শূন্যতা। ( সুন্দর একটি গল্প)

শূন্যতা।

image

লীনার কেমন যেন শূন্য শূন্য লাগছে। না আদনান
এবারও ওদের ম্যারেজ অ্যানিভার্সারী ভুলে যায়নি-
সব বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে বিরাট পার্টি দিয়েছে; নতুন
শাড়ি, নতুন গহনা, ফুলের মালা; উপহারও বিয়ের চেয়ে
কিছু কম পড়েনি; মিউজিক, লাইটিং কিছুরই ঘাটতি ছিলোনা।
কিন্তু ঘরে ফিরে আসতেই দু’জনের মাঝে আবার
সেই অস্পষ্ট, অস্পৃশ্য দুরত্ব। আদনান শুয়ে
পড়েছে পার্টি থেকে এসেই, লীনা এখনও
পোশাক পরিবর্তন করেনি। মনের ভেতর এক
অস্বস্তিকর, দম বন্ধ করা গুমোট আবহাওয়া। নিঃশ্বাস
নেয়ার জন্য বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায় লীনা, সমুদ্র
থেকে এক ঝলক বাতাস এসে ওর চুলে হাত
বুলিয়ে দিয়ে যায়, ঠিক যেমন দাদী দিতেন
ছোটবেলায়। সময়ের হিসেব হারিয়ে যায়। কি
করছে না ভেবেই ফোনের বোতামগুলো
টিপতে থাকে লীনা। ফোনের ওপাশে ঘুম ঘুম
কন্ঠে ‘হ্যালো’ শুনে খুব লজ্জা পেয়ে যায়-
একবার ভাবে ফোনটা কেটে দিলে কেমন হয়,
তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, ‘দাদী,
আমি লীনা, ঘুম থেকে তুললাম?’
সাথে সাথে আনন্দে ভরে গেল দাদীর গলাটা,
‘হ্যাঁরে নাতিন, এই বয়সে কি আর ঘুম আসে সোনা?
আমি জেগেই ছিলাম। বল কেমন আছিস? এই
বুড়িকে কি করে মনে করলি এত রাতে?’
ভাল মানুষকে ভাল কথা জিজ্ঞেস করেছে, দাদী
কি আর মরে গেলেও নিজের কষ্টের কথা
স্বীকার করবে? হঠাৎ নিজেকে কেমন যেন
অসহায় মনে হয় লীনার। এই সহজ সরল গ্রাম্য মহিলা
তাঁর সদাহাস্য চেহারার আড়ালে যেন ত্যাগ আর
শক্তির এক বিমূর্ত চিত্র। আর লীনা সারাজীবন
শহরে বড় হয়ে, পৃথিবীর নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে
দাঁতভাঙ্গা বিষয়ে পি এইচ ডি করে, বিদেশের নামকরা
কোম্পানিতে কাজ করে, রাতের মধ্যখানে
ছত্রিশতলা বিল্ডিঙয়ের ষোলতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে
আছে, এই বয়সেই একটা অগোছালো
জীবনের মালিক হয়ে।
‘দাদী, তোমার বিয়ের গল্প শুনতে ইচ্ছে হোল,
তাই ফোন করলাম।’
বুড়ি বুঝল সবই, কিন্তু বললনা কিছুই, বরং গল্প শুরু করল,
‘অত কি আর মনে আছে রে নাতিন, পঁয়ষট্টি বছর
আগের কাহিনী। আমার বয়স তখন বারো। বর্ষার
দিন। মাঠে খেলছিলাম সখীদের সাথে। বড় ভাই
এসে ডাকল, বলল বাবা ঘরে যেতে ডাকে। ঘরে
গেলাম তো মা চাচী সবাই মিলে জোর করে
পুকুরে চুবিয়ে, নতুন শাড়ি পরিয়ে, জটওয়ালা
চুলগুলো টেনে ছিঁড়ে বেণী করে, রাঙ্গা
কাঁচের চুড়ি পরিয়ে হাজির করল এক বুড়োর সামনে।
বুড়ো বলল, মেয়ে পছন্দ হয়েছে, বাড়ী
অনেক দূর, এই বৃষ্টিবাদলের দিনে আবার আসা
ঝামেলা, আজই বিয়ে হবে। আমার সে কি কান্না,
বিয়ে হবে সেজন্য না, সখীদের কতজনের
আমার আগেই বিয়ে হয়ে গেল! কান্না বুড়োর
সাথে বিয়ে দিচ্ছে বলে। ওমা! রাতের বেলা দেখি
বুড়ো না, বিয়ে হোল বুড়োর ছেলের সাথে।
বিকালে অন্ধকারে বসে ছিলো, আমি দেখতেই
পাইনি! সেই ত বুড়োই হয়ে গেল তোর দাদা।
এখন বুড়োর সাথেই সংসার করছি!’
হেসে ফেলে লীনা, বলে, ‘দাদী, আমার দাদার
মত ঘাড়তেড়া একটা লোকের সাথে পঁয়ষট্টি বছর
কেমনে সংসার করলে? আমাদের যুগে তো
বিয়ে পাঁচ বছর টিকলেই আমরা মনে করি বিরাট
ব্যাপার!’
দাদী বলে, ‘জানিনা তো নাতিন। বিয়ে দিল, নিয়ে
গেল, সংসার বুঝে নিতে নিতে বাচ্চাকাচ্চা হয়ে
গেল, ওদের বিয়ে দিয়ে শেষ করতে করতে
নাতিপুতি চলে এলো, তোর দাদার ঘাড়তেড়ামী
নিয়ে ভাবার সময়ই পেলাম কই?’
‘দাদী, তোমার কখনো মনে হতনা তুমি তোমার
জীবনে কিছু মিস করেছ, কোন কিছু থেকে
বঞ্চিত হয়েছ, কোন চাওয়া পাওয়া অপূর্ণ রয়ে
গিয়েছে?’
দাদী হাসে, ‘শোন রে নাতিন, সেই ছোটবেলায়
বাবা মা শিখিয়েছিল, যারা ভাল কাজ করে তারা
বেহেস্তে যায় আর যারা খারাপ কাজ করে তারা
দোজখে। তখন থেকে জানি দুনিয়াতে সব পাওয়ার
আশা করতে নেই, সব দুনিয়াতে পেয়ে গেলে
আল্লাহকে গিয়ে চাইব কি? তোর দাদার কাছে
কোনদিন কিছু পাওয়ার আশা করিনি, তোর দাদাও আশা
করেনি, তাই যখন যাই পেয়েছি- একটু হাসি, দু’টো
কথা, একটা বকুল ফুলের মালা, বাচ্চাদের থেকে
লুকিয়ে পাঁচখানা বাতাসা- সবই মনে দোলা দিয়ে
গেছে সুখ আর ভালবাসার। তোরা দেখেছিস
তোর দাদার রাগ, আমি দেখেছি আমার জ্বর হলে
অসহায়ের মত আমার শিয়রে বসে থাকা; তোরা
দেখেছিস দাদা কত কড়া, আমি দেখেছি
ছেলেমেয়ের অসুখ হলে লোকটা কেমন
জায়নামাজে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদত; তোরা
দেখেছিস দাদার গাম্ভীর্য, আমি দেখেছি
তোদের জন্য কিছু পছন্দ হলে তাঁর চোখ দু’টা
কেমন কারেন্টের বাত্তির মত জ্বলে উঠত।
জীবনে সব কিছু পাওয়া যায়না বোন, কিন্তু সেটাই
পাওয়া ভাল যা মন ভরে দেয় সুখে আর জীবন
ভরে দেয় আনন্দে যদিও সবাই তা দেখতে না পায়,
বুঝতে না পারে। একজন ভাল মানুষের সাথে
জীবন কাটাতে পারাটাই তো কত বড় একটা ব্যাপার!
আর আখিরাতে তাঁকেই সাথী হিসাবে পাব এটা
ভাবতেই তো কত ভাল লাগে!’
লীনা নিরুত্তর হয়ে যায়, ‘দাদী, তোমাদের
কখনো ঝগড়া হতনা?’
‘না রে নাতিন, আমরা গ্রামের মেয়ে, বিয়ের সময় মা
বলে দিয়েছে সে রাগ করলে তুই চুপ থাকবি,
তাহলে আর ঝগড়া লাগবেনা, পরে মাথা ঠান্ডা হলে
বুঝিয়ে বলবি। সেটাই করেছি সারাজীবন, সবার
সাথে। রাগের সময় কথা বললে অনেক উল্টাপাল্টা,
খারাপ ধরনের কথা বলা হয়ে যায় নাতিন যেটা পরে
খারাপ লাগে, কিন্তু ফিরিয়ে নেয়ার উপায় থাকেনা।
কিন্তু একটু ধৈর্য্য ধরতে পারলে পরে যে রাগ
করল সে মাথা ঠান্ডা হলে নিজেই লজ্জা পায়, তখন
তাকে বুঝালে সে নিজেই বুঝে। ঐটুকু ধৈর্য্য যদি
সংসারের শান্তি আর নিজেদের সুসম্পর্ক জিইয়ে
রাখতে পারে, তাহলে দাঁতমুখ খিঁচিয়ে হলেও ধৈর্য্য
ধরাই বুদ্ধিমানের কাজ, কি বলিস নাতিন?’
লীনা মাথা নাড়ে। তারপর খেয়াল হয় দাদী নিশ্চয়ই
ফোনের ভেতর দিয়ে ওর মাথা নাড়া দেখতে
পাবেন না। তার আগেই দাদী বলেন, ‘ও নাতিন,
তোর দাদা মনে হয় ওজু করতে যায়। কারেন্ট নাই,
অন্ধকারে কিসে বাড়ি খাবে লোকটা, আমি টর্চটা
নিয়ে যাই। তোর সাথে আবার পরে কথা বলব রে
নাতিন। রাগ করিস না।‘
‘না না দাদী, তাড়াতাড়ি যাও। আমি আবার পরে ফোন
করব,’ বলে ফোনটা কেটে দেয় লীনা। তারপর
ভাবে দাদীকে ওর ছয় মাসে একবার ফোন করা
হয় কিনা সন্দেহ, আজ হঠাৎ দাদীকে ফোন করল
কেন ও?
আদনানকে ড্রয়িং রুমে দেখে ঘরে ঢোকে
লীনা। আদনান ওকে দেখে ধপ করে সোফায়
বসে পড়ে, মুখে দুষ্ট দুষ্ট হাসি টেনে বলে,
‘তোমাকে না দেখে চেক করতে এলাম, তিন
বছরে আমার ওপর বিরক্ত হয়ে ভেগে গেছ
কিনা।’
অন্য সময় হলে পি এইচ ডি ধারী লীনা এই সস্তা
রসিকতায় দুম করে ক্ষেপে যেত। আজ সে
আদনানের দুষ্টুমীটা অগ্রাহ্য করল, ‘কেন, আমি
ভেগে গেলে তোমার কোন বিশেষ সুবিধা
হয়?’
‘হয় বৈকি,’ আয়েশ করে হাই তুলতে তুলতে বলে
আদনান, ‘একটা ব্র্যান্ড নিউ বৌ পেলে কে না খুশি
হয়?’
ঠোঁটের কোণে সামান্য বিষাদময় হাসি দেখা যায়
লীনার, ‘তুমি আমাকে নিয়ে খুশি নও তাইনা?’
সামনের দিকে ঝুঁকে বসে আদনান, যেন কোন
গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের চুলচেরা বিশ্লেষণ
করছে, ‘নাহ, তোমাকে নিয়ে খুশি না বললে
সম্পূর্ন সত্য বলা হবেনা। তুমি একজন শিক্ষিতা, স্মার্ট,
সুন্দরী, ভাল চাকুরী করা মেয়ে ...’
‘তাহলে কিসে আমার অপূর্ণতা?’, বিহ্বল কন্ঠে সামাল
দিতে পারেনা লীনা।
তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে লীনাকে পর্যবেক্ষণ করে
আদনান, ‘তুমি কি সত্যিই জানতে চাও?’
‘হ্যাঁ’।
‘তোমার ভাল লাগবেনা’।
‘না লাগুক, আমি আমাদের সংসার বাঁচাতে চাই’।
‘হাহ, সংসার!’, আদনানের তাচ্ছিল্যপূর্ণ হাসিতে চমকে
ওঠে লীনা।
‘সরি, I did not mean it. শোন লীনা, আমরা বিয়ে
করেছি, কিন্তু সংসার করেছি কি?’
‘মানে?’
‘সংসার করা মানে দু’জনে মিলে একটি গৃহ রচনা করা,
ভাল মন্দ সবকিছু দু’জনে মিলে সিদ্ধান্ত নেয়া,
দু’জনে মিলে নতুন অতিথিদের জন্য একটি সুন্দর
পরিবেশ প্রস্তুত করা। আমরা কোনটি করতে
পেরেছি বল তো?’
মুখ নীচু করে রাখে লীনা, ‘লীনা, আমি বলিনা তুমি
ঘরে বসে অযথা তোমার মেধাকে নষ্ট হতে
দাও, কিন্তু তোমার ক্যারিয়ারই যদি তোমার
জীবনের মুখ্য উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায় তাহলে
স্বভাবতই আমার মনে প্রশ্ন জাগে, ‘তাহলে
তোমার জীবনে আমার স্থান কোথায়?’ তোমার
সামান্য মাথাব্যাথা হলেও আমি কাজে যাইনা বা গেলেও
তাড়াতাড়ি চলে আসি, যেহেতু তোমার ভাল থাকা আমার
কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমাদের বিয়ের ছ’মাস পর,
তোমার চাকরীর সূত্র ধরে যখন আমরা এই
বিদেশে চলে এলাম, এখানকার আবহাওয়া আমার সহ্য
হোলনা, জ্বরে পড়ে কাতরালাম সাতদিন, তুমি ক’দিন
ছুটি নিয়েছ বা এমনকি একদিন আধাদিন করে ঘরে
ফিরে এসেছ বল তো লীনা? তুমি আমার সেবা
করতে বাধ্য নও, কিন্তু সামান্য মানবিক সহানুভূতি তো
আমি আমার প্রাপ্য মনে করতে পারি!’
লীনা কিছু বলতে পারেনা, ‘বন্ধুবান্ধব সবার
জীবনে প্রয়োজন, জীবনে আনন্দফূর্তি
করারও প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু সেটা
নিত্যদিনের নিয়ম হয়ে যেতে পারেনা লীনা।
সপ্তাহে কয়দিন আমরা বাসায় থাকি বল তো? কয়দিন
আমরা বাসায় খাই? মনে করতে পারো কবে আমরা
বাসাটাকে গৃহ বানানোর উদ্দেশ্যে সময় ব্যায়
করেছি? তুমি জানো আমি খুব একটা সামাজিক নই।
সামাজিক পরিবেশে আমি খেই হারিয়ে ফেলি। একদিন
বাইরে কাটালে আমার দু’দিন লাগে সামলে নিতে।
তাছাড়া যেহেতু সারাদিন আমরা দু’জন বাইরে থাকি,
সন্ধ্যার পর সময়টুকু আমি চাই তোমার সাথে কাটাতে।
কিন্তু তুমি কিছুতেই চাকচিক্যের মোহ কাটাতে
পারোনা। কিন্তু লীনা, সুখ কি দামী শাড়ি, একেকদিন
একেকরকম গহনা, ভাল রেস্টুরেন্টে খাওয়া আর
অন্যকে খুশি করার জন্য দাঁত কেলিয়ে হাসায়, নাকি
পরস্পরের সাহচর্যে?’
‘তুমি আমাকে এসব কথা এতদিন বলনি কেন?’
‘বলার চেষ্টা করেছি। প্রথম বছর যখন আমাদের
বিবাহ বার্ষিকীতে আমি চাইলাম দু’জনে মিলে
সমুদ্রের পাড়ে বসে সারাদিন গল্প করব, বালিতে পা
ডুবিয়ে হাঁটব, সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে ছোঁয়াছুঁয়ি
খেলব- মনে আছে তুমি কেমন
তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছিলে? সেই
ভয়েই তো প্রতিবছর অনুষ্ঠান করি যদিও এসব
মেকি কাজকারবার আমার ভাল লাগেনা। আমাদের
ভালবাসা কি জনসমক্ষে প্রদর্শনী দেয়ার জিনিস না
মানুষের উপহারে পরিমাপ করার বস্তু? এটা অনুভব
করার ব্যাপার। কিন্তু একেকটা অনুষ্ঠানে অনাকাঙ্খিত
লোকজনের সান্নিধ্য আর চাকচিক্যময় পরিবেশ
আমাকে এতটা ক্লান্ত করে দেয় যে বাসায় এসেও
আমার আর তোমার সাথে সময় কাটানোর মত এনার্জি
থাকেনা’।
‘আমি দুঃখিত আদনান, ব্যাপারটা আমার বোঝা উচিত ছিল।
তুমি কখনো আমাকে কোন বিষয়ে জোর করনি,
কিন্তু আমি ভাবতেই পারিনা জোর করলে আমার
কেমন লাগত’।
কিছুক্ষণ দু’জনেই চুপ। তারপর লীনা বলে, ‘আদনান,
তুমি কেন বলনি তুমি সন্তান চাও?’
‘লীনা, একটি সন্তান একটি দম্পতিকে একটি পরিবারে
রূপান্তরিত করে, একটি সন্তান একটি গৃহকে সংসার
বানায়, একটি সন্তান একটি সম্পর্ককে পূর্ণতা দান
করে। একজন নারী একজন পুরুষের চেয়ে
অনেক বেশি উদগ্রীব থাকে সন্তানের জন্য,
সাধারনত। গৃহের প্রতি তোমার আকর্ষন না থাকলে
সন্তানের কথা তোমাকে বলি কি করে বল তো?
সন্তান ধারণ কিংবা লালনপালনের যোগ্যতা তো আমার
নেই। নইলে সেই কবে দু’চারটা ‘ওয়্যাঁ ওয়্যাঁ’
কোলে নিয়ে ঘুরতাম!’
আদনানের কথায় হেসে ফেলে লীনা।
লীনাকে হাসতে দেখে স্বস্তি পায় আদনান। যাক,
আজ সম্ভবত ঝগড়া হবেনা।
‘আদনান, আধুনিক শিক্ষা আমাকে বানিয়েছে
প্রতিযোগী মনোভাবাপন্ন, সংসারী হতে
শেখায়নি। আমি জানি নেটওয়ার্কিং ছাড়া জীবনের ইঁদুর
দৌড়ে এগিয়ে যাওয়া মুস্কিল, তাই আমি নেটওয়ার্ক
তৈরী করতে করতে কবে যে তুমি আমার
নেটওয়ার্কের বাইরে পড়ে গেছ দেখার সময়ই
পাইনি! আর হ্যাঁ, আধুনিকতা আমাকে শিখিয়েছে
জীবনের চাকচিক্যের প্রতি আকর্ষন অথচ
জীবনের মূল লক্ষ্যগুলো কবে আমার
প্রায়োরিটি লিস্ট থেকে ধীরে ধীরে কাটা
পড়েছে লক্ষ্যই করা হয়নি!’
‘আদনান, তুমি কেন আমাকে স্বেচ্ছাচারী হতে
দিলে? কেন আমাকে টেনে ধরলে না? কেন
আমাদের মাঝে নীরবতার দেয়াল তুলে দিয়ে
আমাকে দূরে সরিয়ে দিলে?’
‘ম্যাডাম, আমি শান্তিপ্রিয় মানুষ। জীবনের কাছে
আমার চাহিদা খুব কম। তুমি যদি মনে করতে এই মূর্খ
গোঁয়াড় লোকটা তোমার জীবনটা ফানা ফানা করে
দিল!’
‘মনে করবনা, কিন্তু তুমিও আর আমাকে এভাবে
দূরে সরিয়ে দেবেনা। ভুল করতে দেখলে হাত
ধরে ফিরিয়ে আনবে’, আদনানের ঘাড়ে মাথা গুঁজে
আরাম করে বসে লীনা।
আদনান ওর মুখমন্ডল দু’হাতের মধ্যে স্থির করে
ধরে পর্যবেক্ষণ করে, ‘তুমি কে? তুমি আমার
বৌকে কি করেছ?’
হেসে ফেলে লীনা, ‘আমিই তোমার বৌ, কিন্তু
আমার একজন ভাল ট্রেনার মিলেছে। তিনি আমাকে
সংসারবিদ্যায় ট্রেনিং দিচ্ছেন’।
‘কে তিনি?’
‘এটা আমার সিক্রেট’।
‘আমার সাথে সিক্রেট!’, কপট মন খারাপ করে
আদনান।
‘হুমম, যতদিন তুমি আমার সাথে দুরত্বের দেয়াল
তুলে না দেবে বা আমি তা হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ভাংতে
না পারি ততদিন এই সিক্রেট জানা যাবেনা’।
‘ওকে, চল তবে দু’জনে দু’দিক থেকে দেয়াল
ভাঙ্গা শুরু করি!’
হাসতে হাসতে হাত ধরে উঠে দাঁড়ায় দু’জনে, একটি
নতুন জীবন গড়ে তোলার সংকল্পে।
লিখেছেন - রেহনুমা বিনত আনিস

Comments

Popular posts from this blog

বাংলাদেশী মেয়েদের হট ছবি

হে যুবক কোন দিকে যাও!! জান্নাতি হুর তোমাকে ডাকছে

ইসলামের দৃষ্টিতে যৌন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও শক্তি বৃদ্ধিকারী খাদ্য-পানীয়