পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য ও মেয়েদের পিতা-মাতা।
পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য ও মেয়েদের
পিতা-মাতা।

আমি এমন অনেক নাটক, সিনেমা দেখেছি
যাতে দেখানো হয়েছে ছেলের বাবা বা
মাকে ছেলের বউ সহ্য করতে পারছে না ৷
কিন্তু এমন কোনো নাটক, সিনেমা দেখিনি
যাতে দেখানো হয়েছে মেয়ের বাবা -মা
বৃদ্ধ বয়সে কোথাও যাবার জায়গা পাচ্ছেন
না ; মেয়েটি চেষ্টা করছে যতটা সম্ভব
সাহায্য করার, কিন্তু মেয়েটির স্বামী বা
শ্বশুর বাড়ীর লোক সহ্য করতে পারছে না ৷
আশেপাশের লোক বলছে মেয়ের বাড়ী
থাকবেন, কেমন দেখায়? কিন্তু এই মেয়েটির
জন্যও তার বাবা -মায়ের অনেক ত্যাগ ছিল,
এই মেয়েটির জন্যও তারা রাত জেগেছেন ,
ভেজা বিছানায় শুয়েছেন ৷ উপরন্তু তার
নিরাপত্তার জন্য বাড়তি উদ্বেগ সহ্য
করেছেন ; মেয়েটির বিয়ে দেবার সময় ছেলে
পক্ষের যৌক্তিক-অযৌক্তিক সব দাবী মেনে
নিয়েছেন, জামাই বা জামাই বাড়ীর কেউ
আসলে টাকা থাকুক বা নাই থাকুক বাজারের
বড় মাছ কিনেছেন ; কোমরে ব্যাথা নিয়েও
হাসি মুখে জামাইয়ের জন্য রান্না করেছেন ৷
এত কিছুর পরেও কেন এই বাবা-মায়ের ত্যাগ ,
কষ্ট কোথাও মূল্যায়ণ পায় না? শুধু ‘মেয়ের
বাবা-মা’ হওয়ার কারণে ?
আমি যখনি কোনো নাটক বা সিনেমায়
সন্তানের জন্য মায়ের ত্যাগ দেখেছি
আশ্চর্যজনক ভাবে সন্তানটি সর্বদাই ছেলে
সন্তান ছিল , একবারের জন্যও আমি মেয়ে
সন্তান দেখিনি। কারনটা কি হতে পারে? -
আমি অনেকবার ভাবার চেষ্টা করেছি।
মায়েরা কি ছেলেদের জন্য বেশী ত্যাগ
করে যা ছেলেদের মনে রাখা উচিত?
মায়েদের ছেলে সন্তানের প্রতি আকর্ষণটা
একটু বেশী হতে পারে (অনেক
মনোবিজ্ঞানী মনে করেন) কিন্তু ত্যাগ তো
তারা মেয়েদের জন্য একটুও কম করেন না ।
তাহলে কেন মেয়ের মায়েদের ত্যাগটা
সবসময় অনুচ্চারিতই থেকে যায়? আবার
ভাবার চেষ্টা করেছি মেয়েরা হয়তো
এমনিতেই বাবা মায়ের প্রতি যত্নশীল ,
ছেলেদের বরঞ্চ মনে করিয়ে দিতে হয় বাবা-
মা তার জন্য কী কষ্ট করেছে । এটা হয়ত
কোনো কোনো ক্ষেত্রে সত্যি হতে পারে
কিন্তু যদি আমরা ছেলেদের জন্য বাবা মা
কতটা কষ্ট করেছেন শুধু তাই পুনঃ পুনঃ
উচ্চারণ করতে থাকি তবে কি মেয়ের বাবা-
মায়েদের ত্যাগ ঢাকা পড়ে যাচ্ছে না?
এ তো গেলো এ দুনিয়ার কথা ৷ মৃত্যু পরবর্তী
দুনিয়ার ব্যাপারেও ছেলের বাবা মায়ের
সুবিধা মেয়ের বাবা মায়েদের থেকে বেশী
দেখানো হয় ৷ ‘মায়ের পায়ের নীচে
সন্তানের বেহেশত’ কথাটা শুনলেই কেন যেন
আমাদের মনে এক মা আর তার ছেলে এমন
একটা ছবি ভেসে ওঠে ৷ একবার এক
মফঃস্বলের এক মাওলানা যিনি ওই এলাকার
মাদ্রাসার শিক্ষক এবং নিয়মিত ঈদের
জামাতে ইমামতি করেন ও খুতবা দেন
(অর্থাৎ একজন ধর্মীয় শিক্ষক এবং নেতা )
আমাকে বলছিলেন, “মায়ের পায়ের নীচে
সন্তানের বেহেশত এবং বিয়ের পরে
মেয়েদের জন্য মা-বাবার স্থান নিয়ে নেয়
তার শ্বশুড়- শ্বাশুড়ী ৷” তিনি আমাকে যা
বোঝাতে চাইছিলেন তার অর্থ দাঁড়ায়
ছেলেদের বেহেশত সর্বদাই মায়ের পায়ের
নীচে থাকে কিন্তু মেয়েদের বেহেশত
বিয়ের সময় তার মায়ের পায়ের নীচ থেকে
সরে গিয়ে স্থান নেয় শ্বাশুড়ীর পায়ের নীচে
৷
অর্থাৎ বিয়ের সময় মেয়ের মায়েরা বেহেশত
হারান আর ছেলের মায়েরা বাড়তি একটি
লাভ করেন ৷ এই সুত্র অনুযায়ী কোনো মহিলার
যদি দুটি ছেলে থাকে তবে তিনি চারটি
বেহেশতের উপরে দাড়িয়ে থাকেন কিন্তু
যার দুটি মেয়ে তিনি মেয়েদের বিয়ে দেবার
সাথে সাথে বেহেশতশূণ্য হয়ে যান ৷ এই যদি
হয় অবস্থা তাহলে কোন নারী চাইবে মেয়ের
মা হতে? কে চাইবে কষ্ট করে মেয়ে পেটে
ধরে, তার জন্ম দিয়ে, তাকে বড় করার সব কষ্ট
সয়েও বেহেশতশূণ্য হতে? তার থেকে ভালো
ছেলের মা হওয়া – ছেলের জন্য কষ্ট করার
পুরস্কার হিসাবে পার্মানেন্ট একটা বেহেশত
তো থাকবেই তার উপরে বোনাস হিসাবে
মেয়ের মায়েরটাও পাওয়া যাবে। এভাবে কি
আমরা সবাই মিলে এমন একটা সামাজিক চাপ
তৈরী করছি না যাতে সবার মধ্যে ছেলে
সন্তান পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা বাড়ে, আর মেয়ে
সন্তানের আকাঙ্ক্ষা কমে? আর এ থেকে
তৈরী হয় ভারসাম্যহীনতা আর পরিনামে জন্ম
নেয় নানা রকম পারিবারিক ও সামাজিক
সমস্যা ।
আমরা জানি রাসুল (সঃ) এর সময় মক্কার
লোকেরা মেয়ে শিশু সন্তানদের জীবন্ত কবর
দিত; কেন? যে বাবা এ কাজটি করত তার কি
একটুও কষ্ট হতনা ? অবশ্যই হত। ইতিহাস সাক্ষী
যে একাজ করার সময় তাদের বুক ফেটে যেত;
চোখের পানিতে মুখ ভেসে যেত; তারপরও
কেন তারা এটা করত? কারণ সমাজের চাপ।
সমাজ এমন এক পরিবেশ তৈরী করে
রেখেছিল যাতে ছেলের পিতা-মাতা নানা
ভাবে সুবিধা ভোগ করত আর মেয়ের পিতা-
মাতাদের পড়তে হত অসুবিধা জনক অবস্থানে
– কাজেই কেউই মেয়ে সন্তান চাইতো না ।
আমাদের এই আধুনিক যুগেও যদি আমরা নাটক
, সিনেমা , সাহিত্য সর্বত্র ছেলের বাবা-
মায়েদের ত্যাগ কে হাইলাইট করি আর
মেয়ের বাবা-মাদের ত্যাগ কে অবহেলা (over
look) করি তবে আমরাও এমন এক পরিবেশ
তৈরী করছি যাতে সবার মধ্যে ছেলের
বাবা- মা হওয়ার ইচ্ছা বাড়ে, আর মেয়ের
বাবা- মা হওয়ার ইচ্ছা অনুৎসাহিত হয়। আমরা
কি এভাবে মেয়ে ফীটাস এবরশন কে
উত্সাহিত করছি না?
আমি একবার খুব নামকরা একজন ধর্মীয়
বক্তার ওয়াজ শুনছিলাম ‘পিতা মাতার প্রতি
সন্তানের কর্তব্য’ এর উপর । বক্তব্যের শব্দ
চয়ন এবং ধরন (Tone) এমন ছিল যে ওখানে
উপস্থিত সব পুরুষের মনে হলো বাবা মায়ের
প্রতি দায়িত্ব পালনে তারা যথেষ্ট
মনোযোগী হতে পারছেন না এবং এর সম্ভাব্য
কারণ বা বাধা হলো স্ত্রী । অপরপক্ষে
উপস্থিত প্রতিটা নারীর মনে হলো যে শ্বশুড়-
শ্বাশুড়ীর প্রতি দায়িত্ব পালনে তার ভূমিকা
সমালোচিত হলো । এমন ব্যাখ্যা নিঃসন্দেহে
স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে ভালো প্রভাব
ফেলবে না । শুধু তাই না, এধরনের ব্যাখ্যা
যেহেতু ছেলের মায়েদের সুবিধা জনক
স্থানে রাখছে সেহেতু ওই ওয়াজে উপস্থিত
সব নারীর মনেই (আমার নিজেরও ) ছেলের
মা হওয়ার ইচ্ছা তৈরী হয়েছে , মেয়ের মা
হতে তেমন কারোই সেদিন ইচ্ছা হয়নি ।
ওয়াজগুলো কি এমন হতে পারে না যা শুনে
প্রত্যেকটা পুরুষ ভাবতে পারে, সন্তান
হিসাবে তার বাবা মায়ের সাথে সে নিজে
ভালো আচরণ করছে কিনা? এবং নিজ
স্ত্রীকে তার বাবা মায়ের প্রতি দায়িত্ব
পালনে কোনো প্রকার অসহযোগিতা করছে
কি না? একই ভাবে প্রত্যেকটি নারীও
ভাবতে পারে সন্তান হিসাবে তার বাবা
মায়ের সাথে সে ভালো আচরণ করছে কিনা?
এবং নিজ স্বামীকেও তার বাবা মায়ের
প্রতি দায়িত্ব পালনে কোনো প্রকার
অসহযোগিতা করছে কিনা ?
আমি এমন অনেক ইসলামিক ছেলে দেখেছি
যারা নিজেরা অহরহই নিজের বাবা মাকে
ধমকের সুরে কথা বলেন ,রেগে গেলে রূঢ়
আচরণ করেন কিন্তু স্ত্রীকে নির্যাতন করেন
এই অজুহাতে যে সে তার শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীর
সঙ্গে যথেষ্ট ভালো আচরণ করেনা কেন;
কাজের সহযোগীতার জন্য লোক থাকার
পরেও অফিস থেকে ফিরে এসে ভাত রান্না
করে দেয় না কেন । এরকম অদ্ভুত আচরণের
কারণ সম্ভবতঃ আমাদের চার পাশের ‘পিতা
মাতার প্রতি কর্তব্যের’- এই ধরনের পুরুষ
কেন্দ্রিক ব্যাখ্যা। কারণ এইধরনের ব্যাখ্যা
এমন একটা ধারণা তৈরী করে যে পুরুষদের
অধিকার রয়েছে তার স্ত্রী কে নির্যাতন
করার যদি তার মনে হয় স্ত্রী তার চাহিদা
মত তার বাবা মায়ের সাথে ব্যবহার করছে
না ।
একবার ইউনিভার্সিটির কিছু ছাত্র আমার
অফিসে আসলো ,” ম্যাডাম , মা-বাবা বললে
নাকি স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দিতে হবে ? ”
আমি ওদেরকে ইসলাম পড়াতাম না কিন্তু
ওদের মনে কোনো কারণে এই বিশ্বাস
হয়েছে যে আমি হয়ত ওদের যুক্তিপূর্ণ কোনো
সমাধান দিতে পারব । আমি জানতে চাইলাম-
“তোমাদের এমন ধারণার কারণ কি?” ওরা বলল
আমারই এক কলিগ, যিনি ছাত্রদের মাঝে
মাঝেই ইসলাম সম্পর্কে সচেতন করেন এবং এ
কারণে ছাত্রদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়ও,
তিনি আজ ক্লাসে এ কথা বলেছেন । তিনি
বলেছেন,” ইসলামে বাবা মায়ের অধিকার এত
বেশী যে তারা যদি বলে স্ত্রীকে তালাক
দিতে হবে তবে ছেলেদের দায়িত্ব হলো
স্ত্রীকে তালাক দেয়া”। আমার কলিগের এই
কথার প্রতিবাদ ছাত্ররা করতে পারে নি
ঠিকই কিন্তু সাধারণ জ্ঞানে এটা ওদের
কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। আরো সহজ
ভাবে বললে বলতে হয় এটা তাদের কাছে
অন্যায় মনে হয়েছে এবং ওদের মনে প্রশ্ন
তৈরী হয়েছে ইসলাম এমন অন্যায়কে
কিভাবে উত্সাহিত করতে পারে বা কিভাবে
ইসলাম বাবা মাকে জালিম হবার ছাড়পত্র
দিতে পারে?
আমি ওদেরকে বললাম -
কোরআনে বাবা-মা সম্পর্কে তিন ধরনের
আয়াত এসেছে -
১. শুধু বাবা মার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব
সম্পর্কিত আয়াত (কি করতে হবে)
২. বাবা মার অধিকার ও অন্যান্যদের
অধিকার (একসঙ্গে)সম্পর্কিত আয়াত
৩. বাবা-মার অধিকারের সীমা সম্পর্কিত
আয়াত (কোন কোন ক্ষেত্রে বাবা মায়ের
কোনো অধিকার নেই)
প্রথম ধরনের আয়াত গুলোর ( শুধু বাবা মার
প্রতি সন্তানের দায়িত্ব সম্পর্কিত) মধ্যে
পড়ে সূরা বনী ইসরাঈলের ২৩ ও ২৪ নং আয়াত,
সুরা লুকমানের ১৪ নং আয়াত ও সুরা
আহ্কাফের ১৫ নং আয়াত।
” তোমার প্রতিপালক আদেশ করছেন, তোমরা
তাকে ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করনা এবং
তোমরা তোমাদের পিতামাতার সাথে
সদ্ব্যবহার করো ; তাদের একজন কিংবা
উভয়ই যদি তোমাদের জীবদ্দশায় বার্ধক্যে
উপনীত হয়, তাহলে তাদের সাথে বিরক্তি
সূচক কিছু (উফ ) বলো না এবং ধমক দিওনা,
তাদের সাথে সম্মান সূচক নম্র কথা বলো।
অনুকম্পায় তাদের প্রতি বিনয়াবনত থেকো,
এবং বলো, হে আমার মালিক তাদের প্রতি
ঠিক সেভাবে দয়া করো যেভাবে শৈশবে
তারা আমাকে লালন পালন করেছিলেন।
” [বনি ইসরাইল ২৩, ২৪]
“আমি মানুষকে তাদের পিতা মাতার
ব্যাপারে সদাচারণের নির্দেশ দিয়েছি ,
তার মা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে তাকে
গর্ভে ধারণ করেছে এবং দুই বছর পর সেই
সন্তান বুকের দুধ খাওয়া ছেড়েছে , সুতরাং
আমার শোকর আদায় করো এবং পিতা মাতার
কৃতজ্ঞতা আদায় করো ; তোমাদেরকে আমার
কাছেই ফিরে আসতে হবে ।” [সুরা লুকমান ১৪]
আমি মানুষকে আদেশ দিয়েছি সে যেন
নিজের পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহার
করে ; কেন না তার মা তাকে অত্যন্ত কষ্ট
করে গর্ভে ধারণ করেছে এবং অতি কষ্টে
প্রসব করেছে এবং এভাবে গর্ভে ধারণ করতে
ও স্তন্য পান করানোর সময় তিরিশটি মাস;
অতঃপর সে তার পূর্ণ শক্তি প্রাপ্ত হয় এবং
৪০ বছরে উপনীত হয় ; তখন সে বলে , হে আমার
মালিক , এবার তুমি আমাকে সমর্থ দাও
……” [আহকাফ: ১৫]
দ্বিতীয় ধরনের আয়াতে অন্যান্যদের
অধিকারের সাথে সাথে পিতামাতার
অধিকারের কথাও বলা হয়েছে -
“তুমি বল, আসো তোমাদের প্রতিপালক
তোমাদের জন্য যা নিষিদ্ধ করেছেন তা বলে
দেই , তোমরা আল্লাহর সাথে কোনো শরীক
করবেনা , পিতা মাতার সঙ্গে ভালো ব্যবহার
করবে, দারিদ্রের আশংকায় কখনও তোমরা
তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না ……..
”[সূরা আনআম: ১৫১]
” তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে ও কোনো
কিছুকে তার সাথে শরীক করবে না এবং
পিতা – মাতা , আত্মীয় স্বজন , ইয়াতিম ,
অভাবগ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী,
সঙ্গী সাথী , পথচারী এবং তোমাদের
অধিকারভুক্ত দাস দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার
করবে। ” [সূরা নিসা: ৩৬]
আর তৃতীয় ধরনের আয়াতে পিতা মাতার
অধিকারের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে –
বলা হয়েছে কোথায় কোথায় বাবা মায়ের
অধিকার নেই।
প্রথমতঃ
পিতা মাতা আল্লাহর সাথে কোনো কিছু
শরীক করতে বললে তাদের আনুগত্য করা যাবে
না। সুরা লোকমানে আল্লাহ বাবা মায়ের
প্রতি ‘সদ্ব্যবহার’ কি তা ব্যাখা করেছেন –
“আমি মানুষকে তাদের পিতা মাতার
ব্যাপারে সদাচারণের নির্দেশ দিয়েছি,তার
মা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে তাকে গর্ভে
ধারণ করেছে এবং দুই বছর পর সেই সন্তান
বুকের দুধ খাওয়া ছেড়েছে , সুতরাং আমার
শোকর আদায় করো এবং পিতা মাতার
কৃতজ্ঞতা আদায় করো ; তোমাদেরকে আমার
কাছেই ফিরে আসতে হবে” এর পরপরই বলছেন
“সদ্ব্যবহার” মানে “আনুগত্য” না। আল্লাহ
বলছেন, ” তোমার পিতা-মাতা যদি তোমাকে
পীড়া পীড়ি করে যে তুমি আমার সাথে
শিরক করবে, যে ব্যাপারে তোমাদের কোনো
কোনো জ্ঞানই নেই , তাহলে তুমি তাদের
কথা মানবে না,তবে দুনিয়ার জীবনে তাদের
সাথে ভালো ব্যবহার করবে …..”
দ্বিতীয়তঃ
অন্যায় কাজে সন্তানের সমর্থন পাবার
অধিকার পিতা মাতার নেই,সে অন্যায় যে
কারো ক্ষেত্রেই হোক না কেন।
“হে ঈমানদারগন, তোমরা সর্বদাই ইনসাফের
ওপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থেকো এবং
আল্লাহর জন্য সত্যের সাক্ষী থেকো যদি তা
তোমার নিজের, নিজ পিতামাতা ও নিকট
আত্মীয়দের বিপরীতে যায় …তবুও।” – [সূরা
নিসা: ১৩৫]
অর্থাৎ পিতা-মাতা অন্যায় করলে বা অন্যায়
দাবী করলে আল্লাহ নির্দেশ দিচ্ছেন তার
বিরোধিতা করার এবং ন্যায়ের পক্ষে
থাকার ; তবে মনে রাখতে হবে তাদের সঙ্গে
ব্যবহার ভালো করতে হবে এবং ধমক দেয়া
যাবে না ।
এভাবে আমার ছাত্র ছাত্রীরা জেনে গেল
তাদের কে পিতামাতার অধিকার সম্পর্কে
খুবই খন্ডিত ধারণা দেয়া হয়েছিল। যার ফলে
এমন এক ধারণার তৈরী হয়েছিল যা ইসলামের
সঠিক ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত। এরূপ খন্ডিত
ধারণার ফল আমাদের সমাজে ভালো হয়নি ,
এটি খুলে দিয়েছে অনেক অবিচারের দরজা
– এটি ব্যবহৃত হয়েছে ছেলে বা ছেলে
পক্ষের সুবিধা বৃদ্ধির আর মেয়ে ও মেয়ে
পক্ষের সুবিধা বঞ্চিত করার হাতিয়ার
হিসাবে ।
কেন এমন খন্ডিত ধারণা সৃষ্টি হলো ? কারণ
সম্ভবতঃ আমরা যেসব ইসলামিক আলোচনা বা
ওয়াজ শুনি এবং যেসব ইসলামিক সাহিত্য
পড়ি তাতে শুধুমাত্র প্রথম ধরনের আয়াত
গুলোকেই তুলে ধরা হয় , অন্য ধরন দুটি ততটা
গুরুত্ব পায়না। বিশেষ করে সুরা নিসার ১৩৫
নং আয়াতটি সম্পূর্ণ অনুচ্চারিতই থেকে যায় ,
“হে ঈমানদারগন, তোমরা সর্বদাই ইনসাফের
ওপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থেকো এবং
আল্লাহর জন্য সত্যের সাক্ষী থেকো যদি তা
তোমার নিজের, নিজ পিতামাতা ও নিকট
আত্মীয়দের বিপরীতে যায় তবুও “-
ফলে সন্তানরা তো বটেই বাবা মায়েরাও
ভেবে বসেন তাদের অধিকার অসীম; এমনকি
তারা সন্তানকে অন্যায় আদেশ করারও
অধিকার রাখেন। আমাদের সামাজিক
পারিপার্শ্বিকতা এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ছেলে
সন্তানদের পিতামাতাকে করে তোলে
অনিয়ন্ত্রিত শক্তির ধারক। অথচ এই আয়াতটি
যদি পিতা-মাতার অধিকারের সীমা হিসাবে
উচ্চারিত হত তবে বাবা মায়েরাও সন্তানের
কাছে কিছু দাবী করার আগে ভাবতেন
তাদের এ দাবী করার অধিকার আসলেই আছে
কি না , তারা এমন কিছু দাবী করছেন কিনা
যা ন্যায় ও ইনসাফের বাইরে। এমনটা হলে
অনেক পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যা
তৈরীই হত না ।
কোরআনের প্রথম দু’ধরনের আয়াত সমূহ থেকে
এটা সুস্পষ্ট যে পিতা মাতার প্রতি
‘সদ্ব্যবহার বা ভালো ব্যবহার’ এর কথা বার
বার বলা হয়েছে এবং এখনে এটাও লক্ষনীয়
যে একই ভালো ব্যবহারের কথা আরো
অনেকের প্রতিও করতে বলা হয়েছে । এ
আয়াত গুলোতে বাবা মায়ের জন্য
বিশেষভাবে যা বলা হয়েছে তা হলো -
১. বিরক্তি সূচক কিছু (উফ ) বলো না এবং ধমক
দিও না
২. সম্মান সূচক নম্র কথা বলো
৩.বিনয়াবনত থেকো
৪. দোয়া কর
৫. কৃতজ্ঞতা আদায় করো
আমি আগেই উল্লেখ করেছি যে অনেকে
নিজে অহরহ নিজের বাবা -মার সাথে
ধমকের সুরে কথা বলেন,রেগে গেলে রূঢ়
আচরণ করেন; কিন্তু স্ত্রীকে নির্যাতন করেন
এই অজুহাতে যে সে তার শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীর
সঙ্গে যথেষ্ট ভালো আচরণ করছে না এবং
আমাদের সমাজে এমন আচরণকে অনেক
ক্ষেত্রেই ‘খোদা ভীরু ‘ আচরণ মনে করা হয়।
কারণ মনে করা হয় তারা এটা করছেন নিজের
বাবা মায়ের সাথে তার স্ত্রীর ভালো
ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য। অনেকে শুধু
স্ত্রীর সাথে খারাপ ব্যবহার করেই ক্ষান্ত
হন না বরং এই অজুহাতে নিজ শ্বশুড়-শাশুড়ীর
সাথেও খারাপ আচরণ করেন। উপরে
উল্লিখিত তিন ধরনের আয়াতের ভিত্তিতে
আমরা বলতে পারি এই ব্যক্তিটি তিন ভাবে
কোরআনের বিরুদ্ধ আচরণ করছেন -
১. কোরআন সবার আগে বলেছে নিজেকে
বাবা মায়ের সঙ্গে নম্র ভাষা ব্যবহার করতে
ও বিনয়াবনত থাকতে এবং তিনি তা করছেন
না ।
২. স্ত্রীর উপর নির্যাতন করছেন।
৩. নিজ শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীর সাথে সদ্ব্যবহার
করছেন না (অথচ স্ত্রীর কাছে চাইছেন সে
তার শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীর সাথে ভালো ব্যবহার
করুক)
“এবং পিতা – মাতা , আত্মীয় স্বজন , ইয়াতিম
, অভাব গ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী, দূর
প্রতিবেশী, সঙ্গী সাথী , পথচারী এবং
তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস দাসীদের প্রতি
সদ্ব্যবহার করবে।”[সূরা নিসা:৩৬]
এখানে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
লক্ষ্যণীয়- কোরআনে বাবা মায়ের প্রতি
সদ্বাবহারের আয়াত গুলো শুধু “ছেলের বাবা
মায়ের ” জন্য আসেনি। এ সবকটি আদেশই
ছেলে সন্তান ও মেয়ে সন্তান উভয়ের জন্যই
এসেছে । ছেলের বাবা-মায়েদের এসব
অধিকার রয়েছে আর মেয়ের বাবা-মায়ের
নেই এমনটা কোরআন বলেনি। কোরআন ছেলে
সন্তান ও মেয়ে সন্তান উভয়ের মা বাবাকেই
তাদের ত্যাগের স্বীকৃতি দিয়েছে,
“আমি মানুষকে তাদের পিতা মাতার
ব্যাপারে সদাচারণের নির্দেশ দিয়েছি ,
তার মা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে তাকে
গর্ভে ধারণ করেছে এবং….”[সুরা লুকমান: ১৪]
“আমি মানুষকে আদেশ দিয়েছি সে যেন
নিজের পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহার
করে ; কেননা তার মা তাকে অত্যন্ত কষ্ট
করে গর্ভে ধারণ করেছে এবং অতি কষ্টে
প্রসব করেছে …”। [সূরা আহকাফ: ১৫]
কিন্তু আমাদের নাটক, সিনেমা, এমনকি
অধিকাংশ ইসলামী সাহিত্যও মেয়ের বাবা-
মায়েদের ত্যাগকে উপেক্ষা করে যাচ্ছে ।
আমি আশা করব যারা ইসলামী সাহিত্য
লিখছেন, ইসলামিক আলোচনা করছেন, বা
গল্প -নাটক লিখছেন তারা যখনি পিতা-
মাতার হক বিষয়টি আনবেন তখন অবশ্য অবশ্যই
পরিপূর্ণ ছবিটি দিবেন যাতে করে মেয়ের
বাবা-মায়েদের ত্যাগটি আড়ালে পড়ে না
যায় আর কারো মনে মেয়ের মা-বাবা হবার
প্রতি অনীহা তৈরী না হয়।
লিখেছেন: কানিজ ফাতিমা
পিতা-মাতা।

আমি এমন অনেক নাটক, সিনেমা দেখেছি
যাতে দেখানো হয়েছে ছেলের বাবা বা
মাকে ছেলের বউ সহ্য করতে পারছে না ৷
কিন্তু এমন কোনো নাটক, সিনেমা দেখিনি
যাতে দেখানো হয়েছে মেয়ের বাবা -মা
বৃদ্ধ বয়সে কোথাও যাবার জায়গা পাচ্ছেন
না ; মেয়েটি চেষ্টা করছে যতটা সম্ভব
সাহায্য করার, কিন্তু মেয়েটির স্বামী বা
শ্বশুর বাড়ীর লোক সহ্য করতে পারছে না ৷
আশেপাশের লোক বলছে মেয়ের বাড়ী
থাকবেন, কেমন দেখায়? কিন্তু এই মেয়েটির
জন্যও তার বাবা -মায়ের অনেক ত্যাগ ছিল,
এই মেয়েটির জন্যও তারা রাত জেগেছেন ,
ভেজা বিছানায় শুয়েছেন ৷ উপরন্তু তার
নিরাপত্তার জন্য বাড়তি উদ্বেগ সহ্য
করেছেন ; মেয়েটির বিয়ে দেবার সময় ছেলে
পক্ষের যৌক্তিক-অযৌক্তিক সব দাবী মেনে
নিয়েছেন, জামাই বা জামাই বাড়ীর কেউ
আসলে টাকা থাকুক বা নাই থাকুক বাজারের
বড় মাছ কিনেছেন ; কোমরে ব্যাথা নিয়েও
হাসি মুখে জামাইয়ের জন্য রান্না করেছেন ৷
এত কিছুর পরেও কেন এই বাবা-মায়ের ত্যাগ ,
কষ্ট কোথাও মূল্যায়ণ পায় না? শুধু ‘মেয়ের
বাবা-মা’ হওয়ার কারণে ?
আমি যখনি কোনো নাটক বা সিনেমায়
সন্তানের জন্য মায়ের ত্যাগ দেখেছি
আশ্চর্যজনক ভাবে সন্তানটি সর্বদাই ছেলে
সন্তান ছিল , একবারের জন্যও আমি মেয়ে
সন্তান দেখিনি। কারনটা কি হতে পারে? -
আমি অনেকবার ভাবার চেষ্টা করেছি।
মায়েরা কি ছেলেদের জন্য বেশী ত্যাগ
করে যা ছেলেদের মনে রাখা উচিত?
মায়েদের ছেলে সন্তানের প্রতি আকর্ষণটা
একটু বেশী হতে পারে (অনেক
মনোবিজ্ঞানী মনে করেন) কিন্তু ত্যাগ তো
তারা মেয়েদের জন্য একটুও কম করেন না ।
তাহলে কেন মেয়ের মায়েদের ত্যাগটা
সবসময় অনুচ্চারিতই থেকে যায়? আবার
ভাবার চেষ্টা করেছি মেয়েরা হয়তো
এমনিতেই বাবা মায়ের প্রতি যত্নশীল ,
ছেলেদের বরঞ্চ মনে করিয়ে দিতে হয় বাবা-
মা তার জন্য কী কষ্ট করেছে । এটা হয়ত
কোনো কোনো ক্ষেত্রে সত্যি হতে পারে
কিন্তু যদি আমরা ছেলেদের জন্য বাবা মা
কতটা কষ্ট করেছেন শুধু তাই পুনঃ পুনঃ
উচ্চারণ করতে থাকি তবে কি মেয়ের বাবা-
মায়েদের ত্যাগ ঢাকা পড়ে যাচ্ছে না?
এ তো গেলো এ দুনিয়ার কথা ৷ মৃত্যু পরবর্তী
দুনিয়ার ব্যাপারেও ছেলের বাবা মায়ের
সুবিধা মেয়ের বাবা মায়েদের থেকে বেশী
দেখানো হয় ৷ ‘মায়ের পায়ের নীচে
সন্তানের বেহেশত’ কথাটা শুনলেই কেন যেন
আমাদের মনে এক মা আর তার ছেলে এমন
একটা ছবি ভেসে ওঠে ৷ একবার এক
মফঃস্বলের এক মাওলানা যিনি ওই এলাকার
মাদ্রাসার শিক্ষক এবং নিয়মিত ঈদের
জামাতে ইমামতি করেন ও খুতবা দেন
(অর্থাৎ একজন ধর্মীয় শিক্ষক এবং নেতা )
আমাকে বলছিলেন, “মায়ের পায়ের নীচে
সন্তানের বেহেশত এবং বিয়ের পরে
মেয়েদের জন্য মা-বাবার স্থান নিয়ে নেয়
তার শ্বশুড়- শ্বাশুড়ী ৷” তিনি আমাকে যা
বোঝাতে চাইছিলেন তার অর্থ দাঁড়ায়
ছেলেদের বেহেশত সর্বদাই মায়ের পায়ের
নীচে থাকে কিন্তু মেয়েদের বেহেশত
বিয়ের সময় তার মায়ের পায়ের নীচ থেকে
সরে গিয়ে স্থান নেয় শ্বাশুড়ীর পায়ের নীচে
৷
অর্থাৎ বিয়ের সময় মেয়ের মায়েরা বেহেশত
হারান আর ছেলের মায়েরা বাড়তি একটি
লাভ করেন ৷ এই সুত্র অনুযায়ী কোনো মহিলার
যদি দুটি ছেলে থাকে তবে তিনি চারটি
বেহেশতের উপরে দাড়িয়ে থাকেন কিন্তু
যার দুটি মেয়ে তিনি মেয়েদের বিয়ে দেবার
সাথে সাথে বেহেশতশূণ্য হয়ে যান ৷ এই যদি
হয় অবস্থা তাহলে কোন নারী চাইবে মেয়ের
মা হতে? কে চাইবে কষ্ট করে মেয়ে পেটে
ধরে, তার জন্ম দিয়ে, তাকে বড় করার সব কষ্ট
সয়েও বেহেশতশূণ্য হতে? তার থেকে ভালো
ছেলের মা হওয়া – ছেলের জন্য কষ্ট করার
পুরস্কার হিসাবে পার্মানেন্ট একটা বেহেশত
তো থাকবেই তার উপরে বোনাস হিসাবে
মেয়ের মায়েরটাও পাওয়া যাবে। এভাবে কি
আমরা সবাই মিলে এমন একটা সামাজিক চাপ
তৈরী করছি না যাতে সবার মধ্যে ছেলে
সন্তান পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা বাড়ে, আর মেয়ে
সন্তানের আকাঙ্ক্ষা কমে? আর এ থেকে
তৈরী হয় ভারসাম্যহীনতা আর পরিনামে জন্ম
নেয় নানা রকম পারিবারিক ও সামাজিক
সমস্যা ।
আমরা জানি রাসুল (সঃ) এর সময় মক্কার
লোকেরা মেয়ে শিশু সন্তানদের জীবন্ত কবর
দিত; কেন? যে বাবা এ কাজটি করত তার কি
একটুও কষ্ট হতনা ? অবশ্যই হত। ইতিহাস সাক্ষী
যে একাজ করার সময় তাদের বুক ফেটে যেত;
চোখের পানিতে মুখ ভেসে যেত; তারপরও
কেন তারা এটা করত? কারণ সমাজের চাপ।
সমাজ এমন এক পরিবেশ তৈরী করে
রেখেছিল যাতে ছেলের পিতা-মাতা নানা
ভাবে সুবিধা ভোগ করত আর মেয়ের পিতা-
মাতাদের পড়তে হত অসুবিধা জনক অবস্থানে
– কাজেই কেউই মেয়ে সন্তান চাইতো না ।
আমাদের এই আধুনিক যুগেও যদি আমরা নাটক
, সিনেমা , সাহিত্য সর্বত্র ছেলের বাবা-
মায়েদের ত্যাগ কে হাইলাইট করি আর
মেয়ের বাবা-মাদের ত্যাগ কে অবহেলা (over
look) করি তবে আমরাও এমন এক পরিবেশ
তৈরী করছি যাতে সবার মধ্যে ছেলের
বাবা- মা হওয়ার ইচ্ছা বাড়ে, আর মেয়ের
বাবা- মা হওয়ার ইচ্ছা অনুৎসাহিত হয়। আমরা
কি এভাবে মেয়ে ফীটাস এবরশন কে
উত্সাহিত করছি না?
আমি একবার খুব নামকরা একজন ধর্মীয়
বক্তার ওয়াজ শুনছিলাম ‘পিতা মাতার প্রতি
সন্তানের কর্তব্য’ এর উপর । বক্তব্যের শব্দ
চয়ন এবং ধরন (Tone) এমন ছিল যে ওখানে
উপস্থিত সব পুরুষের মনে হলো বাবা মায়ের
প্রতি দায়িত্ব পালনে তারা যথেষ্ট
মনোযোগী হতে পারছেন না এবং এর সম্ভাব্য
কারণ বা বাধা হলো স্ত্রী । অপরপক্ষে
উপস্থিত প্রতিটা নারীর মনে হলো যে শ্বশুড়-
শ্বাশুড়ীর প্রতি দায়িত্ব পালনে তার ভূমিকা
সমালোচিত হলো । এমন ব্যাখ্যা নিঃসন্দেহে
স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে ভালো প্রভাব
ফেলবে না । শুধু তাই না, এধরনের ব্যাখ্যা
যেহেতু ছেলের মায়েদের সুবিধা জনক
স্থানে রাখছে সেহেতু ওই ওয়াজে উপস্থিত
সব নারীর মনেই (আমার নিজেরও ) ছেলের
মা হওয়ার ইচ্ছা তৈরী হয়েছে , মেয়ের মা
হতে তেমন কারোই সেদিন ইচ্ছা হয়নি ।
ওয়াজগুলো কি এমন হতে পারে না যা শুনে
প্রত্যেকটা পুরুষ ভাবতে পারে, সন্তান
হিসাবে তার বাবা মায়ের সাথে সে নিজে
ভালো আচরণ করছে কিনা? এবং নিজ
স্ত্রীকে তার বাবা মায়ের প্রতি দায়িত্ব
পালনে কোনো প্রকার অসহযোগিতা করছে
কি না? একই ভাবে প্রত্যেকটি নারীও
ভাবতে পারে সন্তান হিসাবে তার বাবা
মায়ের সাথে সে ভালো আচরণ করছে কিনা?
এবং নিজ স্বামীকেও তার বাবা মায়ের
প্রতি দায়িত্ব পালনে কোনো প্রকার
অসহযোগিতা করছে কিনা ?
আমি এমন অনেক ইসলামিক ছেলে দেখেছি
যারা নিজেরা অহরহই নিজের বাবা মাকে
ধমকের সুরে কথা বলেন ,রেগে গেলে রূঢ়
আচরণ করেন কিন্তু স্ত্রীকে নির্যাতন করেন
এই অজুহাতে যে সে তার শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীর
সঙ্গে যথেষ্ট ভালো আচরণ করেনা কেন;
কাজের সহযোগীতার জন্য লোক থাকার
পরেও অফিস থেকে ফিরে এসে ভাত রান্না
করে দেয় না কেন । এরকম অদ্ভুত আচরণের
কারণ সম্ভবতঃ আমাদের চার পাশের ‘পিতা
মাতার প্রতি কর্তব্যের’- এই ধরনের পুরুষ
কেন্দ্রিক ব্যাখ্যা। কারণ এইধরনের ব্যাখ্যা
এমন একটা ধারণা তৈরী করে যে পুরুষদের
অধিকার রয়েছে তার স্ত্রী কে নির্যাতন
করার যদি তার মনে হয় স্ত্রী তার চাহিদা
মত তার বাবা মায়ের সাথে ব্যবহার করছে
না ।
একবার ইউনিভার্সিটির কিছু ছাত্র আমার
অফিসে আসলো ,” ম্যাডাম , মা-বাবা বললে
নাকি স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দিতে হবে ? ”
আমি ওদেরকে ইসলাম পড়াতাম না কিন্তু
ওদের মনে কোনো কারণে এই বিশ্বাস
হয়েছে যে আমি হয়ত ওদের যুক্তিপূর্ণ কোনো
সমাধান দিতে পারব । আমি জানতে চাইলাম-
“তোমাদের এমন ধারণার কারণ কি?” ওরা বলল
আমারই এক কলিগ, যিনি ছাত্রদের মাঝে
মাঝেই ইসলাম সম্পর্কে সচেতন করেন এবং এ
কারণে ছাত্রদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়ও,
তিনি আজ ক্লাসে এ কথা বলেছেন । তিনি
বলেছেন,” ইসলামে বাবা মায়ের অধিকার এত
বেশী যে তারা যদি বলে স্ত্রীকে তালাক
দিতে হবে তবে ছেলেদের দায়িত্ব হলো
স্ত্রীকে তালাক দেয়া”। আমার কলিগের এই
কথার প্রতিবাদ ছাত্ররা করতে পারে নি
ঠিকই কিন্তু সাধারণ জ্ঞানে এটা ওদের
কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। আরো সহজ
ভাবে বললে বলতে হয় এটা তাদের কাছে
অন্যায় মনে হয়েছে এবং ওদের মনে প্রশ্ন
তৈরী হয়েছে ইসলাম এমন অন্যায়কে
কিভাবে উত্সাহিত করতে পারে বা কিভাবে
ইসলাম বাবা মাকে জালিম হবার ছাড়পত্র
দিতে পারে?
আমি ওদেরকে বললাম -
কোরআনে বাবা-মা সম্পর্কে তিন ধরনের
আয়াত এসেছে -
১. শুধু বাবা মার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব
সম্পর্কিত আয়াত (কি করতে হবে)
২. বাবা মার অধিকার ও অন্যান্যদের
অধিকার (একসঙ্গে)সম্পর্কিত আয়াত
৩. বাবা-মার অধিকারের সীমা সম্পর্কিত
আয়াত (কোন কোন ক্ষেত্রে বাবা মায়ের
কোনো অধিকার নেই)
প্রথম ধরনের আয়াত গুলোর ( শুধু বাবা মার
প্রতি সন্তানের দায়িত্ব সম্পর্কিত) মধ্যে
পড়ে সূরা বনী ইসরাঈলের ২৩ ও ২৪ নং আয়াত,
সুরা লুকমানের ১৪ নং আয়াত ও সুরা
আহ্কাফের ১৫ নং আয়াত।
” তোমার প্রতিপালক আদেশ করছেন, তোমরা
তাকে ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করনা এবং
তোমরা তোমাদের পিতামাতার সাথে
সদ্ব্যবহার করো ; তাদের একজন কিংবা
উভয়ই যদি তোমাদের জীবদ্দশায় বার্ধক্যে
উপনীত হয়, তাহলে তাদের সাথে বিরক্তি
সূচক কিছু (উফ ) বলো না এবং ধমক দিওনা,
তাদের সাথে সম্মান সূচক নম্র কথা বলো।
অনুকম্পায় তাদের প্রতি বিনয়াবনত থেকো,
এবং বলো, হে আমার মালিক তাদের প্রতি
ঠিক সেভাবে দয়া করো যেভাবে শৈশবে
তারা আমাকে লালন পালন করেছিলেন।
” [বনি ইসরাইল ২৩, ২৪]
“আমি মানুষকে তাদের পিতা মাতার
ব্যাপারে সদাচারণের নির্দেশ দিয়েছি ,
তার মা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে তাকে
গর্ভে ধারণ করেছে এবং দুই বছর পর সেই
সন্তান বুকের দুধ খাওয়া ছেড়েছে , সুতরাং
আমার শোকর আদায় করো এবং পিতা মাতার
কৃতজ্ঞতা আদায় করো ; তোমাদেরকে আমার
কাছেই ফিরে আসতে হবে ।” [সুরা লুকমান ১৪]
আমি মানুষকে আদেশ দিয়েছি সে যেন
নিজের পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহার
করে ; কেন না তার মা তাকে অত্যন্ত কষ্ট
করে গর্ভে ধারণ করেছে এবং অতি কষ্টে
প্রসব করেছে এবং এভাবে গর্ভে ধারণ করতে
ও স্তন্য পান করানোর সময় তিরিশটি মাস;
অতঃপর সে তার পূর্ণ শক্তি প্রাপ্ত হয় এবং
৪০ বছরে উপনীত হয় ; তখন সে বলে , হে আমার
মালিক , এবার তুমি আমাকে সমর্থ দাও
……” [আহকাফ: ১৫]
দ্বিতীয় ধরনের আয়াতে অন্যান্যদের
অধিকারের সাথে সাথে পিতামাতার
অধিকারের কথাও বলা হয়েছে -
“তুমি বল, আসো তোমাদের প্রতিপালক
তোমাদের জন্য যা নিষিদ্ধ করেছেন তা বলে
দেই , তোমরা আল্লাহর সাথে কোনো শরীক
করবেনা , পিতা মাতার সঙ্গে ভালো ব্যবহার
করবে, দারিদ্রের আশংকায় কখনও তোমরা
তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না ……..
”[সূরা আনআম: ১৫১]
” তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে ও কোনো
কিছুকে তার সাথে শরীক করবে না এবং
পিতা – মাতা , আত্মীয় স্বজন , ইয়াতিম ,
অভাবগ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী,
সঙ্গী সাথী , পথচারী এবং তোমাদের
অধিকারভুক্ত দাস দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার
করবে। ” [সূরা নিসা: ৩৬]
আর তৃতীয় ধরনের আয়াতে পিতা মাতার
অধিকারের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে –
বলা হয়েছে কোথায় কোথায় বাবা মায়ের
অধিকার নেই।
প্রথমতঃ
পিতা মাতা আল্লাহর সাথে কোনো কিছু
শরীক করতে বললে তাদের আনুগত্য করা যাবে
না। সুরা লোকমানে আল্লাহ বাবা মায়ের
প্রতি ‘সদ্ব্যবহার’ কি তা ব্যাখা করেছেন –
“আমি মানুষকে তাদের পিতা মাতার
ব্যাপারে সদাচারণের নির্দেশ দিয়েছি,তার
মা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে তাকে গর্ভে
ধারণ করেছে এবং দুই বছর পর সেই সন্তান
বুকের দুধ খাওয়া ছেড়েছে , সুতরাং আমার
শোকর আদায় করো এবং পিতা মাতার
কৃতজ্ঞতা আদায় করো ; তোমাদেরকে আমার
কাছেই ফিরে আসতে হবে” এর পরপরই বলছেন
“সদ্ব্যবহার” মানে “আনুগত্য” না। আল্লাহ
বলছেন, ” তোমার পিতা-মাতা যদি তোমাকে
পীড়া পীড়ি করে যে তুমি আমার সাথে
শিরক করবে, যে ব্যাপারে তোমাদের কোনো
কোনো জ্ঞানই নেই , তাহলে তুমি তাদের
কথা মানবে না,তবে দুনিয়ার জীবনে তাদের
সাথে ভালো ব্যবহার করবে …..”
দ্বিতীয়তঃ
অন্যায় কাজে সন্তানের সমর্থন পাবার
অধিকার পিতা মাতার নেই,সে অন্যায় যে
কারো ক্ষেত্রেই হোক না কেন।
“হে ঈমানদারগন, তোমরা সর্বদাই ইনসাফের
ওপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থেকো এবং
আল্লাহর জন্য সত্যের সাক্ষী থেকো যদি তা
তোমার নিজের, নিজ পিতামাতা ও নিকট
আত্মীয়দের বিপরীতে যায় …তবুও।” – [সূরা
নিসা: ১৩৫]
অর্থাৎ পিতা-মাতা অন্যায় করলে বা অন্যায়
দাবী করলে আল্লাহ নির্দেশ দিচ্ছেন তার
বিরোধিতা করার এবং ন্যায়ের পক্ষে
থাকার ; তবে মনে রাখতে হবে তাদের সঙ্গে
ব্যবহার ভালো করতে হবে এবং ধমক দেয়া
যাবে না ।
এভাবে আমার ছাত্র ছাত্রীরা জেনে গেল
তাদের কে পিতামাতার অধিকার সম্পর্কে
খুবই খন্ডিত ধারণা দেয়া হয়েছিল। যার ফলে
এমন এক ধারণার তৈরী হয়েছিল যা ইসলামের
সঠিক ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত। এরূপ খন্ডিত
ধারণার ফল আমাদের সমাজে ভালো হয়নি ,
এটি খুলে দিয়েছে অনেক অবিচারের দরজা
– এটি ব্যবহৃত হয়েছে ছেলে বা ছেলে
পক্ষের সুবিধা বৃদ্ধির আর মেয়ে ও মেয়ে
পক্ষের সুবিধা বঞ্চিত করার হাতিয়ার
হিসাবে ।
কেন এমন খন্ডিত ধারণা সৃষ্টি হলো ? কারণ
সম্ভবতঃ আমরা যেসব ইসলামিক আলোচনা বা
ওয়াজ শুনি এবং যেসব ইসলামিক সাহিত্য
পড়ি তাতে শুধুমাত্র প্রথম ধরনের আয়াত
গুলোকেই তুলে ধরা হয় , অন্য ধরন দুটি ততটা
গুরুত্ব পায়না। বিশেষ করে সুরা নিসার ১৩৫
নং আয়াতটি সম্পূর্ণ অনুচ্চারিতই থেকে যায় ,
“হে ঈমানদারগন, তোমরা সর্বদাই ইনসাফের
ওপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থেকো এবং
আল্লাহর জন্য সত্যের সাক্ষী থেকো যদি তা
তোমার নিজের, নিজ পিতামাতা ও নিকট
আত্মীয়দের বিপরীতে যায় তবুও “-
ফলে সন্তানরা তো বটেই বাবা মায়েরাও
ভেবে বসেন তাদের অধিকার অসীম; এমনকি
তারা সন্তানকে অন্যায় আদেশ করারও
অধিকার রাখেন। আমাদের সামাজিক
পারিপার্শ্বিকতা এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ছেলে
সন্তানদের পিতামাতাকে করে তোলে
অনিয়ন্ত্রিত শক্তির ধারক। অথচ এই আয়াতটি
যদি পিতা-মাতার অধিকারের সীমা হিসাবে
উচ্চারিত হত তবে বাবা মায়েরাও সন্তানের
কাছে কিছু দাবী করার আগে ভাবতেন
তাদের এ দাবী করার অধিকার আসলেই আছে
কি না , তারা এমন কিছু দাবী করছেন কিনা
যা ন্যায় ও ইনসাফের বাইরে। এমনটা হলে
অনেক পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যা
তৈরীই হত না ।
কোরআনের প্রথম দু’ধরনের আয়াত সমূহ থেকে
এটা সুস্পষ্ট যে পিতা মাতার প্রতি
‘সদ্ব্যবহার বা ভালো ব্যবহার’ এর কথা বার
বার বলা হয়েছে এবং এখনে এটাও লক্ষনীয়
যে একই ভালো ব্যবহারের কথা আরো
অনেকের প্রতিও করতে বলা হয়েছে । এ
আয়াত গুলোতে বাবা মায়ের জন্য
বিশেষভাবে যা বলা হয়েছে তা হলো -
১. বিরক্তি সূচক কিছু (উফ ) বলো না এবং ধমক
দিও না
২. সম্মান সূচক নম্র কথা বলো
৩.বিনয়াবনত থেকো
৪. দোয়া কর
৫. কৃতজ্ঞতা আদায় করো
আমি আগেই উল্লেখ করেছি যে অনেকে
নিজে অহরহ নিজের বাবা -মার সাথে
ধমকের সুরে কথা বলেন,রেগে গেলে রূঢ়
আচরণ করেন; কিন্তু স্ত্রীকে নির্যাতন করেন
এই অজুহাতে যে সে তার শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীর
সঙ্গে যথেষ্ট ভালো আচরণ করছে না এবং
আমাদের সমাজে এমন আচরণকে অনেক
ক্ষেত্রেই ‘খোদা ভীরু ‘ আচরণ মনে করা হয়।
কারণ মনে করা হয় তারা এটা করছেন নিজের
বাবা মায়ের সাথে তার স্ত্রীর ভালো
ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য। অনেকে শুধু
স্ত্রীর সাথে খারাপ ব্যবহার করেই ক্ষান্ত
হন না বরং এই অজুহাতে নিজ শ্বশুড়-শাশুড়ীর
সাথেও খারাপ আচরণ করেন। উপরে
উল্লিখিত তিন ধরনের আয়াতের ভিত্তিতে
আমরা বলতে পারি এই ব্যক্তিটি তিন ভাবে
কোরআনের বিরুদ্ধ আচরণ করছেন -
১. কোরআন সবার আগে বলেছে নিজেকে
বাবা মায়ের সঙ্গে নম্র ভাষা ব্যবহার করতে
ও বিনয়াবনত থাকতে এবং তিনি তা করছেন
না ।
২. স্ত্রীর উপর নির্যাতন করছেন।
৩. নিজ শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীর সাথে সদ্ব্যবহার
করছেন না (অথচ স্ত্রীর কাছে চাইছেন সে
তার শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীর সাথে ভালো ব্যবহার
করুক)
“এবং পিতা – মাতা , আত্মীয় স্বজন , ইয়াতিম
, অভাব গ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী, দূর
প্রতিবেশী, সঙ্গী সাথী , পথচারী এবং
তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস দাসীদের প্রতি
সদ্ব্যবহার করবে।”[সূরা নিসা:৩৬]
এখানে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
লক্ষ্যণীয়- কোরআনে বাবা মায়ের প্রতি
সদ্বাবহারের আয়াত গুলো শুধু “ছেলের বাবা
মায়ের ” জন্য আসেনি। এ সবকটি আদেশই
ছেলে সন্তান ও মেয়ে সন্তান উভয়ের জন্যই
এসেছে । ছেলের বাবা-মায়েদের এসব
অধিকার রয়েছে আর মেয়ের বাবা-মায়ের
নেই এমনটা কোরআন বলেনি। কোরআন ছেলে
সন্তান ও মেয়ে সন্তান উভয়ের মা বাবাকেই
তাদের ত্যাগের স্বীকৃতি দিয়েছে,
“আমি মানুষকে তাদের পিতা মাতার
ব্যাপারে সদাচারণের নির্দেশ দিয়েছি ,
তার মা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে তাকে
গর্ভে ধারণ করেছে এবং….”[সুরা লুকমান: ১৪]
“আমি মানুষকে আদেশ দিয়েছি সে যেন
নিজের পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহার
করে ; কেননা তার মা তাকে অত্যন্ত কষ্ট
করে গর্ভে ধারণ করেছে এবং অতি কষ্টে
প্রসব করেছে …”। [সূরা আহকাফ: ১৫]
কিন্তু আমাদের নাটক, সিনেমা, এমনকি
অধিকাংশ ইসলামী সাহিত্যও মেয়ের বাবা-
মায়েদের ত্যাগকে উপেক্ষা করে যাচ্ছে ।
আমি আশা করব যারা ইসলামী সাহিত্য
লিখছেন, ইসলামিক আলোচনা করছেন, বা
গল্প -নাটক লিখছেন তারা যখনি পিতা-
মাতার হক বিষয়টি আনবেন তখন অবশ্য অবশ্যই
পরিপূর্ণ ছবিটি দিবেন যাতে করে মেয়ের
বাবা-মায়েদের ত্যাগটি আড়ালে পড়ে না
যায় আর কারো মনে মেয়ের মা-বাবা হবার
প্রতি অনীহা তৈরী না হয়।
লিখেছেন: কানিজ ফাতিমা
Comments
Post a Comment