মোহরানা।

মোহরানা।

image

মেয়েটা জলিল সাহেবের খুবই পছন্দ হল, বয়স
এখনও আঠারো পার হয়নি, কম বয়সী মেয়েতে
সুবিধা অনেক। শশুর বাড়ীর সবাইকে ভয় করে
চলে, গায়ের রংটা একটু শ্যামলা, এই যা। শ্যামলা হলেও
দেখতে বেশ ডাগর। মেয়ের বাবা মিজান সাহেব,
একটু দোমনা করতে চেয়েছিলেন। ছেলের
বয়সটা একটু বেশী বলে। ছেলের বয়স
মেয়ের থেকে দশ – এগারো বছর বেশী
হবে। কিন্তু জলিল সাহেব এটাসেটা বলে ম্যানেজ
করে নিয়েছেন।
“বেয়াই সাহেব, আল্লাহর রহমতে আমারতো কিছুর
অভাব নেই, আল্লাহ আমাকে অনেক দিয়েছেন।
আপনি মেয়ে নিয়ে কোন চিন্তা করবেন না, ও
এখন থেকে আমার মেয়ে। আপনি চানতো ওর
নামে আমি আমার মফস্বলের বাড়ীটা লিখে
দেবো।”
“না, না, বেয়াই সাহেব, আমার মেয়ে বাড়ী দিয়ে কি
করবে – তা’ ছাড়া আপনার অন্য ছেলেদের হক
আছে ” Ñ মিজান সাহেব বাড়ীর প্রস্তাবটি নাকচ
করে দিলেন।
দু’ পক্ষই সন্তুষ্ট, ঠিক হল এক লাখ টাকা মোহরানায়
বিয়ে হবে।

image

জলিল সাহেব বললেন, “মোহরানা
মেয়ে হক, এটা আদায় করা ফরজ, না হলে আল্লাহ
পাক নারাজ হবেন। আমি মোহরানার সবটুকু আদায়
করেই বিয়ে দিতে চাই।”
পঞ্চাশ হাজার টাকার ন্বর্ণ ও পঞ্চাশ হাজার টাকার জমি
বাবদ উসুল ধরে কাবিন হল। মিজান সাহেব মনে মনে
গর্ব বোধ করলেন। এ গ্রামে এত মোহরানায়
কোন মেয়ের বিয়ে হয়নি। তিনি মেয়েকে বার
বার মনে করিয়ে দিলেন,“ তোমার ভাগ্য ভালো,
ক’জন মানুষ ঠিকভাবে মোহরানা আদায় করে ?
তোমার শশুর আমাকে তোমার মোহরানার জমি
দেখিয়েছেন। আহা! কি খাসা জমি, একেবারে
সোনা ফলা জমি। খবরদার! শশুড় শাশুড়ির কোন কথায়
‘না’ বলবা না।”
বিয়ের পর রাহেলাও একবার জমিটি দেখেছে, তার
স্বামী তাকে নিয়ে গিয়েছিল জমি দেখাতে।
একসাথে বেশ কত খানি জমি, ধানের কচি সবুজ ডগা
দুলছিল। স্বামীর পাশে দাঁড়িয়ে এ দৃশ্য দেখে
রাহেলাও গর্বে ফুলে ফুলে উঠেছে। শফিক
গ্রামের পূর্ব প্রান্তের এ জমিটি দেখিয়ে
বলেছিল “এ জমি তোমার”; দশদিক ছাপিয়ে একটা
বাক্য যেন প্রতিধ্বনিত হল, “এ জমি তোমার তোমার
তোমার ……..”।
কয়েক বছর পরের কথা, রাহেলা স্বামীর সাথে
ঢাকায় থাকে। ছেলে-মেয়ে স্কুল-কলেজে
পড়ে । রাহেলার ব্যস্ত সময় কাটে । একবার কি
কাজে শফিক সাহেব গ্রামে যাবেন রাহেলাকে
ডেকে বললেন- “এইবার তোমার জমিটা বাবাকে
তোমার নামে রেজিষ্ট্রি করে দিতে বলবো ”।
রাহেলা কোন উত্তর না দিয়ে শফিক সাহেবের
ব্যাগ গুছিয়ে দিলেন । যাবার সময় বার বার মনে
করিয়ে দিলেন- বেশী রাত যেন না জাগে, ঠিক
সময়মতো যেন খাবার খায়।
এক সপ্তাহ পরে শফিক সাহেব ফিরে আসলেন।
রাতে খাবার টেবিলে রাহেলা জিজ্ঞেস করলো
“জমির রেজিষ্ট্রি কি হল ?”
“না, সময় পাইনি! তাছাড়া আব্বা তো বলেছেন জমিটা
তোমার । আর রেজিষ্ট্রি করে কি হবে ?”
রাহেলার বয়স বেড়েছে! রাহেলা জানে ঐ
জমিতে বছর বছর যে ফসল হয় তা থেকে বেশ
ভাল আয় হয়। রাহেলা এখন বোঝে “ঐ জমি
তোমার” এ বাক্যটা ছাড়া ঐ জমিতে তার কোন
অধিকার নেই। কিন্তু রাহেলা কিছুই বলতে পারে না।
সে বলতে পারে না যে, তার মোহরানা হল একটা
বাক্যে “ঐ জমি তোমার”; রাহেলার মনে প্রশ্ন –
জমি তার নামে না, জমির ফসল সে ভোগ করে না,
এমনকি সে জানেও না জমি থেকে কত আয় হয় ;
তবে কিভাবে তার মোহরানা আদায় হল ? রাহেলার
মনের প্রশ্ন মনেই থেকে যায়, মুখে আসে না!
মোহরানা তো স্বামীর জন্যই। মোহরানা চাওয়া
মানেই স্বামীর অসন্তুষ্টি ; স্বামীর কঠিন প্রশ্ন
আমার থেকে তোমার মোহরানা বেশী গুরুত্ব
পূর্ণ হল ? শশুড় অসন্তুষ্ট হবেন, “বউ অধিকার
শিখেছে, টাকা চিনেছে।” দেনাদার দেনা পরিশোধ
না করলে দোষের কিছু নেই, পাওনাদার পাওনা
চাইলেই অপরাধ। রাহেলা “সামান্য” জমির জন্য এত
বছরের অর্জিত স্বামী – শশুড়ের “সন্তুষ্টি”
হারাতে চায় না।
এরও অনেক পরের কথা , রাহেলার ছেলে
মেয়েরা বড় হয়েছে। যে যার মত প্রতিষ্টিত,
শফিক সাহেবেরও বয়স হয়েছে। তাই তিনি একদিন
ছেলেদের আর রাহেলাকে ডেকে সব স্থাবর -
অস্থাবর সম্পত্তির বিবরণ দিলেন। সবশেষে
বললেন, “বাবারা, মনেরেখো ঐ পূবপাড়ার জমিটা
তোমাদের মায়ের। ওটা আমার পক্ষ থেকে
তোমাদের মাকে মোহরানা দেয়া হয়েছে।”
রাহেলা ফোকলা দাতে একটু হাসলেন। রাহেলার
বয়স এখন ষাটের কোঠায়।
লিখেছেন - কানিজ ফাতিমা

Comments

Popular posts from this blog

বাংলাদেশী মেয়েদের হট ছবি

হে যুবক কোন দিকে যাও!! জান্নাতি হুর তোমাকে ডাকছে

ইসলামের দৃষ্টিতে যৌন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও শক্তি বৃদ্ধিকারী খাদ্য-পানীয়