হায়রে বিয়ে! হায়রে লজ্জা! (পর্ব - ১)
হায়রে বিয়ে! হায়রে লজ্জা! (পর্ব - ১)

ক্লাসে একদিন মুদ্রাস্ফীতি পড়াতে পড়াতে
কাগুজে টাকা ও স্বর্ণের প্রসঙ্গ আসলো । ম্যাম
মজা করে ছেলেদের জিজ্ঞেস করলেন
বলতো – স্বর্ণের দাম বাঁড়ায় তোমাদের কি ক্ষতি
হয়েছে। ছেলেরা কেউ মুচকি মুচকি হাসছিল,
কেউ বা বুঝতে না পেরে এদিক ওদিক মাথা নাড়ছিল ।
ম্যাম বললেন- স্বর্ণের দাম বেড়ে গেলে
তোমাদের বিয়ে শাদী করতে দেরী হবে।
তখন মেয়েরা হি হি করে হাঁসা শুরু করলো । ক্লাসে
হাসির রোল পড়ে গেলো। ম্যাম এবার
মেয়েদের দিকে ফিরে বললেন- তোমরা হাসছ
কেন? ছেলেদের বিয়ে করতে দেরী হলে
তোমাদের বিয়ের বয়স ও গড়ে ২ বছর বাড়ল এটা
বুঝনা?মেয়েদের হাসি থেমে গেলো। ম্যাম
এরপর ছেলেদের বললেন- তোমরা যারা তাড়াতাড়ি
বিয়ে করতে চাও তাদের একটা সিক্রেট বুদ্ধি
শিখিয়ে দিচ্ছি। তোমরা আফ্রিকার জোহানেসবারগ এ
চলে যাবে। ওখানে ১০ ক্যরেট এর স্বর্ণ পাওয়া
যায় , একদম কম দাম। ২০ ভরি স্বর্ণ দিবে বউকে
একটু ও কষ্ট হবেনা।
উপরের গল্পটা নিছক মজার একটা ঘটনা হলেও এখান
থেকে আমাদের সমাজের আসল চিত্র টা ফুটে
ওঠে । এই সমাজে বিয়ের মতো হালাল সম্পর্কে
জড়াতে বুড়া কাল পর্যন্ত নিশ্চিন্তে থাকা যায় , অন্তত
টাকা পয়সার ব্যাপারে এমন বরের চাহিদা ই বেশি। আর
চামড়ার ব্যবসা তো আছেই। সাদা চামড়া কালো চামড়া
ভেদে দরদাম ঠিক করা হয় পাত্রীর , আর পাত্রের
ক্ষেত্রে চামড়া মুখ্য নয়। পাত্রের একটা ই
যোগ্যতা – গয়না গাটি দেওয়ার ক্ষমতা । পাত্রীর
ক্ষেত্রে শুধু মাত্র সুন্দর হওয়াই যেমন
মেয়েটির যোগ্যতার একমাত্র মানদণ্ড হওয়া উচিত
নয়, তেমনি ছেলের ক্ষেত্রেও বাড়ি গাড়ি স্মার্ট
হওয়া আর কাড়ি কাড়ি টাকার মালিক হওয়া শর্ত হওয়া উচিত
নয়। এসব কারনে আজকে আমাদের সমাজে বিয়ে
নিয়ে এতো অবাঞ্চিত ঘটনার জন্ম হচ্ছে।
ঘটনা -১
আদিল বহু বছর বাহিরে ছিল। তরুণ ইঞ্জিনিয়ার ,
দেখতে লম্বা , ফর্সা সাদামাটা একটা ছেলে। বিদেশ
থাকার কারনে করি করি করেও বিয়ে করা হয়ে
উঠেনি। বয়স টাও ওদিকে ৩০ ছাড়িয়ে গেলো
গেলো। বড় বুবু আজ মেয়ে দেখতে যাবে
আদিল কে নিয়ে। আদিলের মন আজ তাই খুব
ফুরফুরা। একা একা আর ভাললাগেনা তার , এবার বউ
আসলে তার হাতে সংসার বুঝিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত
হবে। প্রবাসে নিজের রান্না নিজের করতে হয়,
জ্বরের ঘোরে পড়ে থাকলে ও মমতাময়ী
কেউ মাথায় পট্টি দিয়ে দেয়না, বাজার করতে না
পারলে না খেয়ে থাকতে হয়, আর যাইহোক
অন্তত একজন সাথী তো হবে। ভাবতে ভাবতে
আদিল শিহরিত হয়।
পাত্রী দেখে এক নজরেই মুগ্ধ হয়ে যায় আদিল
ও বুবু। মেয়ের টানা টানা চোখ , দুধে আলতা রং ,
পরী বললেও ভুল হবেনা। এই মেয়েকে এতদিন
কেউ বিয়ে করেনি এটা ভেবেও আদিল অবাক হয়।
দেখতে যাওয়ার দিন সে মেয়কে ২/১ টা প্রশ্ন
করলেও মেয়ে কোন উত্তর দেয়না। সবাই
ভাবে লজ্জায় কথা বলেনি। আদিলের বুবু একবার
আশেপাশে খোঁজ খবর নিলেন না , মেয়ের
আচার ব্যাবহার কেমন! বিয়ে পাকাপাকি হয়ে যায়। এমন
বউয়ের জন্য কি যা তা শাড়ি গহনা কিনা যায়! সবাই মিলে হৈ
হুল্লোড় করে বিদেশে যায় শপিং করতে।
পরিবারে এক অনাবিল খুশির বন্যা বয়ে যায়।
প্রায় ৫ লাখ টাকার শুধু মার্কেটিং ই করা হয় কনের
জন্য। আরও আনুসাঙ্গিক মিলিয়ে ১০/১৫ লাখ টাকা
বাজেট আদিলের নিজের বিয়ের জন্য। হাজার
হোক বিয়ে তো মানুষ জীবনে একবার ই করে
তাইনা!
দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে আসে।
কনে পক্ষ কিন্তু বর পক্ষের ঠিক উল্টা । তারা
বরকে একজোড়া স্যুট আর জুতা ছাড়া তেমন কিছুই
দেয়নি। কিন্তু মেয়ের রুপের কাছে এসব কথা
পাত্তা পায়না। সবাই এসে আদিল কে বলে তোমার
বউ তো লাখে একটা।
বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ।
সবাই বাসায় চলে আসে। বাসর ঘর সাজানো
হয়েছে অনেক রকমের কাঁচা ফুল দিয়ে। খাটের
পাশে সাইড টেবিলে পানি, ফল, ছুরি রাখা আছে। আর
বউ বসে আছে খাটে । আদিল একবার ঘরের
পরিবেশ দেখে নেয়। সারাদিনের ব্যাস্ততায় সে
ও কিছুটা ক্লান্ত। খাটে যেয়ে নব বধুর পাশে
বসে। বউকে বলে- আপনার কি ক্লান্ত লাগছে?
ক্লান্ত লাগলে ঘুমিয়ে পড়ুন । কিন্তু একি! বউ দেখি
চোখ রাঙিয়ে তাকায়। রাগ রাগ কণ্ঠে বলে- আপনি
আমার সাথে কথা বলবেন না। আদিল তো পুরাই
ভ্যাবাচ্যাকা ! বউকে সে একবার ছুয়ে ও কথা
বলেনি, কোন উল্টা পাল্টা কথাও তো বলেনি! বউ
তাহলে এতো রাগ কেন? আদিল বউকে আবার
বলে- কি হয়েছে আপনার? আমি কি কোন অপরাধ
করেছি! ?
এই কথা শুনে বউ আরও ক্ষেপে গেলো।
একটানে বাসর সাজানো কাঁচা ফুলের মালাগুলো
টেনে ছিঁড়ে ফেলতে লাগলো । আদিল তো
হতভম্ব। সে বলল – আরে আরে করেন কি! এসব
ছিঁড়ছেন কেন? কি হয়েছে আপনার?
বউয়ের মেজাজ এক ধাপ চড়ে গেলো। সাইড
টেবিলে রাখা ফল কাঁটার ছুরি নিয়ে আদিলের গলায়
চেপে ধরতে ধরতে বলল- আমার ওষুধ কই! আমার
ওষুধ কই!
আদিল অবাক হয়ে বলল- কিসের ওষুধ? মেয়ে
বলল- মা আমাকে বলতে নিষেধ করেছে যে
আমি পাগল! আপনি আমার ওষুধ দেন তাড়াতাড়ি।
খেলেই ঘুমায় যাব । বাড়ির বিচ্ছুগুলো বাসর ঘরের
দরজার আশেপাশে ঘুরছিল। ধ্বস্তাধস্তির আওয়াজ
শুনে তারাও সজাগ হয়ে গেলো। এদিকে আদিল
বউয়ের হাত থেকে ছুরি নিয়ে তাকে নিরস্ত্র
করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। দুঃখে
কষ্টে রাগে আর অপমানে আদিলের সারারাত ঘুম
হয়নি। পরের দিন ছেলে পক্ষের দাওয়াত । সব
মেহমান সব আয়োজন ঠিক। যথাসময়ে সবাই
আসলো, আত্মীয় স্বজন অনুষ্ঠান সব ই হোল
কিন্তু হোল না শুধু ২ জীবনের মিল। সমস্ত
অনুষ্ঠানটাই একটা সাজানো নাটক মনে হোল তার
কাছে। অনুষ্ঠান শেষ হলে , বউকে তার বাপ মার
সাথে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হোল। পাগলের
সাথে সংসার করার কোন মানেই হয়না, খামোখা একটা
বাচ্চা ও যদি হয়, তাহলে এই মেয়ের সংসার কে
দেখবে! বিয়েতে মেয়ে পক্ষের নির্লিপ্ততার
কারন আর ইচ্ছাকৃত হঠকারিতা স্পষ্ট হয়ে গেলো।
আদিলের তালাক হয়ে গেলো কোর্টে । জরিমানা
স্বরূপ গুনতে হোল কয়েক লাখ টাকা।
জীবনটা তার পুরো এলোমেলো হয়ে
গেছে। অর্থ আর শান্তি সব খুইয়ে সে এখন উদাস
একজন মানুষ । মাঝে মাঝে ভাবে, গায়ের রং
দেখে পাগল না হয়ে একবার যদি খোঁজ মেয়ে
কেমন , তার আচরণ কেমন! এরপর থেকে
অনেকে অনেক চেষ্টা করে বিয়ে দিতে।
কিন্তু তার আর ভাললাগেনা মেয়ে দেখতে। এবার
সে বুবুকে বলে দিয়েছে, শুধু গায়ের রং না
দেখে মেয়ের আচার ব্যাবহার, মেয়ে নামাজী
কিনা এসব আগে খোঁজ নিতে, শ্যামলা হলেও
চলবে, কালো হলেও সই।
এর ১ বছর পরে আদিলের আরেক টি মেয়ের
সাথে বিয়ে হয়ে যায়। মেয়ে টি শ্যামলা । কিন্তু
আচার আচরণ ভালো, নামাজী । আদিলের দগদগে
ব্যাথার ক্ষত একটু একটু করে ভরে যাচ্ছে সুখী
দাম্পত্য জীবনের ছোঁয়ায় ।
এটি একটি সত্যি ঘটনা। সব কিছুর মুলেই হোল
নিয়তের পরিশুদ্ধতা । যে ব্যক্তি সুন্দর পাওয়ার নিয়ত
করে সে শুধু সুন্দর ই পায় , কিন্তু যে ব্যক্তি
বিয়ের ক্ষেত্রে কন্যার দ্বীনদারিতা ও আল্লাহ
ভীতি কে প্রাধান্য দেয় সে সৌন্দর্য না পেলেও
অনেক কিছু পায়। এই অংকে দ্বীনদারীর মান ১,
আর বাকি সব কিছুর মান শূন্য । সামনে ওই এক থাকলে
যতো শূন্য যোগ হবে ওই অংকের মান ততোই
বাড়বে, আর সামনে ওই ১ না থাকলে আর বাকি
যতো শূন্য ই যোগ করা হোক না কেন ওটার মান
শূন্য ই থেকে যায়।
আর তাছাড়া কালো সাদার পার্থক্য যদি আমরা করি ,
তাহলে আল্লাহর সৃষ্টিকে অপমান করা হয়। একজন
মানুষের সুন্দর কালো হওয়ার পিছনে তার কি কোন
অবদান আছে?
কাজেই মানুষের মূল্যায়ন হওয়া দরকার মানুষের
কাজে আর আচার ব্যাবহারে , উপরের চর্ম ও তার রং
দিয়ে নয়। পাত্রী দেখার বেলায় ও এমন টা
মেনে চললে ধোঁকা খাওয়ার সম্ভাবনা কম। বহু
ছেলে ও ছেলের মাকে দেখেছি , মুখ বড়
করে ফর্সা মেয়ে বিয়ে করিয়েও কি নৈতিক শিক্ষার
অভাবের শিকার হয়েছেন, আর কপাল থাবড়েছেন ,
আর এমন অনেক ঘর ও দেখেছি , যেখানে
কালো বা শ্যামলা একজন মমতাময়ী মহিলা স্বামী
সংসার সন্তান নিয়ে পরিবারকে জান্নাতের বাগিচার
মতো সাজিয়ে নিয়েছেন খোদা ভীরুতার রঙে।
মনে রাখবেন , আপনার সহধর্মিণী শুধু আপনার
অবসরের সাথী নন, তিনি হবেন আপনার সন্তানদের
মমতাময়ী মা। আর মায়ের স্বভাব ই ছড়িয়ে যাবে
আপনার সন্তানদের মধ্যে। যার মাঝেই নিহিত আপনার
পারিবারিক সুখ। আর ভালো মা সমাজকে উপহার দিবেন
ভালো চরিত্রের কিছু মানুষকে, যারা সমাজ গড়ার
কাজে আত্মনিয়োগ করবে।
পাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসুলের
সেই হাদিসটি আমরা বারবার ভুলে যাই । হজরত
আব্দুল্লাহ ইবনে আমের থেকে বর্ণিত , রাসুল
(সা।) বলেছেন-“ তোমরা কেবল সৌন্দর্যের
জন্য নারীদেরকে বিয়ে করোনা । কেননা , এই
সৌন্দর্য তাদেরকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
কেবল ধন সম্পদের জন্য বিয়ে করোনা , কেননা
তাদের ধন সম্পদ তাদেরকে অহংকারী বানিয়ে
দিতে পারে। বরঞ্চ তাদের দ্বীনদারীর
ভিত্তিতে তাদেরকে বিয়ে করো। মনে
রেখো – একটি কালো বাদী ও যদি দ্বীনদার
হয়, তবে সে আল্লাহর চোখে সুন্দরী
সম্ভ্রান্ত অধার্মিক নারীর চেয়ে উত্তম।।
আল্লাহর রাসুলের এই কথা টা আমাদের সমাজের
কয়জন যুবক মানে?
এখনো যখন আশেপাশে দেখি ভালো চরিত্রের
আইবুড়ো মেয়েদের বিয়ে হচ্ছেনা , শুধু চামড়ার
রঙের জন্য তখন খুব দুঃখ লাগে। এটা আমাদের
সমাজের যুবকদের বড় ব্যর্থতা যে, সুন্দর আর
অসুন্দরের ক্যাচালে পড়ে চরিত্রবান খাঁটি
হীরাগুলো কে চিনতে ভুল করে।
courtesy : সাফওয়ানা জেরিন

ক্লাসে একদিন মুদ্রাস্ফীতি পড়াতে পড়াতে
কাগুজে টাকা ও স্বর্ণের প্রসঙ্গ আসলো । ম্যাম
মজা করে ছেলেদের জিজ্ঞেস করলেন
বলতো – স্বর্ণের দাম বাঁড়ায় তোমাদের কি ক্ষতি
হয়েছে। ছেলেরা কেউ মুচকি মুচকি হাসছিল,
কেউ বা বুঝতে না পেরে এদিক ওদিক মাথা নাড়ছিল ।
ম্যাম বললেন- স্বর্ণের দাম বেড়ে গেলে
তোমাদের বিয়ে শাদী করতে দেরী হবে।
তখন মেয়েরা হি হি করে হাঁসা শুরু করলো । ক্লাসে
হাসির রোল পড়ে গেলো। ম্যাম এবার
মেয়েদের দিকে ফিরে বললেন- তোমরা হাসছ
কেন? ছেলেদের বিয়ে করতে দেরী হলে
তোমাদের বিয়ের বয়স ও গড়ে ২ বছর বাড়ল এটা
বুঝনা?মেয়েদের হাসি থেমে গেলো। ম্যাম
এরপর ছেলেদের বললেন- তোমরা যারা তাড়াতাড়ি
বিয়ে করতে চাও তাদের একটা সিক্রেট বুদ্ধি
শিখিয়ে দিচ্ছি। তোমরা আফ্রিকার জোহানেসবারগ এ
চলে যাবে। ওখানে ১০ ক্যরেট এর স্বর্ণ পাওয়া
যায় , একদম কম দাম। ২০ ভরি স্বর্ণ দিবে বউকে
একটু ও কষ্ট হবেনা।
উপরের গল্পটা নিছক মজার একটা ঘটনা হলেও এখান
থেকে আমাদের সমাজের আসল চিত্র টা ফুটে
ওঠে । এই সমাজে বিয়ের মতো হালাল সম্পর্কে
জড়াতে বুড়া কাল পর্যন্ত নিশ্চিন্তে থাকা যায় , অন্তত
টাকা পয়সার ব্যাপারে এমন বরের চাহিদা ই বেশি। আর
চামড়ার ব্যবসা তো আছেই। সাদা চামড়া কালো চামড়া
ভেদে দরদাম ঠিক করা হয় পাত্রীর , আর পাত্রের
ক্ষেত্রে চামড়া মুখ্য নয়। পাত্রের একটা ই
যোগ্যতা – গয়না গাটি দেওয়ার ক্ষমতা । পাত্রীর
ক্ষেত্রে শুধু মাত্র সুন্দর হওয়াই যেমন
মেয়েটির যোগ্যতার একমাত্র মানদণ্ড হওয়া উচিত
নয়, তেমনি ছেলের ক্ষেত্রেও বাড়ি গাড়ি স্মার্ট
হওয়া আর কাড়ি কাড়ি টাকার মালিক হওয়া শর্ত হওয়া উচিত
নয়। এসব কারনে আজকে আমাদের সমাজে বিয়ে
নিয়ে এতো অবাঞ্চিত ঘটনার জন্ম হচ্ছে।
ঘটনা -১
আদিল বহু বছর বাহিরে ছিল। তরুণ ইঞ্জিনিয়ার ,
দেখতে লম্বা , ফর্সা সাদামাটা একটা ছেলে। বিদেশ
থাকার কারনে করি করি করেও বিয়ে করা হয়ে
উঠেনি। বয়স টাও ওদিকে ৩০ ছাড়িয়ে গেলো
গেলো। বড় বুবু আজ মেয়ে দেখতে যাবে
আদিল কে নিয়ে। আদিলের মন আজ তাই খুব
ফুরফুরা। একা একা আর ভাললাগেনা তার , এবার বউ
আসলে তার হাতে সংসার বুঝিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত
হবে। প্রবাসে নিজের রান্না নিজের করতে হয়,
জ্বরের ঘোরে পড়ে থাকলে ও মমতাময়ী
কেউ মাথায় পট্টি দিয়ে দেয়না, বাজার করতে না
পারলে না খেয়ে থাকতে হয়, আর যাইহোক
অন্তত একজন সাথী তো হবে। ভাবতে ভাবতে
আদিল শিহরিত হয়।
পাত্রী দেখে এক নজরেই মুগ্ধ হয়ে যায় আদিল
ও বুবু। মেয়ের টানা টানা চোখ , দুধে আলতা রং ,
পরী বললেও ভুল হবেনা। এই মেয়েকে এতদিন
কেউ বিয়ে করেনি এটা ভেবেও আদিল অবাক হয়।
দেখতে যাওয়ার দিন সে মেয়কে ২/১ টা প্রশ্ন
করলেও মেয়ে কোন উত্তর দেয়না। সবাই
ভাবে লজ্জায় কথা বলেনি। আদিলের বুবু একবার
আশেপাশে খোঁজ খবর নিলেন না , মেয়ের
আচার ব্যাবহার কেমন! বিয়ে পাকাপাকি হয়ে যায়। এমন
বউয়ের জন্য কি যা তা শাড়ি গহনা কিনা যায়! সবাই মিলে হৈ
হুল্লোড় করে বিদেশে যায় শপিং করতে।
পরিবারে এক অনাবিল খুশির বন্যা বয়ে যায়।
প্রায় ৫ লাখ টাকার শুধু মার্কেটিং ই করা হয় কনের
জন্য। আরও আনুসাঙ্গিক মিলিয়ে ১০/১৫ লাখ টাকা
বাজেট আদিলের নিজের বিয়ের জন্য। হাজার
হোক বিয়ে তো মানুষ জীবনে একবার ই করে
তাইনা!
দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে আসে।
কনে পক্ষ কিন্তু বর পক্ষের ঠিক উল্টা । তারা
বরকে একজোড়া স্যুট আর জুতা ছাড়া তেমন কিছুই
দেয়নি। কিন্তু মেয়ের রুপের কাছে এসব কথা
পাত্তা পায়না। সবাই এসে আদিল কে বলে তোমার
বউ তো লাখে একটা।
বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ।
সবাই বাসায় চলে আসে। বাসর ঘর সাজানো
হয়েছে অনেক রকমের কাঁচা ফুল দিয়ে। খাটের
পাশে সাইড টেবিলে পানি, ফল, ছুরি রাখা আছে। আর
বউ বসে আছে খাটে । আদিল একবার ঘরের
পরিবেশ দেখে নেয়। সারাদিনের ব্যাস্ততায় সে
ও কিছুটা ক্লান্ত। খাটে যেয়ে নব বধুর পাশে
বসে। বউকে বলে- আপনার কি ক্লান্ত লাগছে?
ক্লান্ত লাগলে ঘুমিয়ে পড়ুন । কিন্তু একি! বউ দেখি
চোখ রাঙিয়ে তাকায়। রাগ রাগ কণ্ঠে বলে- আপনি
আমার সাথে কথা বলবেন না। আদিল তো পুরাই
ভ্যাবাচ্যাকা ! বউকে সে একবার ছুয়ে ও কথা
বলেনি, কোন উল্টা পাল্টা কথাও তো বলেনি! বউ
তাহলে এতো রাগ কেন? আদিল বউকে আবার
বলে- কি হয়েছে আপনার? আমি কি কোন অপরাধ
করেছি! ?
এই কথা শুনে বউ আরও ক্ষেপে গেলো।
একটানে বাসর সাজানো কাঁচা ফুলের মালাগুলো
টেনে ছিঁড়ে ফেলতে লাগলো । আদিল তো
হতভম্ব। সে বলল – আরে আরে করেন কি! এসব
ছিঁড়ছেন কেন? কি হয়েছে আপনার?
বউয়ের মেজাজ এক ধাপ চড়ে গেলো। সাইড
টেবিলে রাখা ফল কাঁটার ছুরি নিয়ে আদিলের গলায়
চেপে ধরতে ধরতে বলল- আমার ওষুধ কই! আমার
ওষুধ কই!
আদিল অবাক হয়ে বলল- কিসের ওষুধ? মেয়ে
বলল- মা আমাকে বলতে নিষেধ করেছে যে
আমি পাগল! আপনি আমার ওষুধ দেন তাড়াতাড়ি।
খেলেই ঘুমায় যাব । বাড়ির বিচ্ছুগুলো বাসর ঘরের
দরজার আশেপাশে ঘুরছিল। ধ্বস্তাধস্তির আওয়াজ
শুনে তারাও সজাগ হয়ে গেলো। এদিকে আদিল
বউয়ের হাত থেকে ছুরি নিয়ে তাকে নিরস্ত্র
করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। দুঃখে
কষ্টে রাগে আর অপমানে আদিলের সারারাত ঘুম
হয়নি। পরের দিন ছেলে পক্ষের দাওয়াত । সব
মেহমান সব আয়োজন ঠিক। যথাসময়ে সবাই
আসলো, আত্মীয় স্বজন অনুষ্ঠান সব ই হোল
কিন্তু হোল না শুধু ২ জীবনের মিল। সমস্ত
অনুষ্ঠানটাই একটা সাজানো নাটক মনে হোল তার
কাছে। অনুষ্ঠান শেষ হলে , বউকে তার বাপ মার
সাথে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হোল। পাগলের
সাথে সংসার করার কোন মানেই হয়না, খামোখা একটা
বাচ্চা ও যদি হয়, তাহলে এই মেয়ের সংসার কে
দেখবে! বিয়েতে মেয়ে পক্ষের নির্লিপ্ততার
কারন আর ইচ্ছাকৃত হঠকারিতা স্পষ্ট হয়ে গেলো।
আদিলের তালাক হয়ে গেলো কোর্টে । জরিমানা
স্বরূপ গুনতে হোল কয়েক লাখ টাকা।
জীবনটা তার পুরো এলোমেলো হয়ে
গেছে। অর্থ আর শান্তি সব খুইয়ে সে এখন উদাস
একজন মানুষ । মাঝে মাঝে ভাবে, গায়ের রং
দেখে পাগল না হয়ে একবার যদি খোঁজ মেয়ে
কেমন , তার আচরণ কেমন! এরপর থেকে
অনেকে অনেক চেষ্টা করে বিয়ে দিতে।
কিন্তু তার আর ভাললাগেনা মেয়ে দেখতে। এবার
সে বুবুকে বলে দিয়েছে, শুধু গায়ের রং না
দেখে মেয়ের আচার ব্যাবহার, মেয়ে নামাজী
কিনা এসব আগে খোঁজ নিতে, শ্যামলা হলেও
চলবে, কালো হলেও সই।
এর ১ বছর পরে আদিলের আরেক টি মেয়ের
সাথে বিয়ে হয়ে যায়। মেয়ে টি শ্যামলা । কিন্তু
আচার আচরণ ভালো, নামাজী । আদিলের দগদগে
ব্যাথার ক্ষত একটু একটু করে ভরে যাচ্ছে সুখী
দাম্পত্য জীবনের ছোঁয়ায় ।
এটি একটি সত্যি ঘটনা। সব কিছুর মুলেই হোল
নিয়তের পরিশুদ্ধতা । যে ব্যক্তি সুন্দর পাওয়ার নিয়ত
করে সে শুধু সুন্দর ই পায় , কিন্তু যে ব্যক্তি
বিয়ের ক্ষেত্রে কন্যার দ্বীনদারিতা ও আল্লাহ
ভীতি কে প্রাধান্য দেয় সে সৌন্দর্য না পেলেও
অনেক কিছু পায়। এই অংকে দ্বীনদারীর মান ১,
আর বাকি সব কিছুর মান শূন্য । সামনে ওই এক থাকলে
যতো শূন্য যোগ হবে ওই অংকের মান ততোই
বাড়বে, আর সামনে ওই ১ না থাকলে আর বাকি
যতো শূন্য ই যোগ করা হোক না কেন ওটার মান
শূন্য ই থেকে যায়।
আর তাছাড়া কালো সাদার পার্থক্য যদি আমরা করি ,
তাহলে আল্লাহর সৃষ্টিকে অপমান করা হয়। একজন
মানুষের সুন্দর কালো হওয়ার পিছনে তার কি কোন
অবদান আছে?
কাজেই মানুষের মূল্যায়ন হওয়া দরকার মানুষের
কাজে আর আচার ব্যাবহারে , উপরের চর্ম ও তার রং
দিয়ে নয়। পাত্রী দেখার বেলায় ও এমন টা
মেনে চললে ধোঁকা খাওয়ার সম্ভাবনা কম। বহু
ছেলে ও ছেলের মাকে দেখেছি , মুখ বড়
করে ফর্সা মেয়ে বিয়ে করিয়েও কি নৈতিক শিক্ষার
অভাবের শিকার হয়েছেন, আর কপাল থাবড়েছেন ,
আর এমন অনেক ঘর ও দেখেছি , যেখানে
কালো বা শ্যামলা একজন মমতাময়ী মহিলা স্বামী
সংসার সন্তান নিয়ে পরিবারকে জান্নাতের বাগিচার
মতো সাজিয়ে নিয়েছেন খোদা ভীরুতার রঙে।
মনে রাখবেন , আপনার সহধর্মিণী শুধু আপনার
অবসরের সাথী নন, তিনি হবেন আপনার সন্তানদের
মমতাময়ী মা। আর মায়ের স্বভাব ই ছড়িয়ে যাবে
আপনার সন্তানদের মধ্যে। যার মাঝেই নিহিত আপনার
পারিবারিক সুখ। আর ভালো মা সমাজকে উপহার দিবেন
ভালো চরিত্রের কিছু মানুষকে, যারা সমাজ গড়ার
কাজে আত্মনিয়োগ করবে।
পাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসুলের
সেই হাদিসটি আমরা বারবার ভুলে যাই । হজরত
আব্দুল্লাহ ইবনে আমের থেকে বর্ণিত , রাসুল
(সা।) বলেছেন-“ তোমরা কেবল সৌন্দর্যের
জন্য নারীদেরকে বিয়ে করোনা । কেননা , এই
সৌন্দর্য তাদেরকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
কেবল ধন সম্পদের জন্য বিয়ে করোনা , কেননা
তাদের ধন সম্পদ তাদেরকে অহংকারী বানিয়ে
দিতে পারে। বরঞ্চ তাদের দ্বীনদারীর
ভিত্তিতে তাদেরকে বিয়ে করো। মনে
রেখো – একটি কালো বাদী ও যদি দ্বীনদার
হয়, তবে সে আল্লাহর চোখে সুন্দরী
সম্ভ্রান্ত অধার্মিক নারীর চেয়ে উত্তম।।
আল্লাহর রাসুলের এই কথা টা আমাদের সমাজের
কয়জন যুবক মানে?
এখনো যখন আশেপাশে দেখি ভালো চরিত্রের
আইবুড়ো মেয়েদের বিয়ে হচ্ছেনা , শুধু চামড়ার
রঙের জন্য তখন খুব দুঃখ লাগে। এটা আমাদের
সমাজের যুবকদের বড় ব্যর্থতা যে, সুন্দর আর
অসুন্দরের ক্যাচালে পড়ে চরিত্রবান খাঁটি
হীরাগুলো কে চিনতে ভুল করে।
courtesy : সাফওয়ানা জেরিন
Comments
Post a Comment