়ের স্বপ্ন থাকে তার ঘরটাকে
নিজের মতো করে সাজাবে (আর এক্ষেত্রে
যদি স্বামীর কোনো অভিযোগ না থাকে
বরং সেও স্ত্রীর আইডিয়াগুলো পছন্দ করে)-
তো সেক্ষেত্রে অন্যের নাক গলানো
(বিশেষ করে শাশুড়ির-কারণ অনেকেই আছেন
যারা খুঁটিনাটি জিনিসেও নিজের মত উপরে
রাখতে ছাড়েন না, সোফা ওভাবে রাখো,
পিলো এভাবে রাখো, ঐ ওয়ালমেট ভালো
না, এই চাদরটা বিছাও ইত্যাদি ইত্যাদি)
পছন্দ করা যায় না। সুতরাং, শাশুড়িদের
উদ্দেশ্যে বলতে- বয়সের কারণে অভিজ্ঞ
হলেও সব সময় নিজের সিদ্ধান্তই যে অন্যের
চেয়ে উত্তম হবে- এমনটি ভাবা উচিত নয়, বরং
অন্যের মতকে গুরুত্ব দেয়ার মানসিকতা
আমাদের তৈরি করা উচিত। ভালো মনে হলে
সেটা মেনে নিতে কার্পণ্য করা ঠিক নয়।
এতে অন্যেরা উৎসাহিত হবে। তবে হ্যা,
একান্তই কোনো কাজ যদি আপনার দৃষ্টিতে
ঠিকভাবে হচ্ছে না বা আপনার কাছে
ভালো কোনো অপশান আছে তাহলে এভাবে
বলুন- “আমার মনে হয় এভাবে না করে ওভাবে
করলে ভালো হয়….”। সেক্ষেত্রে বউ কথা
রাখলে রাখলো না রাখলে নাই। কারণ আমরা
তো কাউকে নিজের মতের ওপর বাধ্য করতে
পারি না। এবার যদি দেখা যায় যে- প্রায়ই
বউয়ের কিছু শাশুড়ী মেনেই নিতে পারছেন
না তাহলে ঝগড়াঝাটি না করে সন্তুষ্ট
চিত্তে আলাদা হয়ে যাওয়া উত্তম। আমাদের
মূলত সবসময় চিন্তা করতে হবে- আত্মীয়তার
বন্ধন অটুট রেখে, মনোমালিণ্য সৃষ্টি না করা।
আমরা যখন কারো সুবিধা করে দিবো
ইনশাআল্লাহ আমরাও অনেক সুবিধা পেয়ে
যাবো।
হ্যা, বউ নিয়ে আলাদা থাকাটা অনেক
পরিবার মেনে নিতে পারেন না বা ভালো
চোখে দেখেন না। না, দেখার পিছনে কারণ
হলো- আমাদের সমাজে অধিকাংশ
পরিবারের ছেলেরা বউ নিয়ে আলাদা হয়-
মায়ের সাথে ঝগড়া করে, তাই দেখা যায়
আলাদা হওয়ার পর মায়ের আর খোঁজ রাখে
না। আবার এমন অনেক পরিবার আছে,
যেখানে শাশুড়ী দেখতেই পারছেন যে,
বউ
তার কিছুই শুনছে না বা তাকে সম্মান করছে
না-আবার বিপরীতভাবে বউও সব সময়
শাশুড়ির সব কথা মানতে পারছে না, অসুবিধা
হতেই পারে। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতেও
আমি দেখি- অনেক পরিবার (বিশেষ করে
শাশুড়ি ) ঐতিহ্যের ঠুনকো জেদ ধরে আলাদা
হতে চান না। যদিও বলে রাখি- আলাদা
অনেক প্রকারের হয়ে থাকে, ১/ ছেলে
বিভিন্ন জায়গায় বদলি হয় বা ছেলে শহরে
কাজ করে তাই তাকে স্বাভাবিকভাবে বউ
নিয়ে আলাদা থাকতেই হয়, সেটা মেনে
নিতে মায়ের সমস্যা হওয়ার কথা না, আর
কখনোই স্বামী-স্ত্রীকে আলাদা জায়গায়
রাখা ঠিক না। সেটা প্রবাস জীবনে হোক বা
শহর-গ্রাম ব্যবধানে। যদিও এই ব্যাপারটা
অনেকেই বুঝতে চান না। কিছু মা-বাবার
যুক্তি থাকে-আমাকে দেখবে কে, ঘরের কাজ
করবে কে ইত্যাদি। তাই বলতে-মা-বাবার
দেখাশোনার ব্যবস্থা করা ছেলের দায়িত্ব,
একান্ত কেউ না থাকলে নিজের কাছে মা-
বাবাকে রাখা উচিত। এদিকে সংসারের
সবার কাজ করার জন্য মূলত একটা মেয়ে
বিয়ে করে না। একটা মানুষ নিজের কাজ
করার প্রতি প্রস্তুত থাকে, তাকে নিজের
কাজ নিজ হাতে করার জন্যই মূলত সচেতন
করা যায়, কিন্তু তার ওপর জোর করে কারো
দায়িত্ব চেপে দেয়া উচিত নয়। সে
সন্তুষ্টচিত্তে করে দিলে সেটা আলাদা,
কিন্তু “বউ আনছি কাজ করানোর জন্য” -এমন
মানসিকতা শ্বশুর-শাশুড়ি, স্বয়ং স্বামী
কিংবা তার পরিবারের কারো রাখা ঠিক
নয়। মা-বাবা বৃদ্ধ বয়সে পদার্পণ করবেন এটাই
স্বাভাবিক। বেঁচে থাকলে আমরাও একদিন
বৃদ্ধ হবো-কিন্তু তাই বলে আমাদের সব কাজ
আমাদের সন্তানদের জীবনসঙ্গীর হাত দিয়ে
করাবো এমন তো হয় না! বরং, নিজের ফুট-
ফরমায়েশের জন্য আমরা প্রয়োজনে কাজের
মেয়ে রাখতে পারি। তাছাড়া বৃদ্ধ বয়সেও
মানুষ একটা কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকলে চায়-
যাতে তার সময় ভালো কাটে। সেক্ষেত্রে
সন্তানের উচিত নিজের মা-বাবার জন্য
তেমন ব্যবস্থা করা। হতে পারে তাদেরকে
তাদের পছন্দ মতো বই কিনে দেয়া বা ভিন্ন
কিছু- যা তারা ভালো মনে করে। এদিকে
অবশ্য একটা কথা বলে রাখি- আমাদের মধ্যে
এমনও কিছু মেয়ে আছেন- যারা সারাদিন
ঘরের ভিতরে থাকেন, কিংবা বাইরে জব
করেন-তারা শ্বশুড়-শাশুড়ির সাথে একটু গল্প
করার সময় পর্যন্ত বের করেন না, বা একটু
“কেমন আছেন” পর্যন্ত জিজ্ঞাস করার
প্রয়োজন অনুভব করেন না। যেটা নূন্যতম
শিষ্ঠাচার বহির্ভূত কাজ। আবার আমি
যেমনটি বলেছি- বউ সবার কাজ করতে আসে
না- তাই বলে কোনো দিন যদি শাশুড়ি বলে- “
একটু রুটি বানিয়ে দাও তো...”। আর ওমনি যদি
বউ বলে উঠে-“আমি সবার কাজ করতে আসি
নি”- এমন কথাটা বলা যেমন সমীচীন নয়,
তেমনি সবসময় বউকে কাজের ওপর রাখার
মানসিকতাও ঠিক নয়।
২/ অধিকাংশ যৌথ পরিবারে রান্না ঘরের
ব্যবস্থাপনা নিয়েই মূলত ঝগড়া লাগে।
সেক্ষেত্রে একসাথে থেকে ‘রান্না ঘর’
আলাদা করে দিলেও হয়। এটা করলে একদিক
দিয়ে শাশুড়ি’র কষ্ট করে রান্নাও করতে হয়
না আর দুটো মানুষের (শ্বশুর-শাশুড়ি) জন্য বউ
এর রান্না করতে নিশ্চয়ই সমস্যা হওয়ার কথা
না।
৩/ বউ-শাশুড়ি যখন একে-অপরকে কিছুতেই
মানিয়ে নিতে পারেন না- তখন পুরোপুরি
আলাদা হয়ে যান। আলাদা বাড়ি, আলাদা সব
কিছু। তবে এক্ষেত্রে যা হয় তাহল ‘মা’ তথা
শাশুড়ি অনেক কষ্ট পান। ছেলেকে কাছে না
পেয়ে। এ বিষয়টা বউয়েরও বুঝা উচিত-
একসাথে থাকতে না পারলেও সে আগ্রহী
হয়ে পারষ্পারিক ঝগড়াটা মিটিয়ে নেয়ার
চেষ্টা করতে পারেন- এক্ষেত্রে শাশুড়ি’র
আন্তরিকতার প্রয়োজন, যাতে একটা সুন্দর
সম্পর্ক থাকে। আর ছেলের উচিত রীতিমত
মায়ের খোঁজ-খবর নেয়া, তার সাথে সাক্ষাত
করে তার যাবতীয় প্রয়োজন পূর্ণ করা। মায়ের
কোনো কষ্টের জন্য যাতে পরকালে
জবাবদিহি করতে না হয়।
লিখেছেন - ফাতেমা মাহফুজ।
(fatema.mahfuz)
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আমাদের
সমাজে ‘শাশুড়ি’ একটি নেতিবাচক শব্দে
পরিণত হয়েছে কিংবা নেতিবাচক করে
দেয়া হয়েছে। তাই ‘নারী অধিকার’ শব্দটি
আমরা ব্যবহার করি বটে, কিন্তু সমাজে
‘শাশুড়ি’ চরিত্রে যিনি বসে থাকেন, তিনি
যেন ‘অধিকারের খাতার out of the boundary.
ব্যক্তিগতভাবে “অধিকার” বলতে আমি
নির্দিষ্ট সেই জাতি বা সেই মানুষটিকে শুধু
তার প্রাপ্যতা বুঝিয়ে দেয়াই মনে করি না,
বরং সেই মানুষের সমাজের প্রতি কি দেয়ার
বা তার নিজের প্রতি তার কি অধিকার
সেটাকেও তাকে বুঝিয়ে দেয়া আমাদের
দায়িত্ব মনে করি। তো সেই হিসাবে
পরিবারে একটা শাশুড়ির কি করণীয় কিংবা
শাশুড়ির প্রতি বউ এর দায়িত্ব-সর্বোপরি
“শাশুড়ি অধিকার” নিয়ে কাউকে কিছু বলতে
দেখা যায় না। ফলে আমাদের অসচেতনতার
কারণে শাশুড়িরা কখনো আক্রমণাত্মক হয়ে
উঠেন, সংসারে একক কর্তৃত্ব স্থাপনের
চেষ্টা করেন আবার কখনো মানসিকভাবে
নির্যাতীত কিংবা অবহেলিত হয়ে পড়েন।
তাই সংসারে শাশুড়ি ও বউ এর অধিকার ও
আচরণ নিয়ে একতরফা নয়- বরং উভয় পাশ
আলোচনার জন্য কিছু ধারাবাহিক উপস্থাপন-
case no-1: আধিপত্য বিস্তারঃ অধিকাংশ
শাশুড়ি মূলত এই ভুলটাই করে থাকেন। তারা
বলেন- “আমি এখনো জীবিত আছি, আমার
সংসারে আমার মতোই চলতে হবে”। এদিকে
শাশুড়ি বউকে বিভিন্ন কাজ সামলানোর
দায়িত্ব দিলেও এমনটিই আশা রাখেন যে
“সেই সব কাজটি আমি যেভাবে করি,
সেভাবেই সে করুক/করতে হবে”। এই
জিনিসটাই হচ্ছে মারাত্মক একটা সমস্যা
সৃষ্টি করে। কারণ একজনের লাইফ-স্ট্যাইলের
সাথে, কাজের ধরণের সাথে আরেকজনের
১০০% মিল খাবে তা কিন্তু না। পরিবার
টিকে থাকে সমঝোতার ওপর। আপনি যদি
মানুষকে স্বাধীনতা দিবেন তখন দেখা যাবে
সন্তুষ্টচিত্তে অপরপক্ষ কাজটি করে যাচ্ছে-
সেই কাজটি কারো প্রতি দায়িত্ব হোক বা
পরিবারের সবার জন্যই হোক না কেনো?
ধরে নেই- কারো কাজের ধরণে আপনার
সমস্যা আছে। ধরে নেই- শাশুড়ি খুব পরিপাটি
টাইপ মানুষ। কিন্তু বউটা একটু অগোছালো।
রান্না ঘরে যখন যায়- সব এলোমেলো করে
দিয়ে আসে। কাপড়-চোপড় যেখানে সেখানে
পড়ে আছে, ঝুটা চায়ের কাপ সেই কবে
থেকে টেবিলে পড়া-ইত্যাদি ইত্যাদি (ধরে
নিই)। আর এসব শাশুড়ির চোখে খারাপ লাগে।
এক্ষেত্রে শাশুড়ি যদি বুদ্ধিমত্তার সাথে
হাসিমুখে বলে- বউ মা... ঘরটা গুছিয়ে রাখলে
তো লোকে তোমাকেই ভালো বলবে বা একটু
মজা করে না হয় বললেন- যাতে অপরপক্ষ
আপনার কথায় গুরুত্ব দেয়। (আনন্দের মাঝে
একটা মেসেজ ছেড়ে দিলে সেটা অন্যের
ব্রেনে সেট হয়)। যদিও আমরা অধিকাংশ
ক্ষেত্রে দেখি- মানুষ বড়ই ঝগড়াটে। তারা
অপরপক্ষকে ট্রেনিং দিতে গিয়েও ভালো
কৌশল খাটাতে ব্যর্থ হয়। হুট করে বলে
ফেলে- “মায়ের বাসা থকে কিছু শিখে আসো
নি? হতে পারে কিছু শিখায় নি, এজন্যই তো
এমন! দেখো বউ! নিজের বাড়িতে যা করসো,
আমাদের এখানে ওসব চলবে না। যেভাবে
বলি সেভাবে করো!” এসব কথাগুলো
স্বাভাবিকভাবেই একটা মানুষের কাছে মনে
হবে কানের মধ্যে পিনের খোঁচার মতো। ফলে
নিউটনের তৃতীয় সূত্র apply শুরু। কথা
কাটাকাটি start, সাংসারিক সুখ The End. বউ
এর মধ্যে এই প্রশ্ন জাগবে- “আমাকে এতো
কথা শুনাবে কেনো? আমি বাড়ির বউ না
কাজের বুয়া? সবসময় ‘তার সংসার’, ‘তার
সংসার’ বলে কেনো? এটা কি আমার সংসার
নয়? আমার কোনো কথাই চলবে না! আজব!”
আর এসব কথাগুলো স্বাভাবিকভাবে স্বামীর
কানে পৌঁছাবে। সেক্ষেত্রে তার কিছু
বলাটা জটিল হয়ে দাঁড়াবে। কারণ- বুঝার
মানসিকতা কোনো পক্ষেরই থাকে না।
কোনো সিদ্ধান্ত বউ এর সমর্থনে চলে গেলে
মা উঠে বলে-“আজকে বউ এর জন্য তুই আমাকে
কথা শুনাচ্ছিস"? আর কোনো কথা মা এর
সমর্থনে গেলে বউ বলবে-“আপনার জীবনে
আমার কোনো গুরুত্বই নাই, তাহলে বিয়ে
করলেন কেনো”? ঠেলা সামলানোর মতো
অবস্থা শুরু!
এদিকে এটা স্বাভাবিক যে- বউ হিসাবে
একটা মেয়ের স্বপ্ন থাকে তার ঘরটাকে
নিজের মতো করে সাজাবে (আর এক্ষেত্রে
যদি স্বামীর কোনো অভিযোগ না থাকে
বরং সেও স্ত্রীর আইডিয়াগুলো পছন্দ করে)-
তো সেক্ষেত্রে অন্যের নাক গলানো
(বিশেষ করে শাশুড়ির-কারণ অনেকেই আছেন
যারা খুঁটিনাটি জিনিসেও নিজের মত উপরে
রাখতে ছাড়েন না, সোফা ওভাবে রাখো,
পিলো এভাবে রাখো, ঐ ওয়ালমেট ভালো
না, এই চাদরটা বিছাও ইত্যাদি ইত্যাদি)
পছন্দ করা যায় না। সুতরাং, শাশুড়িদের
উদ্দেশ্যে বলতে- বয়সের কারণে অভিজ্ঞ
হলেও সব সময় নিজের সিদ্ধান্তই যে অন্যের
চেয়ে উত্তম হবে- এমনটি ভাবা উচিত নয়, বরং
অন্যের মতকে গুরুত্ব দেয়ার মানসিকতা
আমাদের তৈরি করা উচিত। ভালো মনে হলে
সেটা মেনে নিতে কার্পণ্য করা ঠিক নয়।
এতে অন্যেরা উৎসাহিত হবে। তবে হ্যা,
একান্তই কোনো কাজ যদি আপনার দৃষ্টিতে
ঠিকভাবে হচ্ছে না বা আপনার কাছে
ভালো কোনো অপশান আছে তাহলে এভাবে
বলুন- “আমার মনে হয় এভাবে না করে ওভাবে
করলে ভালো হয়….”। সেক্ষেত্রে বউ কথা
রাখলে রাখলো না রাখলে নাই। কারণ আমরা
তো কাউকে নিজের মতের ওপর বাধ্য করতে
পারি না। এবার যদি দেখা যায় যে- প্রায়ই
বউয়ের কিছু শাশুড়ী মেনেই নিতে পারছেন
না তাহলে ঝগড়াঝাটি না করে সন্তুষ্ট
চিত্তে আলাদা হয়ে যাওয়া উত্তম। আমাদের
মূলত সবসময় চিন্তা করতে হবে- আত্মীয়তার
বন্ধন অটুট রেখে, মনোমালিণ্য সৃষ্টি না করা।
আমরা যখন কারো সুবিধা করে দিবো
ইনশাআল্লাহ আমরাও অনেক সুবিধা পেয়ে
যাবো।
হ্যা, বউ নিয়ে আলাদা থাকাটা অনেক
পরিবার মেনে নিতে পারেন না বা ভালো
চোখে দেখেন না। না, দেখার পিছনে কারণ
হলো- আমাদের সমাজে অধিকাংশ
পরিবারের ছেলেরা বউ নিয়ে আলাদা হয়-
মায়ের সাথে ঝগড়া করে, তাই দেখা যায়
আলাদা হওয়ার পর মায়ের আর খোঁজ রাখে
না। আবার এমন অনেক পরিবার আছে,
যেখানে শাশুড়ী দেখতেই পারছেন যে,
বউ
তার কিছুই শুনছে না বা তাকে সম্মান করছে
না-আবার বিপরীতভাবে বউও সব সময়
শাশুড়ির সব কথা মানতে পারছে না, অসুবিধা
হতেই পারে। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতেও
আমি দেখি- অনেক পরিবার (বিশেষ করে
শাশুড়ি ) ঐতিহ্যের ঠুনকো জেদ ধরে আলাদা
হতে চান না। যদিও বলে রাখি- আলাদা
অনেক প্রকারের হয়ে থাকে, ১/ ছেলে
বিভিন্ন জায়গায় বদলি হয় বা ছেলে শহরে
কাজ করে তাই তাকে স্বাভাবিকভাবে বউ
নিয়ে আলাদা থাকতেই হয়, সেটা মেনে
নিতে মায়ের সমস্যা হওয়ার কথা না, আর
কখনোই স্বামী-স্ত্রীকে আলাদা জায়গায়
রাখা ঠিক না। সেটা প্রবাস জীবনে হোক বা
শহর-গ্রাম ব্যবধানে। যদিও এই ব্যাপারটা
অনেকেই বুঝতে চান না। কিছু মা-বাবার
যুক্তি থাকে-আমাকে দেখবে কে, ঘরের কাজ
করবে কে ইত্যাদি। তাই বলতে-মা-বাবার
দেখাশোনার ব্যবস্থা করা ছেলের দায়িত্ব,
একান্ত কেউ না থাকলে নিজের কাছে মা-
বাবাকে রাখা উচিত। এদিকে সংসারের
সবার কাজ করার জন্য মূলত একটা মেয়ে
বিয়ে করে না। একটা মানুষ নিজের কাজ
করার প্রতি প্রস্তুত থাকে, তাকে নিজের
কাজ নিজ হাতে করার জন্যই মূলত সচেতন
করা যায়, কিন্তু তার ওপর জোর করে কারো
দায়িত্ব চেপে দেয়া উচিত নয়। সে
সন্তুষ্টচিত্তে করে দিলে সেটা আলাদা,
কিন্তু “বউ আনছি কাজ করানোর জন্য” -এমন
মানসিকতা শ্বশুর-শাশুড়ি, স্বয়ং স্বামী
কিংবা তার পরিবারের কারো রাখা ঠিক
নয়। মা-বাবা বৃদ্ধ বয়সে পদার্পণ করবেন এটাই
স্বাভাবিক। বেঁচে থাকলে আমরাও একদিন
বৃদ্ধ হবো-কিন্তু তাই বলে আমাদের সব কাজ
আমাদের সন্তানদের জীবনসঙ্গীর হাত দিয়ে
করাবো এমন তো হয় না! বরং, নিজের ফুট-
ফরমায়েশের জন্য আমরা প্রয়োজনে কাজের
মেয়ে রাখতে পারি। তাছাড়া বৃদ্ধ বয়সেও
মানুষ একটা কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকলে চায়-
যাতে তার সময় ভালো কাটে। সেক্ষেত্রে
সন্তানের উচিত নিজের মা-বাবার জন্য
তেমন ব্যবস্থা করা। হতে পারে তাদেরকে
তাদের পছন্দ মতো বই কিনে দেয়া বা ভিন্ন
কিছু- যা তারা ভালো মনে করে। এদিকে
অবশ্য একটা কথা বলে রাখি- আমাদের মধ্যে
এমনও কিছু মেয়ে আছেন- যারা সারাদিন
ঘরের ভিতরে থাকেন, কিংবা বাইরে জব
করেন-তারা শ্বশুড়-শাশুড়ির সাথে একটু গল্প
করার সময় পর্যন্ত বের করেন না, বা একটু
“কেমন আছেন” পর্যন্ত জিজ্ঞাস করার
প্রয়োজন অনুভব করেন না। যেটা নূন্যতম
শিষ্ঠাচার বহির্ভূত কাজ। আবার আমি
যেমনটি বলেছি- বউ সবার কাজ করতে আসে
না- তাই বলে কোনো দিন যদি শাশুড়ি বলে- “
একটু রুটি বানিয়ে দাও তো...”। আর ওমনি যদি
বউ বলে উঠে-“আমি সবার কাজ করতে আসি
নি”- এমন কথাটা বলা যেমন সমীচীন নয়,
তেমনি সবসময় বউকে কাজের ওপর রাখার
মানসিকতাও ঠিক নয়।
২/ অধিকাংশ যৌথ পরিবারে রান্না ঘরের
ব্যবস্থাপনা নিয়েই মূলত ঝগড়া লাগে।
সেক্ষেত্রে একসাথে থেকে ‘রান্না ঘর’
আলাদা করে দিলেও হয়। এটা করলে একদিক
দিয়ে শাশুড়ি’র কষ্ট করে রান্নাও করতে হয়
না আর দুটো মানুষের (শ্বশুর-শাশুড়ি) জন্য বউ
এর রান্না করতে নিশ্চয়ই সমস্যা হওয়ার কথা
না।
৩/ বউ-শাশুড়ি যখন একে-অপরকে কিছুতেই
মানিয়ে নিতে পারেন না- তখন পুরোপুরি
আলাদা হয়ে যান। আলাদা বাড়ি, আলাদা সব
কিছু। তবে এক্ষেত্রে যা হয় তাহল ‘মা’ তথা
শাশুড়ি অনেক কষ্ট পান। ছেলেকে কাছে না
পেয়ে। এ বিষয়টা বউয়েরও বুঝা উচিত-
একসাথে থাকতে না পারলেও সে আগ্রহী
হয়ে পারষ্পারিক ঝগড়াটা মিটিয়ে নেয়ার
চেষ্টা করতে পারেন- এক্ষেত্রে শাশুড়ি’র
আন্তরিকতার প্রয়োজন, যাতে একটা সুন্দর
সম্পর্ক থাকে। আর ছেলের উচিত রীতিমত
মায়ের খোঁজ-খবর নেয়া, তার সাথে সাক্ষাত
করে তার যাবতীয় প্রয়োজন পূর্ণ করা। মায়ের
কোনো কষ্টের জন্য যাতে পরকালে
জবাবদিহি করতে না হয়।
লিখেছেন - ফাতেমা মাহফুজ।
(fatema.mahfuz)
Comments
Post a Comment