বিবাহ বিচ্ছেদ : ইসলামী শরীয়তের বিধান

খোলা  Devorce

Divorce-Talaq
‘খোলা’ ‏( ﺍﻟْﺨُﻠْﻊُ‏) অর্থ : কাপড় খুলে ফেলা।
পবিত্র কুরআনে স্বামী-স্ত্রীকে
‘পরস্পরের জন্য পোষাক’ (বাক্বারাহ
২/১৮৭) স্বরূপ বলা হয়েছে। স্বামীর
নিকট থেকে স্ত্রী কোন কিছুর
বিনিময়ে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে
নেওয়াকেই শারঈ পরিভাষায় ‘খোলা’
বলা হয়।[1]
মুনাফিক নেতা আব্দুল্লাহ বিন
উবাইয়ের কন্যা জামীলা কিংবা
সাহ্ল আনছারী (রাঃ)-এর কন্যা
হাবীবাহ নাম্নী জনৈকা মহিলা
একদিন ফজরের অন্ধকারে রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ)-এর দরবারে এসে তার স্বামী
ছাবিত বিন ক্বায়েস বিন শাম্মাস-এর
বিরুদ্ধে অভিযোগ করল যে, সে তাকে
মেরেছে ও অঙ্গহানি করেছে। সে বলল,
আল্লাহর কসম! আমি তার দ্বীন বা
চরিত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করি না
বরং তার বেঁটে অবয়ব ও কুৎসিত
চেহারার অভিযোগ করি। হে রাসূল!
যদি আল্লাহর ভয় না থাকত তাহ’লে
বাসর রাতে আমি তার মুখে থুথু নিক্ষেপ
করতাম’। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
ছাবিতকে ডাকালেন ও তার মতামত
জানতে চাইলেন। তিনি বললেন, হে
আল্লাহর রাসূল! আমি তাকে ‘মোহর’
স্বরূপ আমার সবচেয়ে মূল্যবান দু’টি
খেজুর বাগান দিয়েছিলাম, যা তার
অধিকারে আছে। যদি সেটা আমাকে
ফেরত দেয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তখন
মহিলাকে বললেন, তুমি কি বলতে চাও।
মহিলাটি বলল হাঁ। ফেরৎ দেব। চাইলে
আরো বেশী দেব’। তখন রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) ছাবিতকে বললেন, তুমি তোমার
স্ত্রীকে পৃথক করে দাও। অতঃপর তাই
করা হ’ল।[2]
ইবনু জারীর বলেন যে, উপরোক্ত ঘটনা
উপলক্ষে অত্র আয়াত (বাক্বারাহ ২২৯-
এর দ্বিতীয়াংশ) নাযিল হয়। আবদুল্লাহ
ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, ইসলামের
ইতিহাসে এটাই হ’ল ‘খোলা’-র প্রথম
ঘটনা এবং এটাই হ’ল খোলা-র মূল দলীল।
[3]
‘খোলা’ মূলতঃ ‘ফিসখে নিকাহ’ বা
বিবাহ মুক্তি। কুরআনে দু’টি তালাক
দেওয়ার পরে তৃতীয় তালাক-এর পূর্বে
মালের বিনিময়ে বিবাহ মুক্তি বা
‘খোলা’-এর কথা এসেছে। এতে বুঝা
যায় যে, ‘খোলা’ তালাক নয়, বরং
বিচ্ছেদ মাত্র। যদি খোলা তালাকই
হ’ত, তবে শেষের তালাকটি চতুর্থ
তালাক বলে গণ্য হ’ত। অথচ সকল
বিদ্বান একমত যে, শেষে যে তালাক-
এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেটি
তৃতীয় তালাক, চতুর্থ তালাক নয়। নবী
করীম (ছাঃ) ছাবেত বিন ক্বায়েস
(রাঃ)-এর স্ত্রীকে ‘খোলা’ করে
নেওয়ার পর তাকে ‘খোলা’র ইদ্দত স্বরূপ
এক ঋতু পর্যন্ত অপেক্ষা করতে
বলেছিলেন।[4]
উক্ত হাদীছটিও প্রমাণ করে যে,
‘খোলা’ তালাক নয়। কারণ যদি তালাক
হ’ত, তবে উক্ত মহিলাকে তিনি তিন
‘তোহর’ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলতেন।
বুখারী শরীফে ‘খোলা’র ক্ষেত্রে যে
‘তালাক’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, তা
ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। কেননা উক্ত
হাদীছটি ইবনু আববাস (রাঃ) বর্ণিত।
পক্ষান্তরে আবূ দাউদ, নাসাঈ,
মুওয়াত্ত্বা বর্ণিত খোলাকারিণী
মহিলা ছাবিত-এর স্ত্রী জামীলা বা
হাবীবাহ্-র বর্ণনায় এসেছে ﻭَﺧَﻞِّ ﺳﺒِﻴْﻠَﻬَﺎ
অর্থাৎ ‘মহিলাকে ছেড়ে দাও’। অতএব এ
বিষয়ে উক্ত মহিলার বক্তব্যই
অগ্রাধিকারযোগ্য।[5]
হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,
‘খোলা’ যে তালাক নয়, তার প্রমাণ
হ’লঃ তালাকের ক্ষেত্রে আল্লাহ যে
তিনটি বিধানের কথা বলেছেন
সেগুলির যেগুলির সব ক’টি ‘খোলা’তে
পাওয়া যায় না। তিনটি নিম্নরূপ-
(১) ‘তালাকে রাজঈ’র পর স্বামী তার
স্ত্রীকে ইদ্দতের মধ্যে বিনা বিবাহে
ফিরিয়ে নিতে পারবে। কিন্তু ‘খোলা’
হ’লে স্ত্রীর সম্মতি ব্যতীত তা পারবে
না।
(২) ‘তালাক’ তিনটি পর্যন্ত সীমিত।
সুতরাং তালাকের সংখ্যা পূর্ণ হয়ে
গেলে স্ত্রীর অন্য স্বামীর সাথে
বিবাহ ও মিলন না হওয়া পর্যন্ত প্রথম
স্বামী তাকে ফিরিয়ে নিতে পারবে
না। কিন্তু ‘খোলা’য় স্ত্রীকে অপর
কারো বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ না হয়েই
প্রথম স্বামীর কাছে নতুন বিবাহের
মাধ্যমে ফিরে যেতে পারবে।
(৩) ‘খোলা’র ইদ্দত হ’ল এক ঋতু।
পক্ষান্তরে সহবাস কৃত স্ত্রীর
তালাকের ইদ্দত তিন তোহর’।[6]
ঋতুকালে বা পবিত্রকালে, সহবাস কৃত
বা সহবাসহীন, সকল অবস্থায় স্ত্রী
‘খোলা’ করতে পারে (ফিক্বহুস সুন্নাহ
২/৩২৩) । ‘মহরানা’ ফিরিয়ে দিয়ে বা
অন্য কোন মালের বিনিময়ে ‘খোলা’
করাই দলীল সম্মত। তবে মালের
বিনিময় ছাড়াও ‘খোলা’ সংঘটিত হ’তে
পারে। বিশেষ করে স্বামীর পক্ষ থেকে
যদি স্ত্রীকে ক্ষতিগ্রস্ত করার কুমতলব
থাকে, তবে সেখানে মালের বিনিময়
ছাড়াই আদালত উভয়ের মধ্যে বিবাহ
বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে। কারণ হাদীছে
এসেছে, ﻻَ ﺿَﺮَﺭَ ﻭَﻻَﺿِﺮَﺍﺭَ ‘কোন ক্ষতি করা
চলবে না, ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া যাবে না’।
[7]
চার খলীফাসহ ছাহাবী বিদ্বানগণের
মতে খোলা তালাকের ইদ্দত হ’ল এক
ঋতুকাল। কিন্তু জমহূর বিদ্বানগণের
মতে অন্যান্য তালাকের ন্যায় এতেও
স্ত্রী তিন ঋতুকাল পর্যন্ত ইদ্দত পালন
করবে।[8] স্ত্রীর সম্মতি ব্যতীত ইদ্দত
কালের মধ্যে তাকে ফিরিয়ে নেওয়া
জায়েয নয়।[9] ইদ্দতকালের মধ্যে
উভয়ের সম্মতিতে পুনরায় বিবাহ হ’তে
পারে।[10] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ
করেন,
ﺃَﻳُّﻤَﺎ ﺍِﻣْﺮَﺃَﺓٍ ﺳَﺄَﻟَﺖْ ﺯَﻭْﺟَﻬَﺎ ﻃَﻼَﻗًﺎ ﻓِﻲْ ﻏَﻴْﺮِ ﻣَﺎ ﺑَﺄْﺱٍ
ﻓَﺤََﺮَﺍﻡٌ ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﺭَﺍﺋِﺤَﺔُ ﺍﻟﺠَﻨَّﺔِ -
‘যে মহিলা তার স্বামীর নিকট থেকে
কোন ক্ষতির আশংকা ছাড়াই তালাক
প্রার্থনা করবে, সে মহিলা
জান্নাতের সুগন্ধি পাবে না’।[11]
[1]. ফিক্বহুস সুন্নাহ ২/৩১৯ পৃঃ।
[2]. বুখারী, মুওয়াত্ত্বা, আবুদাঊদ, ইবনু
জারীর, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ; ইবনু
কাছীর ১/২৮১-৮২; মিশকাত হা/৩২৭৪
‘বিবাহ’ অধ্যায়-১৩ ‘খোলা ও তালাক’
অনুচ্ছেদ-১১; ইবনু হাজার দু’টিকে পৃথক
ঘটনা মনে করেন। শাওকানী, নায়লুল
আওত্বার (কায়রো : ১৩৯৮/১৯৭৮ খৃঃ)
‘খোলা’ অনুচ্ছেদ, ৮/৪৩ পৃঃ।
[3]. তাফসীরে ইবনে কাছীর ১/২৮১ পৃঃ।
[4]. আবু্দাঊদ হা/২২২৯-৩০, তিরমিযী
হা/১১৮৫, নাসাঈ হা/৩৪৯৭, ইবনু মাজাহ
হা/২০৫৮, হাদীছ ছহীহ; নায়লুল
আওত্বার ৮/৪১ পৃঃ।
[5]. নায়লুল আওত্বার ৮/৪৫-৪৬।
[6]. নায়লুল আওত্বার ৮/৪৬-৬৭।
[7]. ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/১৮৯৬।
[8]. ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/১৮৯৫, ৯৬;
ফিক্বহুস সুন্নাহ ২/৩২৩,৩২৭-২৮।
[9]. তাফসীরে ইবনে কাছীর ১/২৮৩-৮৪;
কুরতুবী ৩/১৪৩-৪৫।
[10]. ফিক্বহুস সুন্নাহ ২/৩২৪।
[11]. আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত
হা/৩২৭৯।

Comments

Popular posts from this blog

বাংলাদেশী মেয়েদের হট ছবি

হে যুবক কোন দিকে যাও!! জান্নাতি হুর তোমাকে ডাকছে

ইসলামের দৃষ্টিতে যৌন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও শক্তি বৃদ্ধিকারী খাদ্য-পানীয়