একজন ভালো স্ত্রী পুরুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদ।

*একজন দ্বীনদার স্ত্রী আল্লাহর পক্ষ
থেকে পাওয়া শ্রেষ্ঠ নেয়ামত
সাইফুল্লাহ সাহেবকে তার স্ত্রী ডাকছেন , এই
উঠো ! ফজরের আযান হচ্ছে ।
চোখ কচলাতে কচলাতে সাইফুল্লাহ সাহেব ঘুম
থেকে উঠে বসে প্রথমে 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ'
বলতেই চোখ চলে যায় ফ্লোরে । জায়নামায
বিছানো দেখে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠেন ।
স্ত্রীকে বলেন , তুমি তাহাজ্জুদ পড়তে উঠে
আর ঘুমাও নি? স্ত্রী বললেন, আলহামদুলিল্লাহ না ।
সাইফুল্লাহ সাহেব আর কিছু না বলে খাট থেকে
নামতেই স্ত্রী বলে উঠেন , বাথরুমে তোমার
জন্য গরম পানি রাখা আছে । উযু করে নাও এবং সুন্নাত
বাসায় পড়ে ফরজটা মসজিদে । সাইফুল্লাহ সাহেব
মুচকি হেঁসে জাযাকাল্লাহু খাইরান বলে দ্রুত বাথরুমে
চলে গেলেন । মসজিদ থেকে এসে দেখেন
স্ত্রী কুরান পড়ছে ।
সাইফুল্লাহ সাহেব ১০ টার দিকে অফিসে যাওয়ার জন্য
প্রস্তুত হলেন । স্ত্রী অফিসের ব্যাগটা গুছিয়ে
দিলেন । যথারীতি আজকেও বিদায় নেয়ার সময়
দুজন একসাথে সালাম দিতে গিয়ে মুচকি হেসে
দিলেন ।
অফিস পথে সাইফুল্লাহ সাহেব জ্যামে পড়লেন ।
ভাবছেন , একজন দ্বীনদার স্ত্রী আল্লাহর পক্ষ
থেকে পাওয়া শ্রেষ্ঠ নেয়ামত । বিয়ে করার পর
থেকে প্রতিদিন স্ত্রী আমাকে তাহাজ্জুদ পড়তে
ডেকে দেয় । বিয়ের পর থেকে স্ত্রীর
জন্য জামায়াতেও নিয়মিত নামায পড়া হয় । এগুলো
ভাবতে ভাবতে হটাত স্ত্রীর কথা খুব বেশি মনে
পড়লে স্ত্রীকে একটা কল দেয় । এবারো
যথারীতি দু'জন একসাথে সালাম বিনিময় করে । বেশ
কিছুক্ষণ কথা বলার পর সালাম বিনিময় করে কল
কেটে দেয় । কথা বলা শেষে সাইফুল্লাহ সাহেব
আবার ভাবনায় পড়লেন । আলহামদুলিল্লাহ বলে মনে
করলেন নিজের সে দুয়ার কথা যা তিনি নিয়মিত
করতেন । দুয়াটি বিড় বিড় করে আবার পড়লেন-
" হে আল্লাহ ! আমাকে উত্তম চরিত্র দান কর ।
আমার তাকওয়া বৃদ্ধি করে দাও । হারাম থেকে বাঁচিয়ে
হালাল রোজগার দিয়ে আমার রিযিক প্রশস্ত করে দাও
। হে আল্লাহ !আমাকে একজন উত্তম স্ত্রী দান
কর । আমার জন্য তুমি যাকে রেখেছো তাকে
তুমি উত্তম চরিত্র দান কর । তাকে বিপদ-দুশ্চিন্তা
থেকে তুমি মুক্তি দাও । তার জীবনকে তুমি সুন্দর
করে দাও । তাকে দীনের উপর প্রতিষ্ঠিত
রাখো। হে আল্লাহ ! আমাকে হিদায়াহ'র উপর মৃত্যু
দান কর। আমি একমাত্র তোমার উপরেই ভরসা রাখি"
নিজের নিয়মিত করা দুয়া মনে মনে পড়ে সাইফুল্লাহ
সাহেব খুশি মনে আলহামদুলিল্লাহ বলেন উঠলেন
এবং প্রমাণ পেলেন পূর্ণ ভয় করে আল্লাহর উপর
ভরসা রাখলে আল্লাহ বান্দাকে নিরাশ করেন না ।
অফিসের কাজকর্ম সব শেষ । এখন বাসায় ফিরবেন ।
তার আগে প্রতিদিনের মত ফুলের দোকানে
যাবেন স্ত্রীর জন্য ফুল আনতে । যথারীতি ফুল
কিনলেন । আজ কেন জানি সাইফুল্লাহ সাহেব
অনেকগুলো ফুল কিনেলন । বাসার সামনে এসে
দরজা নক করলেন । স্ত্রীর দরজা খুলতেই
যথারীতি দুজন আবার একসাথে সালাম বিনিময় করলেন
। সাইফুল্লাহ সাহেব স্ত্রীকে বললেন , তুমি কি
আমাকে কখনো আগে সালাম দিতে দিবে না ?
স্ত্রীও একই প্রশ্ন করলেন । তারপর সাইফুল্লাহ
সাহেব পেছন থেকে অনেকগুলো ফুল
স্ত্রীর হাতে দিয়ে বলেন , আই লাভ ইউ ফর দ্য
সেইক অফ আল্লাহ । স্ত্রীও বললেন , লাভ ইউ টু
ফর দ্য সেইক অফ আল্লাহ ।
এই হচ্ছে প্রেম । হালাল প্রেম এবং কাছে আসার
গল্প । যেখানে নাই কোন নোংরামি, নাই কোন
অশান্তি , নাই কোন আল্লাহর অবাধ্যতা । যেখানে
আছে শুধু , সুখ আর শান্তি যা আল্লাহর পক্ষ থেকে
আগত । আলহামদুলিল্লাহ ।
- আব্দুল্লাহ
দুই.
*চরিত্রবান নেককার স্ত্রী হলো আপনার
জীবনের কল্যাণকর ও উত্তম সম্পদ
সম্পদ কি তা কি সবাই বুঝি? পুরুষেরা অনেক সময়
সম্পদ অর্জনের জন্য এখানে-ওখানে খুঁজে
অস্থির হয়ে যায়, নিজ ঘরের ব্যাপারে উদাসীন
হয়ে পড়ে। টাকা-কড়িই কি কেবল সম্পদ? সেই
সাথে বাড়ি-ঘর আর জমি-জমা-গাড়ি? শুধু অর্থসম্পদ কি
আপনাদের সন্তানদের সুসন্তান করে গড়ে
তুলতে পারবে? সন্তানেরা কার তত্ত্বাবধানে আর
যত্নে বড় হয়, তা ভেবেছেন?
হে ভাই, জীবনসঙ্গিনীর ব্যাপারে ভেবে
দেখেছেন? একটা পরিবারে একজন নারী হলেন
সংসারের স্থপতি, তার হাতের নিবিড় পরিচর্যায় বড় হয়
আপনাদের সন্তানেরা, যখন আপনি জীবিকার কাজে
বাইরে ব্যস্ত থাকেন তিনি আগলে রাখেন
সংসারটিকে। তিনি আপনার চিন্তাগুলোর প্রভাবক --
ভালো চিন্তা হোক, ভুল চিন্তা হোক, দুনিয়াবী চিন্তা
হোক, আখিরাতের চিন্তা হোক।
অল্প সম্পদকেও অনেক বেশি সম্পদ মনে হতে
পারে যখন একজন ভাইয়ের জীবনসঙ্গিনী তার যা
আছে সেগুলোতেই সন্তুষ্ট থেকে তাকে
আল্লাহর উপরে ভরসা করে অর্থ উপার্জনের
জন্য সাধ্যমতন চেষ্টাটুকু করতে উৎসাহ দিবেন।
তখনই আপনার সবকিছু সুন্দর হবে, ছোট্ট
ঘরটিকেও বড় মনে হবে, কষ্টের জীবনটিকেও
আল্লাহর দেয়া পরীক্ষা হিসেবে সহনীয় আর
কল্যাণকর হিসেবে খুঁজে পাবেন যখন দ্বীনদার
স্ত্রী আপনার সঙ্গী হবেন এবং আপনিও যখন
দ্বীনদার স্বামী হিসেবে তার যোগ্য
জীবনসঙ্গী হবেন।
প্রকৃত সম্পদ কী তা বুঝে নিতে তাই ভুল করবেন
না যেন কখনো!! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেনঃ
♥"সমগ্র পৃথিবীটাই সম্পদে পরিপূর্ণ। এর মধ্যে
কল্যাণকর ও উত্তম সম্পদ হল চরিত্রবান নেককার
স্ত্রী।"♥
[মুসলিম]
তিন .
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
“চারটি বিষয়কে সামনে রেখে
মেয়েদেরকে বিয়ে করা হয়ঃ তার ধন সম্পদ,
তার বংশমর্যাদা, তার রূপ-সৌন্দর্য ও তার
ধর্মপরায়নতা। এক্ষেত্রে ধর্মপরায়ন স্ত্রী
লাভে বিজয়ী হও, তোমার হাত কল্যাণে
ভরে যাবে।” [বুখারী ও মুসলিম]
* রিয়াদুস সালেহীন – ৩৬৫
সংকলনে - বিবাহ একটি উত্তম বন্ধুত্ব ডেস্ক।
Comments
Post a Comment