ইমানের মুল পূর্ণতা অর্জনের ৬ টি বিষয়
আল -কুরআনে মুমিনদের আদেশ -নিষেধ(৪৩- ৪৭)

★মুল পুর্ন হলো পাঁচটি বিষয়ের প্রতি ঈমান
আনার সাথে সমাজে ছয় শ্রেনীর ব্যক্তিদের
আর্থিক প্রয়োজন মিটানো। যে ছয় শ্রেনীর
ব্যক্তি সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
ﻭﺍﺗﻲ ﺍﻟﻤﺎﻝ ﻋﻠﻲ ﺣﺒﻪ ﺫﻭﻱ ﺍﻟﻘﺮﺑﻲ ﻭﺍﻟﻴﺘﻤﻲ ﻭﺍﻟﻤﺴﺎﻛﻴﻦ
ﻭﺍﺑﻦ ﺍﻟﺴﺒﻴﻞ ﻭﺍﻟﺴﺎﻳﻠﻴﻦ ﻭﻓﻲ ﺍﻟﺮﻗﺎﺏ
অর্থ আর সে সম্পদের ভালবাসা সত্বেও (১)নিকট
আত্মীয়দের, (২)ইয়াতীমদের,
(৩)মিসকীনদের, (৪)মুসাফির -মেহমানকে,
(৫)প্রার্থীদের ও (৬)গোলাম আযাদ করার
ক্ষেত্রে সম্পদ দান করে।
★মানুষ সামাজিক জীব। সমাজ ছাড়া মানুষ বসবাস করতে
পারে না। সমাজবদ্ধ বসবাস করতে পরস্পরের
মধ্যে সহযোগীতা, সহমর্মিতা ও ভালবাসা থাকা
আবশ্যক। এটা না থাকলে সীমাবদ্ধ জীবন যাপন করা
যায়না।
(১)প্রথম নিকটাত্মীয়দের প্রতি খেয়াল রাখা।
তাদের সাথে সম্পর্ক গভীর করা। তাদের
প্রয়োজন দেখা, তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ
করা, তাদের প্রতি সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয়া।
(ক) আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার গুরুত্ব
অনেক। তাই আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেছেন,
ﻻ ﻳﺪﺧﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻗﺎﻃﻊ ﺍﻟﺮﺣﻢ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ
অর্থ আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্টকারী ব্যক্তি
জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (সহীহ আল বুখারী)
(খ) সাধারনত সমাজের ধার্মিক শ্রেনীর ব্যক্তিরা
গরীবদের দান করাকে সাওয়াবের কাজ মনে
করে। কিন্তু গরীব আত্মীয়কে দান করা দ্বিগুন
সাওয়াবের অধিকারী হওয়া যাবে,এ ধারনা তাদের
নেই। একটি সাদাকার সাওয়াব, আর একটি আত্মীয়তার
বন্ধন রক্ষার সাওয়াব। আল্লাহর রাসুল (সাঃ)বলেন,
ﺍﻟﺼﺪﻗﺔ ﻋﻠﻲ ﺍﻟﻤﺴﻜﻴﻦ ﺻﺪﻗﺔ ﻭﺍﻟﺼﺪﻗﺔ ﻋﻠﻲ ﺫﻭﻯ
ﺍﻟﺮﺣﻢ ﺻﺪﻗﺔ ﻭﺻﻠﺔ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀﻯ
অর্থ মিসকীকনকে দান করা সাদাকাহ। আর নিকট
আত্মীয়কে দান করা সাদাকাহ এবং আত্মীয়তার বন্ধন
রক্ষা। (সুনান আন নাসাঈ)
আত্মীয়ের সাথে সৎব্যবহার করার বেশী
হকদার। এ জন্যই পবিত্র কুরআনে বহু স্থানে
নিকটাত্তীয়দের সাথ সৎব্যবহারের নির্দেশ
আল্লাহ দিয়েছেন। এবং প্রথমেই নিকটাত্মীয়রের
কথা উল্লেখ করেছেন।
★ছয়শ্রেনীর ২য় শ্রেনী হলো
ইয়াতীমদের প্রয়োজন মিটানো। তাদের ভালবাসা,
তাদের উপকার করা, তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা,
তাদের লালন -পালনের ব্যবস্থা করা।
ইয়াতীম বলা হয় ঐ না -বালিগকে, যে বালিগ হওয়ার
পুর্বে তার পিতা ইন্তিকাল করেছে। বালিগাঁওয়ে
হওয়ার পর ইয়াতীম থাকে না। যেহেতু তার জন্য
উপার্জনকারী কেহ নেই, তাই তার প্রতি দয়া
প্রদর্শন করতে, তার দেখাশুনা করতে, তার সম্পদ
সংরক্ষন করার নির্দেশ ইসলাম দিয়েছে। মহান
আল্লাহ বলেন,
ﺍﻥ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻳﺎﻛﻠﻮﻥ ﺍﻣﻮﺍﻝ ﺍﻟﻴﺘﻤﻲ ﻇﻠﻤﺎ ﺍﻧﻤﺎ ﻳﺎﻛﻠﻮﻥ ﻓﻲ
ﺑﻄﻮﻧﻬﻢ ﻧﺎﺭﺍ . ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ
অর্থ নিশ্চয় যারা ইয়াকীমদের সম্পদ অন্যায়ভাবে
ভক্ষন করে, তারা তো শুধুমাত্র তাদের পেটে
আগুন ভক্ষন করে। (সুরা আন নিসা)
২) ইয়েতীমের লালন পালনের দায়িত্ব গ্রহন করার
মর্যাদা অনেক বেশী। আল্লাহর রাসুল (সাঃ)বলেন,
আমি এবং ইয়াতীমদের দায়িত্ব গ্রহনকারী জান্নাতে
এরকম থাকবো, বলে তিনি তাঁর মধ্যমা ও
তর্জনী আঙ্গুলদ্বয় কাছাকাছি করে দেখালেন।
(সহীহ আল বুখারী)
(৩)ইয়াতীমদের প্রতি আদর যত্নকারী ব্যক্তির
অন্তর নরম হয়ে থাকে। এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ
(সাঃ)এর নিকট নিজের অন্তরের কঠোরতার
অভিযোগ করে। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ)বলেন, তুমি
ইয়াতীমদের মাথায় তোমার হাত বুলাও, (তাহলে
তোমার অন্তর নরম হবে। )(সহীহ বুখারী)
যে শিশুর বা নাবালিগ সন্তানের পিতা নেই, সে ইয়াতিম।
সমাজে লোকেরা সাধারনত তার সম্পদ অপব্যবহার
করার সুযোগ হিসাবে গ্রহন করে। তার লালন
পালনকারীরা তার সম্পদ বিনা হিসাবে যথেচ্ছা ব্যবহার
করে। তার প্রয়োজনীয় খরচ ছাড়া সকল
সম্পদের হিসাব আল্লাহ গ্রহন করবেন। লালন-
পালনকারী গরীব হলে তার ও তার সম্পদের দেখাশুনার শ্রমের প্রচলিত মুল্য পরিমান ইয়তীমের
সম্পদ থেকে গ্রহন করতে পারে। আর স্বচ্ছল হলে গ্রহন করবে না। আল্লাহ বলেন,
ﻣﻦ ﻛﺎﻥ ﻏﻨﻴﺎ ﻓﻠﻴﺴﺘﻌﻔﻒ ﻭﻣﻦ ﻛﺎﻥ ﻓﻘﻴﺮﺍ ﻓﻠﻴﺎﻛﻞ
ﺑﺎﻟﻤﻌﺮﻭﻑ . ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ
অর্থ যে ব্যক্তি স্বচ্ছল ধনী, সে বিরত থাকবে।
আর যে ব্যক্তি অস্বচ্ছল গরীব, সে পরিচিতভাবে ভক্ষন করবে।
(সুরা আন নিসা)
সমাজে অসহায় ইয়াতীমদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেয়া মুল পুর্নের অন্তর্ভুক্ত।
★ছয় প্রকারের মধ্যে ৩য় প্রকার হলো
মিসকীনদের মানববিক প্রয়োজনগুলো দেয়া ও
সমাজে ছোট হয়ে না থাকতে হয়, সে দিকে
তাদের প্রতি খেয়াল রাখা। মিসকীন মুলত তারা, যারা
নিজেদের মৌলিক প্রয়োজন মিটাতে সক্ষম না। নিজেদের অভাব -অনটনের কথা মানুষকে জানায় না।
সমাজের মানুসেরা দ্বারে দ্বারে ঘুরে হাত পাতা ব্যক্তিদেরকে ফকীর -মিসকীন মনে করে। কিন্তু যারা অস্বচ্ছল হওয়া সত্বেও আত্মসম্মান
বোধের কারনে মানুষের কাছে হাত পাতে
না,সমাজের লোকেরা তাদেরকে ধনী মনে
করে তাদের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করেনা।আল্লাহ তায়ালা
বলেন,
ﻟﻠﻔﻘﺮﺍﺀ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﺍﺣﺼﺮﻭﺍ ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻻ ﻳﺴﺘﻄﻴﻌﻮﻥ
ﺿﺮﺑﺎ ﻓﻲ ﺍﻻﺭﺽ ﻳﺤﺴﺒﻬﻢ ﺍﻟﺠﺎﻫﻞ ﺍﻏﻨﻴﺎﺀ ﻣﻦ ﺍﻟﺘﻌﻔﻒ
ﺗﻌﺮﻓﻬﻢ ﺑﺴﻴﻤﺎﻫﻢ ﻻ ﻳﺴﺎﻟﻮﻥ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺍﻟﺤﺎﻓﺎ ﻭﻣﺎﺗﻨﻔﻘﻮﺍ ﻣﻦ
ﺧﻴﺮ ﻓﺎﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻪ ﻋﻠﻴﻢ0 ২৭৩
অর্থ ঐ সকল গরীবরা (সাদাকা) পাওয়ার যোগ্য, যারা
আল্লাহর পথে আটকে রাখা হয়েছে। তারা
পৃথিবীতে ভ্রমন করতে সক্ষম নয়। মুর্খব্যক্তি
তাদেরকে হাতপাতা থেকে বিরত থাকায় স্বচ্ছল ধারনা করে। তুমি তাদেরকে তাদের চিহ্নের মাধ্যমে
চিনতে পারবে। তারা মানুষের নিকট অনুনয় করে প্রার্থনা করে না। (২৭৩)
আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেন,
ﻟﻴﺲ ﺍﻟﻤﺴﻜﻴﻦ ﺑﺎﻟﻄﻮﺍﻑ ﺍﻟﺬﻱ ﺗﺮﺩﻩ ﺍﻟﺘﻤﺮﺓ ﻭﺍﻟﺘﻤﺮﺗﺎﻥ
ﻭﺍﻟﻠﻘﻤﺔ ﻭﺍﻟﻠﻘﻤﺘﺎﻥ ﻭﻟﻜﻦ ﺍﻟﻤﺴﻜﻴﻦ ﺍﻟﺬﻱ ﻻﻳﺠﺪ ﻏﻨﻲ
ﻳﻐﻨﻴﻪ ﻭﻻﻳﻔﻄﻦ ﺑﻪ ﻓﻴﺼﺪﻕ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﻻﻳﺴﺎﻝ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺍﻟﺤﺎﻓﺎ
ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ
অর্থ দ্বারে দ্বারে ঘোরা ব্যক্তি, যে একটা
খোরমা ও দুইটা খোরমা, এক লোকমা ও দুই লোকমা পেয়ে (বাড়ী বাড়ী) ফিরে বেড়ায়, সে মুলত মিসকীন নয়। কিন্তু মিসকীন হলো
সেই মুখাপেক্ষিহীন করতে পারে এমন সম্পদ পায় না। তাকে চেনাও যায় না যে তাকে দান করা
হবে। সে মানুসের নিকট হাত পেতে চায়না।
(সহীহ আল বুখারী)
সমাজে যে সকল ব্যক্তি প্রয়োজনশীল, মৌলিক প্রয়োজন মিটানোর ক্ষমতা নেই, তাদের প্রতি
প্রথম নজর দেয়া প্রয়োজন। তারপর হাত পাতার
পরিবেশ দূর করার চেষ্টা করাই হলো মূল পুর্নের অন্তর্ভুক্ত।
★ছয় শ্রেনীর মধ্যে ৪র্থ শ্রেনী হলো
মুসাফির -মেহমানের প্রয়োজনের প্রতি বিশেষ
দৃষ্টি রাখা। সমাজের অনেকে এক এলাকা থেকে
অন্য এলাকায় ভ্রমন করতে যায়। নিজ এলাকার বাহিরে
হওয়ার কারনে মনে অস্থিরতা থাকে। সুযোগ
সন্ধানী লোকেরা মুসাফিরকে একা পেয়ে, তার
সহায়তা কারী কেউ নেই মনে করে অন্যায় স্বার্থ অর্জন করতে পারে। এমন হওয়া অসম্ভব নয় যে,
তার সর্বস্ব ছিনতাই হতে পারে। তার সাথে থাকা
প্রয়োজনীয় পাথেয় খরচ ফুরুয়ে যেতে
পারে। তখন তার প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ে
মুমিন সমাজের নীতি। যাকাতের ৮টি খাতের মধ্যে শেষ খাতটিও মুসাফির -মেহমান বলে সুরা তাওবায়
আল্লাহ উল্লেখ করেছেন।
★"ইবনুস সাবীল,"অর্থ রাস্তার পুত্র বলতে দুটি সম্ভাবনার কথা তাফসীরের উল্লেখ আছে। যথা
( ১)মুসাফির। মুসাফির বাড়ীর থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায়
রাস্তা-ই তার সঙ্গের সাথী হওয়ায় রাস্তার পুত্র নামকরন করা হয়েছে। (২)মেহমান। বাড়ীর
থেকে পৃথক হয়ে কোন ব্যক্তির বাড়ীতে
রাস্তা মেহমানকে পৌছে দেয়, তাই মেহমানকে রাস্তার পু্ত্র বলা
হয়। অবশ্য প্রথম অর্থ গ্রহন করাই বেশী
উপযুক্ত।
★সমাজের দুর দুরান্ত থেকে আসা মুসাফিরদের
প্রতি সুদৃষ্টি দেয়া মুল পুর্নের অন্তর্ভুক্ত।
★ছয় শ্রেনীর ব্যক্তিদের মধ্যে ৫ম শ্রেনী
হলো প্রার্থীদের বিমুখ না করা, তাদের অসম্মান না
করা, তাদের খালি হাতে ফেরৎ না দেয়া, তবে শর্ত
হলো শারীয়াতে সে প্রার্থীর হওয়া। প্রার্থী
দুই প্রকার। যথা (১)শারীয়ায় প্রার্থী হওয়ার
অযোগ্য, তবু প্রার্থনা করা ও হাত পাতা তার স্বভাব।
★অযোগ্য প্রার্থীর সঙ্গা :
যার নিকট এক রাত -এক দিনের খোরাকীর আছে,
তার জন্য কারো কাছে প্রার্থনা করা, চাওয়া বা হাত পাতা উচিৎ নয়। সে প্রার্থনা করার অযোগ্য। কেহ কেহ
বলেন, চল্লিশ দিরহাম পরিমান সম্পদ থাকলে তার জন্য
প্রার্থনা করা বা চাওয়া উচিৎ নয়। আবার কেহ কেহ
বলেন, ৫০ দিরহাম পরিমান সম্পদ থাকলে, তার চাওয়া বা
প্রার্থনা করা উচিৎ নয়।
★আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেন,
ﻣﻦ ﺳﺎﻝ ﻭﻟﻪ ﻭﻗﻴﺔ ﻓﻬﻮ ﻣﻠﺤﻒ ﻭﺍﻟﻮﻗﻴﺔ ﺍﺭﺑﻌﻮﻥ ﺩﺭﻫﻤﺎ
ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻦ ﺧﺰﻳﻤﺔ ﻓﻲ ﺻﺤﻴﺤﻪ
অর্থাৎ যে ব্যক্তি তার এক উকিয়া পরিমান মুল্য থাকতে
প্রার্থনা করে, সে ইনিয়ে বিনিয়ে প্রার্থনা কারী বলে গন্য। আর চল্লিশ দিরহামে এক উকিয়া।
(সহীহ ইবনে খুযাইমা)
★আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেন,
ﻣﻦ ﺳﺎﻝ ﻭﻟﻪ ﺍﻭﻗﻴﺔ ﺍﻭ ﻋﺪﻟﻬﺎ ﻓﻘﺪ ﺳﺎﻝ ﺍﻟﺤﺎﻓﺎ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺣﻤﺪ
ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﻨﺪ
অর্থ এক উকিয়া বা তার সমপরিমান সম্পদ থাকতে যে
ব্যক্তি প্রার্থনা করবে, সে ইনিয়ে বিনিয়ে প্রার্থনা করলো। (মুসনাদে আহমাদ)
★আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেন,
ﻣﻦ ﺳﺎﻝ ﻭﻟﻪ ﻣﺎ ﻳﻐﻨﻴﻪ ﺟﺎﻳﺖ ﻣﺴﻯﻠﺘﻪ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ
ﺧﺪﻭﺷﺎ ﺍﻭﻛﺪﻭﺣﺎ ﻓﻲ ﻭﺟﻬﻪ ﻗﺎﻟﻮﺍ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ
( ﺹ ) ﻭﻣﺎ ﻏﻨﺎﻩ ؟ ﻗﺎﻝ ﺧﻤﺴﻮﻥ ﺩﺭﻫﻤﺎ ﺍﻭ ﺣﺴﺎﺑﻬﺎ ﻣﻦ
ﺍﻟﺬﻫﺐ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺣﻤﺪ
অর্থ যথেষ্ট পরিমান সম্পদ থাকতে যে ব্যক্তি প্রার্থনা করলো, কিয়ামতের দিন তার চাওয়া ক্রিয়াটি তার
চেহারায় ক্ষতবিক্ষত দাগ হয়া আসবে। তখন তারা
(সাহাবীগন (রাঃ)) জিঙ্গাসা করলেন, হে আল্লাহর
রাসুল (সাঃ), তার যথেষ্ট পরিমান সম্পদ কতটুকু? তিনি
(আল্লাহর রাসুল (সাঃ)) বলেন, ৫০ দিরহাম বা ঐ হিসাবের
সোনা। (মুসনাদে আহমাদ)
★একরাত -একদিনের জন্য যথেষ্ট পরিমান সম্পদ
থাকতে হাত পাতা, চাওয়া বা প্রার্থনা কনা অন্যায়, গুনাহ এবং
কিয়ামতের দিন ক্ষতবিক্ষত চেহারা নিয়ে উঠতে হবে।
★ দুনিয়ায় তাকে তার চাহিদা মোতাবেক দেয়া
যেবে কিনা? একদল আলিমে অভিমত হলো, তার
জন্য নেয়া নাজায়েয কিন্তু দেয়া যাবে। কেননা
আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেন,
ﻟﻠﺴﺎﻳﻞ ﺣﻖ ﻭﻟﻮ ﺟﺎﺀ ﻋﻠﻲ ﻓﺮﺱ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻮﺩﺍﻭﺩ
অর্থ প্রার্থনাকারীর অধিকার। যদিও সে ঘোড়া পিঠে আসে। (সুনানে আবু দাউদ)
ﺍﻋﻄﻮﺍ ﺍﻟﺴﺎﻯﻞ ﻭﻟﻮ ﺟﺎﺀ ﻋﻠﻲ ﻓﺮﺱ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻻﻣﺎﻡ ﻣﺎﻟﻚ
ﻓﻲ ﺍﻟﻤﻮﻃﺎ
অর্থ র্প্রার্থীকে তোমরা দাও। যদিও সে
ঘোড়ার পিঠে আসে। (মুয়াত্তায়ে ইমাম মালিক)
ঘোড়া ধনীর ই হতে পারে। অতএত ধনী হওয়া
সত্বেও প্রার্থনা করলে তাকে দেয়া বৈধ। যদিও
ধনী ব্যক্তির জন্য প্রার্থনা করা বৈধ নয়।
(২)শারীয়ার দৃষ্টিতে যোগ্য প্রার্থী।
যার নিকট একরাত -ও একদিনের খোরাকী নেই বা
সমপরিমান মুল্যের সম্পদ নেই, স্বনির্ভর জীবন-
যাপন করার জন্য কাজের যন্ত্রপাতি নেই, স্বনির্ভর
জীবন -যাপন করার মত ব্যবসায়িক সম্পদের মাল -
সম্পদ নেই, সে প্রার্থনা করতে পারে।
★নিম্মের হাদীস তার প্রমান :
ﻋﻦ ﺍﻡ ﻧﺠﻴﺪ ﻗﺎﻟﺖ ﻗﻠﺖ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ (ﺹ ) ﺍﻥ ﺍﻟﻤﺴﻜﻴﻦ
ﻟﻴﻘﻮﻡ ﻋﻠﻲ ﺑﺎﺑﻲ ﻓﻠﻢ ﺍﺟﺪ ﺷﻴﻯﺎ ﺍﻋﻄﻴﻪ ﺍﻳﺎﻩ ﻗﺎﻝ ﺍﻥ ﻟﻢ
ﺗﺠﺪﻱ ﺍﻻﻇﻠﻔﺎ ﻣﺤﺮﻗﺎ ﻓﺎﺩﻓﻌﻴﻪ ﺍﻟﻴﻪ ﻓﻲ ﻳﺪﻩ ﺭﻭﺍﻩ
ﺍﺑﻮﺩﺍﻭﺩ ﻭﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭﻗﺎﻝ ﺣﺪﻳﺚ ﺣﺴﻦ ﺻﺤﻴﺢ
অর্থ উম্মে নাযীদ (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি
বলেন, আমি জিঙ্গাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ),
নিশ্চয় মিসকীন আমার দ্বারে দাড়িয়ে থাকে। আমি
তাকে দেয়ার মত কিছু পাইনা। (আমি কি করতে পারি?)
তিনি জবাব দেন, তুমি যদি ছাগলের পোড়া খুর ছাড়া
কিছু না পাও, তাহলে তুমি তার হাতে তাই পৌছে দাও।
(আবুদাউদ ও তিরমিযী) (ইমাম তিরমিযী বলেন, এই
হাদীসটির হাসান সহীহ।)
★আর একটি হাদীসে আছে :
ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ (ﺹ ) ﺭﺩﻭﺍ ﺍﻟﻤﺴﻜﻴﻦ ﻭﻟﻮﺑﻈﻠﻒ ﻣﺤﺮﻕ
ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺎﻟﻚ ( ﻗﻮﻟﻪ ﺭﺩﻭﺍ ﺍﻟﻤﺴﻜﻴﻦ ﻟﻢ ﻳﺮﺩ ﺑﻪ ﺭﺩ ﺍﻟﺤﺮﻣﺎﻥ
ﺍﻧﻤﺎ ﺍﺭﺍﺩ ﺑﻪ ﺭﺩﻭﻩ ﺑﺸﻴﻰ ﺗﻌﻄﻮﻧﻪ ﺍﻳﺎﻩ ﻭﻟﻮﻛﺎﻥ ﻇﻠﻔﺎ
ﻭﻫﻮﺧﻒ ﺍﻟﺸﺎﺓ ﻭﻓﻲ ﻛﻮﻧﻪ ﻣﺤﺮﻗﺎ ﻣﺒﺎﻟﻐﺔ ﻓﻲ ﻗﻠﺔ ﻣﺎ
ﻳﻌﻄﻴﻪ )
অর্থ আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেন, তোমরা রান্নাকৃত
ক্ষুরধার দিয়ে হলেও মিসকীনকে বিদায় করো।
(মুয়াত্তায়ে ইমাম মালিক)
মিসকীনকে বিদায় করার অর্থ তাকে বঞ্চিত করে
বিদায় করা নয়। তার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সামান্য কিছু
এমনকি ক্ষুর দিয়ে হলেও মিসকীনকে বিদায়
করো। ক্ষুর অর্থ ছাগলের পায়ের ক্ষুর হলেও
অর্থ ক্ষুদ্র জিনিষ দিয়ে হলেও মিসকীনকে দিও।
★ তার মত ব্যক্তিদের আর্থিক সাহায্য -সহায়তা করা
সমাজের স্বচ্ছল ব্যক্তিদের উচিৎ এবং মুল পুন্য
কর্মের অন্তর্ভুক্ত।
★ছয় শ্রেনীর মধ্যে ষষ্ট শ্রেনী হলো,
দাসত্ব শৃংখলে আবদ্ধ বা মাজলুম কয়েদীদের
মুক্ত করার জন্য সার্বিক সহযোগীতা করা মুল পুন্যের অন্তর্ভুক্ত।
সম্পদ ব্যয়ের ছয়টি খাতের কথা উল্লেখ
করেছেন। ষষ্ট খাত হলো,
ﻭﻓﻲ ﺍﻟﺮﻗﺎﺏ
অর্থাৎ গোলাম মুক্ত করা বা মাজলুম কয়েদী মুক্ত
করার ব্যপারে সম্পদ করা মুল পুন্যের অন্তর্ভুক্ত।
"রিক্বাব "শব্দটি বহু বচন। তার এক বচন হলো
"রক্বাবাহ "।অর্থ ঘাড়ের মূলের শেষাংশ। যাকে
গর্দানও বলা হয়। গর্দান বলে পুর্ন ব্যক্তি অর্থ
গ্রহন করা হয়। "ফির -রিক্বাব "অর্থ গোলাম আাযাদ,
স্বাধীন ও মুক্ত মুক্ত করার ব্যপারে বা মাজলুম
কয়েদী মুক্ত করার ব্যপারে অর্থ ব্যয় করা
অন্যতম পুন্যের কাজ।
★"গর্দান সমূহ বা গোলামদের আযাদ করার "তিনটি
অর্থ হতে পারে। যথা (১)★যে গোলাম
মুনীবের দাসত্ব শৃংখলা থেকে মুক্তির জন্য
মুনীবের সাথে চুক্তি করেছে যে, এই পরিমান
সম্পদ মুনীবকে দিলে, গোলাম দাসত্ব শৃংখলা
থেকে মুক্তি পাবে। কিন্তু ঐ গোলাম আয়
উপার্জন করে সেই পরিমান সম্পদ আদায় করতে
পারছে না। ঐ গোলামকে চুক্তির টাকা দিতে সাহায্য -
সহায়তা করা বিরাট পুন্যের কাজ।আল্লাহ বলেন,
ﻭﺍﻟﺬﻳﻦ ﻳﺒﺘﻐﻮﻥ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﻣﻤﺎ ﻣﻠﻜﺖ ﺍﻳﻤﺎﻧﻜﻢ ﻓﻜﺎﺗﺒﻮﻫﻢ ﺍﻥ
ﻋﻠﻤﺘﻢ ﻓﻴﻬﻢ ﺧﻴﺮﺍ ﻭﺍﺗﻮﻫﻢ ﻣﻦ ﻣﺎﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺬﻱ ﺍﺗﺎﻛﻢ
. ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻨﻮﺭ
অর্থ আর যারা তোমাদের দাসত্ব শৃংখলে আবদ্ধ
ব্যক্তিদের মধ্য থেকে (মুক্তির জন্য)
লেখালেখির চুক্তি করতে চায়, তাদের মধ্যে
কোন কল্যান জানলে, তাদের সাথে মুক্তির
লেখালেখির চুক্তি করতে পার এবং আল্লাহর যে
সম্পদ তোমাদের দিয়েছেন, তার থেকে তাদের
দিয়ে সাহায্য -সহায়তা কর। (সুরা আন -নূর, আয়াত নং )
(২)★যে গোলাম দাসত্ব শৃংখলে আবদ্ধ, তাকে
ক্রয় করে আযাদ বা স্বাধীন করা বিরাট সাওয়াব বা
পুন্যের কর্ম। সমাজের মানুষকে একাজ করার জন্য
কুরআন ও সুন্নায় উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।কুরআন ও
সুন্নার বিভিন্ন স্থান আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ)
উৎসাহ দিয়েছেন।
(১)যাকাতের ৮টি খাতের মধ্যে ৫ম নং খাত গোলাম
আযাদ করা। সুরা আত -তাওবা, আয়াত নং ৬০)
ﺍﻧﻤﺎﺍﻟﺼﺪﻗﺎﺕ ﻟﻠﻔﻘﺮﺍﺀ ﻭﺍﻟﻤﺴﺎﻛﻴﻦ ﻭﺍﻟﻌﺎﻣﻠﻴﻦ ﻋﻠﻴﻬﺎ
ﻭﺍﻟﻤﻮﻟﻔﺔ ﻗﻠﻮﺑﻬﻢ ﻭﻓﻲ ﺍﻟﺮﻗﺎﺏ ﻭﺍﻟﻐﺎﺭﻣﻴﻦ ﻭﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ
ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺍﺑﻦ ﺍﻟﺴﺒﻴﻞ . ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﺘﻮﺑﺔ 60.
(২)কসম ভঙ্গের কাফফারায় তিন কাজের কোন
একটি আদায়ের স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে,
তন্মধ্যে একটি গোলাম আযাদ করা। (সুরা আল মাইদাহ, আয়াত নং )
ﻓﻜﻔﺎﺭﺗﻪ ﺍﻃﻌﺎﻡ ﻋﺸﺮﺓ ﻣﺴﺎﻛﻴﻦ ﻣﻦ ﺍﻭﺳﻂ ﻣﺎ ﺗﻄﻌﻤﻮﻥ
ﺍﻫﻠﻴﻜﻢ ﺍﻭ ﻛﺴﻮﺗﻬﻢ ﺍﻭ ﺗﺤﺮﻳﺮ ﺭﻗﺒﺔ . ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻤﺎﻳﺪﺓ
(৩)ভুল করে হত্যা করে ফেললে তার গুনাহ
থেকে মুক্তির জন্য গোলাম আযাদ করা ও
রক্তমুল্য আদায় করা।( সুরা আন -নিসা, আয়াত নং)
ﻭﻣﻦ ﻗﺘﻞ ﻣﻮﻣﻨﺎ ﺧﻄﺎ ﻓﺘﺤﺮﻳﺮﺭﻗﺒﺔ ﻣﻮﻣﻨﺔ ﻭﺩﻳﺔ ﻣﺴﻠﻤﺔ
ﺍﻟﻲ ﺍﻫﻠﻪ ﺍﻻ ﺍﻥ ﻳﺼﺪﻗﻮﺍ . ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ
(৪)স্ত্রীকে মা-বোন -মোহার্রামাতের সাথে
তুলনা করে জিহার করলে, তার গুনাহ থেকে বাচার
জন্য একটি গোলাম আযাদ করা।
(সুরা আল মযাদালাহ, আয়াত নং ৩)
ﻭﺍﻟﺬﻳﻦ ﻳﻈﺎﻫﺮﻭﻥ ﻣﻦ ﻧﺴﺎﻳﻬﻢ ﺛﻢ ﻳﻌﻮﺩﻭﻥ ﻟﻤﺎ ﻗﺎﻟﻮﺍ
ﻓﺘﺤﺮﻳﺮ ﺭﻗﺒﺔ ﻣﻮﻣﻨﺔ . ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻤﺠﺎﺩﻟﺔ
(৫) রমাদানের রোযা ইচ্ছা করে ভাঙলে তার গুনাহ
থেকে বাচতে একটি গোলাম আযাদ করা
(সহীহ আল বুখারী)
(৬)স্বাভাবিকভাবে সব সময় গোলামীর শৃংখলা মুক্ত
করার চেষ্টা করলে বিরাট প্রতিদান আছে।(সুরা আল - বালাদ)
ﻓﻼ ﺍﻗﺘﺤﻢ ﺍﻟﻌﻘﺒﺔ ﻭﻣﺎﺍﺩﺭﺍﻙ ﻣﺎﺍﻟﻌﻘﺒﺔ ﻓﻚ ﺭﻗﺒﺔ . ﺳﻮﺭﺓ
ﺍﻟﺒﻠﺪ
(৩)★রিক্বাবের ক্ষেত্রে সম্পদ ব্যয়ের অর্থ
বন্দীমুক্তির কথা বলা হয়েছে। যেসব মুসলিম
ইসলামের কারনে অমুসলিমদের নিকট মাজলুম
অবস্থায় বন্দি হয়ে আছে, তাদের মুক্তির জন্য
সম্পদ ব্যয় করা মুসলিম সমাজের জন্য মহান সাওয়াব ও
পন্যের কর্ম।
লেখকঃ মুহাদ্দিস রবিউল বাশার

★মুল পুর্ন হলো পাঁচটি বিষয়ের প্রতি ঈমান
আনার সাথে সমাজে ছয় শ্রেনীর ব্যক্তিদের
আর্থিক প্রয়োজন মিটানো। যে ছয় শ্রেনীর
ব্যক্তি সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
ﻭﺍﺗﻲ ﺍﻟﻤﺎﻝ ﻋﻠﻲ ﺣﺒﻪ ﺫﻭﻱ ﺍﻟﻘﺮﺑﻲ ﻭﺍﻟﻴﺘﻤﻲ ﻭﺍﻟﻤﺴﺎﻛﻴﻦ
ﻭﺍﺑﻦ ﺍﻟﺴﺒﻴﻞ ﻭﺍﻟﺴﺎﻳﻠﻴﻦ ﻭﻓﻲ ﺍﻟﺮﻗﺎﺏ
অর্থ আর সে সম্পদের ভালবাসা সত্বেও (১)নিকট
আত্মীয়দের, (২)ইয়াতীমদের,
(৩)মিসকীনদের, (৪)মুসাফির -মেহমানকে,
(৫)প্রার্থীদের ও (৬)গোলাম আযাদ করার
ক্ষেত্রে সম্পদ দান করে।
★মানুষ সামাজিক জীব। সমাজ ছাড়া মানুষ বসবাস করতে
পারে না। সমাজবদ্ধ বসবাস করতে পরস্পরের
মধ্যে সহযোগীতা, সহমর্মিতা ও ভালবাসা থাকা
আবশ্যক। এটা না থাকলে সীমাবদ্ধ জীবন যাপন করা
যায়না।
(১)প্রথম নিকটাত্মীয়দের প্রতি খেয়াল রাখা।
তাদের সাথে সম্পর্ক গভীর করা। তাদের
প্রয়োজন দেখা, তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ
করা, তাদের প্রতি সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয়া।
(ক) আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার গুরুত্ব
অনেক। তাই আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেছেন,
ﻻ ﻳﺪﺧﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻗﺎﻃﻊ ﺍﻟﺮﺣﻢ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ
অর্থ আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্টকারী ব্যক্তি
জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (সহীহ আল বুখারী)
(খ) সাধারনত সমাজের ধার্মিক শ্রেনীর ব্যক্তিরা
গরীবদের দান করাকে সাওয়াবের কাজ মনে
করে। কিন্তু গরীব আত্মীয়কে দান করা দ্বিগুন
সাওয়াবের অধিকারী হওয়া যাবে,এ ধারনা তাদের
নেই। একটি সাদাকার সাওয়াব, আর একটি আত্মীয়তার
বন্ধন রক্ষার সাওয়াব। আল্লাহর রাসুল (সাঃ)বলেন,
ﺍﻟﺼﺪﻗﺔ ﻋﻠﻲ ﺍﻟﻤﺴﻜﻴﻦ ﺻﺪﻗﺔ ﻭﺍﻟﺼﺪﻗﺔ ﻋﻠﻲ ﺫﻭﻯ
ﺍﻟﺮﺣﻢ ﺻﺪﻗﺔ ﻭﺻﻠﺔ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀﻯ
অর্থ মিসকীকনকে দান করা সাদাকাহ। আর নিকট
আত্মীয়কে দান করা সাদাকাহ এবং আত্মীয়তার বন্ধন
রক্ষা। (সুনান আন নাসাঈ)
আত্মীয়ের সাথে সৎব্যবহার করার বেশী
হকদার। এ জন্যই পবিত্র কুরআনে বহু স্থানে
নিকটাত্তীয়দের সাথ সৎব্যবহারের নির্দেশ
আল্লাহ দিয়েছেন। এবং প্রথমেই নিকটাত্মীয়রের
কথা উল্লেখ করেছেন।
★ছয়শ্রেনীর ২য় শ্রেনী হলো
ইয়াতীমদের প্রয়োজন মিটানো। তাদের ভালবাসা,
তাদের উপকার করা, তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা,
তাদের লালন -পালনের ব্যবস্থা করা।
ইয়াতীম বলা হয় ঐ না -বালিগকে, যে বালিগ হওয়ার
পুর্বে তার পিতা ইন্তিকাল করেছে। বালিগাঁওয়ে
হওয়ার পর ইয়াতীম থাকে না। যেহেতু তার জন্য
উপার্জনকারী কেহ নেই, তাই তার প্রতি দয়া
প্রদর্শন করতে, তার দেখাশুনা করতে, তার সম্পদ
সংরক্ষন করার নির্দেশ ইসলাম দিয়েছে। মহান
আল্লাহ বলেন,
ﺍﻥ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻳﺎﻛﻠﻮﻥ ﺍﻣﻮﺍﻝ ﺍﻟﻴﺘﻤﻲ ﻇﻠﻤﺎ ﺍﻧﻤﺎ ﻳﺎﻛﻠﻮﻥ ﻓﻲ
ﺑﻄﻮﻧﻬﻢ ﻧﺎﺭﺍ . ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ
অর্থ নিশ্চয় যারা ইয়াকীমদের সম্পদ অন্যায়ভাবে
ভক্ষন করে, তারা তো শুধুমাত্র তাদের পেটে
আগুন ভক্ষন করে। (সুরা আন নিসা)
২) ইয়েতীমের লালন পালনের দায়িত্ব গ্রহন করার
মর্যাদা অনেক বেশী। আল্লাহর রাসুল (সাঃ)বলেন,
আমি এবং ইয়াতীমদের দায়িত্ব গ্রহনকারী জান্নাতে
এরকম থাকবো, বলে তিনি তাঁর মধ্যমা ও
তর্জনী আঙ্গুলদ্বয় কাছাকাছি করে দেখালেন।
(সহীহ আল বুখারী)
(৩)ইয়াতীমদের প্রতি আদর যত্নকারী ব্যক্তির
অন্তর নরম হয়ে থাকে। এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ
(সাঃ)এর নিকট নিজের অন্তরের কঠোরতার
অভিযোগ করে। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ)বলেন, তুমি
ইয়াতীমদের মাথায় তোমার হাত বুলাও, (তাহলে
তোমার অন্তর নরম হবে। )(সহীহ বুখারী)
যে শিশুর বা নাবালিগ সন্তানের পিতা নেই, সে ইয়াতিম।
সমাজে লোকেরা সাধারনত তার সম্পদ অপব্যবহার
করার সুযোগ হিসাবে গ্রহন করে। তার লালন
পালনকারীরা তার সম্পদ বিনা হিসাবে যথেচ্ছা ব্যবহার
করে। তার প্রয়োজনীয় খরচ ছাড়া সকল
সম্পদের হিসাব আল্লাহ গ্রহন করবেন। লালন-
পালনকারী গরীব হলে তার ও তার সম্পদের দেখাশুনার শ্রমের প্রচলিত মুল্য পরিমান ইয়তীমের
সম্পদ থেকে গ্রহন করতে পারে। আর স্বচ্ছল হলে গ্রহন করবে না। আল্লাহ বলেন,
ﻣﻦ ﻛﺎﻥ ﻏﻨﻴﺎ ﻓﻠﻴﺴﺘﻌﻔﻒ ﻭﻣﻦ ﻛﺎﻥ ﻓﻘﻴﺮﺍ ﻓﻠﻴﺎﻛﻞ
ﺑﺎﻟﻤﻌﺮﻭﻑ . ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ
অর্থ যে ব্যক্তি স্বচ্ছল ধনী, সে বিরত থাকবে।
আর যে ব্যক্তি অস্বচ্ছল গরীব, সে পরিচিতভাবে ভক্ষন করবে।
(সুরা আন নিসা)
সমাজে অসহায় ইয়াতীমদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেয়া মুল পুর্নের অন্তর্ভুক্ত।
★ছয় প্রকারের মধ্যে ৩য় প্রকার হলো
মিসকীনদের মানববিক প্রয়োজনগুলো দেয়া ও
সমাজে ছোট হয়ে না থাকতে হয়, সে দিকে
তাদের প্রতি খেয়াল রাখা। মিসকীন মুলত তারা, যারা
নিজেদের মৌলিক প্রয়োজন মিটাতে সক্ষম না। নিজেদের অভাব -অনটনের কথা মানুষকে জানায় না।
সমাজের মানুসেরা দ্বারে দ্বারে ঘুরে হাত পাতা ব্যক্তিদেরকে ফকীর -মিসকীন মনে করে। কিন্তু যারা অস্বচ্ছল হওয়া সত্বেও আত্মসম্মান
বোধের কারনে মানুষের কাছে হাত পাতে
না,সমাজের লোকেরা তাদেরকে ধনী মনে
করে তাদের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করেনা।আল্লাহ তায়ালা
বলেন,
ﻟﻠﻔﻘﺮﺍﺀ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﺍﺣﺼﺮﻭﺍ ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻻ ﻳﺴﺘﻄﻴﻌﻮﻥ
ﺿﺮﺑﺎ ﻓﻲ ﺍﻻﺭﺽ ﻳﺤﺴﺒﻬﻢ ﺍﻟﺠﺎﻫﻞ ﺍﻏﻨﻴﺎﺀ ﻣﻦ ﺍﻟﺘﻌﻔﻒ
ﺗﻌﺮﻓﻬﻢ ﺑﺴﻴﻤﺎﻫﻢ ﻻ ﻳﺴﺎﻟﻮﻥ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺍﻟﺤﺎﻓﺎ ﻭﻣﺎﺗﻨﻔﻘﻮﺍ ﻣﻦ
ﺧﻴﺮ ﻓﺎﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻪ ﻋﻠﻴﻢ0 ২৭৩
অর্থ ঐ সকল গরীবরা (সাদাকা) পাওয়ার যোগ্য, যারা
আল্লাহর পথে আটকে রাখা হয়েছে। তারা
পৃথিবীতে ভ্রমন করতে সক্ষম নয়। মুর্খব্যক্তি
তাদেরকে হাতপাতা থেকে বিরত থাকায় স্বচ্ছল ধারনা করে। তুমি তাদেরকে তাদের চিহ্নের মাধ্যমে
চিনতে পারবে। তারা মানুষের নিকট অনুনয় করে প্রার্থনা করে না। (২৭৩)
আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেন,
ﻟﻴﺲ ﺍﻟﻤﺴﻜﻴﻦ ﺑﺎﻟﻄﻮﺍﻑ ﺍﻟﺬﻱ ﺗﺮﺩﻩ ﺍﻟﺘﻤﺮﺓ ﻭﺍﻟﺘﻤﺮﺗﺎﻥ
ﻭﺍﻟﻠﻘﻤﺔ ﻭﺍﻟﻠﻘﻤﺘﺎﻥ ﻭﻟﻜﻦ ﺍﻟﻤﺴﻜﻴﻦ ﺍﻟﺬﻱ ﻻﻳﺠﺪ ﻏﻨﻲ
ﻳﻐﻨﻴﻪ ﻭﻻﻳﻔﻄﻦ ﺑﻪ ﻓﻴﺼﺪﻕ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﻻﻳﺴﺎﻝ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺍﻟﺤﺎﻓﺎ
ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ
অর্থ দ্বারে দ্বারে ঘোরা ব্যক্তি, যে একটা
খোরমা ও দুইটা খোরমা, এক লোকমা ও দুই লোকমা পেয়ে (বাড়ী বাড়ী) ফিরে বেড়ায়, সে মুলত মিসকীন নয়। কিন্তু মিসকীন হলো
সেই মুখাপেক্ষিহীন করতে পারে এমন সম্পদ পায় না। তাকে চেনাও যায় না যে তাকে দান করা
হবে। সে মানুসের নিকট হাত পেতে চায়না।
(সহীহ আল বুখারী)
সমাজে যে সকল ব্যক্তি প্রয়োজনশীল, মৌলিক প্রয়োজন মিটানোর ক্ষমতা নেই, তাদের প্রতি
প্রথম নজর দেয়া প্রয়োজন। তারপর হাত পাতার
পরিবেশ দূর করার চেষ্টা করাই হলো মূল পুর্নের অন্তর্ভুক্ত।
★ছয় শ্রেনীর মধ্যে ৪র্থ শ্রেনী হলো
মুসাফির -মেহমানের প্রয়োজনের প্রতি বিশেষ
দৃষ্টি রাখা। সমাজের অনেকে এক এলাকা থেকে
অন্য এলাকায় ভ্রমন করতে যায়। নিজ এলাকার বাহিরে
হওয়ার কারনে মনে অস্থিরতা থাকে। সুযোগ
সন্ধানী লোকেরা মুসাফিরকে একা পেয়ে, তার
সহায়তা কারী কেউ নেই মনে করে অন্যায় স্বার্থ অর্জন করতে পারে। এমন হওয়া অসম্ভব নয় যে,
তার সর্বস্ব ছিনতাই হতে পারে। তার সাথে থাকা
প্রয়োজনীয় পাথেয় খরচ ফুরুয়ে যেতে
পারে। তখন তার প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ে
মুমিন সমাজের নীতি। যাকাতের ৮টি খাতের মধ্যে শেষ খাতটিও মুসাফির -মেহমান বলে সুরা তাওবায়
আল্লাহ উল্লেখ করেছেন।
★"ইবনুস সাবীল,"অর্থ রাস্তার পুত্র বলতে দুটি সম্ভাবনার কথা তাফসীরের উল্লেখ আছে। যথা
( ১)মুসাফির। মুসাফির বাড়ীর থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায়
রাস্তা-ই তার সঙ্গের সাথী হওয়ায় রাস্তার পুত্র নামকরন করা হয়েছে। (২)মেহমান। বাড়ীর
থেকে পৃথক হয়ে কোন ব্যক্তির বাড়ীতে
রাস্তা মেহমানকে পৌছে দেয়, তাই মেহমানকে রাস্তার পু্ত্র বলা
হয়। অবশ্য প্রথম অর্থ গ্রহন করাই বেশী
উপযুক্ত।
★সমাজের দুর দুরান্ত থেকে আসা মুসাফিরদের
প্রতি সুদৃষ্টি দেয়া মুল পুর্নের অন্তর্ভুক্ত।
★ছয় শ্রেনীর ব্যক্তিদের মধ্যে ৫ম শ্রেনী
হলো প্রার্থীদের বিমুখ না করা, তাদের অসম্মান না
করা, তাদের খালি হাতে ফেরৎ না দেয়া, তবে শর্ত
হলো শারীয়াতে সে প্রার্থীর হওয়া। প্রার্থী
দুই প্রকার। যথা (১)শারীয়ায় প্রার্থী হওয়ার
অযোগ্য, তবু প্রার্থনা করা ও হাত পাতা তার স্বভাব।
★অযোগ্য প্রার্থীর সঙ্গা :
যার নিকট এক রাত -এক দিনের খোরাকীর আছে,
তার জন্য কারো কাছে প্রার্থনা করা, চাওয়া বা হাত পাতা উচিৎ নয়। সে প্রার্থনা করার অযোগ্য। কেহ কেহ
বলেন, চল্লিশ দিরহাম পরিমান সম্পদ থাকলে তার জন্য
প্রার্থনা করা বা চাওয়া উচিৎ নয়। আবার কেহ কেহ
বলেন, ৫০ দিরহাম পরিমান সম্পদ থাকলে, তার চাওয়া বা
প্রার্থনা করা উচিৎ নয়।
★আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেন,
ﻣﻦ ﺳﺎﻝ ﻭﻟﻪ ﻭﻗﻴﺔ ﻓﻬﻮ ﻣﻠﺤﻒ ﻭﺍﻟﻮﻗﻴﺔ ﺍﺭﺑﻌﻮﻥ ﺩﺭﻫﻤﺎ
ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻦ ﺧﺰﻳﻤﺔ ﻓﻲ ﺻﺤﻴﺤﻪ
অর্থাৎ যে ব্যক্তি তার এক উকিয়া পরিমান মুল্য থাকতে
প্রার্থনা করে, সে ইনিয়ে বিনিয়ে প্রার্থনা কারী বলে গন্য। আর চল্লিশ দিরহামে এক উকিয়া।
(সহীহ ইবনে খুযাইমা)
★আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেন,
ﻣﻦ ﺳﺎﻝ ﻭﻟﻪ ﺍﻭﻗﻴﺔ ﺍﻭ ﻋﺪﻟﻬﺎ ﻓﻘﺪ ﺳﺎﻝ ﺍﻟﺤﺎﻓﺎ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺣﻤﺪ
ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﻨﺪ
অর্থ এক উকিয়া বা তার সমপরিমান সম্পদ থাকতে যে
ব্যক্তি প্রার্থনা করবে, সে ইনিয়ে বিনিয়ে প্রার্থনা করলো। (মুসনাদে আহমাদ)
★আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেন,
ﻣﻦ ﺳﺎﻝ ﻭﻟﻪ ﻣﺎ ﻳﻐﻨﻴﻪ ﺟﺎﻳﺖ ﻣﺴﻯﻠﺘﻪ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ
ﺧﺪﻭﺷﺎ ﺍﻭﻛﺪﻭﺣﺎ ﻓﻲ ﻭﺟﻬﻪ ﻗﺎﻟﻮﺍ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ
( ﺹ ) ﻭﻣﺎ ﻏﻨﺎﻩ ؟ ﻗﺎﻝ ﺧﻤﺴﻮﻥ ﺩﺭﻫﻤﺎ ﺍﻭ ﺣﺴﺎﺑﻬﺎ ﻣﻦ
ﺍﻟﺬﻫﺐ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺣﻤﺪ
অর্থ যথেষ্ট পরিমান সম্পদ থাকতে যে ব্যক্তি প্রার্থনা করলো, কিয়ামতের দিন তার চাওয়া ক্রিয়াটি তার
চেহারায় ক্ষতবিক্ষত দাগ হয়া আসবে। তখন তারা
(সাহাবীগন (রাঃ)) জিঙ্গাসা করলেন, হে আল্লাহর
রাসুল (সাঃ), তার যথেষ্ট পরিমান সম্পদ কতটুকু? তিনি
(আল্লাহর রাসুল (সাঃ)) বলেন, ৫০ দিরহাম বা ঐ হিসাবের
সোনা। (মুসনাদে আহমাদ)
★একরাত -একদিনের জন্য যথেষ্ট পরিমান সম্পদ
থাকতে হাত পাতা, চাওয়া বা প্রার্থনা কনা অন্যায়, গুনাহ এবং
কিয়ামতের দিন ক্ষতবিক্ষত চেহারা নিয়ে উঠতে হবে।
★ দুনিয়ায় তাকে তার চাহিদা মোতাবেক দেয়া
যেবে কিনা? একদল আলিমে অভিমত হলো, তার
জন্য নেয়া নাজায়েয কিন্তু দেয়া যাবে। কেননা
আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেন,
ﻟﻠﺴﺎﻳﻞ ﺣﻖ ﻭﻟﻮ ﺟﺎﺀ ﻋﻠﻲ ﻓﺮﺱ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻮﺩﺍﻭﺩ
অর্থ প্রার্থনাকারীর অধিকার। যদিও সে ঘোড়া পিঠে আসে। (সুনানে আবু দাউদ)
ﺍﻋﻄﻮﺍ ﺍﻟﺴﺎﻯﻞ ﻭﻟﻮ ﺟﺎﺀ ﻋﻠﻲ ﻓﺮﺱ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻻﻣﺎﻡ ﻣﺎﻟﻚ
ﻓﻲ ﺍﻟﻤﻮﻃﺎ
অর্থ র্প্রার্থীকে তোমরা দাও। যদিও সে
ঘোড়ার পিঠে আসে। (মুয়াত্তায়ে ইমাম মালিক)
ঘোড়া ধনীর ই হতে পারে। অতএত ধনী হওয়া
সত্বেও প্রার্থনা করলে তাকে দেয়া বৈধ। যদিও
ধনী ব্যক্তির জন্য প্রার্থনা করা বৈধ নয়।
(২)শারীয়ার দৃষ্টিতে যোগ্য প্রার্থী।
যার নিকট একরাত -ও একদিনের খোরাকী নেই বা
সমপরিমান মুল্যের সম্পদ নেই, স্বনির্ভর জীবন-
যাপন করার জন্য কাজের যন্ত্রপাতি নেই, স্বনির্ভর
জীবন -যাপন করার মত ব্যবসায়িক সম্পদের মাল -
সম্পদ নেই, সে প্রার্থনা করতে পারে।
★নিম্মের হাদীস তার প্রমান :
ﻋﻦ ﺍﻡ ﻧﺠﻴﺪ ﻗﺎﻟﺖ ﻗﻠﺖ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ (ﺹ ) ﺍﻥ ﺍﻟﻤﺴﻜﻴﻦ
ﻟﻴﻘﻮﻡ ﻋﻠﻲ ﺑﺎﺑﻲ ﻓﻠﻢ ﺍﺟﺪ ﺷﻴﻯﺎ ﺍﻋﻄﻴﻪ ﺍﻳﺎﻩ ﻗﺎﻝ ﺍﻥ ﻟﻢ
ﺗﺠﺪﻱ ﺍﻻﻇﻠﻔﺎ ﻣﺤﺮﻗﺎ ﻓﺎﺩﻓﻌﻴﻪ ﺍﻟﻴﻪ ﻓﻲ ﻳﺪﻩ ﺭﻭﺍﻩ
ﺍﺑﻮﺩﺍﻭﺩ ﻭﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭﻗﺎﻝ ﺣﺪﻳﺚ ﺣﺴﻦ ﺻﺤﻴﺢ
অর্থ উম্মে নাযীদ (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি
বলেন, আমি জিঙ্গাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ),
নিশ্চয় মিসকীন আমার দ্বারে দাড়িয়ে থাকে। আমি
তাকে দেয়ার মত কিছু পাইনা। (আমি কি করতে পারি?)
তিনি জবাব দেন, তুমি যদি ছাগলের পোড়া খুর ছাড়া
কিছু না পাও, তাহলে তুমি তার হাতে তাই পৌছে দাও।
(আবুদাউদ ও তিরমিযী) (ইমাম তিরমিযী বলেন, এই
হাদীসটির হাসান সহীহ।)
★আর একটি হাদীসে আছে :
ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ (ﺹ ) ﺭﺩﻭﺍ ﺍﻟﻤﺴﻜﻴﻦ ﻭﻟﻮﺑﻈﻠﻒ ﻣﺤﺮﻕ
ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺎﻟﻚ ( ﻗﻮﻟﻪ ﺭﺩﻭﺍ ﺍﻟﻤﺴﻜﻴﻦ ﻟﻢ ﻳﺮﺩ ﺑﻪ ﺭﺩ ﺍﻟﺤﺮﻣﺎﻥ
ﺍﻧﻤﺎ ﺍﺭﺍﺩ ﺑﻪ ﺭﺩﻭﻩ ﺑﺸﻴﻰ ﺗﻌﻄﻮﻧﻪ ﺍﻳﺎﻩ ﻭﻟﻮﻛﺎﻥ ﻇﻠﻔﺎ
ﻭﻫﻮﺧﻒ ﺍﻟﺸﺎﺓ ﻭﻓﻲ ﻛﻮﻧﻪ ﻣﺤﺮﻗﺎ ﻣﺒﺎﻟﻐﺔ ﻓﻲ ﻗﻠﺔ ﻣﺎ
ﻳﻌﻄﻴﻪ )
অর্থ আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেন, তোমরা রান্নাকৃত
ক্ষুরধার দিয়ে হলেও মিসকীনকে বিদায় করো।
(মুয়াত্তায়ে ইমাম মালিক)
মিসকীনকে বিদায় করার অর্থ তাকে বঞ্চিত করে
বিদায় করা নয়। তার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সামান্য কিছু
এমনকি ক্ষুর দিয়ে হলেও মিসকীনকে বিদায়
করো। ক্ষুর অর্থ ছাগলের পায়ের ক্ষুর হলেও
অর্থ ক্ষুদ্র জিনিষ দিয়ে হলেও মিসকীনকে দিও।
★ তার মত ব্যক্তিদের আর্থিক সাহায্য -সহায়তা করা
সমাজের স্বচ্ছল ব্যক্তিদের উচিৎ এবং মুল পুন্য
কর্মের অন্তর্ভুক্ত।
★ছয় শ্রেনীর মধ্যে ষষ্ট শ্রেনী হলো,
দাসত্ব শৃংখলে আবদ্ধ বা মাজলুম কয়েদীদের
মুক্ত করার জন্য সার্বিক সহযোগীতা করা মুল পুন্যের অন্তর্ভুক্ত।
সম্পদ ব্যয়ের ছয়টি খাতের কথা উল্লেখ
করেছেন। ষষ্ট খাত হলো,
ﻭﻓﻲ ﺍﻟﺮﻗﺎﺏ
অর্থাৎ গোলাম মুক্ত করা বা মাজলুম কয়েদী মুক্ত
করার ব্যপারে সম্পদ করা মুল পুন্যের অন্তর্ভুক্ত।
"রিক্বাব "শব্দটি বহু বচন। তার এক বচন হলো
"রক্বাবাহ "।অর্থ ঘাড়ের মূলের শেষাংশ। যাকে
গর্দানও বলা হয়। গর্দান বলে পুর্ন ব্যক্তি অর্থ
গ্রহন করা হয়। "ফির -রিক্বাব "অর্থ গোলাম আাযাদ,
স্বাধীন ও মুক্ত মুক্ত করার ব্যপারে বা মাজলুম
কয়েদী মুক্ত করার ব্যপারে অর্থ ব্যয় করা
অন্যতম পুন্যের কাজ।
★"গর্দান সমূহ বা গোলামদের আযাদ করার "তিনটি
অর্থ হতে পারে। যথা (১)★যে গোলাম
মুনীবের দাসত্ব শৃংখলা থেকে মুক্তির জন্য
মুনীবের সাথে চুক্তি করেছে যে, এই পরিমান
সম্পদ মুনীবকে দিলে, গোলাম দাসত্ব শৃংখলা
থেকে মুক্তি পাবে। কিন্তু ঐ গোলাম আয়
উপার্জন করে সেই পরিমান সম্পদ আদায় করতে
পারছে না। ঐ গোলামকে চুক্তির টাকা দিতে সাহায্য -
সহায়তা করা বিরাট পুন্যের কাজ।আল্লাহ বলেন,
ﻭﺍﻟﺬﻳﻦ ﻳﺒﺘﻐﻮﻥ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﻣﻤﺎ ﻣﻠﻜﺖ ﺍﻳﻤﺎﻧﻜﻢ ﻓﻜﺎﺗﺒﻮﻫﻢ ﺍﻥ
ﻋﻠﻤﺘﻢ ﻓﻴﻬﻢ ﺧﻴﺮﺍ ﻭﺍﺗﻮﻫﻢ ﻣﻦ ﻣﺎﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺬﻱ ﺍﺗﺎﻛﻢ
. ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻨﻮﺭ
অর্থ আর যারা তোমাদের দাসত্ব শৃংখলে আবদ্ধ
ব্যক্তিদের মধ্য থেকে (মুক্তির জন্য)
লেখালেখির চুক্তি করতে চায়, তাদের মধ্যে
কোন কল্যান জানলে, তাদের সাথে মুক্তির
লেখালেখির চুক্তি করতে পার এবং আল্লাহর যে
সম্পদ তোমাদের দিয়েছেন, তার থেকে তাদের
দিয়ে সাহায্য -সহায়তা কর। (সুরা আন -নূর, আয়াত নং )
(২)★যে গোলাম দাসত্ব শৃংখলে আবদ্ধ, তাকে
ক্রয় করে আযাদ বা স্বাধীন করা বিরাট সাওয়াব বা
পুন্যের কর্ম। সমাজের মানুষকে একাজ করার জন্য
কুরআন ও সুন্নায় উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।কুরআন ও
সুন্নার বিভিন্ন স্থান আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ)
উৎসাহ দিয়েছেন।
(১)যাকাতের ৮টি খাতের মধ্যে ৫ম নং খাত গোলাম
আযাদ করা। সুরা আত -তাওবা, আয়াত নং ৬০)
ﺍﻧﻤﺎﺍﻟﺼﺪﻗﺎﺕ ﻟﻠﻔﻘﺮﺍﺀ ﻭﺍﻟﻤﺴﺎﻛﻴﻦ ﻭﺍﻟﻌﺎﻣﻠﻴﻦ ﻋﻠﻴﻬﺎ
ﻭﺍﻟﻤﻮﻟﻔﺔ ﻗﻠﻮﺑﻬﻢ ﻭﻓﻲ ﺍﻟﺮﻗﺎﺏ ﻭﺍﻟﻐﺎﺭﻣﻴﻦ ﻭﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ
ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺍﺑﻦ ﺍﻟﺴﺒﻴﻞ . ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﺘﻮﺑﺔ 60.
(২)কসম ভঙ্গের কাফফারায় তিন কাজের কোন
একটি আদায়ের স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে,
তন্মধ্যে একটি গোলাম আযাদ করা। (সুরা আল মাইদাহ, আয়াত নং )
ﻓﻜﻔﺎﺭﺗﻪ ﺍﻃﻌﺎﻡ ﻋﺸﺮﺓ ﻣﺴﺎﻛﻴﻦ ﻣﻦ ﺍﻭﺳﻂ ﻣﺎ ﺗﻄﻌﻤﻮﻥ
ﺍﻫﻠﻴﻜﻢ ﺍﻭ ﻛﺴﻮﺗﻬﻢ ﺍﻭ ﺗﺤﺮﻳﺮ ﺭﻗﺒﺔ . ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻤﺎﻳﺪﺓ
(৩)ভুল করে হত্যা করে ফেললে তার গুনাহ
থেকে মুক্তির জন্য গোলাম আযাদ করা ও
রক্তমুল্য আদায় করা।( সুরা আন -নিসা, আয়াত নং)
ﻭﻣﻦ ﻗﺘﻞ ﻣﻮﻣﻨﺎ ﺧﻄﺎ ﻓﺘﺤﺮﻳﺮﺭﻗﺒﺔ ﻣﻮﻣﻨﺔ ﻭﺩﻳﺔ ﻣﺴﻠﻤﺔ
ﺍﻟﻲ ﺍﻫﻠﻪ ﺍﻻ ﺍﻥ ﻳﺼﺪﻗﻮﺍ . ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ
(৪)স্ত্রীকে মা-বোন -মোহার্রামাতের সাথে
তুলনা করে জিহার করলে, তার গুনাহ থেকে বাচার
জন্য একটি গোলাম আযাদ করা।
(সুরা আল মযাদালাহ, আয়াত নং ৩)
ﻭﺍﻟﺬﻳﻦ ﻳﻈﺎﻫﺮﻭﻥ ﻣﻦ ﻧﺴﺎﻳﻬﻢ ﺛﻢ ﻳﻌﻮﺩﻭﻥ ﻟﻤﺎ ﻗﺎﻟﻮﺍ
ﻓﺘﺤﺮﻳﺮ ﺭﻗﺒﺔ ﻣﻮﻣﻨﺔ . ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻤﺠﺎﺩﻟﺔ
(৫) রমাদানের রোযা ইচ্ছা করে ভাঙলে তার গুনাহ
থেকে বাচতে একটি গোলাম আযাদ করা
(সহীহ আল বুখারী)
(৬)স্বাভাবিকভাবে সব সময় গোলামীর শৃংখলা মুক্ত
করার চেষ্টা করলে বিরাট প্রতিদান আছে।(সুরা আল - বালাদ)
ﻓﻼ ﺍﻗﺘﺤﻢ ﺍﻟﻌﻘﺒﺔ ﻭﻣﺎﺍﺩﺭﺍﻙ ﻣﺎﺍﻟﻌﻘﺒﺔ ﻓﻚ ﺭﻗﺒﺔ . ﺳﻮﺭﺓ
ﺍﻟﺒﻠﺪ
(৩)★রিক্বাবের ক্ষেত্রে সম্পদ ব্যয়ের অর্থ
বন্দীমুক্তির কথা বলা হয়েছে। যেসব মুসলিম
ইসলামের কারনে অমুসলিমদের নিকট মাজলুম
অবস্থায় বন্দি হয়ে আছে, তাদের মুক্তির জন্য
সম্পদ ব্যয় করা মুসলিম সমাজের জন্য মহান সাওয়াব ও
পন্যের কর্ম।
লেখকঃ মুহাদ্দিস রবিউল বাশার
Comments
Post a Comment