বাবা হওয়া :: নুমান আলী খান।

বাবা হওয়া :: নুমান আলী খান।

image

নূমান তো নূমানই। তিনি সেইসব বিরল
লোকদের একজন যার বক্তব্য শুনলে কট্টর
নাস্তিকও ইসলামের প্রতি নমনীয় ধারণা
পোষণ করে। লোকটার মধ্যে কোন জঙ্গীবাদ
নেই,হামবড়া ভাব নেই, নারীবিদ্বেষ নেই।
আধুনিক তরুণতরুণীদের ইসলামের পথে ডাকতে
নূমানের বিকল্প খুঁজে পাওয়া ভার।
তারি একটা লেকচার নিয়ে আমার এই পোস্ট।
যারা বাবা হয়েছেন বা হবেন, তারা একটু
কষ্ট করে পড়বেন কি ?
তিনি কথা শুরু করলেন ভাঙা বাংলায় “কেমুন
আসেন?” বলে তারপর…..
১। সন্তান দ্বীন শিখলো কীনা – এই নিয়ে
উদ্বেগ খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয় এবং
এটাও দ্বীনেরই অন্তর্ভুক্ত। নুহ (আ.) থেকে
মুহাম্মদ (সা.) কেউই এই উদ্বেগ থেকে মুক্ত
ছিলেননা। মুহাম্মদ (সা.) তার মেয়ে
ফাতিমাকে সরাসরি বলেছিলেন,”
আল্লাহকে ভয় করো। তোমার কোনো
উপকারে (পরকালে) আসার ক্ষমতা কিন্তু
আমার নেই”।
২। সন্তানদের বিপথগামীতা একটা
চ্যালেনজ, যা নুহ, ইয়াকুব (আ.) প্রমূখ প্রখ্যাত
নবীকেও মোকাবেলা করতে হয়েছে; নুহের
(আ.) ছেলে তো তওবা না করেই মারা গেল।
সুতরাং এ চ্যালেনজ থেকে আমরা ছাড়া
পাবো – এমন মনে করার কোন কারণ নেই।
৩। আমরা যারা বিশেষতঃ মেয়ের বাবা,
তারা অবশ্যই গর্বিত যে স্বয়ং রাসুল (সা.)
ছিলেন মেয়ের বাবা, এবং এব্যাপারে
তিনিই আমাদের রোলমডেল। আমরা ওনারই
উত্তরসুরী।
৪। অথচ এখন উপমহাদেশের মুসলিম সমাজের
অবস্থাটা দেখুন। পোয়াতি বউ হাসপাতালে,
বাচ্চা হতে গিয়ে জান যায় যায়। ওদিকে
আত্মীয়েরা টেক্সট মেসেজ পাঠাচ্ছে
হাসপাতালে স্বামী বেচারার কাছে, “কী
খবর ? ভালো খবর তো?” এখানে “ভালো খবর”
মানে হলো “ছেলে হয়েছে তো?” বেচারা
মেয়ের বাপ যখন রিপ্লাই না দিয়ে চুপ থাকে,
তখন আবার মেসেজ আসে,”আচ্ছা, দুঃখ
করোনা, নেক্সট টাইম ছেলে হবে
ইনশাল্লাহ।”
৫। সন্তান পালন সব যুগেই ছিলো কঠিন কাজ।
কিন্তু হাল যামানায় বিশ্বায়ন,
বিনোদনবিলাস ও উগ্র ভোগবাদী পণ্যমনষ্ক
আচরণ (কনয্যুমারিযম) বিশেষ একটি
চ্যালেনজ ছঁুড়ে দিয়েছে যা আমাদের বাপ-
দাদারা কখোনো মোকাবেলা করেনি।
“বাবা, আমার চাই আইপড, প্লে স্টেশন,
নিনটেনডো… আস্ত গাড়িই চাই একটা.।”
বাচ্চারা এসব শিখলো কোথায় ? তারা কি
এসব ইউসুফ (আ.) নবীর মতো স্বপ্ন দেখে
জেনেছে – “বাবা স্বপ্নে দেখছি ১১ টা
অ্যাপেল আইপড আমাকে সেজদা করছে..?”
না, তারা শিখেছে অনিয়ন্ত্রিত মিডিয়া,
টিভি, ইনটারনেট আর তাদের বন্ধুদের কাছ
থেকে।
৬। সাফল্যের সংজ্ঞা এখন পাল্টে গিয়েছে।
লেখাপড়ার আদি উদ্দেশ্য ছিলো মানুষের
কল্যাণে নিয়োজিত করার জন্য নিজেকে
সক্ষম করে গড়ে তোলা। কিন্তু মুসলিম
সমাজে বাচ্চার লেখাপড়ার পেছনে বাবা-
মা’র আসল নিয়ত হয়ে গেছে বাচ্চাকে
ভবিষ্যতের টাকা তৈরীর মেশিন বানিয়ে
তোলা। তাই সন্তান ডাক্তার হলে বাবা মা’র
মুখে হাসি আর ধরেনা। কিন্তু ডাক্তার
সন্তান যখন বলে, “বাবা, আমি ডক্টরস উইদাউট
বর্ডারসের সাথে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে
বিনে বেতনে একবছর সোমালিয়ার শিশুদের
জন্য কাজ করতে চাই” — অমনি বাপমায়ের
মুখটা কালো হয়ে যায়।
৭। যে সাবজেক্ট পড়লে টাকা আসেনা, সেটা
মুসলিম বাবামা’রা বাচ্চাকে পড়তেই দিতে
চায়না। স্টিভেন স্পীলবার্গ যদি
পাকিস্তানে জন্ম নিতেন তাহলে ঐ বেচারা
কোনদিনও চলচিত্রকার হতে পারতেননা, তার
বাবামা বলতেন “ফিল্ম বানানো ?? আরে ছ্যা
ছ্যা, ঐ কাজ কেউ করে ? বরং তুই ডাক্তারি
পড়।”
৮। মুসলিম বাবামা কে তাই আগে
নিজেদেরকে সংশোধন করতে হবে। যে
স্বামী-স্ত্রী নিয়মিত নিজেদের মাঝে
পার্থিব ক্ষণস্থায়ীত্ব, মানুষসেবার মর্যাদা,
মানুষের প্রকৃত মূল্য, সামাজিক দ্বায়িত্ববোধ
— এইসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন, তাদের
বাচ্চারা শুনতে শুনতে ছোট থেকেই
লেখাপড়ার আসল উদ্দেশ্য এবং সাফল্যের
সঠিক সংজ্ঞাটা ধরতে পারে।
৯। কিন্তু সে জন্যে, বিশেষ করে বাবাকে,
অবশ্যই সন্তানের পেছনে সময় দিতে হবে –
আপনি যত বড় ব্যস্ত মানুষই হোন না কেন।
তাদের কথা শুনুন এবং তাদের সাথে কথা
বলুন, তাদের জীবনের অন্তরঙ্গ সাথী হয়ে
যান। মনে রাখবেন, মা হওয়াটা মহিলাদের
স্বভাবজাত, কিন্তু বাবা হওয়াটা পুরুষদের
স্বভাবজাত নয় – পিতৃত্ব জিনিসটা প্রশিক্ষণ
নিয়ে অর্জন করার বিষয়। একাজটা যদি না
পারেন, তবে বাচ্চা যখন টীন এজার হবে,
সেদিন দেখবেন সে আপনার কাছ থেকে
বহুদূরে এমনকি হয়তো বাড়ি ছেড়েই বহুদূরে
চলে গিয়েছে। তখন আপনি ছুটবেন মসজিদে,
ইমাম সাহেবের কাছে কান্নাকাটি করে
বলবেন,” হুজুর, একটা দোয়া শিখিয়ে দেন,
ছেলেটা যেন ফিরে আসে…।”
১০। সন্তানকে দ্বীন শেখাতেই হবে, এ
দায়িত্ব আপনার – কোনভাবেই আপনি তা
এড়াতে পারেননা। কোরআন খুলে দেখুন, নূহ
থেকে ইয়াকুব, ইবরাহীম থেকে লোকমান
সবাই প্রায় একই ভাষায়, একই মূল বক্তব্যে
সন্তানকে দ্বীনের নসিহত করেছেন। তাদের
কারো সন্তান ছিলো লক্ষ্মী, করো বা দুষ্ট,
কিন্তু তারা (বাবারা) কখোনই নসিহত থেকে
বিরত থাকেননি। আপনিও এ দায় এড়াতে
পারবেননা।
১১। ইসলামী শিক্ষায় একটা বিপ্লব আসা
দরকার। লোকে ইসলাম শিক্ষা বলতে বোঝে
ইয়া বিশাল কোন আলেম হওয়া, যিনি কিনা
আকীদা ও ফিকহে পারদর্শী। কিন্তু আমদের
দৈনন্দিন জীবনে যা আসলে বেশী দরকার তা
হলো — স্বামীদের জন্য উপদেশ, স্ত্রীদের
জন্য উপদেশ, দাম্পত্য কাউনসেলিং,
ছেলেপিলে মানুষ করা বিষয়ে উপদেশ, আদর্শ
পুত্র বা কন্যা কী করে হতে পারি – এইসব
বিষয়ে কারিকুলাম থাকা দরকার। এগুলোই
তো হলো সত্যিকারের, প্রাকটিকাল ইসলামী
শিক্ষা।
১২। শিক্ষাতো এই নয় যে আপনি সি প্লাস
প্লাস পারেন বা আপনার এম বি এ আছে।
ওটাতো টাকা বানানোর হাতিয়ার। যে
শিক্ষা আপনাকে সত্যিকারের মানুষ
বানাতে পারে সেটাই খাঁটি ইসলামী
শিক্ষা। এবং এই বৈপ্লবিক শিক্ষার মূলে
রয়েছে আদব বা শিষ্টাচার বা ম্যানার্স।
১৩। আমি বাবাদের সাবধান করে দিয়ে
বলছি, ভালোভাবে আত্মসমালোচনা করে
দেখুন আপনি মুসলিম বাবা হতে পেরেছেন
কীনা। বাচ্চাকে সাথে নিয়ে নিজে
কোরআন পড়ুন, কারী সাহেব ধার করে এনে
কোরআন শোনাবেননা। অন্ততঃ দিনে বিশ
মিনিট, মাগরিবের পর – পরিবারে সবাইকে
নিয়ে।
১৪। মরমোন বাচ্চাদেরকে দেখুন। কী সুন্দর
ফিটফাট জামা কাপড় পরে বাড়িতে বাড়িতে
তাদের ধর্মের দাওয়াত দিতে যায়। কী
তাদের নিষ্ঠা, কী তাদের উতসাহ। এটা সম্ভব
হয়েছে একারণেই যে মরমোনরা তাদের
সমাজ ও সন্তানদেরকে তাদের দ্বীন (যদিও
তা ভ্রান্ত) ভালোভাবে শেখায়। আর
আমাদের মুসলিম সমাজের হাল দেখুন….।
দরকার নেই আমাদের বিশাল বিশাল মসজিদ
বা ইসলামিক সেন্টার বানানো। শুধু এটা
নিশ্চিত করুন যে আমাদের বাচ্চারা দ্বীন
শিখছে।
১৫। আমি আপনাদের জোর দিয়ে বলছি,
পৃথিবীটা শিগগিরই দুই ধারায় বিভক্ত হতে
চলেছে। একদিকে যারা ইশ্বরে বিশ্বাসী
(তা মুসলিম, খৃষ্টান, হিন্দু যাই হোক না কেন),
আরেকদিকে যারা কোন ইশ্বরেই বিশ্বাস
রাখেনা। এই মেরুকরণ মুসলিম সমাজকেও
প্রভাবিত করতে বাধ্য। আপনার সন্তান যখন
বড় হবে, তাকেও এই দ্বিমেরুবিশিষ্ট
পরিবেশের মুখোমুখি হতে হবে।
১৬। এর মোকাবেলায় আপনাকে হতে হবে
কোরআনের ছাত্র, কোরআনের ধারকবাহক
এবং কোরআনের প্রেমিক। কোরআনকে
এমনভাবে ভালোবাসতে হবে যেন আপনার
বাচ্চাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, তোমার
আব্বু কী করতে পছন্দ করেন, তার শখ কী —
তাহলে যেন তারা জবাব দিতে পারে “আমার
বাবা কোরআন নিয়ে পড়াশোনা করেন, তিনি
কোরআন পড়েন, শেখেন, অর্থ নিয়ে চিন্তা
করেন।”
শেখার কোন বয়স নেই। কোরআনকে নিয়ে
পড়াশোনা শুরু করে দিন, আল্লাহই আপনাকে
শিখিয়ে দেবেন তারই বই থেকে কীভাবে
আপনি আপনার সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ
করে গড়ে তুলতে পারবেন। আসুন আমরা আবার
কোরআনের জাতি হই।
আলোচনার অনুবাদ লিখেছেন : যুমার৫৩
video source : http://www.youtube.com/watch?
feature=player_embedded&v=DWf2lOoggIQ

Comments

Popular posts from this blog

বাংলাদেশী মেয়েদের হট ছবি

হে যুবক কোন দিকে যাও!! জান্নাতি হুর তোমাকে ডাকছে

ইসলামের দৃষ্টিতে যৌন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও শক্তি বৃদ্ধিকারী খাদ্য-পানীয়