বিবাহের প্রস্তাবে করণীয় ও বর্জনীয়
লেখার শিরোনাম দেখেই অনেকে চমকে
উঠতে পারেন। না আসলে চমকাবার কিছু নেই। সবার
জীবনেই আসে বিয়ের ঘটনা। আর বিয়ের আগে
আসে কনে দেখার পর্ব। ইসলাম শুধু নামায-
রোযার নয়; ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন
ব্যবস্থা। তাই এখানে সালাত-সিয়ামের সঙ্গে
সঙ্গে বিয়ে-শাদীর আমলও অনেক
গুরুত্বপূর্ণ। আজকাল মসজিদে আমরা মুসলিম
পরিচয় বজায় রাখি; কিন্তু বিয়ে-শাদীতে কেন
যেন ইসলাম পরিপন্থী কাজই বেশি করি। বিয়ে-
শাদীর আগে যেহেতু কনে দেখার পর্ব তাই
আগে বিয়ের প্রস্তাব বা কনে দেখা সংক্রান্ত
ইসলামী নির্দেশনাগুলো আগে তুলে ধরার
প্রয়াস পাচ্ছি এ নিবন্ধে। আল্লাহ আমাদের সহায়
হোন।
শরীয়তে বিবাহ বলতে কী বুঝায় :
নারী-পুরুষ একে অপর থেকে উপকৃত হওয়া এবং
আদর্শ পরিবার ও নিরাপদ সমাজ গড়ার উদ্দেশ্যে
পরস্পর চুক্তিবদ্ধ হওয়া। এ সংজ্ঞা থেকে আমরা
অনুধাবন করতে পারি, বিবাহের উদ্দেশ্য কেবল
ভোগ নয়; বরং এর সঙ্গে আদর্শ পরিবার ও
আলোকিত সমাজ গড়ার অভিপ্রায়ও জড়িত।
বিবাহের তাৎপর্য :
বিবাহ একটি বৈধ ও প্রশংসনীয় কাজ। প্রত্যেক
সামর্থ্যবান ব্যক্তির ক্ষেত্রেই এর যার গুরুত্ব
অপরিসীম। বিয়ে করা নবী-রাসূলদের (আলাইহুমুস
সালাম) সুন্নাত। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
ﻭَﻟَﻘَﺪْ ﺃَﺭْﺳَﻠْﻨَﺎ ﺭُﺳُﻠًﺎ ﻣِﻦْ ﻗَﺒْﻠِﻚَ ﻭَﺟَﻌَﻠْﻨَﺎ ﻟَﻬُﻢْ ﺃَﺯْﻭَﺍﺟًﺎ
ﻭَﺫُﺭِّﻳَّﺔً
‘আর অবশ্যই তোমার পূর্বে আমি রাসূলদের
প্রেরণ করেছি এবং তাদেরকে দিয়েছি স্ত্রী ও
সন্তান-সন্ততি।’ [1]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে বিবাহ
করেছেন এবং এর প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে গিয়ে
বলেছেন,
ﺃَﺗَﺰَﻭَّﺝُ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀَ ﻓَﻤَﻦْ ﺭَﻏِﺐَ ﻋَﻦْ ﺳُﻨَّﺘِﻲ ﻓَﻠَﻴْﺲَ ﻣِﻨِّﻲ .
‘আমি নারীকে বিবাহ করি। (তাই বিবাহ আমার সুন্নত)
অতএব যে আমার সুন্নত থেকে মুখ ফিরিয়ে
নেবে, সে আমার দলভুক্ত নয়।’[2]
এ জন্যই আলিমগণ বলেছেন, সাগ্রহে বিবাহ করা
নফল ইবাদতের চেয়ে উত্তম। কারণ, এর মধ্য
দিয়ে অনেক মহৎ গুণের বিকাশ ঘটে এবং
অবর্ণনীয় কল্যাণ প্রকাশ পায়।
কারও কারও ক্ষেত্রে বিবাহ করা ওয়াজিব হয়ে
পড়ে। যেমন : যদি কেউ বিবাহ না করলে হারাম
কাজে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করে। তখন নিজেকে
পবিত্র রাখতে এবং হারাম কাজ থেকে বাঁচতে তার
জন্য বিয়ে করা ওয়াজিব হয়ে দাঁড়ায়। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
ﻳَﺎ ﻣَﻌْﺸَﺮَ ﺍﻟﺸَّﺒَﺎﺏِ ﻣَﻦِ ﺍﺳْﺘَﻄَﺎﻉَ ﺍﻟْﺒَﺎﺀَﺓَ ﻓَﻠْﻴَﺘَﺰَﻭَّﺝْ
ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﺃَﻏَﺾُّ ﻟِﻠْﺒَﺼَﺮِ ﻭَﺃَﺣْﺼَﻦُ ﻟِﻠْﻔَﺮْﺝِ ، ﻭَﻣَﻦْ ﻟَﻢْ
ﻳَﺴْﺘَﻄِﻊْ ﻓَﻌَﻠَﻴْﻪِ ﺑِﺎﻟﺼَّﻮْﻡِ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻟَﻪُ ﻭِﺟَﺎﺀ.
‘হে যুব সম্প্রদায়, তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহের
সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। কেননা তা
চক্ষুকে অবনত করে এবং লজ্জাস্থানকে হেফাযত
করে। আর যে এর সামর্থ্য রাখে না, তার কর্তব্য
রোযা রাখা। কেননা তা যৌন উত্তেজনার প্রশমন
ঘটায়।’ [3]
বিয়ের প্রস্তাব এবং তার নিয়ম
কেউ যখন কোনো নারীকে বিবাহ করতে
আগ্রহী হয় তার জন্য সমীচীন হলো ওই
মেয়ের অভিভাবকের মাধ্যমে তাকে পেতে
চেষ্টা করা। আর এর জন্য রয়েছে কিছু মুস্তাহাব ও
ওয়াজিব কাজ, যা উভয়পক্ষের আমলে নেওয়া উচিত :
১. শরীয়তে বিয়ের প্রস্তাব কী বুঝায় :
এমন ব্যক্তির পক্ষ থেকে বিয়ে করতে চাওয়া যার
কাছ থেকে এমন প্রস্তাব গ্রহণ হতে পারে। এটি
বিবাহ পর্ব সূচনাকারীদের প্রাথমিক চুক্তি। এটি
বিবাহের ওয়াদা এবং বিবাহের প্রথম পদক্ষেপ।
২. ইস্তিখারা করা :
মুসলিম নর-নারীর জীবনে বিবাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ
কাজ। তাই যখন তারা বিবাহের সিদ্ধান্ত নেবেন
তাদের জন্য কর্তব্য হলো ইস্তিখারা তথা আল্লাহর
কাছে কল্যাণ কামনা করা। জাবির রাদিআল্লাহ আনহু
থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
ﻋَﻦْ ﺟَﺎﺑِﺮٍ - ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ - ﻗَﺎﻝَ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ - ﺻَﻠّﻰ
ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَ ﺳَﻠَّﻢَ - ﻳُﻌَﻠِّﻤُﻨَﺎ ﺍﻟْﺎِﺳْﺘِﺨَﺎﺭَﺓَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄُﻣُﻮْﺭِ
ﻛُﻠِّﻬَﺎ، ﻛَﺎﻟﺴُّﻮْﺭَﺓِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ : (ﺇِﺫَﺍ ﻫَﻢَّ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﺑِﺎﻟْﺄَﻣْﺮِ
ﻓَﻠْﻴَﺮْﻛَﻊْ ﺭَﻛْﻌَﺘَﻴْﻦِ ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِ ﺍﻟْﻔَﺮِﻳْﻀَﺔِ، ﺛُﻢَّ ﻳَﻘُﻮْﻝُ : ﺍﻟﻠّﻬُﻢَّ
ﺇﻧِّﻲْ ﺃﺳْﺘَﺨِﻴْﺮُﻙَ ﺑِﻌِﻠْﻤِﻚَ، ﻭَ ﺃﺳْﺘَﻘْﺪِﺭُﻙَ ﺑِﻘُﺪْﺭَﺗِﻚَ، ﻭَ
ﺃﺳْﺄﻟُﻚَ ﻣِﻦْ ﻓَﻀْﻠِﻚَ ﺍﻟْﻌَﻈِﻴْﻢِ، ﻓَﺈﻧَّﻚَ ﺗَﻘْﺪِﺭُ ﻭَ ﻵ ﺃﻗْﺪِﺭُ،
ﻭَ ﺗَﻌْﻠَﻢُ ﻭَ ﻵ ﺃﻋْﻠَﻢُ، ﻭَ ﺃﻧْﺖَ ﻋَﻠَّﺎﻡُ ﺍﻟْﻐُﻴُﻮْﺏِ، ﺍﻟﻠّﻬُﻢَّ ﺇﻥْ
ﻛُﻨْﺖَ ﺗَﻌْﻠَﻢُ ﺃﻥَّ ﻫﺬَﺍ ﺍﻟْﺄﻣْﺮَ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟِّﻲْ ﻓِﻲْ ﺩِﻳْﻨِﻲْ ﻭَ
ﻣَﻌَﺎﺷِﻲْ ﻭَ ﻋَﺎﻗِﺒَﺔِ ﺃﻣْﺮِﻱْ - ﺃﻭْ ﻗَﺎﻝَ: ﻓِﻲْ ﻋَﺎﺟِﻞِ ﺃﻣْﺮِﻱْ
ﻭَﺁﺟِﻠِﻪ - ﻓَﺎﻗْﺪُﺭْﻩُ ﻟِﻲْ، ﻭَ ﺇﻥْ ﻛُﻨْﺖَ ﺗَﻌْﻠَﻢُ ﺃﻥَّ ﻫﺬَﺍ ﺍﻟْﺄﻣْﺮَ
ﺷَﺮٌّ ﻟِّﻲْ ﻓِﻲْ ﺩِﻳْﻨِﻲْ ﻭَ ﻣَﻌَﺎﺷِﻲْ ﻭَ ﻋَﺎﻗِﺒَﺔِ ﺃﻣْﺮِﻱْ - ﺃﻭْ
ﻗَﺎﻝَ: ﻓِﻲْ ﻋَﺎﺟِﻞِ ﺃﻣْﺮِﻱْ ﻭَ ﺁﺟِﻠِﻪ - ﻓَﺎﺻْﺮِﻓْﻪُ ﻋَﻨِّﻲْ ﻭَ
ﺍﺻْﺮِﻓْﻨِﻲْ ﻋَﻨْﻪُ، ﻭَ ﺍﻗْﺪُﺭْ ﻟِﻲَ ﺍﻟْﺨَﻴْﺮَ ﺣَﻴْﺚُ ﻛَﺎﻥَ، ﺛُﻢَّ
ﺭَﺿِّﻨِﻲْ ﺑِﻪ. ( ﻭَ ﻳُﺴَﻤِّﻲْ ﺣَﺎﺟَﺘَﻪ .)
‘যখন তোমাদের কেউ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ
করতে চায় সে যেন দু’রাকাত নফল নামাজ পড়ে
অতপর বলে :
ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﺳْﺘَﺨِﻴﺮُﻙَ ﺑِﻌِﻠْﻤِﻚَ ﻭَﺃَﺳْﺘَﻘْﺪِﺭُﻙَ ﺑِﻘُﺪْﺭَﺗِﻚَ
ﻭَﺃَﺳْﺄَﻟُﻚَ ﻣِﻦْ ﻓَﻀْﻠِﻚَ ﺍﻟْﻌَﻈِﻴﻢِ ﻓَﺈِﻧَّﻚَ ﺗَﻘْﺪِﺭُ ، ﻭَﻻَ ﺃَﻗْﺪِﺭُ
ﻭَﺗَﻌْﻠَﻢُ ، ﻭَﻻَ ﺃَﻋْﻠَﻢُ ﻭَﺃَﻧْﺖَ ﻋَﻼَّﻡُ ﺍﻟْﻐُﻴُﻮﺏِ ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻥْ
ﻛُﻨْﺖَ ﺗَﻌْﻠَﻢُ ﺃَﻥَّ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻷَﻣْﺮَ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟِﻲ ﻓِﻲ ﺩِﻳﻨِﻲ
ﻭَﻣَﻌَﺎﺷِﻲ ﻭَﻋَﺎﻗِﺒَﺔِ ﺃَﻣْﺮِﻱ ، ﺃَﻭْ ﻗَﺎﻝَ ﻋَﺎﺟِﻞِ ﺃَﻣْﺮِﻱ
ﻭَﺁﺟِﻠِﻪِ - ﻓَﺎﻗْﺪُﺭْﻩُ ﻟِﻲ ﻭَﻳَﺴِّﺮْﻩُ ﻟِﻲ ﺛُﻢَّ ﺑَﺎﺭِﻙْ ﻟِﻲ ﻓِﻴﻪِ
ﻭَﺇِﻥْ ﻛُﻨْﺖَ ﺗَﻌْﻠَﻢُ ﺃَﻥَّ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻷَﻣْﺮَ ﺷَﺮٌّ ﻟِﻲ ﻓِﻲ ﺩِﻳﻨِﻲ
ﻭَﻣَﻌَﺎﺷِﻲ ﻭَﻋَﺎﻗِﺒَﺔِ ﺃَﻣْﺮِﻱ ، ﺃَﻭْ ﻗَﺎﻝَ ﻓِﻲ ﻋَﺎﺟِﻞِ ﺃَﻣْﺮِﻱ
ﻭَﺁﺟِﻠِﻪِ - ﻓَﺎﺻْﺮِﻓْﻪُ ﻋَﻨِّﻲ ﻭَﺍﺻْﺮِﻓْﻨِﻲ ﻋَﻨْﻪُ ﻭَﺍﻗْﺪُﺭْ ﻟِﻲ
ﺍﻟْﺨَﻴْﺮَ ﺣَﻴْﺚُ ﻛَﺎﻥَ ﺛُﻢَّ ﺃَﺭْﺿِﻨِﻲ .
‘হে আল্লাহ, আমি আপনার ইলমের মাধ্যমে আপনার
নিকট কল্যাণ কামনা করছি। আপনার কুদরতের মাধ্যমে
আপনার নিকট শক্তি কামনা করছি এবং আপনার মহা অনুগ্রহ
কামনা করছি। কেননা আপনি শক্তিধর, আমি শক্তিহীন,
আপনি জ্ঞানবান, আমি জ্ঞানহীন এবং আপনি অদৃশ্য
বিষয় সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞানী। হে আল্লাহ, এই
কাজটি (এখানে উদ্দিষ্ট কাজ বা বিষয়টি উল্লেখ
করবেন) আপনার জ্ঞান মোতাবেক যদি আমার
দীন, আমার জীবিকা এবং আমার পরিণতির ক্ষেত্রে
অথবা ইহলোক ও পরলোকে কল্যাণকর হয়,
তবে তাতে আমাকে সামর্থ্য দিন। পক্ষান্তরে এই
কাজটি আপনার জ্ঞান মোতাবেক যদি আমার দীন,
জীবিকা ও পরিণতির দিক দিয়ে অথবা ইহকাল ও
পরকালে ক্ষতিকর হয়, তবে আপনি তা আমার
থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন এবং আমাকেও তা
থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন এবং কল্যাণ যেখানেই
থাকুক, আমার জন্য তা নির্ধারিত করে দিন। অত:পর
তাতেই আমাকে পরিতুষ্ট রাখুন। [4]
৩. পরামর্শ করা :
বিবাহ করতে চাইলে আরেকটি করণীয় হলো
বিয়ে ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ, পাত্রী ও তার
পরিবার সম্পর্কে ভালো জানাশুনা রয়েছে এমন
ব্যক্তির সঙ্গে পরামর্শ করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদের সঙ্গে অধিক
পরিমাণে পরামর্শ করতেন। আবূ হুরায়রা রা. থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
ﻣَﺎ ﺭَﺃَﻳْﺖُ ﺃَﺣَﺪًﺍ ﺃَﻛْﺜَﺮَ ﻣَﺸُﻮﺭَﺓً ﻷَﺻْﺤَﺎﺑِﻪِ ﻣِﻦْ ﺭَﺳُﻮﻝِ
ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ.
‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
চেয়ে অন্য কাউকে আপন সাথীদের সঙ্গে
বেশি পরামর্শ করতে দেখি নি।’ [5]
হাসান বসরী রহ. বলেন,
ﺛﻼﺛﺔ ﻓﺮﺟﻞ ﺭﺟﻞ ﻭﺭﺟﻞ ﻧﺼﻒ ﺭﺟﻞ ﻭﺭﺟﻞ ﻻ
ﺭﺟﻞ ﻓﺄﻣﺎ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻓﺬﻭ ﺍﻟﺮﺃﻱ ﻭﺍﻟﻤﺸﻮﺭﺓ
ﻭﺃﻣﺎ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﺍﻟﺬﻱ ﻫﻮ ﻧﺼﻒ ﺭﺟﻞ ﻓﺎﻟﺬﻱ ﻟﻪ ﺭﺃﻱ ﻭﻻ
ﻳﺸﺎﻭﺭ ﻭﺃﻣﺎ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﺍﻟﺬﻱ ﻟﻴﺲ ﺑﺮﺟﻞ ﻓﺎﻟﺬﻱ ﻟﻴﺲ
ﻟﻪ ﺭﺃﻱ ﻭﻻ ﻳﺸﺎﻭﺭ
‘মানুষের মধ্যে তিন ধরনের ব্যক্তিত্ব রয়েছে :
কিছু ব্যক্তি পূর্ণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, কিছু ব্যক্তি অর্ধ
েক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এবং কিছু ব্যক্তি একেবারে
ব্যক্তিত্বহীন। পূর্ণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তি সেই,
যিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এবং পরামর্শও করেন।
অর্ধেক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন সেই, যিনি সিদ্ধান্ত নিতে
পারেন তবে পরামর্শ করেন না। আর
ব্যক্তিত্বহীন ব্যক্তি তিনিই, যিনি সিদ্ধান্ত নিতে
পারেন না আবার কারো সঙ্গে পরামর্শও করেন
না।’ [6]
এদিকে পরামর্শদাতার কর্তব্য বিশ্বস্ততা রক্ষা করা।
তিনি যেমন তার জানা কোনো দোষ লুকাবেন না,
তেমনি অসদুদ্দেশে আদতে নেই এমন
কোনো দোষের কথা বানিয়েও বলবেন না।
আর অবশ্যই এ পরামর্শের কথা কাউকে বলবেন না।
৪. পাত্রী দেখা :
জাবের ইবন আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
ﺇِﺫَﺍ ﺧَﻄَﺐَ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢُ ﺍﻟْﻤَﺮْﺃَﺓَ ﻓَﻘَﺪَﺭَ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﻥْ ﻳَﺮَﻯ ﻣِﻨْﻬَﺎ
ﻣَﺎ ﻳُﻌْﺠِﺒُﻪُ ﻭَﻳَﺪْﻋُﻮﻩُ ﺇِﻟَﻴْﻬَﺎ ﻓَﻠْﻴَﻔْﻌَﻞْ . ﻗَﺎﻝَ ﺟَﺎﺑِﺮٌ : ﻓَﻠَﻘَﺪْ
ﺧَﻄَﺒْﺖُ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓً ﻣِﻦْ ﺑَﻨِﻰ ﺳَﻠِﻤَﺔَ ﻓَﻜُﻨْﺖُ ﺃَﺗَﺨَﺒَّﺄُ ﻓِﻰ
ﺃُﺻُﻮﻝِ ﺍﻟﻨَّﺨْﻞِ ﺣَﺘَّﻰ ﺭَﺃَﻳْﺖُ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﺑَﻌْﺾَ ﻣَﺎ ﺃَﻋْﺠَﺒَﻨِﻰ
ﻓَﺘَﺰَﻭَّﺟْﺘُﻬَﺎ .
‘তোমাদের কেউ যখন নারীকে বিবাহের
প্রস্তাব দেয়, অতপর তার পক্ষে যদি ওই নারীর
এতটুকু সৌন্দর্য দেখা সম্ভব হয়, যা তাকে মুগ্ধ করে
এবং মেয়েটিকে (বিবাহ করতে) উদ্বুদ্ধ করে,
সে যেন তা দেখে নেয়।’ [7]
অপর এক হাদীসে রয়েছে, আবূ হুরায়রা রা.
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
ﻛُﻨْﺖُ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻓَﺄَﺗَﺎﻩُ ﺭَﺟُﻞٌ
ﻓَﺄَﺧْﺒَﺮَﻩُ ﺃَﻧَّﻪُ ﺗَﺰَﻭَّﺝَ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓً ﻣِﻦَ ﺍﻷَﻧْﺼَﺎﺭِ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻪُ
ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - « ﺃَﻧَﻈَﺮْﺕَ ﺇِﻟَﻴْﻬَﺎ
» . ﻗَﺎﻝَ ﻻَ. ﻗَﺎﻝَ « ﻓَﺎﺫْﻫَﺐْ ﻓَﺎﻧْﻈُﺮْ ﺇِﻟَﻴْﻬَﺎ ﻓَﺈِﻥَّ ﻓِﻰ
ﺃَﻋْﻴُﻦِ ﺍﻷَﻧْﺼَﺎﺭِ ﺷَﻴْﺌًﺎ ».
‘আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে
ছিলাম। এমতাবস্থায় তাঁর কাছে এক ব্যক্তি এসে জানাল
যে সে একজন আনসারী মেয়েকে বিয়ে
করেছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি তাকে
দেখেছো?’ সে বললো, না। তিনি বললেন, যাও,
তুমি গিয়ে তাকে দেখে নাও। কারণ আনসারীদের
চোখে (সমস্যা) কিছু একটা রয়েছে’।’ [8]
ইমাম নববী রহ. বলেন, ‘এ হাদীস থেকে জানা
যায়, যাকে বিবাহ করতে ইচ্ছুক তাকে দেখে নেয়া
মুস্তাহাব।’ [9]
৫. ছবি বা ফটো বিনিময় :
নারী-পুরুষ কারো জন্য কোনোভাবে
কোনো ছবি বা ফটো বিনিময় বৈধ নয়। কারণ,
প্রথমত. এ ছবি অন্যরাও দেখার সম্ভাবনা রয়েছে,
যাদের জন্য তা দেখার অনুমতি নেই।
দ্বিতীয়ত. ছবি কখনো পূর্ণ সত্য তুলে ধরে না।
প্রায়শই এমন দেখা যায়, কাউকে ছবিতে দেখে
বাস্তবে দেখলে মনে হয় তিনি একেবারে ভিন্ন
কেউ।
তৃতীয়ত. কখনো এমন হতে পারে যে প্রস্তাব
ফিরিয়ে নেয়া হয় বা প্রত্যাখ্যাত হয় অথচ ছবি
সেখানে রয়েই যায়। ছবিটিকে তারা যাচ্ছে তাই
করতে পারে।
৬. বিবাহের আগে প্রস্তাবদানকারীর সঙ্গে
বাইরে বের হওয়া বা নির্জনে অবস্থান করা :
বিয়ের আগে প্রস্তাব দেয়া নারীর সঙ্গে নির্জন
অবস্থান বা তার সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া বৈধ নয়। কেননা,
এখনো সে বেগানা নারীই রয়েছে। পরিতাপের
বিষয়, আজ অনেক মুসলমানই তার মেয়েকে
লাগামহীন ছেড়ে দিয়েছেন। ফলে তারা
প্রস্তাবদানকারী পুরুষের সঙ্গে ঘরের বাইরে
যায়! উপরন্তু তার সঙ্গে সফরও করে! ভাবখানা এমন
যে মেয়েটি যেন তার স্ত্রী হয়ে গেছে।
৭. বর-কনের পারস্পরিক যোগাযোগ করা :
প্রস্তাব দেয়া নারীর সঙ্গে ফোন বা
মোবাইলে এবং চিঠি ও মেইলের মাধ্যমে শুধু
বিবাহের চুক্তি ও শর্তাদি বোঝাপড়ার জন্য
যোগাযোগের অনুমতি রয়েছে। তবে এ
যোগাযোগ হতে হবে ভাব ও আবেগবিবর্জিত
ভাষায়, যা একজন বেগানা নারী-পুরুষের জন্য বৈধ ভাবা
হয় না। আর বলাবাহুল্য, বিবাহের প্রস্তাব
প্রেরণকারী কনের কেউ নন, যাবৎ না তারা
বিবাহের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। উল্লেখ্য, এ
যোগাযোগ উভয়ের পিতার সম্মতিতে হওয়া
শ্রেয়।
৮. একজনের প্রস্তাবের ওপর অন্যজনের
প্রস্তাব না দেয়া :
যে নারীর কোথাও বিয়ের কথাবার্তা চলছে
তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়া বৈধ নয়। আবূ হুরায়রা রা.
থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
ﻻَ ﻳَﺨْﻄُﺐُ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﻋَﻠَﻰ ﺧِﻄْﺒَﺔِ ﺃَﺧِﻴﻪِ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻨْﻜِﺢَ ،
ﺃَﻭْ ﻳَﺘْﺮُﻙَ .
‘কেউ তার ভাইয়ের প্রস্তাবের ওপর যেন প্রস্তাব
না দেয়, যাবৎ না সে তাকে বিবাহ করে অথবা
প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেয়।’ [10]
হ্যা, দ্বিতীয় প্রস্তাবদাতা যদি প্রথম প্রস্তাবদাতার কথা
না জানেন তবে তা বৈধ। এ ক্ষেত্রে ওই নারী যদি
প্রথমজনকে কথা না দিয়ে থাকেন তবে দু’জনের
মধ্যে যে কাউকে গ্রহণ করতে পারবেন।
৯. ইদ্দতে থাকা নারীকে প্রস্তাব দেয়া :
বায়ান তালাক বা স্বামীর মৃত্যুতে ইদ্দত পালনকারী
নারীকে সুস্পষ্ট প্রস্তাব দেয়া হারাম। ইঙ্গিতে
প্রস্তাব দেয়া বৈধ। কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
ﻭَﻟَﺎ ﺟُﻨَﺎﺡَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻓِﻴﻤَﺎ ﻋَﺮَّﺿْﺘُﻢْ ﺑِﻪِ ﻣِﻦْ ﺧِﻄْﺒَﺔِ
ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀِ
‘আর এতে তোমাদের কোন পাপ নেই যে,
তোমরা নারীদেরকে ইশারায় যে প্রস্তাব
করবে।’ [11]
তবে ‘রজঈ’ তালাকপ্রাপ্তা নারীকে সুস্পষ্টভাবে
তো দূরের কথা আকার-ইঙ্গিতে প্রস্তাব দেয়াও
হারাম। তেমনি এ নারীর পক্ষে তালাকদাতা ব্যক্তি ছাড়া
অন্য কারও প্রস্তাবে সাড়া দেয়াও হারাম। কেননা
এখনো সে তার স্ত্রী হিসেবেই রয়েছে।
(সুস্পষ্ট প্রস্তাব : যেমন এ কথা বলা, আমি
তোমাকে বিয়ে করতে চাই। অস্পষ্ট প্রস্তাব :
যেমন এ কথা বলা, আমি তোমার মতো মেয়েই
খুঁজছি ইত্যাদি বাক্য।)
১০. এ্যাংগেজমেন্ট করা :
ইদানীং পাশ্চাত্য সভ্যতার অনুকরণে বিয়েতে
এ্যাংগেজমেন্ট করার রেওয়াজ ব্যাপকতা
পেয়েছে। এই আংটি পরানোতে যদি এমন ধরে
নেওয়া হয় যে এর মাধ্যমে বিবাহের কথা
পাকাপোক্ত হয়ে গেল তবে তা শরীয়তের
দৃষ্টিতে হারাম। কেননা, মুসলিম সমাজ বা শরীয়তে
এর কোনো ভিত্তি নেই। আরও নিন্দনীয় ব্যাপার
হলো, এ আংটি প্রস্তাবদানকারী পুরুষ নিজ হাতে
কনেকে পরিয়ে দেয়। কারণ, এ পুরুষ এখনো
তার জন্য বেগানা। এখনো সে মেয়েটির স্বামী
হয়নি। কেননা, কেবল বিবাহ চুক্তি সম্পাদিত হবার
পরেই তারা স্বামী-স্ত্রী বলে গণ্য হবেন। [12]
১১. উপযুক্ত পাত্রের প্রস্তাব প্রত্যাখান করা :
উপযুক্ত পাত্র পেলে তার প্রস্তাব নাকচ করা উচিত
নয়। আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
ﺇِﺫَﺍ ﺧَﻄَﺐَ ﺇِﻟَﻴْﻜُﻢْ ﻣَﻦْ ﺗَﺮْﺿَﻮْﻥَ ﺩِﻳﻨَﻪُ ﻭَﺧُﻠُﻘَﻪُ ﻓَﺰَﻭِّﺟُﻮﻩُ
ﺇِﻻَّ ﺗَﻔْﻌَﻠُﻮﺍ ﺗَﻜُﻦْ ﻓِﺘْﻨَﺔٌ ﻓِﻰ ﺍﻷَﺭْﺽِ ﻭَﻓَﺴَﺎﺩٌ ﻋَﺮِﻳﺾٌ.
‘যদি এমন কেউ তোমাদের বিয়ের প্রস্তাব দেয়
যার ধার্মিকতা ও চরিত্রে তোমরা সন্তুষ্ট তবে
তোমরা তার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেবে। যদি তা না
করো তবে পৃথিবীতে ব্যাপক অরাজতা সৃষ্টি
হবে।’ [13]
প্রিয় পাঠক-পাঠিকা, আজ আমাদের ভেবে দেখা
দরকার, ইসলামের আদর্শ কোথায় আর আমরা
কোথায়। ইসলাম কী বলে আর আমরা কী করি।
আমরা কি অস্বীকার করতে পারি যে, এসব আদর্শ
আজ আমাদের আমলের বাইরে চলে গেছে।
আমাদের যাপিত জীবনে ইসলামের বিমল রঙ
ফিকে হয়ে এসেছে। সত্যি কথা বলতে গেলে,
আমরা বরং বর্জনীয় কাজগুলো করি আর
করণীয়গুলো ভুলে থাকি। আল্লাহ মাফ করুন। এ
কারণেই আমাদের বিয়ে-শাদীতে বরকত নেই।
বিবাহিত জীবনে সুখ নেই। দাম্পত্য জীবনের সুখ
আজ সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে। প্রকৃত
সুখের পরশ পেতে হলে, সুখ পাখির আগুন ডানা
ছুঁতে হলে আজ আমাদের তাই ইসলামের কাছেই
ফিরে আসতে হবে। ইসলামের আদর্শকেই
আকড়ে ধরতে হবে। শুধু কনে দেখা আর বিয়ে-
শাদীতেই নয়; জীবনের প্রতিটি কর্মে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদর্শ
হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। মুখে নয়; কাজে
পরিণত করতে হবে তাঁর উম্মত দাবী। আল্লাহ
তা’আলা আমাদের সবাইকে তাঁর যাবতীয় আদেশ এবং
তাঁর রাসূলের সকল আদর্শ মেনে চলার তাওফীক
দিন। আমীন।
[1] . রা‘দ : ৩৮।
[2] . বুখারী : ৫০৫৬; মুসলিম : ৩৪৬৯।
[3] . বুখারী : ৫০৬৬; মুসলিম : ৩৪৬৪।
[4] . বুখারী : ১১৬৬; আবূ দাউদ : ১৫৪০।
[5] . তিরমিযী : ১৭১৪; বাইহাকী : ১৯২৮০।
[6] . শিহাবুদ্দীন আবশীহী, আল-মুসতাতরিফ ফী
কুল্লি মুসতাযরিফ : ১/১৬৬।
[7] . বাইহাকী, সুনান কুবরা : ১৩৮৬৯।
[8] . মুসলিম : ৩৫৫০।
[9] . নববী, শারহু মুসলিম : ৯/১৭৯।
[10] . বুখারী : ৫১৪৪; নাসায়ী : ৩২৪১।
[11] . সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ২৩৫।
[12] . ফাতাওয়া জামেয়া লিল-মারআতিল মুসলিমা।
[13] . তিরমিযী: ১০৮৪।
উঠতে পারেন। না আসলে চমকাবার কিছু নেই। সবার
জীবনেই আসে বিয়ের ঘটনা। আর বিয়ের আগে
আসে কনে দেখার পর্ব। ইসলাম শুধু নামায-
রোযার নয়; ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন
ব্যবস্থা। তাই এখানে সালাত-সিয়ামের সঙ্গে
সঙ্গে বিয়ে-শাদীর আমলও অনেক
গুরুত্বপূর্ণ। আজকাল মসজিদে আমরা মুসলিম
পরিচয় বজায় রাখি; কিন্তু বিয়ে-শাদীতে কেন
যেন ইসলাম পরিপন্থী কাজই বেশি করি। বিয়ে-
শাদীর আগে যেহেতু কনে দেখার পর্ব তাই
আগে বিয়ের প্রস্তাব বা কনে দেখা সংক্রান্ত
ইসলামী নির্দেশনাগুলো আগে তুলে ধরার
প্রয়াস পাচ্ছি এ নিবন্ধে। আল্লাহ আমাদের সহায়
হোন।
শরীয়তে বিবাহ বলতে কী বুঝায় :
নারী-পুরুষ একে অপর থেকে উপকৃত হওয়া এবং
আদর্শ পরিবার ও নিরাপদ সমাজ গড়ার উদ্দেশ্যে
পরস্পর চুক্তিবদ্ধ হওয়া। এ সংজ্ঞা থেকে আমরা
অনুধাবন করতে পারি, বিবাহের উদ্দেশ্য কেবল
ভোগ নয়; বরং এর সঙ্গে আদর্শ পরিবার ও
আলোকিত সমাজ গড়ার অভিপ্রায়ও জড়িত।
বিবাহের তাৎপর্য :
বিবাহ একটি বৈধ ও প্রশংসনীয় কাজ। প্রত্যেক
সামর্থ্যবান ব্যক্তির ক্ষেত্রেই এর যার গুরুত্ব
অপরিসীম। বিয়ে করা নবী-রাসূলদের (আলাইহুমুস
সালাম) সুন্নাত। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
ﻭَﻟَﻘَﺪْ ﺃَﺭْﺳَﻠْﻨَﺎ ﺭُﺳُﻠًﺎ ﻣِﻦْ ﻗَﺒْﻠِﻚَ ﻭَﺟَﻌَﻠْﻨَﺎ ﻟَﻬُﻢْ ﺃَﺯْﻭَﺍﺟًﺎ
ﻭَﺫُﺭِّﻳَّﺔً
‘আর অবশ্যই তোমার পূর্বে আমি রাসূলদের
প্রেরণ করেছি এবং তাদেরকে দিয়েছি স্ত্রী ও
সন্তান-সন্ততি।’ [1]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে বিবাহ
করেছেন এবং এর প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে গিয়ে
বলেছেন,
ﺃَﺗَﺰَﻭَّﺝُ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀَ ﻓَﻤَﻦْ ﺭَﻏِﺐَ ﻋَﻦْ ﺳُﻨَّﺘِﻲ ﻓَﻠَﻴْﺲَ ﻣِﻨِّﻲ .
‘আমি নারীকে বিবাহ করি। (তাই বিবাহ আমার সুন্নত)
অতএব যে আমার সুন্নত থেকে মুখ ফিরিয়ে
নেবে, সে আমার দলভুক্ত নয়।’[2]
এ জন্যই আলিমগণ বলেছেন, সাগ্রহে বিবাহ করা
নফল ইবাদতের চেয়ে উত্তম। কারণ, এর মধ্য
দিয়ে অনেক মহৎ গুণের বিকাশ ঘটে এবং
অবর্ণনীয় কল্যাণ প্রকাশ পায়।
কারও কারও ক্ষেত্রে বিবাহ করা ওয়াজিব হয়ে
পড়ে। যেমন : যদি কেউ বিবাহ না করলে হারাম
কাজে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করে। তখন নিজেকে
পবিত্র রাখতে এবং হারাম কাজ থেকে বাঁচতে তার
জন্য বিয়ে করা ওয়াজিব হয়ে দাঁড়ায়। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
ﻳَﺎ ﻣَﻌْﺸَﺮَ ﺍﻟﺸَّﺒَﺎﺏِ ﻣَﻦِ ﺍﺳْﺘَﻄَﺎﻉَ ﺍﻟْﺒَﺎﺀَﺓَ ﻓَﻠْﻴَﺘَﺰَﻭَّﺝْ
ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﺃَﻏَﺾُّ ﻟِﻠْﺒَﺼَﺮِ ﻭَﺃَﺣْﺼَﻦُ ﻟِﻠْﻔَﺮْﺝِ ، ﻭَﻣَﻦْ ﻟَﻢْ
ﻳَﺴْﺘَﻄِﻊْ ﻓَﻌَﻠَﻴْﻪِ ﺑِﺎﻟﺼَّﻮْﻡِ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻟَﻪُ ﻭِﺟَﺎﺀ.
‘হে যুব সম্প্রদায়, তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহের
সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। কেননা তা
চক্ষুকে অবনত করে এবং লজ্জাস্থানকে হেফাযত
করে। আর যে এর সামর্থ্য রাখে না, তার কর্তব্য
রোযা রাখা। কেননা তা যৌন উত্তেজনার প্রশমন
ঘটায়।’ [3]
বিয়ের প্রস্তাব এবং তার নিয়ম
কেউ যখন কোনো নারীকে বিবাহ করতে
আগ্রহী হয় তার জন্য সমীচীন হলো ওই
মেয়ের অভিভাবকের মাধ্যমে তাকে পেতে
চেষ্টা করা। আর এর জন্য রয়েছে কিছু মুস্তাহাব ও
ওয়াজিব কাজ, যা উভয়পক্ষের আমলে নেওয়া উচিত :
১. শরীয়তে বিয়ের প্রস্তাব কী বুঝায় :
এমন ব্যক্তির পক্ষ থেকে বিয়ে করতে চাওয়া যার
কাছ থেকে এমন প্রস্তাব গ্রহণ হতে পারে। এটি
বিবাহ পর্ব সূচনাকারীদের প্রাথমিক চুক্তি। এটি
বিবাহের ওয়াদা এবং বিবাহের প্রথম পদক্ষেপ।
২. ইস্তিখারা করা :
মুসলিম নর-নারীর জীবনে বিবাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ
কাজ। তাই যখন তারা বিবাহের সিদ্ধান্ত নেবেন
তাদের জন্য কর্তব্য হলো ইস্তিখারা তথা আল্লাহর
কাছে কল্যাণ কামনা করা। জাবির রাদিআল্লাহ আনহু
থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
ﻋَﻦْ ﺟَﺎﺑِﺮٍ - ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ - ﻗَﺎﻝَ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ - ﺻَﻠّﻰ
ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَ ﺳَﻠَّﻢَ - ﻳُﻌَﻠِّﻤُﻨَﺎ ﺍﻟْﺎِﺳْﺘِﺨَﺎﺭَﺓَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄُﻣُﻮْﺭِ
ﻛُﻠِّﻬَﺎ، ﻛَﺎﻟﺴُّﻮْﺭَﺓِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ : (ﺇِﺫَﺍ ﻫَﻢَّ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﺑِﺎﻟْﺄَﻣْﺮِ
ﻓَﻠْﻴَﺮْﻛَﻊْ ﺭَﻛْﻌَﺘَﻴْﻦِ ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِ ﺍﻟْﻔَﺮِﻳْﻀَﺔِ، ﺛُﻢَّ ﻳَﻘُﻮْﻝُ : ﺍﻟﻠّﻬُﻢَّ
ﺇﻧِّﻲْ ﺃﺳْﺘَﺨِﻴْﺮُﻙَ ﺑِﻌِﻠْﻤِﻚَ، ﻭَ ﺃﺳْﺘَﻘْﺪِﺭُﻙَ ﺑِﻘُﺪْﺭَﺗِﻚَ، ﻭَ
ﺃﺳْﺄﻟُﻚَ ﻣِﻦْ ﻓَﻀْﻠِﻚَ ﺍﻟْﻌَﻈِﻴْﻢِ، ﻓَﺈﻧَّﻚَ ﺗَﻘْﺪِﺭُ ﻭَ ﻵ ﺃﻗْﺪِﺭُ،
ﻭَ ﺗَﻌْﻠَﻢُ ﻭَ ﻵ ﺃﻋْﻠَﻢُ، ﻭَ ﺃﻧْﺖَ ﻋَﻠَّﺎﻡُ ﺍﻟْﻐُﻴُﻮْﺏِ، ﺍﻟﻠّﻬُﻢَّ ﺇﻥْ
ﻛُﻨْﺖَ ﺗَﻌْﻠَﻢُ ﺃﻥَّ ﻫﺬَﺍ ﺍﻟْﺄﻣْﺮَ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟِّﻲْ ﻓِﻲْ ﺩِﻳْﻨِﻲْ ﻭَ
ﻣَﻌَﺎﺷِﻲْ ﻭَ ﻋَﺎﻗِﺒَﺔِ ﺃﻣْﺮِﻱْ - ﺃﻭْ ﻗَﺎﻝَ: ﻓِﻲْ ﻋَﺎﺟِﻞِ ﺃﻣْﺮِﻱْ
ﻭَﺁﺟِﻠِﻪ - ﻓَﺎﻗْﺪُﺭْﻩُ ﻟِﻲْ، ﻭَ ﺇﻥْ ﻛُﻨْﺖَ ﺗَﻌْﻠَﻢُ ﺃﻥَّ ﻫﺬَﺍ ﺍﻟْﺄﻣْﺮَ
ﺷَﺮٌّ ﻟِّﻲْ ﻓِﻲْ ﺩِﻳْﻨِﻲْ ﻭَ ﻣَﻌَﺎﺷِﻲْ ﻭَ ﻋَﺎﻗِﺒَﺔِ ﺃﻣْﺮِﻱْ - ﺃﻭْ
ﻗَﺎﻝَ: ﻓِﻲْ ﻋَﺎﺟِﻞِ ﺃﻣْﺮِﻱْ ﻭَ ﺁﺟِﻠِﻪ - ﻓَﺎﺻْﺮِﻓْﻪُ ﻋَﻨِّﻲْ ﻭَ
ﺍﺻْﺮِﻓْﻨِﻲْ ﻋَﻨْﻪُ، ﻭَ ﺍﻗْﺪُﺭْ ﻟِﻲَ ﺍﻟْﺨَﻴْﺮَ ﺣَﻴْﺚُ ﻛَﺎﻥَ، ﺛُﻢَّ
ﺭَﺿِّﻨِﻲْ ﺑِﻪ. ( ﻭَ ﻳُﺴَﻤِّﻲْ ﺣَﺎﺟَﺘَﻪ .)
‘যখন তোমাদের কেউ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ
করতে চায় সে যেন দু’রাকাত নফল নামাজ পড়ে
অতপর বলে :
ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﺳْﺘَﺨِﻴﺮُﻙَ ﺑِﻌِﻠْﻤِﻚَ ﻭَﺃَﺳْﺘَﻘْﺪِﺭُﻙَ ﺑِﻘُﺪْﺭَﺗِﻚَ
ﻭَﺃَﺳْﺄَﻟُﻚَ ﻣِﻦْ ﻓَﻀْﻠِﻚَ ﺍﻟْﻌَﻈِﻴﻢِ ﻓَﺈِﻧَّﻚَ ﺗَﻘْﺪِﺭُ ، ﻭَﻻَ ﺃَﻗْﺪِﺭُ
ﻭَﺗَﻌْﻠَﻢُ ، ﻭَﻻَ ﺃَﻋْﻠَﻢُ ﻭَﺃَﻧْﺖَ ﻋَﻼَّﻡُ ﺍﻟْﻐُﻴُﻮﺏِ ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻥْ
ﻛُﻨْﺖَ ﺗَﻌْﻠَﻢُ ﺃَﻥَّ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻷَﻣْﺮَ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟِﻲ ﻓِﻲ ﺩِﻳﻨِﻲ
ﻭَﻣَﻌَﺎﺷِﻲ ﻭَﻋَﺎﻗِﺒَﺔِ ﺃَﻣْﺮِﻱ ، ﺃَﻭْ ﻗَﺎﻝَ ﻋَﺎﺟِﻞِ ﺃَﻣْﺮِﻱ
ﻭَﺁﺟِﻠِﻪِ - ﻓَﺎﻗْﺪُﺭْﻩُ ﻟِﻲ ﻭَﻳَﺴِّﺮْﻩُ ﻟِﻲ ﺛُﻢَّ ﺑَﺎﺭِﻙْ ﻟِﻲ ﻓِﻴﻪِ
ﻭَﺇِﻥْ ﻛُﻨْﺖَ ﺗَﻌْﻠَﻢُ ﺃَﻥَّ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻷَﻣْﺮَ ﺷَﺮٌّ ﻟِﻲ ﻓِﻲ ﺩِﻳﻨِﻲ
ﻭَﻣَﻌَﺎﺷِﻲ ﻭَﻋَﺎﻗِﺒَﺔِ ﺃَﻣْﺮِﻱ ، ﺃَﻭْ ﻗَﺎﻝَ ﻓِﻲ ﻋَﺎﺟِﻞِ ﺃَﻣْﺮِﻱ
ﻭَﺁﺟِﻠِﻪِ - ﻓَﺎﺻْﺮِﻓْﻪُ ﻋَﻨِّﻲ ﻭَﺍﺻْﺮِﻓْﻨِﻲ ﻋَﻨْﻪُ ﻭَﺍﻗْﺪُﺭْ ﻟِﻲ
ﺍﻟْﺨَﻴْﺮَ ﺣَﻴْﺚُ ﻛَﺎﻥَ ﺛُﻢَّ ﺃَﺭْﺿِﻨِﻲ .
‘হে আল্লাহ, আমি আপনার ইলমের মাধ্যমে আপনার
নিকট কল্যাণ কামনা করছি। আপনার কুদরতের মাধ্যমে
আপনার নিকট শক্তি কামনা করছি এবং আপনার মহা অনুগ্রহ
কামনা করছি। কেননা আপনি শক্তিধর, আমি শক্তিহীন,
আপনি জ্ঞানবান, আমি জ্ঞানহীন এবং আপনি অদৃশ্য
বিষয় সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞানী। হে আল্লাহ, এই
কাজটি (এখানে উদ্দিষ্ট কাজ বা বিষয়টি উল্লেখ
করবেন) আপনার জ্ঞান মোতাবেক যদি আমার
দীন, আমার জীবিকা এবং আমার পরিণতির ক্ষেত্রে
অথবা ইহলোক ও পরলোকে কল্যাণকর হয়,
তবে তাতে আমাকে সামর্থ্য দিন। পক্ষান্তরে এই
কাজটি আপনার জ্ঞান মোতাবেক যদি আমার দীন,
জীবিকা ও পরিণতির দিক দিয়ে অথবা ইহকাল ও
পরকালে ক্ষতিকর হয়, তবে আপনি তা আমার
থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন এবং আমাকেও তা
থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন এবং কল্যাণ যেখানেই
থাকুক, আমার জন্য তা নির্ধারিত করে দিন। অত:পর
তাতেই আমাকে পরিতুষ্ট রাখুন। [4]
৩. পরামর্শ করা :
বিবাহ করতে চাইলে আরেকটি করণীয় হলো
বিয়ে ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ, পাত্রী ও তার
পরিবার সম্পর্কে ভালো জানাশুনা রয়েছে এমন
ব্যক্তির সঙ্গে পরামর্শ করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদের সঙ্গে অধিক
পরিমাণে পরামর্শ করতেন। আবূ হুরায়রা রা. থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
ﻣَﺎ ﺭَﺃَﻳْﺖُ ﺃَﺣَﺪًﺍ ﺃَﻛْﺜَﺮَ ﻣَﺸُﻮﺭَﺓً ﻷَﺻْﺤَﺎﺑِﻪِ ﻣِﻦْ ﺭَﺳُﻮﻝِ
ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ.
‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
চেয়ে অন্য কাউকে আপন সাথীদের সঙ্গে
বেশি পরামর্শ করতে দেখি নি।’ [5]
হাসান বসরী রহ. বলেন,
ﺛﻼﺛﺔ ﻓﺮﺟﻞ ﺭﺟﻞ ﻭﺭﺟﻞ ﻧﺼﻒ ﺭﺟﻞ ﻭﺭﺟﻞ ﻻ
ﺭﺟﻞ ﻓﺄﻣﺎ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻓﺬﻭ ﺍﻟﺮﺃﻱ ﻭﺍﻟﻤﺸﻮﺭﺓ
ﻭﺃﻣﺎ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﺍﻟﺬﻱ ﻫﻮ ﻧﺼﻒ ﺭﺟﻞ ﻓﺎﻟﺬﻱ ﻟﻪ ﺭﺃﻱ ﻭﻻ
ﻳﺸﺎﻭﺭ ﻭﺃﻣﺎ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﺍﻟﺬﻱ ﻟﻴﺲ ﺑﺮﺟﻞ ﻓﺎﻟﺬﻱ ﻟﻴﺲ
ﻟﻪ ﺭﺃﻱ ﻭﻻ ﻳﺸﺎﻭﺭ
‘মানুষের মধ্যে তিন ধরনের ব্যক্তিত্ব রয়েছে :
কিছু ব্যক্তি পূর্ণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, কিছু ব্যক্তি অর্ধ
েক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এবং কিছু ব্যক্তি একেবারে
ব্যক্তিত্বহীন। পূর্ণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তি সেই,
যিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এবং পরামর্শও করেন।
অর্ধেক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন সেই, যিনি সিদ্ধান্ত নিতে
পারেন তবে পরামর্শ করেন না। আর
ব্যক্তিত্বহীন ব্যক্তি তিনিই, যিনি সিদ্ধান্ত নিতে
পারেন না আবার কারো সঙ্গে পরামর্শও করেন
না।’ [6]
এদিকে পরামর্শদাতার কর্তব্য বিশ্বস্ততা রক্ষা করা।
তিনি যেমন তার জানা কোনো দোষ লুকাবেন না,
তেমনি অসদুদ্দেশে আদতে নেই এমন
কোনো দোষের কথা বানিয়েও বলবেন না।
আর অবশ্যই এ পরামর্শের কথা কাউকে বলবেন না।
৪. পাত্রী দেখা :
জাবের ইবন আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
ﺇِﺫَﺍ ﺧَﻄَﺐَ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢُ ﺍﻟْﻤَﺮْﺃَﺓَ ﻓَﻘَﺪَﺭَ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﻥْ ﻳَﺮَﻯ ﻣِﻨْﻬَﺎ
ﻣَﺎ ﻳُﻌْﺠِﺒُﻪُ ﻭَﻳَﺪْﻋُﻮﻩُ ﺇِﻟَﻴْﻬَﺎ ﻓَﻠْﻴَﻔْﻌَﻞْ . ﻗَﺎﻝَ ﺟَﺎﺑِﺮٌ : ﻓَﻠَﻘَﺪْ
ﺧَﻄَﺒْﺖُ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓً ﻣِﻦْ ﺑَﻨِﻰ ﺳَﻠِﻤَﺔَ ﻓَﻜُﻨْﺖُ ﺃَﺗَﺨَﺒَّﺄُ ﻓِﻰ
ﺃُﺻُﻮﻝِ ﺍﻟﻨَّﺨْﻞِ ﺣَﺘَّﻰ ﺭَﺃَﻳْﺖُ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﺑَﻌْﺾَ ﻣَﺎ ﺃَﻋْﺠَﺒَﻨِﻰ
ﻓَﺘَﺰَﻭَّﺟْﺘُﻬَﺎ .
‘তোমাদের কেউ যখন নারীকে বিবাহের
প্রস্তাব দেয়, অতপর তার পক্ষে যদি ওই নারীর
এতটুকু সৌন্দর্য দেখা সম্ভব হয়, যা তাকে মুগ্ধ করে
এবং মেয়েটিকে (বিবাহ করতে) উদ্বুদ্ধ করে,
সে যেন তা দেখে নেয়।’ [7]
অপর এক হাদীসে রয়েছে, আবূ হুরায়রা রা.
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
ﻛُﻨْﺖُ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻓَﺄَﺗَﺎﻩُ ﺭَﺟُﻞٌ
ﻓَﺄَﺧْﺒَﺮَﻩُ ﺃَﻧَّﻪُ ﺗَﺰَﻭَّﺝَ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓً ﻣِﻦَ ﺍﻷَﻧْﺼَﺎﺭِ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻪُ
ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - « ﺃَﻧَﻈَﺮْﺕَ ﺇِﻟَﻴْﻬَﺎ
» . ﻗَﺎﻝَ ﻻَ. ﻗَﺎﻝَ « ﻓَﺎﺫْﻫَﺐْ ﻓَﺎﻧْﻈُﺮْ ﺇِﻟَﻴْﻬَﺎ ﻓَﺈِﻥَّ ﻓِﻰ
ﺃَﻋْﻴُﻦِ ﺍﻷَﻧْﺼَﺎﺭِ ﺷَﻴْﺌًﺎ ».
‘আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে
ছিলাম। এমতাবস্থায় তাঁর কাছে এক ব্যক্তি এসে জানাল
যে সে একজন আনসারী মেয়েকে বিয়ে
করেছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি তাকে
দেখেছো?’ সে বললো, না। তিনি বললেন, যাও,
তুমি গিয়ে তাকে দেখে নাও। কারণ আনসারীদের
চোখে (সমস্যা) কিছু একটা রয়েছে’।’ [8]
ইমাম নববী রহ. বলেন, ‘এ হাদীস থেকে জানা
যায়, যাকে বিবাহ করতে ইচ্ছুক তাকে দেখে নেয়া
মুস্তাহাব।’ [9]
৫. ছবি বা ফটো বিনিময় :
নারী-পুরুষ কারো জন্য কোনোভাবে
কোনো ছবি বা ফটো বিনিময় বৈধ নয়। কারণ,
প্রথমত. এ ছবি অন্যরাও দেখার সম্ভাবনা রয়েছে,
যাদের জন্য তা দেখার অনুমতি নেই।
দ্বিতীয়ত. ছবি কখনো পূর্ণ সত্য তুলে ধরে না।
প্রায়শই এমন দেখা যায়, কাউকে ছবিতে দেখে
বাস্তবে দেখলে মনে হয় তিনি একেবারে ভিন্ন
কেউ।
তৃতীয়ত. কখনো এমন হতে পারে যে প্রস্তাব
ফিরিয়ে নেয়া হয় বা প্রত্যাখ্যাত হয় অথচ ছবি
সেখানে রয়েই যায়। ছবিটিকে তারা যাচ্ছে তাই
করতে পারে।
৬. বিবাহের আগে প্রস্তাবদানকারীর সঙ্গে
বাইরে বের হওয়া বা নির্জনে অবস্থান করা :
বিয়ের আগে প্রস্তাব দেয়া নারীর সঙ্গে নির্জন
অবস্থান বা তার সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া বৈধ নয়। কেননা,
এখনো সে বেগানা নারীই রয়েছে। পরিতাপের
বিষয়, আজ অনেক মুসলমানই তার মেয়েকে
লাগামহীন ছেড়ে দিয়েছেন। ফলে তারা
প্রস্তাবদানকারী পুরুষের সঙ্গে ঘরের বাইরে
যায়! উপরন্তু তার সঙ্গে সফরও করে! ভাবখানা এমন
যে মেয়েটি যেন তার স্ত্রী হয়ে গেছে।
৭. বর-কনের পারস্পরিক যোগাযোগ করা :
প্রস্তাব দেয়া নারীর সঙ্গে ফোন বা
মোবাইলে এবং চিঠি ও মেইলের মাধ্যমে শুধু
বিবাহের চুক্তি ও শর্তাদি বোঝাপড়ার জন্য
যোগাযোগের অনুমতি রয়েছে। তবে এ
যোগাযোগ হতে হবে ভাব ও আবেগবিবর্জিত
ভাষায়, যা একজন বেগানা নারী-পুরুষের জন্য বৈধ ভাবা
হয় না। আর বলাবাহুল্য, বিবাহের প্রস্তাব
প্রেরণকারী কনের কেউ নন, যাবৎ না তারা
বিবাহের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। উল্লেখ্য, এ
যোগাযোগ উভয়ের পিতার সম্মতিতে হওয়া
শ্রেয়।
৮. একজনের প্রস্তাবের ওপর অন্যজনের
প্রস্তাব না দেয়া :
যে নারীর কোথাও বিয়ের কথাবার্তা চলছে
তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়া বৈধ নয়। আবূ হুরায়রা রা.
থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
ﻻَ ﻳَﺨْﻄُﺐُ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﻋَﻠَﻰ ﺧِﻄْﺒَﺔِ ﺃَﺧِﻴﻪِ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻨْﻜِﺢَ ،
ﺃَﻭْ ﻳَﺘْﺮُﻙَ .
‘কেউ তার ভাইয়ের প্রস্তাবের ওপর যেন প্রস্তাব
না দেয়, যাবৎ না সে তাকে বিবাহ করে অথবা
প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেয়।’ [10]
হ্যা, দ্বিতীয় প্রস্তাবদাতা যদি প্রথম প্রস্তাবদাতার কথা
না জানেন তবে তা বৈধ। এ ক্ষেত্রে ওই নারী যদি
প্রথমজনকে কথা না দিয়ে থাকেন তবে দু’জনের
মধ্যে যে কাউকে গ্রহণ করতে পারবেন।
৯. ইদ্দতে থাকা নারীকে প্রস্তাব দেয়া :
বায়ান তালাক বা স্বামীর মৃত্যুতে ইদ্দত পালনকারী
নারীকে সুস্পষ্ট প্রস্তাব দেয়া হারাম। ইঙ্গিতে
প্রস্তাব দেয়া বৈধ। কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
ﻭَﻟَﺎ ﺟُﻨَﺎﺡَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻓِﻴﻤَﺎ ﻋَﺮَّﺿْﺘُﻢْ ﺑِﻪِ ﻣِﻦْ ﺧِﻄْﺒَﺔِ
ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀِ
‘আর এতে তোমাদের কোন পাপ নেই যে,
তোমরা নারীদেরকে ইশারায় যে প্রস্তাব
করবে।’ [11]
তবে ‘রজঈ’ তালাকপ্রাপ্তা নারীকে সুস্পষ্টভাবে
তো দূরের কথা আকার-ইঙ্গিতে প্রস্তাব দেয়াও
হারাম। তেমনি এ নারীর পক্ষে তালাকদাতা ব্যক্তি ছাড়া
অন্য কারও প্রস্তাবে সাড়া দেয়াও হারাম। কেননা
এখনো সে তার স্ত্রী হিসেবেই রয়েছে।
(সুস্পষ্ট প্রস্তাব : যেমন এ কথা বলা, আমি
তোমাকে বিয়ে করতে চাই। অস্পষ্ট প্রস্তাব :
যেমন এ কথা বলা, আমি তোমার মতো মেয়েই
খুঁজছি ইত্যাদি বাক্য।)
১০. এ্যাংগেজমেন্ট করা :
ইদানীং পাশ্চাত্য সভ্যতার অনুকরণে বিয়েতে
এ্যাংগেজমেন্ট করার রেওয়াজ ব্যাপকতা
পেয়েছে। এই আংটি পরানোতে যদি এমন ধরে
নেওয়া হয় যে এর মাধ্যমে বিবাহের কথা
পাকাপোক্ত হয়ে গেল তবে তা শরীয়তের
দৃষ্টিতে হারাম। কেননা, মুসলিম সমাজ বা শরীয়তে
এর কোনো ভিত্তি নেই। আরও নিন্দনীয় ব্যাপার
হলো, এ আংটি প্রস্তাবদানকারী পুরুষ নিজ হাতে
কনেকে পরিয়ে দেয়। কারণ, এ পুরুষ এখনো
তার জন্য বেগানা। এখনো সে মেয়েটির স্বামী
হয়নি। কেননা, কেবল বিবাহ চুক্তি সম্পাদিত হবার
পরেই তারা স্বামী-স্ত্রী বলে গণ্য হবেন। [12]
১১. উপযুক্ত পাত্রের প্রস্তাব প্রত্যাখান করা :
উপযুক্ত পাত্র পেলে তার প্রস্তাব নাকচ করা উচিত
নয়। আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
ﺇِﺫَﺍ ﺧَﻄَﺐَ ﺇِﻟَﻴْﻜُﻢْ ﻣَﻦْ ﺗَﺮْﺿَﻮْﻥَ ﺩِﻳﻨَﻪُ ﻭَﺧُﻠُﻘَﻪُ ﻓَﺰَﻭِّﺟُﻮﻩُ
ﺇِﻻَّ ﺗَﻔْﻌَﻠُﻮﺍ ﺗَﻜُﻦْ ﻓِﺘْﻨَﺔٌ ﻓِﻰ ﺍﻷَﺭْﺽِ ﻭَﻓَﺴَﺎﺩٌ ﻋَﺮِﻳﺾٌ.
‘যদি এমন কেউ তোমাদের বিয়ের প্রস্তাব দেয়
যার ধার্মিকতা ও চরিত্রে তোমরা সন্তুষ্ট তবে
তোমরা তার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেবে। যদি তা না
করো তবে পৃথিবীতে ব্যাপক অরাজতা সৃষ্টি
হবে।’ [13]
প্রিয় পাঠক-পাঠিকা, আজ আমাদের ভেবে দেখা
দরকার, ইসলামের আদর্শ কোথায় আর আমরা
কোথায়। ইসলাম কী বলে আর আমরা কী করি।
আমরা কি অস্বীকার করতে পারি যে, এসব আদর্শ
আজ আমাদের আমলের বাইরে চলে গেছে।
আমাদের যাপিত জীবনে ইসলামের বিমল রঙ
ফিকে হয়ে এসেছে। সত্যি কথা বলতে গেলে,
আমরা বরং বর্জনীয় কাজগুলো করি আর
করণীয়গুলো ভুলে থাকি। আল্লাহ মাফ করুন। এ
কারণেই আমাদের বিয়ে-শাদীতে বরকত নেই।
বিবাহিত জীবনে সুখ নেই। দাম্পত্য জীবনের সুখ
আজ সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে। প্রকৃত
সুখের পরশ পেতে হলে, সুখ পাখির আগুন ডানা
ছুঁতে হলে আজ আমাদের তাই ইসলামের কাছেই
ফিরে আসতে হবে। ইসলামের আদর্শকেই
আকড়ে ধরতে হবে। শুধু কনে দেখা আর বিয়ে-
শাদীতেই নয়; জীবনের প্রতিটি কর্মে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদর্শ
হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। মুখে নয়; কাজে
পরিণত করতে হবে তাঁর উম্মত দাবী। আল্লাহ
তা’আলা আমাদের সবাইকে তাঁর যাবতীয় আদেশ এবং
তাঁর রাসূলের সকল আদর্শ মেনে চলার তাওফীক
দিন। আমীন।
[1] . রা‘দ : ৩৮।
[2] . বুখারী : ৫০৫৬; মুসলিম : ৩৪৬৯।
[3] . বুখারী : ৫০৬৬; মুসলিম : ৩৪৬৪।
[4] . বুখারী : ১১৬৬; আবূ দাউদ : ১৫৪০।
[5] . তিরমিযী : ১৭১৪; বাইহাকী : ১৯২৮০।
[6] . শিহাবুদ্দীন আবশীহী, আল-মুসতাতরিফ ফী
কুল্লি মুসতাযরিফ : ১/১৬৬।
[7] . বাইহাকী, সুনান কুবরা : ১৩৮৬৯।
[8] . মুসলিম : ৩৫৫০।
[9] . নববী, শারহু মুসলিম : ৯/১৭৯।
[10] . বুখারী : ৫১৪৪; নাসায়ী : ৩২৪১।
[11] . সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ২৩৫।
[12] . ফাতাওয়া জামেয়া লিল-মারআতিল মুসলিমা।
[13] . তিরমিযী: ১০৮৪।
Comments
Post a Comment