রোগাক্রান্ত ব্যক্তি বা মুসাফির যদি কাযা রোযা আদায় করার আগো মার যায়!
আল -কুরআনে মুমিনদের আদেশ -নিষেধ(৭৬) মুহাদ্দিস রবিউল বাশার
------------------------------------------------------------- ★যে রোগের বা সফরের কারনে রমাদান মাসের রোযা ভঙ্গ করেছে, ঐ রোগে বা সফরে মারা গেলে,ঐ রোযার হুকুম কি? ------------------------------------------------------------ ---------------------------------------- ★জামহুরে (অধিকাংশ) আলিমগনের অভিমত হলো, কোন ব্যক্তি যে রোগের কারনে বা যে সফরের কারনে রমাদান মাসের রোযা রাখেনি, সে ব্যক্তি যদি সে রোগেই বা সে সফরেই মৃত্যুবরন করে, তার উপর কোন দায়িত্ব থাকেনা। কেননা সে মৃত্যবরন করার কারনে,তার জন্য কাযা করা সম্ভব না এবং একজন মিসকীনের ফিদইয়া দেয়া জরুরী না। কেননা আল্লাহ বলেছেন, ﻓﻤﻦ ﻛﺎﻥ ﻣﻨﻜﻢ ﻣﺮﻳﻀﺎ ﺍﻭ ﻋﻠﻲ ﺳﻔﺮ ﻓﻌﺪﺓ ﻣﻦ ﺍﻳﺎﻡ ﺍﺧﺮ অর্থ তারপর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অসুস্থ্য হবে বা সফরের উপরে থাকবে, (তারপর সে রোযা ভঙ্গ করবে) তার উপর অন্যদিন গননা করে রোযা রাখা আবশ্যক। ★এই আয়াত অনুযায়ী অন্যদিন বেঁচে থাকলে রোগের বা সফরের কারনে যে কয়দিন রোযা রাখেনি, সে কয়দিন গননা করে রোযা রাখা জরুরী। কিন্তু যেহেতু মৃত্যবরন করার কারনে অন্যদিন রোযা রাখার সুযোগ পায়নি, সেজন্য কাযা ও ফিদইয়া কিছুই দেয়া আবশ্যক নয়। ★ইমাম তাউস (রহঃ) সহ কিছু সংখ্যক আলিম বলেন, তার পক্ষ থেকে প্রতিদিনের জন্য একজন মিসকীনের খাদ্য ফিদইয়া দেয়া আবশ্যক। ★একমাস রমাদানের রোযা নিজ জিম্মাদারীতে রেখে যে ব্যক্তি মৃত্যুবরন করে, সে সে রোযার কাযা করেনি, ঐ একমাসের রোযার হুকুম কি? ------------------------------------------------------------ ---------------------- --------------- ★একমাস রমাদানের রোযা নিজের জিম্মাদারীতে রেখে, যে রোযার কাযা না করে কোন ব্যক্তি যদি মৃত্যুবরন করে, তবে তার রোযার হুকুম বা বিধানের ব্যপারে আলিমগন দ্বিমত পোষন করেছেন। ----------------- ★ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) ,ইমাম মালিক (রহঃ), ইমাম শাফিয়ী (রহঃ) ও ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রহঃ) এর মতে মৃত্যবরনকারীর পক্ষ থেকে অন্যকেহ ঐ রোযা রাখে দিলে হবে না বরং তার পক্ষ থেকে প্রতিদিনের জন্য একজন মিসকীনের খাদ্য ফিদইয়া দিতে হবে। ★অবশ্য কিছু জাহির পন্থি আলিম বলেন, মৃতব্যক্তির পক্ষ থেকে অন্যব্যক্তি রোযা রেখে দিলে আদায় হয়ে যাবে। কেননা আল্লাহর রসুল (সাঃ) বলেন, ﻣﻦ ﻣﺎﺕ ﻭﻋﻠﻴﻪ ﺻﻴﺎﻡ ﺻﺎﻡ ﻋﻨﻪ ﻭﻟﻴﻪ ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ অর্থ যে ব্যক্তি মৃত্যবরন করলো অথচ তার জিম্মাদারীতে রোযা রয়ে গেছে, তাহলে তার অবিভাবক তার পক্ষ থেকে রোযা রাখবে। (সহীহ মুসলিম) ★এই হাদীসে মৃত্যুব্যক্তির জিম্মাদারীতে রোযা বলতে রমাদানের মাসের রোযা এবং মান্নতের রোযা উভয় রোযা হতে পারে। কিন্তু নিম্মলিখিত হাদীসের মাধ্যমে বোঝা যায় যে, ঐ রোযা রমাদান মাসের রোযা নয়। বরং মান্নতের রোযা। কেননা হাদীসে আছে ------------------- ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺽ ﻗﺎﻝ ﺟﺎﻳﺖ ﺍﻣﺮﺍﺓ ﺍﻟﻲ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻘﺎﻟﺖ ﻳﺎﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻥ ﺍﻣﻲ ﻣﺎﺗﺖ ﻭﻋﻠﻴﻬﺎ ﺻﻮﻡ ﻧﺬﺭ ﻭﻓﻲ ﺭﻭﺍﻳﺔ ﺻﻮﻡ ﺷﻬﺮ ﺍﻓﺎﺻﻮﻡ ﻋﻨﻬﺎ ؟ ﻗﺎﻝ ﺍﺭﺍﻳﺖ ﻟﻮﻛﺎﻥ ﻋﻠﻲ ﺍﻣﻚ ﺩﻳﻦ ﻓﻘﻀﻴﺘﻴﻪ ﺍﻛﺎﻥ ﻳﻮﺩﻱ ﺫﺍﻟﻚ ﻋﻨﻬﺎ؟ ﻗﺎﻟﺖ ﻧﻌﻢ ﻗﺎﻝ ﻓﺼﻮﻣﻲ ﻋﻦ ﺍﻣﻚ ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ অর্থ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, এক মহিলা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট আগমন করে জিঙ্গাসা করে,হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ), আমার মা রোযার মান্নত জিম্মাদারীতে রেখে, অন্য বর্ননায় আছে, একমাসের রোযা জিম্মাদারীতে রেখে মৃত্যবরন করেন। আমি কি তাঁর পক্ষ থেকে রোযা রেখে দেবো? তিনি বলেন, তোমার কি মত বলো? যদি তোমার মায়ের উপর ঋনের দায়িত্ব থাকে, তুমি তা আদায় করে দাও,তাহলে কি তোমার মায়ের পক্ষ থেকে আদায় হবেনা? সে মহিলা বলে, হ্যাঁ আদায় হবে। তিনি বলেন, তাহলে তুমি তার পক্ষ থেকে রোযা রাখ দাও। (সহীহ মুসলিম) ★এই হাদীস থেকে জানা যায় যে, মান্নতের রোযা জিম্মাদারীতে রেখে মারা গেলে, তার পক্ষ থেকে অন্যব্যক্তি রোযা রেখে দিলে আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু রমাদানের রোযা সম্পর্কে এ বিধান নয়। ★ইমাম শাফিয়ী (রহঃ) এবং ইমাম আহমাদ (রহঃ) এর অভিমত হলো, মান্নতের রোযা জিম্মাদারীতে রেখে মৃত্যুবরন করলে অন্যব্যক্তি রোযা রেখে দিলে আদায় হয়ে যাবে। ★ইমাম আবু হানীফা(রহঃ) এবং ইমাম মালিক (রহঃ) এর অভিমত হলো,ফারয -ওয়াজিব দৈহিক ইবাদাত অন্য ব্যক্তি আদায় করলে আদায় হবে না (স্পষ্ট কুরআন - হাদীসের বিধান ছাড়া)। ★এক জনের পক্ষ থেকে অন্যব্যক্তি ফারয - ওয়াজিব রোযা রাখলে আদায় হবেনা। আল্লাহ বলেন,--------------------------------------------------------- ﻭﻻ ﺗﺰﺭ ﻭﺍﺯﺭﺓ ﻭﺯﺭ ﺍﺧﺮﻱ ★অর্থ একজনের বোঝা অন্যজন বহন করবে না। (সুরা বানী ইসরাঈল)। আল্লাহ বলেন --------------- ---------------------------------------- ﻟﻴﺲ ﻟﻼﻧﺴﺎﻥ ﺍﻻ ﻣﺎ ﺳﻌﻲ ★অর্থ মানুষ নিজের চেষ্টা ছাড়া আর কিছু পাবে না। (সুরা আন -নাযম)। আল্লাহ আরো বলেন, ﻭﻻ ﺗﻜﺴﺐ ﻛﻞ ﻧﻔﺲ ﺍﻻ ﻋﻠﻴﻬﺎ অর্থ কোন ব্যক্তি নিজ দায়িত্বেই শুধুমাত্র উপার্জন করে। (সুরা আল আনআম) ★হাদীসে আছে ------------------------------ ------------------------------ ----------- ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺽ ﻗﺎﻝ ﻻ ﻳﺼﻠﻲ ﺍﺣﺪ ﻋﻦ ﺍﺣﺪ ﻭﻻ ﻳﺼﻮﻡ ﺍﺣﺪ ﻋﻦ ﺍﺣﺪ ﻭﻟﻜﻦ ﻳﻄﻌﻢ ﻋﻨﻪ ﻣﻜﺎﻥ ﻛﻞ ﻳﻮﻡ ﻣﺪﺍ ﻣﻦ ﺣﻨﻄﺔ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻨﺴﺎﻱ অর্থ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, কোন ব্যক্তি অন্যব্যক্তির পক্ষ থেকে নামায পড়বে না এবং একব্যক্তি অন্যব্যক্তির পক্ষ থেকে রোযা রাখবে না। কিন্তু প্রত্যেক দিনের স্থানে তার পক্ষ থেকে এক মুদ্দ গম খাওয়াবে। (সুনান আন নাসাঈ - ★এই হাদীস রমাদানের রোযা ও মান্নতের রোযা উভয় রোযাই "একজনের পক্ষথেকে অন্যজন আদায় করবে না "বলা হয়েছে। ★ইমাম শাফিয়ী (রহ) ও ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রহঃ) মান্নতের রোযার সাথে নিদ্দিষ্ট করে নির্মোক্ত দলীল পেশ করেছেন। ﻋﻦ ﺑﺮﻳﺪﺓ ﻗﺎﻝ ﺑﻴﻨﻤﺎ ﺍﻧﺎ ﺟﺎﻟﺲ ﻋﻨﺪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﺫ ﺍﺗﺘﻪ ﺍﻣﺮﺍﺓ ﻓﻘﺎﻟﺖ ﺍﻧﻲ ﺗﺼﺪﻗﺖ ﻋﻠﻲ ﺍﻣﻲ ﺑﺠﺎﺭﻳﺔ ﻭﻣﺎﺗﺖ ﻗﺎﻝ ﻓﻘﺎﻝ ﻭﺟﺐ ﺍﺟﺮﻙ ﻭﺭﺩﻫﺎ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻚ ﺍﻟﻤﻴﺮﺍﺙ ﻓﻘﺎﻟﺖ ﻳﺎﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻋﻠﻴﻬﺎ ﺻﻮﻡ ﺷﻬﺮ ﻭﻓﻲ ﺭﻭﺍﻳﺔ ﺻﻮﻡ ﺷﻬﺮﻳﻦ ﺍﻓﺎﺻﻮﻡ ﻋﻨﻬﺎ ﻗﺎﻝ ﺻﻮﻣﻲ ﻋﻨﻬﺎ ﻓﻘﻠﺖ ﺍﻧﻬﺎ ﻟﻢ ﺗﺤﺞ ﻗﻂ ﺍﻓﺎﺣﺞ ﻋﻨﻬﺎ ﻗﺎﻝ ﺣﺠﻲ ﻋﻨﻬﺎ ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ অর্থ হযরত বুরাইদাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন,আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)এর দরবারে বসে ছিলাম, হটাৎ এক মহিলা তাঁর নিকট আগমন করে এবং বলে,আমি আমার মাকে এক দাসী দান করেছি। এখন তিনি মারা গেছেন। রাবী বলেন,তিনি বলেন, তুমি সাওয়াব পেয়ে গেছো আর আল্লাহ তোমাকে উহা মীরাস হিসাবে ফিরিয়ে দিয়েছেন। মহিলা বলেন, তার জিম্মাদারীতে এক মাসের রোযা রয়ে গেছে। অন্য বর্ননায় আছে, দুই মাসের রোযা আছে। আমি কি তার পক্ষ থেকে রোযা রাখবো? হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ),তিনি বলেন, তুমি তার পক্ষ থেকে রোযা রাখ। আবার জিঙ্গাসা করেন। তিনি হাজ্জ করেননি। আমি কি তার যক্ষ থেকে হাজ্জ করবো?তিনি বলেন, তুমি তার পক্ষ থেকে হাজ্জ করো। (সহীহ মুসলিম) ★এই হাদীসে "দুই মাস রোযা জিম্মাদারীতে ছিল" অর্থ নিশ্চয় রমাদানের রোযা নয়। বরং মান্নতের রোযা। কেননা সে যুগে দুই রমাদানের রোযা রাখা হয়নি, মধ্যখানের ১১ মাস সময়ে আদায় বা ফিদইয়া দেয়া হয়নি, এমন পাওয়া যায়না। এজন্য দুই মাস রোযার মান্নত করে মারা যায়, তার বিধান জানতে চাওয়া হয়েছে। মান্নতের রোযা অন্যব্যক্তি আদায় করার অনুমতি বা নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ★

Comments
Post a Comment