ভালো ডিগ্রী মানে ভালো জায়গায় বিয়ে কিন্তু সুখের ডিগ্রী?

সাধারণত এমন সব তথ্য থাকে, যার প্রায়
কোনটাই বৈবাহিক জীবনে কাজে আসে না।
তবু এই তথ্যগুলোকে খুব গুরুত্বের সাথে
বিবেচনা করে কার্যসমাধার আয়োজন করা
হয়। অথচ আজ পর্যন্ত কোন দম্পতি পাওয়া
যাবে না যাদের
দাম্পত্য সমস্যাগুলো স্ত্রীর সুন্দর মুখ কিংবা
স্বামীর উচ্চতার দিকে তাকিয়ে সমাধান
হয়ে গেছে।
মাঝে মধ্যে আমার আব্বা-আম্মার
সাংসারিক জীবনে যেসব সমস্যা দেখেছি
বা বুঝেছি, সেগুলোর ব্যাপারে ভাবতে
চেষ্টা করি যে আব্বা অমুক ভার্সিটিতে না
পড়ে যদি ঢাকা ভার্সিটি বা বুয়েটে পড়তেন,
তবে কি সমস্যা সমাধান হয়ে যেত কি না।
কিংবা আম্মার গায়ের রঙ আরেকটু
পরিষ্কার হলে কি সমস্যা মিটে যেত কি না।
উত্তর পাই- না। অথচ পাত্র-পাত্রীর সেক্যুলার
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,
ডিগ্রি, এগুলোকে বিয়ের সময় কত গুরুত্ব দিয়ে
দেখা হয়।কেন উঁচু উঁচু ডিগ্রিধারির সংখ্যা
বাড়ার
সাথে সাথে মানুষের ঘর থেকে সুখটাও উড়ে
গেছে?
কেন আগেরদিনের ‘পরাধীন’ গৃহিণী
মায়েদের ঘরের মমতা আর শান্তি আজকের
‘স্বাধীন’ চাকরিজীবী মায়েদের ঘরে নেই?
কেন আজ একটার পর একটা ডিভোর্সের
সংবাদ আসে?
কেন এত এত ‘উচ্চশিক্ষা’র বহর আর ‘নারীর
ক্ষমতায়ন’ এর পরও ঘর ভাংগছে?
কেন মেয়েরা পুরুষের সাথে ডাক্তারি,
ইঞ্জিনিয়ারিং সব শেখার পরও আত্মহত্যা
করে?
কেন গৃহিণী মায়েদের ‘ব্যাকডেটেড’ বলা
‘আধুনিকা কর্মজীবী নারী’কে সুখের খোঁজে
সাইকোলজিস্টের কাছে ধরনা দিতে হয়?
কারণ একটাই। সেক্যুলার শিক্ষার বহরকে
মাথায় জায়গা দিতে গিয়ে যে ইসলামিক
জ্ঞান,মূল্যবোধ,নৈতিকতা সব হারাতে
বসেছে মানুষ। পাত্র-পাত্রী বাছাইয়ের সময়
দ্বীনদারিতাকে স্রেফ ডাস্টবিনে ছুড়ে
ফেলে দুনিয়াবি ‘যোগ্যতা’কে সব ভেবে
ঝাঁপাচ্ছে মানুষ। আরে যেই ছেলে প্রস্রাব
করে কীভাবে পবিত্র হতে হয় সেটা
জানেনা, সে স্ত্রীর কী হক্ব আদায় করবে?
যে সুদী ব্যাঙ্কে চাকরি করে আল্লাহর
সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, সে স্ত্রীর
কী নিরাপত্তা দেবে? সমাজের মা-বাবারা
কি বোঝে না?
সুতরাং দুনিয়ার স্ট্যাটাসকে প্রাধান্য দিয়ে
মানুষ শয়তানের প্রথম ফাঁদে পা দেয়। এরপর
দ্বিতীয় ফাঁদ হল বিয়ের অনুষ্ঠান। বিয়ে কোন
সামাজিক
অনুষ্ঠান না, এটা একটা ধর্মীয় অনুষ্ঠান।কিন্তু
এটাকে মুশরিকি কালচারাল ফাংশন বানিয়ে
ফেলে যতরকম নষ্টামি আছে সবের যোগান
দিয়ে মানুষ দিনশেষে দুয়া করে আল্লাহ্ যেন
দাম্পত্য জীবন সুখী করেন। কী কপটতা, কী
মূর্খতা!
পুরো বিয়ের অনুষ্ঠানে খুশি করা হয়
শয়তানকে, আর শান্তি চাওয়া হয় আল্লাহর
কাছে!
এরপর সাংসারিক জীবন। প্রথম দুটো
ক্ষেত্রে শয়তানকে খুশি করা মানুষেরা এই
জীবনে সুখী হয় না। তবু আল্লাহর কাছে
ফিরে আসার তো কোন নির্দিষ্ট সময় নেই।
তাই যখন মানুষ সাংসারিক
জীবনে সমস্যায় পড়ে তখন কর্তব্য হল
আগেকার ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা
চেয়ে ইসলামের মধ্যে সমাধান খোঁজা। কিন্তু
মানুষ এক্ষেত্রেও আল্লাহর দিকে ফেরে না।
তারা সমাধানও চায় শয়তানের কাছে।এটা হল
শয়তানের তৃতীয় ফাঁদ। কেউ ভারতীয়
সিরিয়ালে মুশরিকদের কাছে,কেউ মেহতাব
খানম-সারা যাকেরদের মত বাতিল আদর্শের
অনুসারীদের কাছে।
তাদের দেখানো পথে হেঁটে শান্তি আসা
তো দূরের কথা, যেটুকু ছিল তাও চলে যায়।
ফলাফল সংসারে বিপর্যয়,কখনো ছাড়াছাড়ি
আবার
কখনো বা আত্মহনন। আর বেঁচে থেকে হিসাব
মেলানো জীবনে কী কী পেলাম
না,আর‘মেয়েরা এত খারাপ’ কিংবা
‘ছেলেরা সবই এমন’ টাইপের
বস্তাপচা বুলি। কী তুচ্ছ এদের জীবন,কী
অপমানজনক এদের অস্তিত্ব!
আর যারা ইসলামকে একমাত্র জীবনব্যবস্থা
হিসেবে নিয়েছে, তারা যেমন
দ্বীনদারিতাকে সবার ওপরে রাখে, বিয়ের
ক্ষেত্রেও আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা
করে, বৈবাহিক জীবনের
পরীক্ষাগুলো আল্লাহর ওপর ভরসা রেখেই
মোকাবেলা করে, সব সমস্যার সমাধান
ইসলামের মধ্যেই খোঁজে।এরা কাঙ্ক্ষিত সেই
শান্তির দেখা ঠিকই পায়; সেজন্য লক্ষ টাকা
কামানো লাগে না,
অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাট
বুকিং দেওয়া লাগে না, স্ত্রী-সন্তানের
মুখের একটু হাসি আর রাতের আঁধারে স্রষ্টার
দরবারে দাঁড়িয়ে ঝরিয়ে ফেলা দু-ফোঁটা
চোখের পানিই এদের জীবনকে শান্তিময়
করে তুলতে যথেষ্ট।আল্লাহ্ আমাদের
ঘরগুলোকে দ্বীনের চর্চার দ্বারা আলোকিত
করার তৌফিক দিন। আমাদের প্রাপ্তির
মধ্যে সন্তুষ্ট থাকার সামর্থ্য দিন।
চিরস্থায়ী ঠিকানাকে স্মরণ করে
মুসাফিরের জীবনযাপনের মানসিকতা দান
করুন। বিয়ে এবং অন্য সকল ক্ষেত্রে দ্বীন
ইসলামের সাথে আপোষহীনতা গড়ে তোলার
তৌফিক দিন। আমীন।"
courtesy: Jubaer Hossain.
Comments
Post a Comment