বিবাহ একটি ধর্ম, যে বিবাহ করলো সে দ্বীনের অর্ধেক পুর্ন করলো
আন্তধর্ম বিয়ে সম্পর্কে ইসলাম :
একজন মুসলিম কখনো অমুসলিম নারীকে বিয়ে
করতে পারে না। মুসলিম হয়ে অন্য
ধর্মাবলম্বীকে বিয়ে করা প্রসঙ্গে আল্লাহ
তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻨﻜِﺤُﻮﺍْ ﭐﻟۡﻤُﺸۡﺮِﻛَٰﺖِ ﺣَﺘَّﻰٰ ﻳُﺆۡﻣِﻦَّۚ ﻭَﻟَﺄَﻣَﺔٞ ﻣُّﺆۡﻣِﻨَﺔٌ ﺧَﻴۡﺮٞ
ﻣِّﻦ ﻣُّﺸۡﺮِﻛَﺔٖ ﻭَﻟَﻮۡ ﺃَﻋۡﺠَﺒَﺘۡﻜُﻢۡۗ ﻭَﻟَﺎ ﺗُﻨﻜِﺤُﻮﺍْ ﭐﻟۡﻤُﺸۡﺮِﻛِﻴﻦَ ﺣَﺘَّﻰٰ
ﻳُﺆۡﻣِﻨُﻮﺍْۚ ﻭَﻟَﻌَﺒۡﺪٞ ﻣُّﺆۡﻣِﻦٌ ﺧَﻴۡﺮٞ ﻣِّﻦ ﻣُّﺸۡﺮِﻙٖ ﻭَﻟَﻮۡ ﺃَﻋۡﺠَﺒَﻜُﻢۡۗ ﺃُﻭْﻟَٰٓﺌِﻚَ
ﻳَﺪۡﻋُﻮﻥَ ﺇِﻟَﻰ ﭐﻟﻨَّﺎﺭِۖ ﻭَﭐﻟﻠَّﻪُ ﻳَﺪۡﻋُﻮٓﺍْ ﺇِﻟَﻰ ﭐﻟۡﺠَﻨَّﺔِ ﻭَﭐﻟۡﻤَﻐۡﻔِﺮَﺓِ ﺑِﺈِﺫۡﻧِﻪِۦۖ
ﻭَﻳُﺒَﻴِّﻦُ ﺀَﺍﻳَٰﺘِﻪِۦ ﻟِﻠﻨَّﺎﺱِ ﻟَﻌَﻠَّﻬُﻢۡ ﻳَﺘَﺬَﻛَّﺮُﻭﻥَ ٢٢١ ﴾ [ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ٢٢١ ]
‘আর তোমরা মুশরিক নারীদের বিয়ে করো না,
যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে এবং মুমিন দাসী মুশরিক
নারীর চেয়ে নিশ্চয় উত্তম, যদিও সে
তোমাদেরকে মুগ্ধ করে। আর মুশরিক পুরুষদের
সাথে বিয়ে দিয়ো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে।
আর একজন মুমিন দাস একজন মুশরিক পুরুষের
চেয়ে উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে মুগ্ধ
করে। তারা তোমাদেরকে আগুনের দিকে আহ্বান
করে, আর আল্লাহ তাঁর অনুমতিতে তোমাদেরকে
জান্নাত ও ক্ষমার দিকে আহ্বান করেন এবং মানুষের
জন্য তাঁর আয়াতসমূহ স্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন,
যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে’। {সূরা আল-
বাকারা, আয়াত : ২২১}
আয়াত নাযিলের প্রেক্ষাপট হলো, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ মারছিদ নামক এক
সাহাবীকে মক্কায় প্রেরণ করেন গোপনে
গিয়ে সেখানে থেকে যাওয়া লোকদের
আনতে। তিনি সেখানে পৌঁছলে ‘ইনাক নামক এক
মুশরিক নারী তাঁর কথা শুনতে পায়। সে ছিল তাঁর
জাহেলী যুগের বান্ধবী। সে তাঁর কাছে এসে
বলল, হে আবূ মারছিদ তুমি কি আমায় সান্নিধ্য দেবে
না? তিনি বললেন, ধ্বংস হও তুমি হে ‘ইনাক, ইসলাম
এখন আমাদের মাঝে ওই কাজে অন্তরায় সৃষ্টি
করেছে। সে বলল, তবে কি তুমি আমায় বিয়ে
করতে পার? তিনি বললেন, হ্যা, কিন্তু আমাকে
আগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
কাছে যেতে হবে। তাঁর কাছে আমি (তোমাকে)
বিয়ে করার অনুমতি প্রার্থনা করব। সে বলল, তুমি
আমাকে উপেক্ষা করছ? অতপর মেয়েটি তাঁর
বিরুদ্ধে (নিজ গোত্রীয়) লোকদের সাহায্য
চাইল। তারা তাঁকে বেদম প্রহার করল। তারপর তাঁর পথ
ছেড়ে দিল। মক্কায় নিজের কাজ সেরে তিনি যখন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে
গেলেন, তাঁকে তিনি নিজের অবস্থা, ‘ইনাকের বিষয়
এবং এ জন্য প্রহৃত হবার ঘটনা জানালেন। তারপর
বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমার জন্য কি তাকে
(মুশরিক নারীকে) বিয়ে করা হালাল হবে? তখন
আল্লাহ এই আয়াতটি নাযিল করেন। [1]
এই আয়াতের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তাফসীর
শাস্ত্রের ইমাম ইবনু জারীর আত-তবারী রহিমাহুল্লাহ
বলেন,
ﺍﺧْﺘَﻠَﻒَ ﺃَﻫْﻞُ ﺍﻟﺘَّﺄْﻭِﻳﻞِ ﻓِﻲ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻵﻳَﺔِ : ﻫَﻞْ ﻧَﺰَﻟَﺖْ ﻣُﺮَﺍﺩًﺍ ﺑِﻬَﺎ
ﻛُﻞُّ ﻣُﺸْﺮِﻛَﺔٍ ، ﺃَﻡْ ﻣُﺮَﺍﺩًﺍ ﺑِﺤُﻜْﻤِﻬَﺎ ﺑَﻌْﺾَ ﺍﻟْﻤُﺸْﺮِﻛَﺎﺕِ ﺩُﻭﻥَ
ﺑَﻌْﺾٍ ؟ ﻭَﻫَﻞْ ﻧُﺴِﺦَ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﺑَﻌْﺪَ ﻭُﺟُﻮﺏِ ﺍﻟْﺤُﻜْﻢِ ﺑِﻬَﺎ ﺷَﻲْﺀٌ ﺃَﻡْ
ﻻَ ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺑَﻌْﻀُﻬُﻢْ : ﻧَﺰَﻟَﺖْ ﻣُﺮَﺍﺩًﺍ ﺑِﻬَﺎ ﺗَﺤْﺮِﻳﻢُ ﻧِﻜَﺎﺡِ ﻛُﻞِّ
ﻣُﺸْﺮِﻛَﺔٍ ﻋَﻠَﻰ ﻛُﻞِّ ﻣُﺴْﻠِﻢٍ ﻣِﻦْ ﺃَﻱِّ ﺃَﺟْﻨَﺎﺱِ ﺍﻟﺸِّﺮْﻙِ ﻛَﺎﻧَﺖْ
ﻋَﺎﺑِﺪَﺓَ ﻭَﺛَﻦٍ ﺃَﻭْ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﻳَﻬُﻮﺩِﻳَّﺔً ﺃَﻭْ ﻧَﺼْﺮَﺍﻧِﻴَّﺔً ﺃَﻭْ ﻣَﺠُﻮﺳِﻴَّﺔً ﺃَﻭْ
ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِﻫِﻢْ ﻣِﻦْ ﺃَﺻْﻨَﺎﻑِ ﺍﻟﺸِّﺮْﻙِ ، ﺛُﻢَّ ﻧُﺴِﺦَ ﺗَﺤْﺮِﻳﻢُ ﻧِﻜَﺎﺡِ
ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ ﺑِﻘَﻮْﻟِﻪِ : } ﻳَﺴْﺄَﻟُﻮﻧَﻚَ ﻣَﺎﺫَﺍ ﺃُﺣِﻞَّ ﻟَﻬُﻢْ ﻗُﻞْ ﺃُﺣِﻞَّ
ﻟَﻜُﻢُ ﺍﻟﻄَّﻴِّﺒَﺎﺕُ { ﺇِﻟَﻰ } ﻭَﻃَﻌَﺎﻡُ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺃُﻭﺗُﻮﺍ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏَ ﺣِﻞٌّ ﻟَﻜُﻢْ
ﻭَﻃَﻌَﺎﻣُﻜُﻢْ ﺣِﻞٌّ ﻟَﻬُﻢْ ﻭَﺍﻟْﻤُﺤْﺼَﻨَﺎﺕُ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨَﺎﺕِ
ﻭَﺍﻟْﻤُﺤْﺼَﻨَﺎﺕُ ﻣِﻦَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺃُﻭﺗُﻮﺍ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏَ ﻣِﻦْ ﻗَﺒْﻠِﻜُﻢْ { .. ﺫِﻛْﺮُ
ﻣَﻦْ ﻗَﺎﻝَ ﺫَﻟِﻚَ :
‘আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীর বিশারদগণ এ ব্যাপারে
মতবিরোধ করেছেন যে এতে সকল মুশরিকের
কথা বলা হয়েছে নাকি কতিপয় মুশরিকের কথা। আর
আয়াতটি নাযিল করার পর এর কিছুকে মানসূখ বা রহিত করা
হয়েছে কি-না। তাঁদের কেউ বলেছেন, আয়াতে
সকল মুসলিমের জন্য সব মুশরিক নারীর বিবাহকে
হারাম বুঝানো হয়েছে। চাই সে যে কোনো
ধরনের শিরকেই লিপ্ত থাকুক না কেন। হোক সে
মূর্তিপূজারী, ইহুদী, খ্রিস্টান, অগ্নিপূজারী বা অন্য
কোনো ধরনের শিরকে লিপ্ত কেউ।
অতপর আহলে কিতাবদের বিয়ে হারামের বিয়ষটি
রহিত ঘোষণা করা হয় নিচের আয়াতের মাধ্যমে।
আল্লাহ তা‘আলা তাতে ইরশাদ করেন,
﴿ ﭐﻟۡﻴَﻮۡﻡَ ﺃُﺣِﻞَّ ﻟَﻜُﻢُ ﭐﻟﻄَّﻴِّﺒَٰﺖُۖ ﻭَﻃَﻌَﺎﻡُ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺃُﻭﺗُﻮﺍْ ﭐﻟۡﻜِﺘَٰﺐَ
ﺣِﻞّٞ ﻟَّﻜُﻢۡ ﻭَﻃَﻌَﺎﻣُﻜُﻢۡ ﺣِﻞّٞ ﻟَّﻬُﻢۡۖ ﻭَﭐﻟۡﻤُﺤۡﺼَﻨَٰﺖُ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﻤُﺆۡﻣِﻨَٰﺖِ
ﻭَﭐﻟۡﻤُﺤۡﺼَﻨَٰﺖُ ﻣِﻦَ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺃُﻭﺗُﻮﺍْ ﭐﻟۡﻜِﺘَٰﺐَ ﻣِﻦ ﻗَﺒۡﻠِﻜُﻢۡ ﺇِﺫَﺁ
ﺀَﺍﺗَﻴۡﺘُﻤُﻮﻫُﻦَّ ﺃُﺟُﻮﺭَﻫُﻦَّ ﻣُﺤۡﺼِﻨِﻴﻦَ ﻏَﻴۡﺮَ ﻣُﺴَٰﻔِﺤِﻴﻦَ ﻭَﻟَﺎ
ﻣُﺘَّﺨِﺬِﻱٓ ﺃَﺧۡﺪَﺍﻥٖۗ ﻭَﻣَﻦ ﻳَﻜۡﻔُﺮۡ ﺑِﭑﻟۡﺈِﻳﻤَٰﻦِ ﻓَﻘَﺪۡ ﺣَﺒِﻂَ ﻋَﻤَﻠُﻪُۥ ﻭَﻫُﻮَ
ﻓِﻲ ﭐﻟۡﺄٓﺧِﺮَﺓِ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﺨَٰﺴِﺮِﻳﻦَ ٥ ﴾ [ ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ : ٥]
‘আজ তোমাদের জন্য বৈধ করা হলো সব ভালো
বস্তু এবং যাদেরকে কিতাব প্রদান করা হয়েছে,
তাদের খাবার তোমাদের জন্য বৈধ এবং তোমার
খাবার তাদের জন্য বৈধ। আর মুমিন সচ্চরিত্রা নারী এবং
তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া
হয়েছে, তাদের সচ্চরিত্রা নারীদের সাথে
তোমাদের বিবাহ বৈধ। যখন তোমরা তাদেরকে
মোহর দেবে, বিবাহকারী হিসেবে, প্রকাশ্য
ব্যভিচারকারী বা গোপনপত্নী গ্রহণকারী
হিসেবে নয়’। {সূরা আল-মায়িদা, আয়াত : ৫} এ আয়াতে
আল্লাহ তা‘আলা সতী-সাধ্বী খ্রিস্টান ও
ইহুদীদের বিয়ের অনুমতি দিয়েছেন।[2]
একই শাস্ত্রের আরেক ইমাম ইবন কাছীর
রহিমাহুল্লাহ বলেন, এ আয়াতে আল্লাহ সাধারণভাবে
শিরকে লিপ্ত সব নারীকে বিয়ে করা হারাম ঘোষণা
করেছেন, চাই সে মূর্তিপূজক কিংবা আহলে কিতাব
সম্প্রদায়ভুক্ত হোক। তবে পরবর্তীতে মায়িদার
আয়াতে তাদের মধ্যে কেবল আসমানী
কিতাবধারী সচ্চরিত্রা নারীদের বিশেষভাবে বিয়ের
অনুমতি দেয়া হয়েছে।[3]
উপরোক্ত ব্যাখ্যার আলোকে প্রতিভাত হয় যে
বিশেষ কিছু শর্ত সাপেক্ষেই কেবল খ্রিস্টান বা
ইহুদী নারীকে কোনো মুসলিম বিয়ে করতে
পারে।
এক. বাস্তবিকই আহলে কিতাব হতে হবে। শুধু নামে
ইহুদী কিংবা খ্রিস্টান হলে চলবে না। নামে ইহুদী-
খ্রিস্টান অথচ সে নাস্তিক কিংবা নিজ ধর্মকে বিশ্বাস
করে না; তাহলে চলবে না।
দুই. অবশ্যই তাকে পবিত্র হতে হবে। ব্যভিচারিণী
হলে চলবে না।
তিন. এমন কাউকে বিয়ে করা যাবে না যার জাতি পুরো
মুসলিম উম্মতের সাথে ঘোর শত্রুতা পোষণ
করে, যেমন : বর্তমান সময়ের ইসরাঈলের
ইহুদীরা।
চার. বিয়ের কারণে স্বামীর সন্তানের কোনো
বৈষয়িক ক্ষতি সাধিত হওয়ার আশংকা থাকলেও আহলে
কিতাব বিয়ে করা যাবে না। [4]
আন্তধর্ম বিয়ের ভয়াবহ পরিণতি :
বিয়ে একটি ধর্মীয় ও সামাজিক বন্ধন। নিজের
খেয়াল-খুশি মতো এ বন্ধনের নিয়মে ব্যত্যয়
ঘটাবার সুযোগ নেই। ইসলাম মানবজীবনের সব
পর্যায়ের যাবতীয় উপলক্ষ ও অনুসর্গকে
অন্তর্ভুক্ত করেছে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক,
অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা
কেমন হবে, দিয়েছে তার দ্ব্যর্থহীন
দিকনির্দেশনা। এই জীবনদিশা আল্লাহ প্রদত্ত বিধায়
এর মধ্যে কোনো গলদ নেই। সুন্দর সমাজ
ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিয়ে সম্পর্কিত আল্লাহর
নির্দেশনা অনুসরণের বিকল্প নেই। এর বাইরে
যাওয়ার চেষ্টা মানেই নিজেদের ধ্বংস নিজেরা
ডেকে আনা। ব্যক্তি স্বাধীনতার নাম দিয়ে
বল্গাহীনভাবে কিছু করার স্বাধীনতা ইসলামে নেই।
যারা নিজের স্বাধীনতা দিয়ে অন্যের ধর্ম, সম্মান,
রীতি-নীতি ও স্বাধীনতাকে নষ্ট করে তারা
মানবতার শত্রু।
আন্তধর্ম বিয়ের পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ।
বাংলাদেশে আগে দেখা যেত, কেউ নিজের ধর্ম
ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে চাইলে নিজ ধর্ম
ত্যাগ করে বিয়ে করতে হতো বিধায় সহজে
কেউ ওপথে হাঁটতো না। এখন বিষয়টি সহজ হয়ে
যাবে। ধর্ম ত্যাগ না করেই যুবক-যুবতীরা তাদের
রঙ্গলীলা সাঙ্গ করতে নেমে পড়বে।
কোনো ধর্মের স্বকীয়তা আর থাকবে না। যার
ফল দাঁড়াবে অদূর ভবিষ্যতে গোটা সমাজ ব্যবস্থাই
ধর্মহীন হয়ে পড়বে। যেনা-ব্যভিচার ডাল-ভাতে
পরিণত হবে। জন্ম নেবে জারজ সন্তান। একদিন
জারজ সন্তানে দেশ ভরে যাবে। আর এই ব্যভিচার
নামক গর্হিত কাজটি আল্লাহর কিতাব, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ ও সমগ্র উম্মাহর
ঐক্যমত্যে হারাম। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻘۡﺮَﺑُﻮﺍْ ﭐﻟﺰِّﻧَﻰٰٓۖ ﺇِﻧَّﻪُۥ ﻛَﺎﻥَ ﻓَٰﺤِﺸَﺔٗ ﻭَﺳَﺂﺀَ ﺳَﺒِﻴﻠٗﺎ ٣٢
﴾ [ ﺍﻻﺳﺮﺍﺀ : ٣٢ ]
‘আর তোমরা ব্যভিচারের কাছে যেয়ো না, নিশ্চয়
তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ’। {সূরা বানী ইসরাঈল,
আয়াত : ৩২}
ব্যভিচার তো দূরের কথা ইসলামে যে কোনো
ধরনের অশ্লীলতাকেই হারাম ঘোষণা করা
হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ﻗُﻞۡ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺣَﺮَّﻡَ ﺭَﺑِّﻲَ ﭐﻟۡﻔَﻮَٰﺣِﺶَ ﻣَﺎ ﻇَﻬَﺮَ ﻣِﻨۡﻬَﺎ ﻭَﻣَﺎ ﺑَﻄَﻦَ
ﻭَﭐﻟۡﺈِﺛۡﻢَ ﻭَﭐﻟۡﺒَﻐۡﻲَ ﺑِﻐَﻴۡﺮِ ﭐﻟۡﺤَﻖِّ ﻭَﺃَﻥ ﺗُﺸۡﺮِﻛُﻮﺍْ ﺑِﭑﻟﻠَّﻪِ ﻣَﺎ ﻟَﻢۡ ﻳُﻨَﺰِّﻝۡ
ﺑِﻪِۦ ﺳُﻠۡﻄَٰﻨٗﺎ ﻭَﺃَﻥ ﺗَﻘُﻮﻟُﻮﺍْ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻣَﺎ ﻟَﺎ ﺗَﻌۡﻠَﻤُﻮﻥَ ٣٣
﴾ [ﺍﻻﻋﺮﺍﻑ : ٣٣]
‘বল, ‘আমার রব তো হারাম করেছেন অশ্লীল
কাজ- যা প্রকাশ পায় এবং যা গোপন থাকে, আর পাপ ও
অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন এবং আল্লাহর সাথে
তোমাদের শরীক করা, যে ব্যাপারে আল্লাহ
কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেন নি এবং আল্লাহর
ব্যাপারে এমন কিছু বলা যা তোমরা জান না’। {সূরা আল-
আ‘রাফ, আয়াত : ৩৩}
অপর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ
করেন,
﴿ ۞ﻗُﻞۡ ﺗَﻌَﺎﻟَﻮۡﺍْ ﺃَﺗۡﻞُ ﻣَﺎ ﺣَﺮَّﻡَ ﺭَﺑُّﻜُﻢۡ ﻋَﻠَﻴۡﻜُﻢۡۖ ﺃَﻟَّﺎ ﺗُﺸۡﺮِﻛُﻮﺍْ ﺑِﻪِۦ
ﺷَﻴۡٔٗﺎۖ ﻭَﺑِﭑﻟۡﻮَٰﻟِﺪَﻳۡﻦِ ﺇِﺣۡﺴَٰﻨٗﺎۖ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻘۡﺘُﻠُﻮٓﺍْ ﺃَﻭۡﻟَٰﺪَﻛُﻢ ﻣِّﻦۡ ﺇِﻣۡﻠَٰﻖٖ ﻧَّﺤۡﻦُ
ﻧَﺮۡﺯُﻗُﻜُﻢۡ ﻭَﺇِﻳَّﺎﻫُﻢۡۖ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻘۡﺮَﺑُﻮﺍْ ﭐﻟۡﻔَﻮَٰﺣِﺶَ ﻣَﺎ ﻇَﻬَﺮَ ﻣِﻨۡﻬَﺎ ﻭَﻣَﺎ
ﺑَﻄَﻦَۖ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻘۡﺘُﻠُﻮﺍْ ﭐﻟﻨَّﻔۡﺲَ ﭐﻟَّﺘِﻲ ﺣَﺮَّﻡَ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﺇِﻟَّﺎ ﺑِﭑﻟۡﺤَﻖِّۚ ﺫَٰﻟِﻜُﻢۡ
ﻭَﺻَّﻯٰﻜُﻢ ﺑِﻪِۦ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢۡ ﺗَﻌۡﻘِﻠُﻮﻥَ ١٥١ ﴾ [ ﺍﻻﻧﻌﺎﻡ : ١٥١ ]
‘বল, ‘এসো, তোমাদের ওপর তোমাদের রব যা
হারাম করেছেন, তা তিলাওয়াত করি। তা এই যে,
তোমরা তার সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে
না এবং মা-বাবার প্রতি ইহসান করবে আর দারিদ্র্যের
কারণে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে
না। আমিই তোমাদেরকে রিযক দেই এবং
তাদেরকেও। আর অশ্লীল কাজের
নিকটবর্তী হবে না- তা থেকে যা প্রকাশ পায় এবং
যা গোপন থাকে। আর বৈধ কারণ ছাড়া তোমরা
সেই প্রাণকে হত্যা করো না, আল্লাহ যা হারাম
করেছেন। এগুলো আল্লাহ তোমাদেরকে
নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা বুঝতে পার’।
{সূরা আল-আন‘আম, আয়াত : ১৫১}
যেনা-ব্যভিচারের ভয়াবহতা তুলে ধরে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারবার মানবজাতিকে
সতর্ক করেছেন। যেমন আবূ সাঈদ খুদরী
রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
« ﻻ ﻳَﺰْﻧِﻲ ﺍﻟﺰَّﺍﻧِﻲ ﺣِﻴﻦَ ﻳَﺰْﻧِﻲ ﻭَﻫُﻮَ ﻣُﺆْﻣِﻦٌ , ﻭَﻻ ﻳَﺴْﺮِﻕُ
ﺍﻟﺴَّﺎﺭِﻕُ ﺣِﻴﻦَ ﻳَﺴْﺮِﻕُ ﻭَﻫُﻮَ ﻣُﺆْﻣِﻦٌ , ﻭَﻻ ﻳَﻨْﺘَﻬِﺐُ ﻣُﻨْﺘَﻬِﺐٌ
ﺍﻟﻨُّﻬْﺒَﺔَ ﻳَﺮْﻓَﻊُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﺃَﺑْﺼَﺎﺭَﻫُﻢْ ﺣِﻴﻦَ ﻳَﻨْﺘَﻬِﺒُﻬَﺎ ﻭَﻫُﻮَ
ﻣُﺆْﻣِﻦٌ » .
‘যেনাকারী মুমিন থাকে না যখন সে যেনা করে,
আর মদ্যপ মুমিন থাকে না যখন মদ পান করে, চোর
মুমিন থাকে না যখন সে চুরি করে, ছিনতাইকারী মুমিন
থাকে না যখন সে কোনোরূপ ছিনতাই করে আর
লোকেরা তার দিকে (বিস্ময় বিস্ফোরিত
নেত্রে) চেয়ে থাকে।’ [5]
আবদুর রহমান ইবন সাখার রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেন,
« ﺇِﺫَﺍ ﺯَﻧَﻰ ﺍﻟْﻌَﺒْﺪُ ﺧَﺮَﺝَ ﻣِﻨْﻪُ ﺍﻟْﺈِﻳﻤَﺎﻥُ ﻓَﻜَﺎﻥَ ﻓَﻮْﻕَ ﺭَﺃْﺳِﻪِ
ﻛَﺎﻟﻈُّﻠَّﺔِ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺧَﺮَﺝَ ﻣِﻦْ ﺫَﻟِﻚَ ﺍﻟْﻌَﻤَﻞِ ﻋَﺎﺩَ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﺍﻟْﺈِﻳﻤَﺎﻥُ » .
‘বান্দা যখন যেনা করে তখন তার কাছ থেকে ঈমান
বেরিয়ে যায় এবং তা ছায়ার মতো (শূন্যে) দুলতে
থাকে। অতপর যখন সে ওই কাজ থেকে নিবৃত হয়,
তখন তার কাছে ঈমান ফিরে আসে।’ [6]
বিশেষ বিবাহ আইনটি বাংলাদেশে কার্যকর হলে
সবচে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে দু’ধর্ম পালনকারী
দম্পতির সন্তানরা। মানসিকভাবে তারা বিকারগ্রস্ত হবে।
মুসলিম বাবা বলবেন, আল্লাহ এক আর মা বলবেন
ঈশ্বর তিনজন অথবা আমাদের অসংখ্য খোদা
রয়েছেন। মুসলিম বাবা যেটাকে বলবেন সত্য
সেটাকেই অমুসলিম মা বলবেন অসত্য। মা-বাবার এই
বিপরীত অবস্থান থেকে সন্তানের মনে ঘৃণার
জন্ম নেবে। জীবনের ঊষাকাল থেকে
মধ্যগগন অবধি সে হাবুডুবু খাবে সিদ্ধান্তহীনতার
চোরাবালিতে। এছাড়া উত্তরাধিকারী হয়ে মা বাবার
সম্পত্তি ভোগ করতেও ঝামেলায় পড়তে হবে
সন্তানকে। প্রচলিত আইনে স্বামী-স্ত্রীর
অধিকার পেতেও তাদের ঝামেলা পোহাতে
হবে। মোটকথা নৈরাজ্য ছাড়া উপায় নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের একজন
অধ্যাপক দৈনিক নয়াদিগন্তকে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের
এক অধ্যাপকের মুসলিম স্ত্রীর কথা তুলে ধরে
বলেন, ওই পরিবারে জন্ম নেয়া সন্তানটি কোন
ধর্ম গ্রহণ করবে, সেটি নির্ধারণ নিয়ে স্বামী-
স্ত্রীতে সমস্যা এখন মনোমালিন্য পর্যায়ে
পৌঁছেছে। তিনি বলেন, দেশের একজন খ্যাতিমান
প্রবাসী কথাশিল্পীর স্বামী মুসলিম। তিনি হিন্দু। তার
সন্তান মারা যাওয়ার পর তাকে জানাযা দেয়া হবে নাকি দাহ
করা হবে তা নিয়ে প্রচণ্ড সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছিল। তাই
এ ধরনের বিয়ে সমাজে কোনো রকমের
ভালো ফল বয়ে আনতে পারে না। এটা একটা
অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে মাত্র। (১ মে সংখ্যা)
তাই পৃথিবীর কোনো ধর্মই অন্য ধর্মের
অনুসারীকে বিয়ে করাটা ভালোভাবে নেয় না। এটি
একটি অস্বাভাবিক অবস্থা। ব্যতিক্রম শুধু ইহুদী ধর্ম।
তাদের ব্যাপারটি বেশ মজারও বটে! ইহুদীরা
তাদের মেয়েদের অন্য ধর্মাবলম্বীদের
কাছে বিয়ে দেয়, কিন্ত কখনোই ছেলেদের
এই অনুমতি দেয় না। কারণ তাদের বিশ্বাস, সন্তানেরা
তাদের মায়েদের ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত হয়। এ কারণে
বিল ক্লিন্টনের মেয়েকে এক ইহুদী ছেলে
বিয়ে করায় জুইস কাউন্সিল এর তীব্র সমালোচনা
করেছিল। অতএব নিজেদের জাতকে বিশুদ্ধ
রেখে অন্য সকল ধর্মের মধ্যে ফ্রি মিক্সিং বা
জগাখিচুড়িকে উত্সাহিত করা ইহুদীদের কৌশল। বাংলা
রম্য রচনার বরপুত্র সৈয়দ মুজতবা আলীর কর্নেল
গল্পে এর ইঙ্গিত দেওয়া আছে।
ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শ মতে শিশুকে তার বাবা মায়ের
ধর্মের অনুসারী ধরা হলে তার ব্যক্তিস্বাধীনতা
খর্ব হয়। শিশুকে যে কোনো নীতি বা
আদর্শের দীক্ষা দেওয়াই তার স্বাধীনতার
পরিপন্থী! তাই হয়তো বড় হয়ে বিবেক-বুদ্ধি
অনুসারে যে কোনো ধর্মের অনুকরণ করা না
করা তার এখতিয়ারে রাখা হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন
হলো, দেশাত্ববোধের বিষয়টিও কি তার
ইচ্ছাধীন? বড় হয়ে তার কি দেশের সংবিধান ও
আদর্শে বিশ্বাসী না হবারও অধিকার রয়েছে?
কোনো উদারতম ধর্মনিরপেক্ষ বা গণতান্ত্রিক
রাষ্ট্রও কিন্তু এ অধিকার দেবে না।
আসলে মানুষ কখনোই পুরোপুরি স্বাধীন নয়। তার
স্বাধীনতা সীমিত ও সুনিয়ন্ত্রিত। আর একজন
মুসলিমের স্বাধীনতার প্রথম শর্তই হলো তা
আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির মধ্যে থাকতে হবে।
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
﴿ ﻭَﻣَﻦ ﻳَﺒۡﺘَﻎِ ﻏَﻴۡﺮَ ﭐﻟۡﺈِﺳۡﻠَٰﻢِ ﺩِﻳﻨٗﺎ ﻓَﻠَﻦ ﻳُﻘۡﺒَﻞَ ﻣِﻨۡﻪُ ﻭَﻫُﻮَ ﻓِﻲ
ﭐﻟۡﺄٓﺧِﺮَﺓِ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﺨَٰﺴِﺮِﻳﻦَ ٨٥ ﴾ [ ﺍﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ : ٨٥ ]
‘আর যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দীন চায়
তবে তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে
না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত
হবে’। {সূরা আলে-ইমরান, আয়াত : ৮৫}
কেউ সুন্দরী বিধর্মী নারীতে মজে আল্লাহর
বিধান উপেক্ষা করবেন আর নিজেকে খুব ভালো
মুসলিম ভেবে আবার তৃপ্তও হবেন তা কিন্তু হয় না।
তারা মূলত বোকার স্বর্গে বাস করছেন। কিছু মানা
আর কিছু না মানার কোনো সুযোগ ইসলামে রাখা
হয় নি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ﺃَﻓَﺘُﺆۡﻣِﻨُﻮﻥَ ﺑِﺒَﻌۡﺾِ ﭐﻟۡﻜِﺘَٰﺐِ ﻭَﺗَﻜۡﻔُﺮُﻭﻥَ ﺑِﺒَﻌۡﺾٖۚ ﻓَﻤَﺎ ﺟَﺰَﺁﺀُ
ﻣَﻦ ﻳَﻔۡﻌَﻞُ ﺫَٰﻟِﻚَ ﻣِﻨﻜُﻢۡ ﺇِﻟَّﺎ ﺧِﺰۡﻱٞ ﻓِﻲ ﭐﻟۡﺤَﻴَﻮٰﺓِ ﭐﻟﺪُّﻧۡﻴَﺎۖ ﻭَﻳَﻮۡﻡَ
ﭐﻟۡﻘِﻴَٰﻤَﺔِ ﻳُﺮَﺩُّﻭﻥَ ﺇِﻟَﻰٰٓ ﺃَﺷَﺪِّ ﭐﻟۡﻌَﺬَﺍﺏِۗ ﻭَﻣَﺎ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻐَٰﻔِﻞٍ ﻋَﻤَّﺎ
ﺗَﻌۡﻤَﻠُﻮﻥَ ٨٥ ﴾ [ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ٨٥ ]
‘তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখ আর কিছু
অংশ অস্বীকার কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তা
করে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া তাদের কী
প্রতিদান হতে পারে? আর কিয়ামতের দিনে
তাদেরকে কঠিনতম আযাবে নিক্ষেপ করা হবে।
আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে গাফিল
নন’। {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ৮৫}
নিজের মন মতো নয় আমাদের সব কাজ হতে
হবে আল্লাহর প্রেরিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের আদর্শ অনুযায়ী। আল্লাহ তা‘আলা
ইরশাদ করেন,
﴿ ﻓَﻠَﺎ ﻭَﺭَﺑِّﻚَ ﻟَﺎ ﻳُﺆۡﻣِﻨُﻮﻥَ ﺣَﺘَّﻰٰ ﻳُﺤَﻜِّﻤُﻮﻙَ ﻓِﻴﻤَﺎ ﺷَﺠَﺮَ ﺑَﻴۡﻨَﻬُﻢۡ
ﺛُﻢَّ ﻟَﺎ ﻳَﺠِﺪُﻭﺍْ ﻓِﻲٓ ﺃَﻧﻔُﺴِﻬِﻢۡ ﺣَﺮَﺟٗﺎ ﻣِّﻤَّﺎ ﻗَﻀَﻴۡﺖَ ﻭَﻳُﺴَﻠِّﻤُﻮﺍْ
ﺗَﺴۡﻠِﻴﻤٗﺎ ٦٥ ﴾ [ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ٦٥]
‘অতএব তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না
যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে
তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে
ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে
কোনো দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে
মেনে নেয়’। {সূরা আন-নিসা, আয়াত : ৬৫}
বাংলাদেশে আন্তধর্ম বিয়ে আইন :
নিজ ধর্ম বিশ্বাস বাদ দিয়ে যেসব নারী-পুরুষ বিয়ে
করতে আগ্রহী তাদের বিয়ের রেজিস্ট্রি
করতে গত ১৮ এপ্রিল ২০১২ ইং আইনমন্ত্রীর
এপিএস (সহকারী একান্ত সচিব) আকছির এম
চৌধুরীকে নিয়োগ দেয়া হয়। এতদিন এই বিয়ে
পড়ানোর একমাত্র স্থান হিসেবে নির্ধারিত ছিল পুরান
ঢাকার পাটুয়াটুলী শরৎচন্দ্র ব্রাহ্ম প্রচারক নিবাস।
এখানে প্রাণেশ সমাদ্দার ছিলেন সরকার নিযুক্ত
একমাত্র রেজিস্ট্রার। এখন উভয়ে এই বিয়ে
রেজিস্ট্রি করতে পারবেন। এখানে সবাই
স্বাধীনভাবে যে কোনো ধর্মের (হিন্দু-বৌদ্ধ,
খ্রিস্টান-মুসলমান) নারী-পুরুষ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ
হতে পারবেন।
এই আইন অনুযায়ী একজন মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ,
খ্রিস্টান, ইহুদী কিংবা অন্য যে কোনো ধর্মের
যে কেউ যে কাউকে বিয়ে করতে পারবে।
এজন্য পাত্র-পাত্রী কাউকেই ধর্মান্তরিত হতে
হবে না। ধর্ম পরিবর্তন ছাড়াই তারা দাম্পত্য জীবনে
প্রবেশ করতে পারবে। ইচ্ছে করলে স্বামী-
স্ত্রী উভয়ে অথবা যে কোনো একজন নিজ
ধর্মীয় বিশ্বাস বাদ দিতে পারে। এ ধরনের বিয়ের
মাধ্যমে জন্ম নেয়া সন্তানদের কোনো
ধর্মীয় পরিচয় থাকবে না। বড় হয়ে (১৮ বছর) তারা
যে কোনো ধর্ম বেছে নিতে পারবে অথবা
ধর্ম বিশ্বাস ছাড়াই জীবন যাপন করতে পারবে। (১
মে, ২০১২ দৈনিক নয়া দিগন্ত ও আমার দেশ)
আইন সম্পর্কে আইন মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা :
আইনটি পাসের উদ্যোগ নেয়ার পর থেকে
দেশের আলেম সমাজ একে ইসলামবিরোধী
আখ্যায়িত করে বক্তৃতা-বিবৃতি ও প্রতিবাদ জানিয়ে
আসছেন। সকল দল-মতের ইসলামী ভাবাপন্ন
নেতৃবৃন্দ এবং সর্বশ্রেণীর ধর্মপ্রাণ মানুষ এর
প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার
বলছে, প্রস্তাবিত আইনে ইসলামবিরোধী কিছু
নেই।
১৫ মে (সোমবার) আইন মন্ত্রণালয় থেকে বিবাহ
আইন সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয়, ‘বিশেষ বিবাহ
আইনটি ১৮৭২ সালে প্রণীত হয়েছে। এ আইন
এখনো বর্তমান আছে। বর্তমান সরকারের সময় এ
আইনের কোনো প্রকার সংশোধন হয় নি। আইনটি
অপরিবর্তিত অবস্থায় বহাল আছে।’
এতে আরো বলা হয়েছে, ‘১৮৭২ সালের এ
আইন অনুযায়ী একজন মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান,
ইহুদী কিংবা অন্য যে কোনো ধর্মের যে
কেউ যে কাউকে বিয়ে করতে পারবে। এজন্য
পাত্র-পাত্রী কাউকেই ধর্মান্তরিত হতে হবে না। এ
ধরনের বিয়ের মাধ্যমে জন্ম নেয়া সন্তানদের
কোনো ধর্মীয় পরিচয় থাকবে না। তারা ১৮ বছর
বয়সের পর যে কোনো ধর্ম বেছে নিতে
পারবে।’ (আমার দেশ : ১৬/০৫/২০১২)
আইন মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যার অসারতা :
বক্তব্যটি আসলে একটি স্পষ্ট মিথ্যাচারের নমুনা।
কেননা, ১৮৭২ সালের আইনেও মুসলমান কর্তৃক
বিধর্মীদের বিয়ে জায়িয বলা হয় নি। ১৮৭২ সালের
বিশেষ বিয়ে আইনে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি
খ্রিস্টান, ইহুদী, হিন্দু, মুসলিম, পারসি, বৌদ্ধ, শিখ অথবা
জৈন কোনো ধর্মই পালন করে না, তারা এ আইনের
অধীনে বিয়ে করতে পারে। এ আইনের
অধীনে বিয়ে করতে হলে পাত্র-পাত্রীকে
ঘোষণা করতে হবে, তারা কোনো ধর্মে
বিশ্বাস করে না। ধর্ম ত্যাগের ঘোষণা না করলে
বিয়েটি অবৈধ, বরং বাতিল হবে। তবে বিয়েটি যদি হিন্দু,
বৌদ্ধ, শিখ ও জৈনদের মধ্যে সম্পাদন করা হয় তাহলে
তারা নিজ নিজ ধর্ম অনুসরণ করতে পারবে।
নিচে ১৮৭২ সালে প্রণীত স্পেশাল ম্যারিজ এ্যাক্ট
বা বিশেষ বিবাহ আইনটি হুবহু তুলে ধরা হলো :
THE SPECIAL MARRIAGE ACT, 1872
(ACT NO. III OF 1872). [ 18th July, 1872]
Local extent 1. This Act extends to the whole of
[Bangladesh].
An Act to provide a form of Marriage in certain
cases.
Preamble WHEREAS it is expedient to provide a
form of marriage for persons who do not profess
the Christian, Jewish, Hindu, Muslim, Parsi,
Buddhist, Sikh or Jaina religion, and for persons
who profess the Hindu, Buddhist, Sikh or Jaina
religion and to legalize certain marriages the
validity of which is doubtful; It is hereby enacted
as follows:–
Conditions upon which marriages under Act may
be celebrated :
2. Marriages may be celebrated under this Act
between persons neither of whom professes the
Christian or the Jewish, or the Hindu or the
Muslim or the Parsi or the Buddhist, or the Sikh
or the Jaina religion, or between persons each of
whom professes one or other of the following
religions, that is to say, the Hindu, Buddhist, Sikh
or Jaina religion upon the following conditions:–
(1) neither party must, at the time of the
marriage, have a husband or wife living:
(2) the man must have completed his age of
eighteen years, and the woman her age of
fourteen years, according to the Gregorian
calendar:
(3) each party must, if he or she has not
completed the age of twenty-one years, have
obtained the consent of his or her father or
guardian to the marriage:
(4) the parties must not be related to each other
in any degree of consanguinity or affinity which
would, according to any law to which either of
them is subject, render a marriage between them
illegal.
1st Proviso- No such law or custom, other than
one relating to consanguinity or affinity, shall
prevent them from marrying.
2nd Proviso- No law or custom as to
consanguinity shall prevent them from marrying,
unless a relationship can be traced between the
parties through some common ancestor, who
stands to each of them in a nearer relationship
than that of great-great-grand-father or great-
great-grand-mother, or unless one of the parties
is the lineal ancestor, or the brother or sister of
some lineal ancestor, of the other.
আইনের ধারাগুলো পড়লেই বুঝা যায় বর্তমানে
শুভঙ্করের ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। বৃটিশ
প্রণীত এই আইনটিকে বলা হয়েছে ‘বিশেষ বিবাহ
আইন’। পক্ষান্তরে সরকার যে আইনটি করতে
যাচ্ছে তা মূলত তো ‘আন্তধর্ম বিয়ে আইন’।
বিশেষ আর আন্তধর্ম বিয়ের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য
রয়েছে। বিশেষ বিবাহ আইন হলো,
স্বধর্মত্যাগীদের জন্য এক বিশেষ ব্যবস্থা।
পক্ষান্তরে আন্তধর্ম বিয়ে হলো, এক ধর্মের
লোকের সঙ্গে আরেক ধর্মাবলম্বীর বিয়ে।
সুতরাং বৃটিশ আমলে খ্রিস্টান সরকারও কিন্তু সরাসরি
কুরআন-সুন্নাহর সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধাতে যায় নি। অতএব
কুরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন না করার
প্রতিশ্রুতি দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের ভোটে
নির্বাচিত মুসলিম সরকারকে বিষয়টি গভীরভাবে
ভেবে দেখতে হবে। যারা এমন বিয়ের বাঁধনে
জড়াতে চান তাদের উদ্দেশে বলি, সমাজ ও
ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেই যদি বিয়ে
করতে হয় তবে এ সম্পর্কে জড়ানোর কী
দরকার? যারা সরাসরি আল্লাহর বাণীকে অবজ্ঞা করে
তাদের কাছে যেনা-ব্যভিচার তো কোনো
ব্যাপারই না। এ দিয়েই তো তাদের কাজ চলার কথা।
সামাজিক ও আইনগত দায়বদ্ধতায় আনতেই কি তবে
তাদের বিয়ের বৈধতা প্রয়োজন? উত্তর হ্যা হলে
প্রশ্ন, যারা ধর্মীয় ও সামাজিক রীতি-নীতির
তোয়াক্কা করে না তাদের সামাজিক বৈধতা দিতে
রাষ্ট্রের এত দায় কেন?
এটি আসলে প্রবঞ্চনামূলক জবাব। তা না হলে হঠাৎ
করে দু’জন কাজী নিয়োগ দিয়ে কেন বলা হবে,
সারাদেশেও প্রয়োজন হলে এ ধরনের কাজী
নিয়োগ হবে। যেখানে বছরে দু-চারজন নিজ ধর্ম
ছেড়ে অন্য ধর্ম গ্রহণ করে বিয়ে-শাদি করছে
সেখানে কয়জন কাজী লাগে? তাছাড়া ১৮৭২ সনের
বৃটিশ আইনই আমাদের রাখার দরকার কী? প্রতিনিয়ত
সব কিছু উল্টাতে পারলে ওই আইন নিয়ে কেন মাথা
ব্যথা?
অতএব সরকার ও দেশের সর্বশ্রেণীর মুসলিম
ভাই-বোনের প্রতি অনুরোধ থাকবে, আপনারা না
জেনে না বুঝে পবিত্র কুরআনের বিরুদ্ধে
অবস্থান নেবেন না। পবিত্র কুরআনের বিরুদ্ধে
অবস্থান নিলে তা-ই হবে আমাদের ধ্বংসের জন্য
যথেষ্ট। সর্বশক্তিমান আল্লাহই একমাত্র আমাদের
ভরসাস্থল; কেবল তিনিই যাবতীয় প্রতিকূলতা
থেকে এই দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে
পারেন। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে সুমতি দান
করুন। আমীন।
[1] . তাফসীর তাবারী : ৪/৩৬৪।
[2] . তাফসীরে তাবারী : ৪/৩৬৩; আল-ওয়াসিত :
৩২০-৩২১।
[3] . তাফসীরে ইবন কাছীর : ১/৪৭৪।
[4] . তাফসীরে কুরতুবী : ৩/৬৭-৬৯।
[5] . বুখারী : ২৪৭৫; মুসলিম : ৫৫৩।
[6] . আল-মুস্তাদরাক আলাস-সাহীহাইন : ৫৫; বাইহাকী,
শু‘আবুল ঈমান : ৪৯৬৪।
একজন মুসলিম কখনো অমুসলিম নারীকে বিয়ে
করতে পারে না। মুসলিম হয়ে অন্য
ধর্মাবলম্বীকে বিয়ে করা প্রসঙ্গে আল্লাহ
তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻨﻜِﺤُﻮﺍْ ﭐﻟۡﻤُﺸۡﺮِﻛَٰﺖِ ﺣَﺘَّﻰٰ ﻳُﺆۡﻣِﻦَّۚ ﻭَﻟَﺄَﻣَﺔٞ ﻣُّﺆۡﻣِﻨَﺔٌ ﺧَﻴۡﺮٞ
ﻣِّﻦ ﻣُّﺸۡﺮِﻛَﺔٖ ﻭَﻟَﻮۡ ﺃَﻋۡﺠَﺒَﺘۡﻜُﻢۡۗ ﻭَﻟَﺎ ﺗُﻨﻜِﺤُﻮﺍْ ﭐﻟۡﻤُﺸۡﺮِﻛِﻴﻦَ ﺣَﺘَّﻰٰ
ﻳُﺆۡﻣِﻨُﻮﺍْۚ ﻭَﻟَﻌَﺒۡﺪٞ ﻣُّﺆۡﻣِﻦٌ ﺧَﻴۡﺮٞ ﻣِّﻦ ﻣُّﺸۡﺮِﻙٖ ﻭَﻟَﻮۡ ﺃَﻋۡﺠَﺒَﻜُﻢۡۗ ﺃُﻭْﻟَٰٓﺌِﻚَ
ﻳَﺪۡﻋُﻮﻥَ ﺇِﻟَﻰ ﭐﻟﻨَّﺎﺭِۖ ﻭَﭐﻟﻠَّﻪُ ﻳَﺪۡﻋُﻮٓﺍْ ﺇِﻟَﻰ ﭐﻟۡﺠَﻨَّﺔِ ﻭَﭐﻟۡﻤَﻐۡﻔِﺮَﺓِ ﺑِﺈِﺫۡﻧِﻪِۦۖ
ﻭَﻳُﺒَﻴِّﻦُ ﺀَﺍﻳَٰﺘِﻪِۦ ﻟِﻠﻨَّﺎﺱِ ﻟَﻌَﻠَّﻬُﻢۡ ﻳَﺘَﺬَﻛَّﺮُﻭﻥَ ٢٢١ ﴾ [ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ٢٢١ ]
‘আর তোমরা মুশরিক নারীদের বিয়ে করো না,
যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে এবং মুমিন দাসী মুশরিক
নারীর চেয়ে নিশ্চয় উত্তম, যদিও সে
তোমাদেরকে মুগ্ধ করে। আর মুশরিক পুরুষদের
সাথে বিয়ে দিয়ো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে।
আর একজন মুমিন দাস একজন মুশরিক পুরুষের
চেয়ে উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে মুগ্ধ
করে। তারা তোমাদেরকে আগুনের দিকে আহ্বান
করে, আর আল্লাহ তাঁর অনুমতিতে তোমাদেরকে
জান্নাত ও ক্ষমার দিকে আহ্বান করেন এবং মানুষের
জন্য তাঁর আয়াতসমূহ স্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন,
যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে’। {সূরা আল-
বাকারা, আয়াত : ২২১}
আয়াত নাযিলের প্রেক্ষাপট হলো, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ মারছিদ নামক এক
সাহাবীকে মক্কায় প্রেরণ করেন গোপনে
গিয়ে সেখানে থেকে যাওয়া লোকদের
আনতে। তিনি সেখানে পৌঁছলে ‘ইনাক নামক এক
মুশরিক নারী তাঁর কথা শুনতে পায়। সে ছিল তাঁর
জাহেলী যুগের বান্ধবী। সে তাঁর কাছে এসে
বলল, হে আবূ মারছিদ তুমি কি আমায় সান্নিধ্য দেবে
না? তিনি বললেন, ধ্বংস হও তুমি হে ‘ইনাক, ইসলাম
এখন আমাদের মাঝে ওই কাজে অন্তরায় সৃষ্টি
করেছে। সে বলল, তবে কি তুমি আমায় বিয়ে
করতে পার? তিনি বললেন, হ্যা, কিন্তু আমাকে
আগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
কাছে যেতে হবে। তাঁর কাছে আমি (তোমাকে)
বিয়ে করার অনুমতি প্রার্থনা করব। সে বলল, তুমি
আমাকে উপেক্ষা করছ? অতপর মেয়েটি তাঁর
বিরুদ্ধে (নিজ গোত্রীয়) লোকদের সাহায্য
চাইল। তারা তাঁকে বেদম প্রহার করল। তারপর তাঁর পথ
ছেড়ে দিল। মক্কায় নিজের কাজ সেরে তিনি যখন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে
গেলেন, তাঁকে তিনি নিজের অবস্থা, ‘ইনাকের বিষয়
এবং এ জন্য প্রহৃত হবার ঘটনা জানালেন। তারপর
বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমার জন্য কি তাকে
(মুশরিক নারীকে) বিয়ে করা হালাল হবে? তখন
আল্লাহ এই আয়াতটি নাযিল করেন। [1]
এই আয়াতের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তাফসীর
শাস্ত্রের ইমাম ইবনু জারীর আত-তবারী রহিমাহুল্লাহ
বলেন,
ﺍﺧْﺘَﻠَﻒَ ﺃَﻫْﻞُ ﺍﻟﺘَّﺄْﻭِﻳﻞِ ﻓِﻲ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻵﻳَﺔِ : ﻫَﻞْ ﻧَﺰَﻟَﺖْ ﻣُﺮَﺍﺩًﺍ ﺑِﻬَﺎ
ﻛُﻞُّ ﻣُﺸْﺮِﻛَﺔٍ ، ﺃَﻡْ ﻣُﺮَﺍﺩًﺍ ﺑِﺤُﻜْﻤِﻬَﺎ ﺑَﻌْﺾَ ﺍﻟْﻤُﺸْﺮِﻛَﺎﺕِ ﺩُﻭﻥَ
ﺑَﻌْﺾٍ ؟ ﻭَﻫَﻞْ ﻧُﺴِﺦَ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﺑَﻌْﺪَ ﻭُﺟُﻮﺏِ ﺍﻟْﺤُﻜْﻢِ ﺑِﻬَﺎ ﺷَﻲْﺀٌ ﺃَﻡْ
ﻻَ ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺑَﻌْﻀُﻬُﻢْ : ﻧَﺰَﻟَﺖْ ﻣُﺮَﺍﺩًﺍ ﺑِﻬَﺎ ﺗَﺤْﺮِﻳﻢُ ﻧِﻜَﺎﺡِ ﻛُﻞِّ
ﻣُﺸْﺮِﻛَﺔٍ ﻋَﻠَﻰ ﻛُﻞِّ ﻣُﺴْﻠِﻢٍ ﻣِﻦْ ﺃَﻱِّ ﺃَﺟْﻨَﺎﺱِ ﺍﻟﺸِّﺮْﻙِ ﻛَﺎﻧَﺖْ
ﻋَﺎﺑِﺪَﺓَ ﻭَﺛَﻦٍ ﺃَﻭْ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﻳَﻬُﻮﺩِﻳَّﺔً ﺃَﻭْ ﻧَﺼْﺮَﺍﻧِﻴَّﺔً ﺃَﻭْ ﻣَﺠُﻮﺳِﻴَّﺔً ﺃَﻭْ
ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِﻫِﻢْ ﻣِﻦْ ﺃَﺻْﻨَﺎﻑِ ﺍﻟﺸِّﺮْﻙِ ، ﺛُﻢَّ ﻧُﺴِﺦَ ﺗَﺤْﺮِﻳﻢُ ﻧِﻜَﺎﺡِ
ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ ﺑِﻘَﻮْﻟِﻪِ : } ﻳَﺴْﺄَﻟُﻮﻧَﻚَ ﻣَﺎﺫَﺍ ﺃُﺣِﻞَّ ﻟَﻬُﻢْ ﻗُﻞْ ﺃُﺣِﻞَّ
ﻟَﻜُﻢُ ﺍﻟﻄَّﻴِّﺒَﺎﺕُ { ﺇِﻟَﻰ } ﻭَﻃَﻌَﺎﻡُ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺃُﻭﺗُﻮﺍ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏَ ﺣِﻞٌّ ﻟَﻜُﻢْ
ﻭَﻃَﻌَﺎﻣُﻜُﻢْ ﺣِﻞٌّ ﻟَﻬُﻢْ ﻭَﺍﻟْﻤُﺤْﺼَﻨَﺎﺕُ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨَﺎﺕِ
ﻭَﺍﻟْﻤُﺤْﺼَﻨَﺎﺕُ ﻣِﻦَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺃُﻭﺗُﻮﺍ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏَ ﻣِﻦْ ﻗَﺒْﻠِﻜُﻢْ { .. ﺫِﻛْﺮُ
ﻣَﻦْ ﻗَﺎﻝَ ﺫَﻟِﻚَ :
‘আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীর বিশারদগণ এ ব্যাপারে
মতবিরোধ করেছেন যে এতে সকল মুশরিকের
কথা বলা হয়েছে নাকি কতিপয় মুশরিকের কথা। আর
আয়াতটি নাযিল করার পর এর কিছুকে মানসূখ বা রহিত করা
হয়েছে কি-না। তাঁদের কেউ বলেছেন, আয়াতে
সকল মুসলিমের জন্য সব মুশরিক নারীর বিবাহকে
হারাম বুঝানো হয়েছে। চাই সে যে কোনো
ধরনের শিরকেই লিপ্ত থাকুক না কেন। হোক সে
মূর্তিপূজারী, ইহুদী, খ্রিস্টান, অগ্নিপূজারী বা অন্য
কোনো ধরনের শিরকে লিপ্ত কেউ।
অতপর আহলে কিতাবদের বিয়ে হারামের বিয়ষটি
রহিত ঘোষণা করা হয় নিচের আয়াতের মাধ্যমে।
আল্লাহ তা‘আলা তাতে ইরশাদ করেন,
﴿ ﭐﻟۡﻴَﻮۡﻡَ ﺃُﺣِﻞَّ ﻟَﻜُﻢُ ﭐﻟﻄَّﻴِّﺒَٰﺖُۖ ﻭَﻃَﻌَﺎﻡُ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺃُﻭﺗُﻮﺍْ ﭐﻟۡﻜِﺘَٰﺐَ
ﺣِﻞّٞ ﻟَّﻜُﻢۡ ﻭَﻃَﻌَﺎﻣُﻜُﻢۡ ﺣِﻞّٞ ﻟَّﻬُﻢۡۖ ﻭَﭐﻟۡﻤُﺤۡﺼَﻨَٰﺖُ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﻤُﺆۡﻣِﻨَٰﺖِ
ﻭَﭐﻟۡﻤُﺤۡﺼَﻨَٰﺖُ ﻣِﻦَ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺃُﻭﺗُﻮﺍْ ﭐﻟۡﻜِﺘَٰﺐَ ﻣِﻦ ﻗَﺒۡﻠِﻜُﻢۡ ﺇِﺫَﺁ
ﺀَﺍﺗَﻴۡﺘُﻤُﻮﻫُﻦَّ ﺃُﺟُﻮﺭَﻫُﻦَّ ﻣُﺤۡﺼِﻨِﻴﻦَ ﻏَﻴۡﺮَ ﻣُﺴَٰﻔِﺤِﻴﻦَ ﻭَﻟَﺎ
ﻣُﺘَّﺨِﺬِﻱٓ ﺃَﺧۡﺪَﺍﻥٖۗ ﻭَﻣَﻦ ﻳَﻜۡﻔُﺮۡ ﺑِﭑﻟۡﺈِﻳﻤَٰﻦِ ﻓَﻘَﺪۡ ﺣَﺒِﻂَ ﻋَﻤَﻠُﻪُۥ ﻭَﻫُﻮَ
ﻓِﻲ ﭐﻟۡﺄٓﺧِﺮَﺓِ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﺨَٰﺴِﺮِﻳﻦَ ٥ ﴾ [ ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ : ٥]
‘আজ তোমাদের জন্য বৈধ করা হলো সব ভালো
বস্তু এবং যাদেরকে কিতাব প্রদান করা হয়েছে,
তাদের খাবার তোমাদের জন্য বৈধ এবং তোমার
খাবার তাদের জন্য বৈধ। আর মুমিন সচ্চরিত্রা নারী এবং
তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া
হয়েছে, তাদের সচ্চরিত্রা নারীদের সাথে
তোমাদের বিবাহ বৈধ। যখন তোমরা তাদেরকে
মোহর দেবে, বিবাহকারী হিসেবে, প্রকাশ্য
ব্যভিচারকারী বা গোপনপত্নী গ্রহণকারী
হিসেবে নয়’। {সূরা আল-মায়িদা, আয়াত : ৫} এ আয়াতে
আল্লাহ তা‘আলা সতী-সাধ্বী খ্রিস্টান ও
ইহুদীদের বিয়ের অনুমতি দিয়েছেন।[2]
একই শাস্ত্রের আরেক ইমাম ইবন কাছীর
রহিমাহুল্লাহ বলেন, এ আয়াতে আল্লাহ সাধারণভাবে
শিরকে লিপ্ত সব নারীকে বিয়ে করা হারাম ঘোষণা
করেছেন, চাই সে মূর্তিপূজক কিংবা আহলে কিতাব
সম্প্রদায়ভুক্ত হোক। তবে পরবর্তীতে মায়িদার
আয়াতে তাদের মধ্যে কেবল আসমানী
কিতাবধারী সচ্চরিত্রা নারীদের বিশেষভাবে বিয়ের
অনুমতি দেয়া হয়েছে।[3]
উপরোক্ত ব্যাখ্যার আলোকে প্রতিভাত হয় যে
বিশেষ কিছু শর্ত সাপেক্ষেই কেবল খ্রিস্টান বা
ইহুদী নারীকে কোনো মুসলিম বিয়ে করতে
পারে।
এক. বাস্তবিকই আহলে কিতাব হতে হবে। শুধু নামে
ইহুদী কিংবা খ্রিস্টান হলে চলবে না। নামে ইহুদী-
খ্রিস্টান অথচ সে নাস্তিক কিংবা নিজ ধর্মকে বিশ্বাস
করে না; তাহলে চলবে না।
দুই. অবশ্যই তাকে পবিত্র হতে হবে। ব্যভিচারিণী
হলে চলবে না।
তিন. এমন কাউকে বিয়ে করা যাবে না যার জাতি পুরো
মুসলিম উম্মতের সাথে ঘোর শত্রুতা পোষণ
করে, যেমন : বর্তমান সময়ের ইসরাঈলের
ইহুদীরা।
চার. বিয়ের কারণে স্বামীর সন্তানের কোনো
বৈষয়িক ক্ষতি সাধিত হওয়ার আশংকা থাকলেও আহলে
কিতাব বিয়ে করা যাবে না। [4]
আন্তধর্ম বিয়ের ভয়াবহ পরিণতি :
বিয়ে একটি ধর্মীয় ও সামাজিক বন্ধন। নিজের
খেয়াল-খুশি মতো এ বন্ধনের নিয়মে ব্যত্যয়
ঘটাবার সুযোগ নেই। ইসলাম মানবজীবনের সব
পর্যায়ের যাবতীয় উপলক্ষ ও অনুসর্গকে
অন্তর্ভুক্ত করেছে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক,
অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা
কেমন হবে, দিয়েছে তার দ্ব্যর্থহীন
দিকনির্দেশনা। এই জীবনদিশা আল্লাহ প্রদত্ত বিধায়
এর মধ্যে কোনো গলদ নেই। সুন্দর সমাজ
ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিয়ে সম্পর্কিত আল্লাহর
নির্দেশনা অনুসরণের বিকল্প নেই। এর বাইরে
যাওয়ার চেষ্টা মানেই নিজেদের ধ্বংস নিজেরা
ডেকে আনা। ব্যক্তি স্বাধীনতার নাম দিয়ে
বল্গাহীনভাবে কিছু করার স্বাধীনতা ইসলামে নেই।
যারা নিজের স্বাধীনতা দিয়ে অন্যের ধর্ম, সম্মান,
রীতি-নীতি ও স্বাধীনতাকে নষ্ট করে তারা
মানবতার শত্রু।
আন্তধর্ম বিয়ের পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ।
বাংলাদেশে আগে দেখা যেত, কেউ নিজের ধর্ম
ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে চাইলে নিজ ধর্ম
ত্যাগ করে বিয়ে করতে হতো বিধায় সহজে
কেউ ওপথে হাঁটতো না। এখন বিষয়টি সহজ হয়ে
যাবে। ধর্ম ত্যাগ না করেই যুবক-যুবতীরা তাদের
রঙ্গলীলা সাঙ্গ করতে নেমে পড়বে।
কোনো ধর্মের স্বকীয়তা আর থাকবে না। যার
ফল দাঁড়াবে অদূর ভবিষ্যতে গোটা সমাজ ব্যবস্থাই
ধর্মহীন হয়ে পড়বে। যেনা-ব্যভিচার ডাল-ভাতে
পরিণত হবে। জন্ম নেবে জারজ সন্তান। একদিন
জারজ সন্তানে দেশ ভরে যাবে। আর এই ব্যভিচার
নামক গর্হিত কাজটি আল্লাহর কিতাব, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ ও সমগ্র উম্মাহর
ঐক্যমত্যে হারাম। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻘۡﺮَﺑُﻮﺍْ ﭐﻟﺰِّﻧَﻰٰٓۖ ﺇِﻧَّﻪُۥ ﻛَﺎﻥَ ﻓَٰﺤِﺸَﺔٗ ﻭَﺳَﺂﺀَ ﺳَﺒِﻴﻠٗﺎ ٣٢
﴾ [ ﺍﻻﺳﺮﺍﺀ : ٣٢ ]
‘আর তোমরা ব্যভিচারের কাছে যেয়ো না, নিশ্চয়
তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ’। {সূরা বানী ইসরাঈল,
আয়াত : ৩২}
ব্যভিচার তো দূরের কথা ইসলামে যে কোনো
ধরনের অশ্লীলতাকেই হারাম ঘোষণা করা
হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ﻗُﻞۡ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺣَﺮَّﻡَ ﺭَﺑِّﻲَ ﭐﻟۡﻔَﻮَٰﺣِﺶَ ﻣَﺎ ﻇَﻬَﺮَ ﻣِﻨۡﻬَﺎ ﻭَﻣَﺎ ﺑَﻄَﻦَ
ﻭَﭐﻟۡﺈِﺛۡﻢَ ﻭَﭐﻟۡﺒَﻐۡﻲَ ﺑِﻐَﻴۡﺮِ ﭐﻟۡﺤَﻖِّ ﻭَﺃَﻥ ﺗُﺸۡﺮِﻛُﻮﺍْ ﺑِﭑﻟﻠَّﻪِ ﻣَﺎ ﻟَﻢۡ ﻳُﻨَﺰِّﻝۡ
ﺑِﻪِۦ ﺳُﻠۡﻄَٰﻨٗﺎ ﻭَﺃَﻥ ﺗَﻘُﻮﻟُﻮﺍْ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻣَﺎ ﻟَﺎ ﺗَﻌۡﻠَﻤُﻮﻥَ ٣٣
﴾ [ﺍﻻﻋﺮﺍﻑ : ٣٣]
‘বল, ‘আমার রব তো হারাম করেছেন অশ্লীল
কাজ- যা প্রকাশ পায় এবং যা গোপন থাকে, আর পাপ ও
অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন এবং আল্লাহর সাথে
তোমাদের শরীক করা, যে ব্যাপারে আল্লাহ
কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেন নি এবং আল্লাহর
ব্যাপারে এমন কিছু বলা যা তোমরা জান না’। {সূরা আল-
আ‘রাফ, আয়াত : ৩৩}
অপর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ
করেন,
﴿ ۞ﻗُﻞۡ ﺗَﻌَﺎﻟَﻮۡﺍْ ﺃَﺗۡﻞُ ﻣَﺎ ﺣَﺮَّﻡَ ﺭَﺑُّﻜُﻢۡ ﻋَﻠَﻴۡﻜُﻢۡۖ ﺃَﻟَّﺎ ﺗُﺸۡﺮِﻛُﻮﺍْ ﺑِﻪِۦ
ﺷَﻴۡٔٗﺎۖ ﻭَﺑِﭑﻟۡﻮَٰﻟِﺪَﻳۡﻦِ ﺇِﺣۡﺴَٰﻨٗﺎۖ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻘۡﺘُﻠُﻮٓﺍْ ﺃَﻭۡﻟَٰﺪَﻛُﻢ ﻣِّﻦۡ ﺇِﻣۡﻠَٰﻖٖ ﻧَّﺤۡﻦُ
ﻧَﺮۡﺯُﻗُﻜُﻢۡ ﻭَﺇِﻳَّﺎﻫُﻢۡۖ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻘۡﺮَﺑُﻮﺍْ ﭐﻟۡﻔَﻮَٰﺣِﺶَ ﻣَﺎ ﻇَﻬَﺮَ ﻣِﻨۡﻬَﺎ ﻭَﻣَﺎ
ﺑَﻄَﻦَۖ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻘۡﺘُﻠُﻮﺍْ ﭐﻟﻨَّﻔۡﺲَ ﭐﻟَّﺘِﻲ ﺣَﺮَّﻡَ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﺇِﻟَّﺎ ﺑِﭑﻟۡﺤَﻖِّۚ ﺫَٰﻟِﻜُﻢۡ
ﻭَﺻَّﻯٰﻜُﻢ ﺑِﻪِۦ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢۡ ﺗَﻌۡﻘِﻠُﻮﻥَ ١٥١ ﴾ [ ﺍﻻﻧﻌﺎﻡ : ١٥١ ]
‘বল, ‘এসো, তোমাদের ওপর তোমাদের রব যা
হারাম করেছেন, তা তিলাওয়াত করি। তা এই যে,
তোমরা তার সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে
না এবং মা-বাবার প্রতি ইহসান করবে আর দারিদ্র্যের
কারণে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে
না। আমিই তোমাদেরকে রিযক দেই এবং
তাদেরকেও। আর অশ্লীল কাজের
নিকটবর্তী হবে না- তা থেকে যা প্রকাশ পায় এবং
যা গোপন থাকে। আর বৈধ কারণ ছাড়া তোমরা
সেই প্রাণকে হত্যা করো না, আল্লাহ যা হারাম
করেছেন। এগুলো আল্লাহ তোমাদেরকে
নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা বুঝতে পার’।
{সূরা আল-আন‘আম, আয়াত : ১৫১}
যেনা-ব্যভিচারের ভয়াবহতা তুলে ধরে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারবার মানবজাতিকে
সতর্ক করেছেন। যেমন আবূ সাঈদ খুদরী
রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
« ﻻ ﻳَﺰْﻧِﻲ ﺍﻟﺰَّﺍﻧِﻲ ﺣِﻴﻦَ ﻳَﺰْﻧِﻲ ﻭَﻫُﻮَ ﻣُﺆْﻣِﻦٌ , ﻭَﻻ ﻳَﺴْﺮِﻕُ
ﺍﻟﺴَّﺎﺭِﻕُ ﺣِﻴﻦَ ﻳَﺴْﺮِﻕُ ﻭَﻫُﻮَ ﻣُﺆْﻣِﻦٌ , ﻭَﻻ ﻳَﻨْﺘَﻬِﺐُ ﻣُﻨْﺘَﻬِﺐٌ
ﺍﻟﻨُّﻬْﺒَﺔَ ﻳَﺮْﻓَﻊُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﺃَﺑْﺼَﺎﺭَﻫُﻢْ ﺣِﻴﻦَ ﻳَﻨْﺘَﻬِﺒُﻬَﺎ ﻭَﻫُﻮَ
ﻣُﺆْﻣِﻦٌ » .
‘যেনাকারী মুমিন থাকে না যখন সে যেনা করে,
আর মদ্যপ মুমিন থাকে না যখন মদ পান করে, চোর
মুমিন থাকে না যখন সে চুরি করে, ছিনতাইকারী মুমিন
থাকে না যখন সে কোনোরূপ ছিনতাই করে আর
লোকেরা তার দিকে (বিস্ময় বিস্ফোরিত
নেত্রে) চেয়ে থাকে।’ [5]
আবদুর রহমান ইবন সাখার রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেন,
« ﺇِﺫَﺍ ﺯَﻧَﻰ ﺍﻟْﻌَﺒْﺪُ ﺧَﺮَﺝَ ﻣِﻨْﻪُ ﺍﻟْﺈِﻳﻤَﺎﻥُ ﻓَﻜَﺎﻥَ ﻓَﻮْﻕَ ﺭَﺃْﺳِﻪِ
ﻛَﺎﻟﻈُّﻠَّﺔِ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺧَﺮَﺝَ ﻣِﻦْ ﺫَﻟِﻚَ ﺍﻟْﻌَﻤَﻞِ ﻋَﺎﺩَ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﺍﻟْﺈِﻳﻤَﺎﻥُ » .
‘বান্দা যখন যেনা করে তখন তার কাছ থেকে ঈমান
বেরিয়ে যায় এবং তা ছায়ার মতো (শূন্যে) দুলতে
থাকে। অতপর যখন সে ওই কাজ থেকে নিবৃত হয়,
তখন তার কাছে ঈমান ফিরে আসে।’ [6]
বিশেষ বিবাহ আইনটি বাংলাদেশে কার্যকর হলে
সবচে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে দু’ধর্ম পালনকারী
দম্পতির সন্তানরা। মানসিকভাবে তারা বিকারগ্রস্ত হবে।
মুসলিম বাবা বলবেন, আল্লাহ এক আর মা বলবেন
ঈশ্বর তিনজন অথবা আমাদের অসংখ্য খোদা
রয়েছেন। মুসলিম বাবা যেটাকে বলবেন সত্য
সেটাকেই অমুসলিম মা বলবেন অসত্য। মা-বাবার এই
বিপরীত অবস্থান থেকে সন্তানের মনে ঘৃণার
জন্ম নেবে। জীবনের ঊষাকাল থেকে
মধ্যগগন অবধি সে হাবুডুবু খাবে সিদ্ধান্তহীনতার
চোরাবালিতে। এছাড়া উত্তরাধিকারী হয়ে মা বাবার
সম্পত্তি ভোগ করতেও ঝামেলায় পড়তে হবে
সন্তানকে। প্রচলিত আইনে স্বামী-স্ত্রীর
অধিকার পেতেও তাদের ঝামেলা পোহাতে
হবে। মোটকথা নৈরাজ্য ছাড়া উপায় নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের একজন
অধ্যাপক দৈনিক নয়াদিগন্তকে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের
এক অধ্যাপকের মুসলিম স্ত্রীর কথা তুলে ধরে
বলেন, ওই পরিবারে জন্ম নেয়া সন্তানটি কোন
ধর্ম গ্রহণ করবে, সেটি নির্ধারণ নিয়ে স্বামী-
স্ত্রীতে সমস্যা এখন মনোমালিন্য পর্যায়ে
পৌঁছেছে। তিনি বলেন, দেশের একজন খ্যাতিমান
প্রবাসী কথাশিল্পীর স্বামী মুসলিম। তিনি হিন্দু। তার
সন্তান মারা যাওয়ার পর তাকে জানাযা দেয়া হবে নাকি দাহ
করা হবে তা নিয়ে প্রচণ্ড সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছিল। তাই
এ ধরনের বিয়ে সমাজে কোনো রকমের
ভালো ফল বয়ে আনতে পারে না। এটা একটা
অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে মাত্র। (১ মে সংখ্যা)
তাই পৃথিবীর কোনো ধর্মই অন্য ধর্মের
অনুসারীকে বিয়ে করাটা ভালোভাবে নেয় না। এটি
একটি অস্বাভাবিক অবস্থা। ব্যতিক্রম শুধু ইহুদী ধর্ম।
তাদের ব্যাপারটি বেশ মজারও বটে! ইহুদীরা
তাদের মেয়েদের অন্য ধর্মাবলম্বীদের
কাছে বিয়ে দেয়, কিন্ত কখনোই ছেলেদের
এই অনুমতি দেয় না। কারণ তাদের বিশ্বাস, সন্তানেরা
তাদের মায়েদের ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত হয়। এ কারণে
বিল ক্লিন্টনের মেয়েকে এক ইহুদী ছেলে
বিয়ে করায় জুইস কাউন্সিল এর তীব্র সমালোচনা
করেছিল। অতএব নিজেদের জাতকে বিশুদ্ধ
রেখে অন্য সকল ধর্মের মধ্যে ফ্রি মিক্সিং বা
জগাখিচুড়িকে উত্সাহিত করা ইহুদীদের কৌশল। বাংলা
রম্য রচনার বরপুত্র সৈয়দ মুজতবা আলীর কর্নেল
গল্পে এর ইঙ্গিত দেওয়া আছে।
ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শ মতে শিশুকে তার বাবা মায়ের
ধর্মের অনুসারী ধরা হলে তার ব্যক্তিস্বাধীনতা
খর্ব হয়। শিশুকে যে কোনো নীতি বা
আদর্শের দীক্ষা দেওয়াই তার স্বাধীনতার
পরিপন্থী! তাই হয়তো বড় হয়ে বিবেক-বুদ্ধি
অনুসারে যে কোনো ধর্মের অনুকরণ করা না
করা তার এখতিয়ারে রাখা হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন
হলো, দেশাত্ববোধের বিষয়টিও কি তার
ইচ্ছাধীন? বড় হয়ে তার কি দেশের সংবিধান ও
আদর্শে বিশ্বাসী না হবারও অধিকার রয়েছে?
কোনো উদারতম ধর্মনিরপেক্ষ বা গণতান্ত্রিক
রাষ্ট্রও কিন্তু এ অধিকার দেবে না।
আসলে মানুষ কখনোই পুরোপুরি স্বাধীন নয়। তার
স্বাধীনতা সীমিত ও সুনিয়ন্ত্রিত। আর একজন
মুসলিমের স্বাধীনতার প্রথম শর্তই হলো তা
আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির মধ্যে থাকতে হবে।
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
﴿ ﻭَﻣَﻦ ﻳَﺒۡﺘَﻎِ ﻏَﻴۡﺮَ ﭐﻟۡﺈِﺳۡﻠَٰﻢِ ﺩِﻳﻨٗﺎ ﻓَﻠَﻦ ﻳُﻘۡﺒَﻞَ ﻣِﻨۡﻪُ ﻭَﻫُﻮَ ﻓِﻲ
ﭐﻟۡﺄٓﺧِﺮَﺓِ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﺨَٰﺴِﺮِﻳﻦَ ٨٥ ﴾ [ ﺍﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ : ٨٥ ]
‘আর যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দীন চায়
তবে তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে
না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত
হবে’। {সূরা আলে-ইমরান, আয়াত : ৮৫}
কেউ সুন্দরী বিধর্মী নারীতে মজে আল্লাহর
বিধান উপেক্ষা করবেন আর নিজেকে খুব ভালো
মুসলিম ভেবে আবার তৃপ্তও হবেন তা কিন্তু হয় না।
তারা মূলত বোকার স্বর্গে বাস করছেন। কিছু মানা
আর কিছু না মানার কোনো সুযোগ ইসলামে রাখা
হয় নি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ﺃَﻓَﺘُﺆۡﻣِﻨُﻮﻥَ ﺑِﺒَﻌۡﺾِ ﭐﻟۡﻜِﺘَٰﺐِ ﻭَﺗَﻜۡﻔُﺮُﻭﻥَ ﺑِﺒَﻌۡﺾٖۚ ﻓَﻤَﺎ ﺟَﺰَﺁﺀُ
ﻣَﻦ ﻳَﻔۡﻌَﻞُ ﺫَٰﻟِﻚَ ﻣِﻨﻜُﻢۡ ﺇِﻟَّﺎ ﺧِﺰۡﻱٞ ﻓِﻲ ﭐﻟۡﺤَﻴَﻮٰﺓِ ﭐﻟﺪُّﻧۡﻴَﺎۖ ﻭَﻳَﻮۡﻡَ
ﭐﻟۡﻘِﻴَٰﻤَﺔِ ﻳُﺮَﺩُّﻭﻥَ ﺇِﻟَﻰٰٓ ﺃَﺷَﺪِّ ﭐﻟۡﻌَﺬَﺍﺏِۗ ﻭَﻣَﺎ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻐَٰﻔِﻞٍ ﻋَﻤَّﺎ
ﺗَﻌۡﻤَﻠُﻮﻥَ ٨٥ ﴾ [ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ٨٥ ]
‘তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখ আর কিছু
অংশ অস্বীকার কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তা
করে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া তাদের কী
প্রতিদান হতে পারে? আর কিয়ামতের দিনে
তাদেরকে কঠিনতম আযাবে নিক্ষেপ করা হবে।
আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে গাফিল
নন’। {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ৮৫}
নিজের মন মতো নয় আমাদের সব কাজ হতে
হবে আল্লাহর প্রেরিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের আদর্শ অনুযায়ী। আল্লাহ তা‘আলা
ইরশাদ করেন,
﴿ ﻓَﻠَﺎ ﻭَﺭَﺑِّﻚَ ﻟَﺎ ﻳُﺆۡﻣِﻨُﻮﻥَ ﺣَﺘَّﻰٰ ﻳُﺤَﻜِّﻤُﻮﻙَ ﻓِﻴﻤَﺎ ﺷَﺠَﺮَ ﺑَﻴۡﻨَﻬُﻢۡ
ﺛُﻢَّ ﻟَﺎ ﻳَﺠِﺪُﻭﺍْ ﻓِﻲٓ ﺃَﻧﻔُﺴِﻬِﻢۡ ﺣَﺮَﺟٗﺎ ﻣِّﻤَّﺎ ﻗَﻀَﻴۡﺖَ ﻭَﻳُﺴَﻠِّﻤُﻮﺍْ
ﺗَﺴۡﻠِﻴﻤٗﺎ ٦٥ ﴾ [ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ٦٥]
‘অতএব তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না
যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে
তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে
ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে
কোনো দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে
মেনে নেয়’। {সূরা আন-নিসা, আয়াত : ৬৫}
বাংলাদেশে আন্তধর্ম বিয়ে আইন :
নিজ ধর্ম বিশ্বাস বাদ দিয়ে যেসব নারী-পুরুষ বিয়ে
করতে আগ্রহী তাদের বিয়ের রেজিস্ট্রি
করতে গত ১৮ এপ্রিল ২০১২ ইং আইনমন্ত্রীর
এপিএস (সহকারী একান্ত সচিব) আকছির এম
চৌধুরীকে নিয়োগ দেয়া হয়। এতদিন এই বিয়ে
পড়ানোর একমাত্র স্থান হিসেবে নির্ধারিত ছিল পুরান
ঢাকার পাটুয়াটুলী শরৎচন্দ্র ব্রাহ্ম প্রচারক নিবাস।
এখানে প্রাণেশ সমাদ্দার ছিলেন সরকার নিযুক্ত
একমাত্র রেজিস্ট্রার। এখন উভয়ে এই বিয়ে
রেজিস্ট্রি করতে পারবেন। এখানে সবাই
স্বাধীনভাবে যে কোনো ধর্মের (হিন্দু-বৌদ্ধ,
খ্রিস্টান-মুসলমান) নারী-পুরুষ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ
হতে পারবেন।
এই আইন অনুযায়ী একজন মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ,
খ্রিস্টান, ইহুদী কিংবা অন্য যে কোনো ধর্মের
যে কেউ যে কাউকে বিয়ে করতে পারবে।
এজন্য পাত্র-পাত্রী কাউকেই ধর্মান্তরিত হতে
হবে না। ধর্ম পরিবর্তন ছাড়াই তারা দাম্পত্য জীবনে
প্রবেশ করতে পারবে। ইচ্ছে করলে স্বামী-
স্ত্রী উভয়ে অথবা যে কোনো একজন নিজ
ধর্মীয় বিশ্বাস বাদ দিতে পারে। এ ধরনের বিয়ের
মাধ্যমে জন্ম নেয়া সন্তানদের কোনো
ধর্মীয় পরিচয় থাকবে না। বড় হয়ে (১৮ বছর) তারা
যে কোনো ধর্ম বেছে নিতে পারবে অথবা
ধর্ম বিশ্বাস ছাড়াই জীবন যাপন করতে পারবে। (১
মে, ২০১২ দৈনিক নয়া দিগন্ত ও আমার দেশ)
আইন সম্পর্কে আইন মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা :
আইনটি পাসের উদ্যোগ নেয়ার পর থেকে
দেশের আলেম সমাজ একে ইসলামবিরোধী
আখ্যায়িত করে বক্তৃতা-বিবৃতি ও প্রতিবাদ জানিয়ে
আসছেন। সকল দল-মতের ইসলামী ভাবাপন্ন
নেতৃবৃন্দ এবং সর্বশ্রেণীর ধর্মপ্রাণ মানুষ এর
প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার
বলছে, প্রস্তাবিত আইনে ইসলামবিরোধী কিছু
নেই।
১৫ মে (সোমবার) আইন মন্ত্রণালয় থেকে বিবাহ
আইন সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয়, ‘বিশেষ বিবাহ
আইনটি ১৮৭২ সালে প্রণীত হয়েছে। এ আইন
এখনো বর্তমান আছে। বর্তমান সরকারের সময় এ
আইনের কোনো প্রকার সংশোধন হয় নি। আইনটি
অপরিবর্তিত অবস্থায় বহাল আছে।’
এতে আরো বলা হয়েছে, ‘১৮৭২ সালের এ
আইন অনুযায়ী একজন মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান,
ইহুদী কিংবা অন্য যে কোনো ধর্মের যে
কেউ যে কাউকে বিয়ে করতে পারবে। এজন্য
পাত্র-পাত্রী কাউকেই ধর্মান্তরিত হতে হবে না। এ
ধরনের বিয়ের মাধ্যমে জন্ম নেয়া সন্তানদের
কোনো ধর্মীয় পরিচয় থাকবে না। তারা ১৮ বছর
বয়সের পর যে কোনো ধর্ম বেছে নিতে
পারবে।’ (আমার দেশ : ১৬/০৫/২০১২)
আইন মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যার অসারতা :
বক্তব্যটি আসলে একটি স্পষ্ট মিথ্যাচারের নমুনা।
কেননা, ১৮৭২ সালের আইনেও মুসলমান কর্তৃক
বিধর্মীদের বিয়ে জায়িয বলা হয় নি। ১৮৭২ সালের
বিশেষ বিয়ে আইনে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি
খ্রিস্টান, ইহুদী, হিন্দু, মুসলিম, পারসি, বৌদ্ধ, শিখ অথবা
জৈন কোনো ধর্মই পালন করে না, তারা এ আইনের
অধীনে বিয়ে করতে পারে। এ আইনের
অধীনে বিয়ে করতে হলে পাত্র-পাত্রীকে
ঘোষণা করতে হবে, তারা কোনো ধর্মে
বিশ্বাস করে না। ধর্ম ত্যাগের ঘোষণা না করলে
বিয়েটি অবৈধ, বরং বাতিল হবে। তবে বিয়েটি যদি হিন্দু,
বৌদ্ধ, শিখ ও জৈনদের মধ্যে সম্পাদন করা হয় তাহলে
তারা নিজ নিজ ধর্ম অনুসরণ করতে পারবে।
নিচে ১৮৭২ সালে প্রণীত স্পেশাল ম্যারিজ এ্যাক্ট
বা বিশেষ বিবাহ আইনটি হুবহু তুলে ধরা হলো :
THE SPECIAL MARRIAGE ACT, 1872
(ACT NO. III OF 1872). [ 18th July, 1872]
Local extent 1. This Act extends to the whole of
[Bangladesh].
An Act to provide a form of Marriage in certain
cases.
Preamble WHEREAS it is expedient to provide a
form of marriage for persons who do not profess
the Christian, Jewish, Hindu, Muslim, Parsi,
Buddhist, Sikh or Jaina religion, and for persons
who profess the Hindu, Buddhist, Sikh or Jaina
religion and to legalize certain marriages the
validity of which is doubtful; It is hereby enacted
as follows:–
Conditions upon which marriages under Act may
be celebrated :
2. Marriages may be celebrated under this Act
between persons neither of whom professes the
Christian or the Jewish, or the Hindu or the
Muslim or the Parsi or the Buddhist, or the Sikh
or the Jaina religion, or between persons each of
whom professes one or other of the following
religions, that is to say, the Hindu, Buddhist, Sikh
or Jaina religion upon the following conditions:–
(1) neither party must, at the time of the
marriage, have a husband or wife living:
(2) the man must have completed his age of
eighteen years, and the woman her age of
fourteen years, according to the Gregorian
calendar:
(3) each party must, if he or she has not
completed the age of twenty-one years, have
obtained the consent of his or her father or
guardian to the marriage:
(4) the parties must not be related to each other
in any degree of consanguinity or affinity which
would, according to any law to which either of
them is subject, render a marriage between them
illegal.
1st Proviso- No such law or custom, other than
one relating to consanguinity or affinity, shall
prevent them from marrying.
2nd Proviso- No law or custom as to
consanguinity shall prevent them from marrying,
unless a relationship can be traced between the
parties through some common ancestor, who
stands to each of them in a nearer relationship
than that of great-great-grand-father or great-
great-grand-mother, or unless one of the parties
is the lineal ancestor, or the brother or sister of
some lineal ancestor, of the other.
আইনের ধারাগুলো পড়লেই বুঝা যায় বর্তমানে
শুভঙ্করের ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। বৃটিশ
প্রণীত এই আইনটিকে বলা হয়েছে ‘বিশেষ বিবাহ
আইন’। পক্ষান্তরে সরকার যে আইনটি করতে
যাচ্ছে তা মূলত তো ‘আন্তধর্ম বিয়ে আইন’।
বিশেষ আর আন্তধর্ম বিয়ের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য
রয়েছে। বিশেষ বিবাহ আইন হলো,
স্বধর্মত্যাগীদের জন্য এক বিশেষ ব্যবস্থা।
পক্ষান্তরে আন্তধর্ম বিয়ে হলো, এক ধর্মের
লোকের সঙ্গে আরেক ধর্মাবলম্বীর বিয়ে।
সুতরাং বৃটিশ আমলে খ্রিস্টান সরকারও কিন্তু সরাসরি
কুরআন-সুন্নাহর সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধাতে যায় নি। অতএব
কুরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন না করার
প্রতিশ্রুতি দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের ভোটে
নির্বাচিত মুসলিম সরকারকে বিষয়টি গভীরভাবে
ভেবে দেখতে হবে। যারা এমন বিয়ের বাঁধনে
জড়াতে চান তাদের উদ্দেশে বলি, সমাজ ও
ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেই যদি বিয়ে
করতে হয় তবে এ সম্পর্কে জড়ানোর কী
দরকার? যারা সরাসরি আল্লাহর বাণীকে অবজ্ঞা করে
তাদের কাছে যেনা-ব্যভিচার তো কোনো
ব্যাপারই না। এ দিয়েই তো তাদের কাজ চলার কথা।
সামাজিক ও আইনগত দায়বদ্ধতায় আনতেই কি তবে
তাদের বিয়ের বৈধতা প্রয়োজন? উত্তর হ্যা হলে
প্রশ্ন, যারা ধর্মীয় ও সামাজিক রীতি-নীতির
তোয়াক্কা করে না তাদের সামাজিক বৈধতা দিতে
রাষ্ট্রের এত দায় কেন?
এটি আসলে প্রবঞ্চনামূলক জবাব। তা না হলে হঠাৎ
করে দু’জন কাজী নিয়োগ দিয়ে কেন বলা হবে,
সারাদেশেও প্রয়োজন হলে এ ধরনের কাজী
নিয়োগ হবে। যেখানে বছরে দু-চারজন নিজ ধর্ম
ছেড়ে অন্য ধর্ম গ্রহণ করে বিয়ে-শাদি করছে
সেখানে কয়জন কাজী লাগে? তাছাড়া ১৮৭২ সনের
বৃটিশ আইনই আমাদের রাখার দরকার কী? প্রতিনিয়ত
সব কিছু উল্টাতে পারলে ওই আইন নিয়ে কেন মাথা
ব্যথা?
অতএব সরকার ও দেশের সর্বশ্রেণীর মুসলিম
ভাই-বোনের প্রতি অনুরোধ থাকবে, আপনারা না
জেনে না বুঝে পবিত্র কুরআনের বিরুদ্ধে
অবস্থান নেবেন না। পবিত্র কুরআনের বিরুদ্ধে
অবস্থান নিলে তা-ই হবে আমাদের ধ্বংসের জন্য
যথেষ্ট। সর্বশক্তিমান আল্লাহই একমাত্র আমাদের
ভরসাস্থল; কেবল তিনিই যাবতীয় প্রতিকূলতা
থেকে এই দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে
পারেন। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে সুমতি দান
করুন। আমীন।
[1] . তাফসীর তাবারী : ৪/৩৬৪।
[2] . তাফসীরে তাবারী : ৪/৩৬৩; আল-ওয়াসিত :
৩২০-৩২১।
[3] . তাফসীরে ইবন কাছীর : ১/৪৭৪।
[4] . তাফসীরে কুরতুবী : ৩/৬৭-৬৯।
[5] . বুখারী : ২৪৭৫; মুসলিম : ৫৫৩।
[6] . আল-মুস্তাদরাক আলাস-সাহীহাইন : ৫৫; বাইহাকী,
শু‘আবুল ঈমান : ৪৯৬৪।
Comments
Post a Comment