কন্যা পক্ষের অশ্রু বর পক্ষের উল্লাস : যৌতুক

যৌতুক : কনের
অশ্রু, বরের উল্লাস.women-labor-in-middle-east-300x168

বর-কনে পছন্দের পর উভয় পক্ষ
আলোচনায় বসে। বিয়ের দিনক্ষণ
ঠিক করা হয়। কোথায় আকদ হবে,
কনেকে কবে তুলে দেওয়া হবে,
ওলিমা কবে হবে-এসব সাব্যস্ত হয়।
এর সঙ্গে সমাজের একটি বড়
অংশে আলোচনা হয় ‘দেনা-পাওনা’
নিয়ে। এই দেনা পাওনার
আলোচনাটা অনেক সময় একদম
শুরুতেই হয়। কখনো কখনো বর-কনে
পছন্দেরও আগে। যেন ‘দেনা-
পাওনা’টাই মুখ্য, বর ও কনের
পছন্দের বিষয়টি গৌন। ‘দেনা-
পাওনা’ মনমতো হলে ‘কালা-ধলা’
কোনো ব্যাপারই নয়। এই দেনা-
পাওনাটা কী? মেয়েপক্ষ বর ও
বরের পরিবারকে কী কী দেবে তা
সাব্যস্ত করাই দেনা-পাওনা। বহু
পরিবারে বিয়ের ক্ষেত্রে এটা
অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিয়ের
আলোচনার সমস্ত মনোযোগ ও
বুদ্ধিমত্তা এখানে প্রয়োগ করতে
দেখা যায়। বাস্তবে এ দেনা-
পাওনার কিছু অংশ নগদ ও কিছু
বকেয়া রাখা হয়। সেটা পরে
মেয়েপক্ষের কাছ থেকে উসূল করে
নেওয়া হয়। কিংবা উসূল করতে
গিয়ে নব পরিণীতা মেয়েটির
জীবন দুর্বিষহ করে তোলা হয়। এরই
নাম-যৌতুক।
দুই.
বিয়ে উপলক্ষে মেয়েপক্ষের ওপর
চাপিয়ে দেওয়া যৌতুকের এই
অভিশাপ কেবল আমাদের দেশে
সীমাবদ্ধ নয়। এর বিস্তৃতি পুরো
উপমহাদেশজুড়ে। অর্থাৎ
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান।
১৯৪৭ পূর্ব ভারতবর্ষের বর্তমান
সীমানায় যৌতুক প্রথার প্রচলন
রমরমা। ঠিক এভাবে ও এরূপে
যৌতুক প্রচলনের নজীর পৃথিবীর
অন্য দেশগুলোতে পাওয়া যায় না
বলে জানা গেছে। মেয়েপক্ষের
ওপর চাপিয়ে দিয়ে, সাব্যস্ত করে,
অবধারিত পাওনা মনে করে যৌতুক
দেওয়া-নেওয়ার নজীর অন্য
কোথাও নেই। মুসলিম দেশগুলোতে
তো নেই-ই। খুঁজতে গিয়ে যেটা
পাওয়া যায়, সেটি হচ্ছে
প্রতিবেশী সম্প্রদায়ের প্রভাবই
এর প্রধান কারণ। উপমহাদেশের
বৃহত্তর সম্প্রদায়-হিন্দু জনগোষ্ঠীর
বৈবাহিক রীতিতে যৌতুকের গুরুত্ব
অত্যধিক। ওই ধর্মে
উত্তরাধিকারের সম্পদে মেয়েদের
অংশিদারিত্বের স্বীকৃতি নেই।
বিয়ের সময়ই মোটামুটিভাবে ‘যা
দেওয়া যায় ও যা নেওয়া যায়’-এর
পর্বটি সম্পন্ন করা হয়। এ জন্য
যৌতুক তাদের বিবাহপর্বের একটি
শক্তিশালী অনুষঙ্গ ও উপলক্ষ
হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে এসেছে ও
আসছে। এ অঞ্চলে প্রতিবেশী বড়
সম্প্রদায়টির সংস্কৃতি ও
জীবনাচারের প্রভাব মুসলমানদের
জীবনে যেমন অন্য বহু ক্ষেত্রে
দেখা যায়, তেমনি ধরা পড়ে এই
যৌতুকের ক্ষেত্রেও। অথচ মুসলিম
জীবনে এই বিষয়টির চিত্র হওয়ার
কথা সম্পূর্ণ বিপরীত। ইসলামের
বিধান সেটাই। বিয়ে, বা
দাম্পত্যের ক্ষেত্রে ছেলে দেবে,
মেয়ে নেবে। যেমন মোহর। মেয়ে
কিংবা মেয়েপক্ষের এ ক্ষেত্রে
কিছুই দেওয়ার কথা নয়। কিন্তু
প্রতিবেশী সম্প্রদায়ের প্রভাব ও
রেওয়াজ থেকে নেওয়া এ রীতির
কারণে বহু মুসলিম নারীর জীবন
আজ অভিশাপের পাঁকে আটকে
যাচ্ছে।
মুসলিম সমাজের বড় একটি অংশের
এই যৌতুক প্রথাকে আঁকড়ে থাকার
পেছনে আরেকটি কারণ হচ্ছে,
সামাজিক রেওয়াজগত সিদ্ধতা।
আর্থিক সুবিধা ও স্বার্থ ত্যাগ
করা সাধারণভাবে মানুষের জন্য
কঠিন। এতে সামাজিক রেওয়াজ ও
রেওয়াজগত স্বীকৃতি থাকলে
সেটি যেন আরেকটু অধিকারের
ছোঁয়া পেয়ে যায়। শুরুতে অন্য
সম্প্রদায়ের প্রভাবে মুসলিম
সমাজে যৌতুক প্রথার অনুপ্রবেশ
ঘটলেও এখন আর এতে প্রভাব-
প্রতিক্রিয়ার কিছু নেই। এটা এখন
নিজেদের মধ্যেই স্বাভাবিক
একটা লেনদেন ও দেনা-পাওনার
হিসাবে পরিণত হয়েছে। বরের
পরিবার স্বচ্ছল ও বিত্তবান হলেও
এখন কনেপক্ষের সঙ্গে দেনা-
পাওনা নিয়ে কথা বলেন এবং
ব্যবসায়িক লেনদেনের মতো এই
দেনা-পাওনার হিসাব বুঝে নেন।
তবে এ বিষয়টিকে এক্ষেত্রে
উড়িয়ে দেওয়া যায় না যে, এর
সঙ্গে নির্লজ্জ ও নির্মম লোভের
একটা সম্পর্ক রয়েছে। দেখা যায়,
অন্য ধর্ম ও সম্প্রদায়ের অন্য বহুবিধ
প্রভাব সম্পর্কে বিগত এক-দু’
শতাব্দীতে আলেম-সমাজের পক্ষ
থেকে সতর্ক করার পর অনেকে
সেগুলো ত্যাগ করেছেন। কিন্তু
যৌতুকের মায়া ত্যাগ করে আসতে
পারছেন না অনেকেই। যে
মেয়েটিকে পছন্দ করে নিজেদের
ঘরে ‘আপন’ করে নিয়ে আসা হচ্ছে
তার পরিবারের কাছ থেকেই
যৌতুক হিসেবে অর্থ ও আসবাবপত্র
চেয়ে-চিন্তে, ধার্য করে আদায়
করা সাধারণ চোখে কঠিন একটি
লজ্জার বিষয়। যারা এটি করেন
তারা লজ্জা ও বিবেক মাথার
বাইরে রেখেই করেন। একই সঙ্গে
যৌতুক আদায়ের ক্ষেত্রে
মেয়েপক্ষের কোনো অপারগতা ও
গড়িমসি বন্ধ করতে নিজেদের
সংসারের অংশ হয়ে যাওয়া
মেয়েটির ওপরই চাপ সৃষ্টি করা
কিংবা তাকে এড়িয়ে তার বাবা-
মার সঙ্গে সম্পর্কের তিক্ততা
তৈরি করা চরম এক নির্মমতা।
মারধর ও খুন-জখমই শেষ কথা নয়,
যারা চাপ ও তিক্ততার পথে যান
তারাও নির্মম হয়েই সেটা করেন।
তাই এ ক্ষেত্রে লোভের পাশে
নির্লজ্জতা ও নির্মমতা একাকার
হয়ে যায়।
আমাদের সমাজে যৌতুক গ্রহণের
অপর কারণটি হচ্ছে, আল্লাহর
প্রতি ভয়হীনতা এবং শরীয়তের
বিধানের প্রতি অবজ্ঞা ও
উদাসীনতা। নারীর মর্যাদা দান ও
নারীর আর্থিক অধিকার সুরক্ষায়
ইসলাম যে বিধিবিধান দিয়েছে
তার প্রতি সাধারণ পর্যায়ের
সম্মানবোধ থাকলে কোনো বরের
পরিবারের পক্ষেই যৌতুক গ্রহণের
কোনো উদ্যোগ থাকার কথা ছিল
না। অথচ যৌতুক গ্রহণের সঙ্গে এ
সম্মানবোধের কোনো সম্পর্ক নেই।
বিশেষত যৌতুকের নামে ‘দেনা-
পাওনা’ ধার্য করা এবং তা উসূল
করার নির্মম পর্যায়গুলোতে ন্যূনতম
স্তরের মানুষির কোনো আলামত
দৃশ্যত থাকে না। এটা শরীয়তের
বিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল
হওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। তাই
অন্তরে আল্লাহর ভয় থাকলে এটা
সম্ভব হওয়ার কথা নয়।
তিন.
কনে বা মেয়ের পরিবারের পক্ষ
থেকে বরপক্ষকে যা যা দেওয়া হয়
সেগুলোকে আমরা যৌতুক বলে
জানি। এখানে একটি বিষয় লক্ষ্য
করার মতো। যৌতুকের এই সম্পদ
কনের পরিবারের পক্ষ থেকে
আসছে বরের পরিবারে, কনের
কাছে নয়। বরের পরিবারের পক্ষ
থেকে শর্ত করে, ধার্য করে ও চাপ
দিয়ে কনের কাছে আসলেও যে
সেটা যৌতুক হতো না, তেমন নয়।
কিন্তু ভুল পথে হলেও তখন বলা
যেত, এতে হয়তো কনে উপকৃত হচ্ছে।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়,
যৌতুকের সম্পদের উপলক্ষ ওই কনে
হলেও তা আসছে বরের কাছে
অথবা বরের গোটা পরিবারের
কাছে। এখানে কনের ভূমিকা
কেবল একটি সেতুর। এক পরিবারের
অশ্রুমেশানো সম্পদ আরেক
পরিবারে উল্লাসের উপকরণ হয়ে
আসছে কনের কারণে। নির্দোষ
মেয়েটিকে গ্রহণ করে যেন তাকে
উদ্ধার করল ছেলের পরিবার। নগদ
অর্থ, মোটর সাইকেল,
প্রাইভেটকার, ফ্রিজ, সোফাসেট,
খাট-পালঙ্ক-যৌতুক হিসেবে আসা
সবকিছুরই মালিক তখন ছেলের
গোটা পরিবার। প্রচলিত যৌতুক
প্রথার অনুশীলনটা এরকমই। এ এক
অদ্ভুৎ নিয়ম! প্রশান্তিদায়িনী
মায়াবতী নবপরিণীতা নারীকে
এখানে নিষ্ঠুর প্রক্রিয়ায় সম্পদ
আহরণে সেতু অথবা পাইপ লাইনের
ভূমিকা রাখতে হয়। প্রচলিত এই
যৌতুক নয়, ইসলামের ইতিহাসে ও
ইসলাম-অনুসারী মুসলিম
জীবনাচারে অন্য রকম এক
‘জাহীযে’র নমুনা পাওয়া যায়।
সেখানে কোনো ‘দেনা-পাওনা’
থাকে না। শর্ত, ধার্য ও উসূল থাকে
না। উসূলের জন্য নির্লজ্জ
প্রত্যাশা ও নির্মম গঞ্জনা থাকে
না। তার স্বরূপ হচ্ছে, স্বেচ্ছায়
স্বপ্রণোদিত হয়ে আপন কন্যার জন্য
এবং কন্যাকেই কনের পিতা বা
পরিবারের পক্ষ থেকে কিছু উপহার
দেওয়া। এই দেওয়াটাও নিয়ম করে
নয়, বরপক্ষের প্রত্যাশার সঙ্গে
যুক্ত হয়ে নয়। দেওয়া হলে দেওয়া
হল, না দেওয়া হলে নাই-এমনভাবে
দেওয়া। যেমন কোনো সন্তান
কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে
পুরস্কৃত হয়ে দূরের কোনো দেশে
সফরে যাচ্ছে। সে সফরের
প্রয়োজনীয় ও স্বাচ্ছন্দপূর্ণ সব
আয়োজন ও খরচের ব্যবস্থা ওই
প্রতিষ্ঠানই করে রেখেছে। সফরে
তার প্রয়োজনীয় কোনো জোগান ও
আয়োজনই বাকি নেই।
তারপরও মনের টানে পিতা তার
সন্তানকে বাড়তি সুবিধার জন্য
কিছু ডলার হাতে তুলে দিতে
পারেন। উপযোগী এক সেট পোশাক
বানিয়ে দিতে পারেন। শীতে না
জানি সন্তানের কষ্ট হয়-এমন
উদ্বেগ থেকে একটি শাল কিনে
দিতে পারেন। সন্তানের সফর-
আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠান এসব
প্রয়োজনের দিকে যথেষ্টই নজর
রাখবে। তারপরও পিতার মন বলে
কথা। দূরের সফরে সন্তানের
স্বাচ্ছন্দে কোনো ব্যাঘাত না
ঘটুক-এমন একটি প্রত্যাশা ও
সান্ত্বনা তিনি খুঁজতে চাইতেই
পারেন। তার এই চাওয়া ও এই
উপহার নির্দোষ। ইসলামের
ইতিহাসে যে জাহীয-এর নজীর
পাওয়া যায়, তার স্বরূপটা এ রকমই।
প্রচলিত যৌতুকের সঙ্গে তার
কোনো সম্পর্ক নেই। জাহীয-এর
সাধারণভাবে বাংলা তরজমা করা
হয় যৌতুক। হযরত রাসূলে আকরাম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁর আদরের কন্যা
হযরত ফাতিমা রা.-এর বিয়ের সময়
যে জাহীয দিয়েছিলেন হাদীস ও
সীরাতের কিতাবগুলোতে এর
বর্ণনা রয়েছে। এ থেকে সরল
চিন্তার অনেকে বলে ফেলেন,
নবীজীও তো যৌতুক দিয়েছেন।
এখানে জাহীযের স্বরূপের চেয়ে
শব্দের ভ্রান্তিটাকেই খুলে দেখা
দরকার।
দ্বীনী বহু কাজের পেছনে সাধারণ
ও বিত্তবান মুখলিস মুসলমানের
দেওয়া স্বেচ্ছাচাঁদার ভূমিকা সব
সময় বড় ভূমিকা রেখে এসেছে।
ইসলামী খেলাফত ও সালতানাত
শেষ হওয়ার পর দ্বীনী এদারা ও
প্রতিষ্ঠানগুলো মুসলমানদের
চাঁদার ভিত্তিতেই চলে এসেছে ও
আসছে। এসব চাঁদার ভূমিকা দ্বীনী
প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নিকট
অতীতের বহু বুযুর্গ দ্বীনী
প্রতিষ্ঠানের চাঁদা গ্রহণ ও দান
ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বহু দিক-
নির্দেশনাও দিয়েছেন। এখনও এ
জাতীয় চাঁদার ধারাবাহিকতা
বিদ্যমান। কিন্তু এদেশে গত দেড়
যুগ যাবত ‘চাঁদা’ বা ‘চান্দা’ শব্দের
ব্যাপক যে ব্যবহার আমরা দেখি
সেটা কোন অর্থে? মিডিয়া,
সরকারী আইন ও আইন-শৃঙ্খলা
বাহিনীর দৃষ্টিতে ‘চাঁদা ও
‘চান্দা’ হচ্ছে মাস্তান ও সন্ত্রাসী
শ্রেণীর জোরপূর্বক আদায়কৃত অর্থ।
একজনকে ছিনতাইকারী বললে তার
সম্পর্কে যে ধারণা তৈরি হয়,
চাঁদাবাজ বললে তার চেয়ে ভালো
কোনো ধারণা তৈরি হয় না।
বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের
কাছ থেকে সন্ত্রাসীরা
জোরপূবর্ক যে অর্থ আদায় করে
থাকে এখন ব্যাপকভাবে তাকেই
চাঁদা বলে। এটা বিশেষ সময়ে
বিশেষ কারণে শব্দ ও শব্দের
অর্থের স্থানান্তর। এতে কি
ভালো ও দ্বীনী কাজে গ্রহণকৃত
চাঁদাও দোষণীয় হয়ে গেল? নিশ্চয়ই
নয়। দ্বীনী কাজের চাঁদার ধারা
স্বতঃস্ফূর্ত ও বিনয়পূর্ণ। এসব
ক্ষেত্রে জোর খাটানোর প্রশ্নও
নেই, জোরও নেই। সেজন্য চাঁদা
শব্দটি যখন দ্বীনী প্রতিষ্ঠানের
সঙ্গে যুক্ত হয় তখন স্বতঃস্ফূর্ততার
স্বরূপটি সবার সামনে স্পষ্ট থাকে।
আর সন্ত্রাসীরা যখন ‘চাঁদা’ তুলতে
যায় তখন লোকজন আঁতকে উঠে।
জাহীযের ক্ষেত্রে ইসলামের
ইতিহাসের ঘটনাগুলো স্বতঃস্ফূর্ত
উপহারের ঘটনা। আর এই
উপমহাদেশীয় প্রচলন এবং এ যুগের
যৌতুকের ঘটনা হচ্ছে শর্ত করে,
ধার্য করে উসূল করার নির্মমতার
নমুনা। শুধু শব্দের মিলের কারণে
দুটো বিষয়কে এক রকম মনে করা
মারাত্মক ভ্রান্তিকর। দু ক্ষেত্রেই
শব্দ এক রকম হলেও স্বরূপ ও
তাৎপর্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য।
চার.
যৌতুক কিংবা ‘দেনা-পাওনা’
ভাষায় আমরা যাই বলি, আমাদের
সমাজে এই অভিশপ্ত ধারা বন্ধ
হতেই হবে। সুখের কথা, অনেক
পরিবারেই মানসিকতার একটি
রূপান্তর ফুটে উঠছে। যৌতুক গ্রহণের
কোনো রকম মানসিকতা ও
মনোভাব থেকে সম্পূর্ণ সরে আসতে
হবে প্রত্যেক পরিবারকে। গ্রহণের
মানসিকতা বন্ধ হলে দেওয়ার
ক্ষেত্রটাও একদিন নেই হয়ে যাবে।
এটাকে অবৈধ আয় ও জুলুম হিসেবে
বিশ্বাস করার ক্ষেত্রে মনে
কোনো সংশয় রাখা যাবে না।
প্রচলিত অর্থে ও পদ্ধতিতে যৌতুক
গ্রহণ করা ইসলামী শরীয়তে
কোনোভাবেই বৈধ নয়। বিয়ের
ক্ষেত্রে ইসলাম ও
মানবতাবিবর্জিত যৌতুকের এই
উপায় অবলম্বন করার ইহ-পরকালের
শাস্তি কী হতে পারে সেটা ভেবে
শঙ্কিত হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
আল্লাহর ভয়কে মনে জাগ্রত করতে
হবে। যৌতুক গ্রহণ দৃশ্যত
আর্থিকভাবে লাভজনক হলেও এর
মাঝে রয়েছে অনেকগুলো অন্যায় ও
অপরাধ। যৌতুকের চুক্তি বা দেনা-
পাওনা সাব্যস্ত করা এক অন্যায়।
যৌতুক আদায় করা আরেক অন্যায়।
অনাদায়ী যৌতুক আদায়ের জন্য
বার বার চাপ দেওয়া বার বার
অন্যায়। এই চাপের সঙ্গে যদি
শারীরিক-মানসিক জুলুম যুক্ত হয়
সেগুলোও অন্যায়। একইভাবে এর
প্রতি অন্তরে ও আচরণে যে লোভ
পোষণ করা হয় সেটাও অন্যায়। এতে
নারীর প্রতি জুলুম ও অপমানের ঘৃণ্য
ধারা চালু হয়, সেটিও আরেক
অন্যায়। ইহকালীন আইন ও
সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকেই
কেবল নয়, এর প্রতিটিই ইসলামী
দৃষ্টিকোণ থেকেও মারাত্মক
অপরাধ। এই অপরাধের কুফল
আখেরাতে তো অবশ্যই, দুনিয়াতেও
ভোগ করতে হয়। এত অপরাধের
নর্দমা পাড়ি দিয়ে যে অর্থ বা
সম্পদ হাতে আনা হয়, তা ভোগ
করায় কোনো শান্তি থাকে না,
বরকত তো হয়ই না। সর্বোপরি
যৌতুক প্রথা সম্পর্কে ব্যাপক ও
সূক্ষ্ম সচেতনতা তৈরি করা
দীনদার প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব
মনে করতে হবে। সরকারী আইন-
কানুনের চেয়েও অনেক বড় বিষয়
হচ্ছে, আল্লাহ তাআলার বিচারেও
এটা মস্ত বড় জুলুম। কোনো
আত্মমর্যাদা সম্পন্ন মুসলমান তার
স্ত্রী কিংবা পুত্রবধুকে বাপের
বাড়ির সম্পদ আহরণের সেতু
বানাতে পারে না। নিজের ঘরে
আনা নারীর অশ্রুর মূল্যে
নিজেদের বিলাস-উপকরণ কিনতে
পারে না।
মাওলানা শরীফ মুহাম্মাদ
নির্বাহী সম্পাদক, মাসিক আল-
কাউসার
সূত্র : মাসিক আল-কাউসারের
ওয়েবসাইট

Comments

Popular posts from this blog

বাংলাদেশী মেয়েদের হট ছবি

হে যুবক কোন দিকে যাও!! জান্নাতি হুর তোমাকে ডাকছে

ইসলামের দৃষ্টিতে যৌন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও শক্তি বৃদ্ধিকারী খাদ্য-পানীয়